একটি গুলি হাঁটুর নীচে লাগে। গুলিটি হাড়ের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যায়। অথচ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে পারেনি।
পরে বাধ্য হয়েই বাসায় রেখে চিকিৎসা চালানো হয়। কিন্তু তাতে উন্নতি হচ্ছিল না। ঠিকঠাক চিকিৎসা না পাওয়ায় এক পর্যায়ে দেখা দেয় ইনফেকশনও। এতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। আতঙ্ক দেখা দেয় পা হারানোর।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস পর হাসপাতালের বিছানায় ঠাঁই হয় বলে অভিযোগ হাবিবুল বাশার (১৭) ও তার স্বজনদের।
বাশারের বাড়ি সিলেট সদরে। তার পিতা মানিক মিয়া একজন রিকশাচালক। মা লিপি বেগম। তিন ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় সে। স্থানীয় ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন দশম শ্রেণীতে পড়ে। পাশাপাশি একটি প্রেস প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখছিল।
তবে বাশারের ভাষ্য, সে গুলিবিদ্ধ হয় নারায়ণগঞ্জ চিটাগাং রোড হীরাঝিল এলাকায়। এখানে তার ফুফুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল।
গত ২০ জুলাই (শনিবার) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তার বাম পায়ের হাঁটুর নীচে গুলি লাগে। তখন সেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশ ও আন্দোলনকরীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ৪৮ নম্বর ক্যাবিনের ২ নম্বর বেডে আহত বাশারের চিকিৎসা চলছে। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয় গত সোমবার সন্ধ্যায়।
বাশার সংবাদকে বলেন, গুলি লাগার পর তাকে প্রথমে খানপুর হাসপাতালে (নারায়ণগঞ্জ) নেয়া হয়। কিন্তু সেই হাসপাতাল শুধু ব্যান্ডিস করে ছেড়ে দেয়। পরে আলিফ মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে গেলেও ‘সিরিয়াস অবস্থা’ বলে ভর্তি নেয়নি।
‘খানপুর হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। এরপর আলিফ ছাড়াও কয়েকটা হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমার অবস্থা সিরিয়াস বলে ভর্তি করেনি। পরে ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। কিন্তু এখানেও শুধু ড্রেসিং করে বাসায় নিয়ে যেতে বলে।’
এরপর নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের ফুফুর বাসায় চিকিৎসা চলে। তবে সপ্তাহে একবার করে ঢাকা মেডিকেলে আসা হতো। পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এভাবে এক মাসেও পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছিল না বলে জানান বাশার।
‘বাসায় চিকিৎসা চলার মধ্যে আমার ইনফেকশান হয়েছিল। পরে গত ২২ আগস্ট আমার ভর্তি নেয় ঢাকা মেডিকেল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। এখন হাড়ের অপারেশন হবে।’
হাসপাতালে বাশারের দেখবাল করছেন তার দাদী। তিনি বলেন, ‘এই পুলারে লইয়া কি যে বিপদে আছি। হের চিকিৎসার লাইগা বাপে কিস্তি উঠাইছে। কিস্তির চাপ। দেনা করে চলতে হচ্ছে।’
বাশার ও তার স্বজনের ভাষ্য, হাসপাতালে ভর্তি নেয়ার পর চিকিৎসা বিনামূল্যে করতে পারছেন। কিন্তু এর বাইরেও অনেক খরচ হচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালে ভর্তির আগের একমাস সরকারের কোনো সুবিধা পায়নি। এতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে।
‘বাসায় যতদিন চিকিৎসা চলছে ততদিন কোনো সুবিধা পাই নাই। হাসপাতালে যাইয়া নিজের খরচে ড্রিসিং করতে হতো। ওষুধ কিনতে হতো। আমাদের অনেক টাকা গেছে। বাপে কিস্তি পর্যন্ত তুলেছে। আমার ছোট ভাই একটা সেভেন ও একটা ফাইভে পড়ে। ছোট বোনও আছে। আমার (চিকিৎসা) খরচ ও পরিবার খরচ চালাতে মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হচ্ছে। আবার কিস্তিরও চাপ আছে, ’ বলেন বাশার।
বৃহস্পতিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
একটি গুলি হাঁটুর নীচে লাগে। গুলিটি হাড়ের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যায়। অথচ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে পারেনি।
পরে বাধ্য হয়েই বাসায় রেখে চিকিৎসা চালানো হয়। কিন্তু তাতে উন্নতি হচ্ছিল না। ঠিকঠাক চিকিৎসা না পাওয়ায় এক পর্যায়ে দেখা দেয় ইনফেকশনও। এতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। আতঙ্ক দেখা দেয় পা হারানোর।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস পর হাসপাতালের বিছানায় ঠাঁই হয় বলে অভিযোগ হাবিবুল বাশার (১৭) ও তার স্বজনদের।
বাশারের বাড়ি সিলেট সদরে। তার পিতা মানিক মিয়া একজন রিকশাচালক। মা লিপি বেগম। তিন ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় সে। স্থানীয় ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন দশম শ্রেণীতে পড়ে। পাশাপাশি একটি প্রেস প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখছিল।
তবে বাশারের ভাষ্য, সে গুলিবিদ্ধ হয় নারায়ণগঞ্জ চিটাগাং রোড হীরাঝিল এলাকায়। এখানে তার ফুফুর বাসায় বেড়াতে এসেছিল।
গত ২০ জুলাই (শনিবার) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তার বাম পায়ের হাঁটুর নীচে গুলি লাগে। তখন সেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশ ও আন্দোলনকরীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ৪৮ নম্বর ক্যাবিনের ২ নম্বর বেডে আহত বাশারের চিকিৎসা চলছে। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয় গত সোমবার সন্ধ্যায়।
বাশার সংবাদকে বলেন, গুলি লাগার পর তাকে প্রথমে খানপুর হাসপাতালে (নারায়ণগঞ্জ) নেয়া হয়। কিন্তু সেই হাসপাতাল শুধু ব্যান্ডিস করে ছেড়ে দেয়। পরে আলিফ মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে গেলেও ‘সিরিয়াস অবস্থা’ বলে ভর্তি নেয়নি।
‘খানপুর হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। এরপর আলিফ ছাড়াও কয়েকটা হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমার অবস্থা সিরিয়াস বলে ভর্তি করেনি। পরে ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। কিন্তু এখানেও শুধু ড্রেসিং করে বাসায় নিয়ে যেতে বলে।’
এরপর নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের ফুফুর বাসায় চিকিৎসা চলে। তবে সপ্তাহে একবার করে ঢাকা মেডিকেলে আসা হতো। পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এভাবে এক মাসেও পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছিল না বলে জানান বাশার।
‘বাসায় চিকিৎসা চলার মধ্যে আমার ইনফেকশান হয়েছিল। পরে গত ২২ আগস্ট আমার ভর্তি নেয় ঢাকা মেডিকেল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। এখন হাড়ের অপারেশন হবে।’
হাসপাতালে বাশারের দেখবাল করছেন তার দাদী। তিনি বলেন, ‘এই পুলারে লইয়া কি যে বিপদে আছি। হের চিকিৎসার লাইগা বাপে কিস্তি উঠাইছে। কিস্তির চাপ। দেনা করে চলতে হচ্ছে।’
বাশার ও তার স্বজনের ভাষ্য, হাসপাতালে ভর্তি নেয়ার পর চিকিৎসা বিনামূল্যে করতে পারছেন। কিন্তু এর বাইরেও অনেক খরচ হচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালে ভর্তির আগের একমাস সরকারের কোনো সুবিধা পায়নি। এতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে।
‘বাসায় যতদিন চিকিৎসা চলছে ততদিন কোনো সুবিধা পাই নাই। হাসপাতালে যাইয়া নিজের খরচে ড্রিসিং করতে হতো। ওষুধ কিনতে হতো। আমাদের অনেক টাকা গেছে। বাপে কিস্তি পর্যন্ত তুলেছে। আমার ছোট ভাই একটা সেভেন ও একটা ফাইভে পড়ে। ছোট বোনও আছে। আমার (চিকিৎসা) খরচ ও পরিবার খরচ চালাতে মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হচ্ছে। আবার কিস্তিরও চাপ আছে, ’ বলেন বাশার।