নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
‘আপনারা পার্টি রিঅর্গানাইজ করুন, সাহায্য করব’ -সাখাওয়াত হোসেন
‘যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না’-হাসনাত আবদুল্লাহ
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দল পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার উপদেশও দিয়েছেন। তার বক্তব্যের পরই তাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজকে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং যখন কোনো বক্তব্য দেবেন, আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্রটা যেন মাথায় থাকে।’
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের মতো বক্তব্য দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না।’
ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতে চলে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে সোমবার সকালে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘লোক জড়ো করুক, আর যাই করুক, আমি আপনাদের একটা অনুরোধ করি, এমন কিছু করবেন না যে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) জীবন বিপন্ন হয়। এ দেশের পাবলিক এখনও আপনাদের গ্রহণ করতে আসেনি। আমি বরং মনে করি, আপনারা আপনাদের পার্টি রিঅর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করুন।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে সোমবার সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
আরও যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দেশে আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। দলকে পুনর্গঠন করুন, রাজনৈতিক দলের মতো যেভাবে থাকে, নির্বাচন এলে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন, জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন।’
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা এই দেশকে আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? তাহলে আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ করলাম, ৩০ লাখ লোক মারা গেল, সেই ৩০ লাখ লোকের ওপর দাঁড়িয়ে দেশটা আপনি আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? এ দেশের লোক এত তাড়াতাড়ি ভোলেনি। কারণ, যাকে ধরছিলেন নেতা, সেই নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যাকে ধরছে, সেই নেতাকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। অনেক নেতাকে অনেকে বাঁচিয়েছেন, আমরা জানি না এ কথা।’
‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ আওয়ামী লীগের এত বড় একটা দলকে ‘নষ্ট’ না করার আহ্বান জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা (আওয়ামী লীগ) আমাদের গর্ব। এটা নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই।’
আওয়ামী লীগকে প্রতিবিপ্লবের বিষয়ে সতর্ক করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আর কেউ যদি মনে করেন যে আবার একটা কাউন্টার রেভল্যুশন (প্রতিবিপ্লব) করে আসবেন, কাউন্টার রেভল্যুশন করতে হলে হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে আমার কিছু করার নেই।’
কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দেশের তরুণ প্রজন্ম এবার বিপ্লব করেছে মন্তব্য করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দে হ্যাভ গিভেন দেয়ার লাইভস (তারা তাদের জীবন দিয়েছেন), যেটা আপনারা কোনো দিন দিতে পারতেন না। পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের কোনো দুঃখ নেই। তারা (তরুণ) আপনাদের (প্রতিবিপ্লবকারীদের) মোকাবিলা করবেন। অনুরোধ করছি, দয়া করে দেশকে স্বাধীন রাখেন।’
নতুন করে সহিংসতার ‘প্ররোচনায়’ না আসার অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্ররোচনায় আসবেন না। এখানে আরও কিছু লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। ইতোমধ্যে ৫০০, হয়তো আরও বেশি মারা গেছেন উভয় পক্ষের। পুলিশের এই অবস্থা হয়েছে। আনসারের এই অবস্থা হয়েছে। আমরা যদি উসকানি দিতাম, আপনারা টিকতে পারতেন না। আমরা আর্মিকে মানা করেছি। কারণ, কাকে মারবেন আপনি? পুলিশকে দিয়ে কাকে মারিয়েছেন? পুলিশকে দিয়ে মারিয়েছেন আপনার সন্তানকে। একজন পুলিশের সদস্য কী বললেন যে, স্যার, কয়টা গুলি লাগে, তার ছেলে লাশ। এটা করবেন না।’
কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করার পক্ষে নন মন্তব্য করে করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি গতকাল (মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট) একটা কথা বলেছি। সে জন্য দুঃখিত। রাগের মাথায় বলেছি যে আবার চাটুকারিতা করলে বন্ধ করে দেব। এটা আমার কাজ নয়।’
৭ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমা দিতে হবে
বেসামরিক মানুষের হাতে ‘নিষিদ্ধ ৭.৬২ এমএম রাইফেল’ পাওয়া গেছে জানিয়ে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেটা বেসামরিক মানুষের হাতে যাওয়ার কথা নয়। সেটার বৈধতা পুলিশ ও র?্যাবকে দেয়া হয়েছিল। সেই অস্ত্র কীভাবে সাধারণ মানুষের হাতে গেল?
যাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র আছে, তা তাদের সাত দিনের মধ্যে থানায় জমা দিতে হবে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি জমা না দেন, তাহলে দুইটা চার্জ লাগবে। একটা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র, আরেকটা হচ্ছে সরকারি নিষিদ্ধ অস্ত্র আপনাদের হাতে। সেটার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়া যেতে পারে যে এটা কোথা থেকে পেয়েছেন। এসব রাইফেল ফেরত দিতে হবে সাত দিনের মধ্যে।’
আগামী সোমবারের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র ফেরত দিতে হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘তা না হলে অস্ত্র হাতে কাউকে পেলে তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হবে। থানায় জমা দিন। নিজেরা না দিলেও অন্যের মাধ্যমে দিন। যেভাবেই হোক, রাইফেলগুলো ফেরত দিতে হবে। না হলে আমরা অনুসন্ধান শুরু করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের সাহায্য চাইতে হবে যে এই ঘটনা কেন ঘটল বাংলাদেশে। আমি ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছি। সামনে যে মিটিং হবে, সেখানে বলব যে কীভাবে, কারা হুকুমদাতা, কেন হয়েছেন?’
কোনো দল নিষিদ্ধ করা বাজে সংস্কৃতি
নতুন মুখ ও নতুন অঙ্গীকার নিয়ে দল গোছাতে আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সোমবার সচিবালয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেন এম সাখাওয়াত হোসেন।
আওয়ামী লীগকে একটি বড় রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা দল গুছিয়ে নিন, আপনাদের দলকে তো কেউ নিষিদ্ধ করেনি। যেকোনো দল নিষিদ্ধ করা বাজে সংস্কৃতি।’
আওয়ামী লীগে ভালো ভালো নেতা আছেন মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই দল এক সময় মধ্যবিত্তের ‘সেক্যুলার’ দল ছিল। মুসলিম লীগ ছিল উচ্চবিত্তের। মধ্যবিত্তের দল ছিল আওয়ামী লীগ। এত বড় মানুষের দলের নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এ দেশ স্বাধীন করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তার নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে। সেই দল এভাবে ভেঙে পড়ে যাবে যে নেতাকর্মীদের লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
শেখ হাসিনার উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি আসবেন, আপনার দেশ। আপনি আসেন না কেন? নাগরিকত্ব তো যায়নি। ২১ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, কেউ তো যেতে বলেননি। স্বেচ্ছায় আসেন, ভালো থাকবেন, আবার আসবেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গ-গোল পাকিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং লোকজন আবার ক্ষেপে উঠবে।’
জাতীয় পার্টির উদাহরণ তুলে ধরেন এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এইচএম এরশাদ কারাগারে যাওয়ায় দলটি বেঁচে যায়।
দেশকে ‘অরাজকতার’ দিকে ঠেলে না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ইনক্লুডিং সদ্য যে পার্টি (আওয়ামী লীগ), আপনারা দল গোছান, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপনাদের সাহায্য করব। আপনারা গোছান নতুন মুখ, নতুন অঙ্গীকার নিয়ে। আশা করি, রাজনৈতিক দল আইন অনুযায়ী হবে।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সংঘাত বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা আপনাদের এলাকা ঠিক করুন। যদি সংসদীয় এলাকা অনুযায়ী হিসেব নিতে থাকি, আপনারা আমাকে ভালো করে জানেন। আমি নতুন লোক নই।’
মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
‘আপনারা পার্টি রিঅর্গানাইজ করুন, সাহায্য করব’ -সাখাওয়াত হোসেন
‘যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না’-হাসনাত আবদুল্লাহ
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দল পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার উপদেশও দিয়েছেন। তার বক্তব্যের পরই তাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজকে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং যখন কোনো বক্তব্য দেবেন, আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্রটা যেন মাথায় থাকে।’
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের মতো বক্তব্য দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না।’
ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতে চলে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
এর আগে সোমবার সকালে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘লোক জড়ো করুক, আর যাই করুক, আমি আপনাদের একটা অনুরোধ করি, এমন কিছু করবেন না যে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) জীবন বিপন্ন হয়। এ দেশের পাবলিক এখনও আপনাদের গ্রহণ করতে আসেনি। আমি বরং মনে করি, আপনারা আপনাদের পার্টি রিঅর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করুন।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত আনসার সদস্যদের দেখতে সোমবার সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
আরও যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দেশে আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। দলকে পুনর্গঠন করুন, রাজনৈতিক দলের মতো যেভাবে থাকে, নির্বাচন এলে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন, জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন।’
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা এই দেশকে আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? তাহলে আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ করলাম, ৩০ লাখ লোক মারা গেল, সেই ৩০ লাখ লোকের ওপর দাঁড়িয়ে দেশটা আপনি আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? এ দেশের লোক এত তাড়াতাড়ি ভোলেনি। কারণ, যাকে ধরছিলেন নেতা, সেই নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যাকে ধরছে, সেই নেতাকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। অনেক নেতাকে অনেকে বাঁচিয়েছেন, আমরা জানি না এ কথা।’
‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ আওয়ামী লীগের এত বড় একটা দলকে ‘নষ্ট’ না করার আহ্বান জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা (আওয়ামী লীগ) আমাদের গর্ব। এটা নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই।’
আওয়ামী লীগকে প্রতিবিপ্লবের বিষয়ে সতর্ক করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আর কেউ যদি মনে করেন যে আবার একটা কাউন্টার রেভল্যুশন (প্রতিবিপ্লব) করে আসবেন, কাউন্টার রেভল্যুশন করতে হলে হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে আমার কিছু করার নেই।’
কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দেশের তরুণ প্রজন্ম এবার বিপ্লব করেছে মন্তব্য করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দে হ্যাভ গিভেন দেয়ার লাইভস (তারা তাদের জীবন দিয়েছেন), যেটা আপনারা কোনো দিন দিতে পারতেন না। পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের কোনো দুঃখ নেই। তারা (তরুণ) আপনাদের (প্রতিবিপ্লবকারীদের) মোকাবিলা করবেন। অনুরোধ করছি, দয়া করে দেশকে স্বাধীন রাখেন।’
নতুন করে সহিংসতার ‘প্ররোচনায়’ না আসার অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্ররোচনায় আসবেন না। এখানে আরও কিছু লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। ইতোমধ্যে ৫০০, হয়তো আরও বেশি মারা গেছেন উভয় পক্ষের। পুলিশের এই অবস্থা হয়েছে। আনসারের এই অবস্থা হয়েছে। আমরা যদি উসকানি দিতাম, আপনারা টিকতে পারতেন না। আমরা আর্মিকে মানা করেছি। কারণ, কাকে মারবেন আপনি? পুলিশকে দিয়ে কাকে মারিয়েছেন? পুলিশকে দিয়ে মারিয়েছেন আপনার সন্তানকে। একজন পুলিশের সদস্য কী বললেন যে, স্যার, কয়টা গুলি লাগে, তার ছেলে লাশ। এটা করবেন না।’
কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করার পক্ষে নন মন্তব্য করে করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি গতকাল (মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট) একটা কথা বলেছি। সে জন্য দুঃখিত। রাগের মাথায় বলেছি যে আবার চাটুকারিতা করলে বন্ধ করে দেব। এটা আমার কাজ নয়।’
৭ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমা দিতে হবে
বেসামরিক মানুষের হাতে ‘নিষিদ্ধ ৭.৬২ এমএম রাইফেল’ পাওয়া গেছে জানিয়ে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যেটা বেসামরিক মানুষের হাতে যাওয়ার কথা নয়। সেটার বৈধতা পুলিশ ও র?্যাবকে দেয়া হয়েছিল। সেই অস্ত্র কীভাবে সাধারণ মানুষের হাতে গেল?
যাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র আছে, তা তাদের সাত দিনের মধ্যে থানায় জমা দিতে হবে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি জমা না দেন, তাহলে দুইটা চার্জ লাগবে। একটা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র, আরেকটা হচ্ছে সরকারি নিষিদ্ধ অস্ত্র আপনাদের হাতে। সেটার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়া যেতে পারে যে এটা কোথা থেকে পেয়েছেন। এসব রাইফেল ফেরত দিতে হবে সাত দিনের মধ্যে।’
আগামী সোমবারের মধ্যে অবৈধ অস্ত্র ফেরত দিতে হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘তা না হলে অস্ত্র হাতে কাউকে পেলে তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হবে। থানায় জমা দিন। নিজেরা না দিলেও অন্যের মাধ্যমে দিন। যেভাবেই হোক, রাইফেলগুলো ফেরত দিতে হবে। না হলে আমরা অনুসন্ধান শুরু করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আমাদের সাহায্য চাইতে হবে যে এই ঘটনা কেন ঘটল বাংলাদেশে। আমি ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছি। সামনে যে মিটিং হবে, সেখানে বলব যে কীভাবে, কারা হুকুমদাতা, কেন হয়েছেন?’
কোনো দল নিষিদ্ধ করা বাজে সংস্কৃতি
নতুন মুখ ও নতুন অঙ্গীকার নিয়ে দল গোছাতে আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সোমবার সচিবালয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেন এম সাখাওয়াত হোসেন।
আওয়ামী লীগকে একটি বড় রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা দল গুছিয়ে নিন, আপনাদের দলকে তো কেউ নিষিদ্ধ করেনি। যেকোনো দল নিষিদ্ধ করা বাজে সংস্কৃতি।’
আওয়ামী লীগে ভালো ভালো নেতা আছেন মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই দল এক সময় মধ্যবিত্তের ‘সেক্যুলার’ দল ছিল। মুসলিম লীগ ছিল উচ্চবিত্তের। মধ্যবিত্তের দল ছিল আওয়ামী লীগ। এত বড় মানুষের দলের নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এ দেশ স্বাধীন করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তার নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে। সেই দল এভাবে ভেঙে পড়ে যাবে যে নেতাকর্মীদের লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
শেখ হাসিনার উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি আসবেন, আপনার দেশ। আপনি আসেন না কেন? নাগরিকত্ব তো যায়নি। ২১ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন, কেউ তো যেতে বলেননি। স্বেচ্ছায় আসেন, ভালো থাকবেন, আবার আসবেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গ-গোল পাকিয়ে কোনো লাভ হবে না। বরং লোকজন আবার ক্ষেপে উঠবে।’
জাতীয় পার্টির উদাহরণ তুলে ধরেন এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এইচএম এরশাদ কারাগারে যাওয়ায় দলটি বেঁচে যায়।
দেশকে ‘অরাজকতার’ দিকে ঠেলে না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ইনক্লুডিং সদ্য যে পার্টি (আওয়ামী লীগ), আপনারা দল গোছান, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপনাদের সাহায্য করব। আপনারা গোছান নতুন মুখ, নতুন অঙ্গীকার নিয়ে। আশা করি, রাজনৈতিক দল আইন অনুযায়ী হবে।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সংঘাত বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা আপনাদের এলাকা ঠিক করুন। যদি সংসদীয় এলাকা অনুযায়ী হিসেব নিতে থাকি, আপনারা আমাকে ভালো করে জানেন। আমি নতুন লোক নই।’