আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে ।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারায় এ অভিযোগের বিচার করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই অভিযোগ তদন্তে ১৪ আগস্ট বুধবার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোয়ার হোসেন তামিম। তিনি বলেন, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমানকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার রাতেই তিনি কাজ শুরু করেছেন। তিনি পেপার ওয়ার্ক করবেন। ঘটনাস্থলে যাবেন।
পদত্যাগের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দায়ের করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কো-অর্ডিনেটর বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ রেজিস্টারভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়।
আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে। অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা দেশীয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠনের অপরাধ।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো.হারুন অর রশিদ ও কতিপয় অসাধু র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনসমূহ। অভিযোগে বাদী ও অন্যান্য সাক্ষীদের পাশাপাশি গত ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ডকুমেন্টস হিসেবে দাখিল করা হয়েছে।
এদিকে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার দারুননাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জোবাইদ হোসেন ইমন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলাটির আবেদন করেন আব্দুল্লা আবু সাইদ ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি। এ সময় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এছাড়া আরেকটি মামলায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহা দিবা ছন্দার আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মো. আবুল কামাল নামে এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুতির পর এ পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা এবং একটি অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অপর আসামিরা হলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. খ মহিদ উদ্দিন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হারুন অর-রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এছাড়াও মামলায় র্যাবের হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাত সদস্য এবং তাদের কমান্ডিং অফিসারদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে ইমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়। ছাত্রজনতার আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই গণভবনে প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন। এতে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করে। এ অবস্থায় ওবায়দুল কাদের ১৫ জুলাই ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’। এমন উসকানিমূলক বক্তব্যে ছাত্রলীগকে গণহত্যার নির্দেশ দেন তিনি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এর ধারাবাহিকতায় আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনদের পরিকল্পনায় ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের নিষ্ঠুরভাবে দমনের জন্য নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। তাদের এ নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, হারুন অর-রশীদ, হাবিবুর রহমান। তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন অধঃস্তন কর্মকর্তারা। ১৯ জুলাই র্যাব সদস্যরা মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়েন। এর একটি গুলি ইমনের বাম কানের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোঁয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ইমন।
এছাড়া রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবে মহাপরিচালক হারুন অর-রশীদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া এ তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশে অসংখ্য ছাত্র-জনতা পুলিশের গুলিতে হতাহত হন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে শাহাবুদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার আনতে গিয়ে শেরেবাংলা নগর থানার সামনে পশ্চিম আগারগাঁও চৌরাস্তায় ওঠার সময় তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে ।
সংস্থাটির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান বলেন, শেখ হাসিনাসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারায় এ অভিযোগের বিচার করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই অভিযোগ তদন্তে ১৪ আগস্ট বুধবার আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোয়ার হোসেন তামিম। তিনি বলেন, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমানকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। বুধবার রাতেই তিনি কাজ শুরু করেছেন। তিনি পেপার ওয়ার্ক করবেন। ঘটনাস্থলে যাবেন।
পদত্যাগের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দায়ের করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কো-অর্ডিনেটর বরাবর এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ রেজিস্টারভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৮ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়।
আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে। অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, আসামিদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা দেশীয় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র জনতাদের হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠনের অপরাধ।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং তৎকালীন সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো.হারুন অর রশিদ ও কতিপয় অসাধু র্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যসহ অজ্ঞতনামা অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনসমূহ। অভিযোগে বাদী ও অন্যান্য সাক্ষীদের পাশাপাশি গত ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ডকুমেন্টস হিসেবে দাখিল করা হয়েছে।
এদিকে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার দারুননাজাত ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জোবাইদ হোসেন ইমন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলাটির আবেদন করেন আব্দুল্লা আবু সাইদ ভূঁইয়া নামে এক ব্যক্তি। এ সময় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এছাড়া আরেকটি মামলায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহা দিবা ছন্দার আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মো. আবুল কামাল নামে এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুতির পর এ পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা এবং একটি অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর থানার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অপর আসামিরা হলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. খ মহিদ উদ্দিন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হারুন অর-রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এছাড়াও মামলায় র্যাবের হেলিকপ্টার টহল টিমের অজ্ঞাত সদস্য এবং তাদের কমান্ডিং অফিসারদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করলে ইমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়। ছাত্রজনতার আন্দোলনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই গণভবনে প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন। এতে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করে। এ অবস্থায় ওবায়দুল কাদের ১৫ জুলাই ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট’। এমন উসকানিমূলক বক্তব্যে ছাত্রলীগকে গণহত্যার নির্দেশ দেন তিনি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এর ধারাবাহিকতায় আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনদের পরিকল্পনায় ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় আন্দোলনকারীদের নিষ্ঠুরভাবে দমনের জন্য নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের দেখামাত্র গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। তাদের এ নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, হারুন অর-রশীদ, হাবিবুর রহমান। তাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন অধঃস্তন কর্মকর্তারা। ১৯ জুলাই র্যাব সদস্যরা মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়েন। এর একটি গুলি ইমনের বাম কানের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে ডান কানের নিচ দিয়ে চোঁয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ইমন।
এছাড়া রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি ও র্যাবের সাবে মহাপরিচালক হারুন অর-রশীদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া এ তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশে অসংখ্য ছাত্র-জনতা পুলিশের গুলিতে হতাহত হন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে শাহাবুদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার আনতে গিয়ে শেরেবাংলা নগর থানার সামনে পশ্চিম আগারগাঁও চৌরাস্তায় ওঠার সময় তার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।