alt

জাতীয়

স্বপ্ন পূরণের আগে দমে যেও না : ইউনূস

বাসস : সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র সংগঠক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’ তিনি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁও অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইউনূস। কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।

অধ্যাপক ইউনূস গত ১৫ বছরের অপশাসনের কথা স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এতদিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিল এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। এরা কি এখন চুপচুপ বসে থাকবে। না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদেরকে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’

দেশের সফল অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুযোগ আসেনি। তবে সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যত থাকবে না। রাষ্ট্র আর থাকবে না। কাজেই এটা শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা করতে হবে।’

তরুণরা কোনো যাদুমন্ত্রে বাংলাদেশে বিপ্লব সংঘটন করেছে, তা দেখতে সারা দুনিয়ার মানুষ এদেশে আসবে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দুনিয়ার মানুষ দেখতে আসবে, তোমাদের কাছ থেকে শিখতে আসবে। তোমাদের কাছে জানতে চাইবে- কোন মন্ত্র দিয়ে এই বিপ্লব করেছো। এই মন্ত্র তারা শিখতে চাইবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মন্ত্র কী, সেটা হয়ত তোমরা বুঝতে পারছো না। এটা একটা বড় মন্ত্র। এই মন্ত্র ধরে রাখো। মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়, আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদেরকে দেখতে না হয়।’

অভ্যুত্থান পরবর্তীতে তরুণরা দেশের হাল ধরেছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, তরুণরা দেশের হাল ধরেছে, তারা অনন্য এক বাংলাদেশ তৈরি করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ ও সঠিক। তোমরা নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকো। কেউ যদি স্বপ্ন পূরণের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়, সেটা গ্রহণ করো না।

তিনি বলেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে যদি আমরা দূরে সরে যায়, দেশবাসী তাহলে আমাদেরকে সতর্ক করে দেবে। আমাদের কারোর কোনো ইচ্ছা নেই এই স্বপ্নের বাইরে যাওয়ার। আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ হলো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। একযোগে এই কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেখছি আর ভাবছি কী একটা স্বপ্ন আমাদের সবার সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছো। যারা শহিদ হয়েছে, তাদের স্মরণ করি। যারা শহিদ হয়েছে, তারা চলে গেছে। তোমাদের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম তোমরাও শহিদ হয়ে যেতে পারতে। শহিদরা আজ আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো, সেই সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি।

আহতদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গিয়ে ইউনূস বলেন, ‘যখন হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এইরকমভাবে কীভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই দিকে পা চলে গেছে, ওই দিকে মাথা।’

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে ইউনূস বলেন, ‘একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বললো, ফুটফুটে একটা ছেলে, স্যার আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে স্যার ক্রিকেট খলেবো কী করে? ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আহতদের যতবার দেখি ততবার মনে প্রশ্ন জাগে, কী বাংলাদেশ আমরা বানিয়েছি যে এতগুলো তাজা প্রাণ, তাদেরকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো। আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের মূল্যের স্বপ্ন পূরণ করা।’

নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাওয়ার কথা স্মরণ করে ইউনূস বলেন, ‘গতকাল একটা হাসপাতালে গেলাম আবার সেই দৃশ্য কঁচি কঁচি প্রাণ, মাথার খুলি উড়ে গেছে। মাথার অর্ধেক নাই, গুলি মাথার ভেতর রয়ে গেছে। রংপুরের হাসপাতালের দৃশ্য, এক্স-রে’তে দেখা যাচ্ছে ওখানে দাগ ছোট ছোট ফুটো করা, আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে কী দেখাচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম। এগুলো কী? এতগুলো গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে, সে বেঁচে আছে রাবার বুলেট, যতবার দেখি যতবার শুনি আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয় যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করবো। এটার থেকে আমাদের বেরিয়ে যাবার উপায় নেই।’

তিনি বলেন, আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইলো, আমরা স্বপ্ন পূরণ করবো। হাসপাতালের দৃশ্য এবং আন্দোলনের প্রতিদিনের ঘটনা মানুষকে জানাতে হবে বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যাতা এবং সমতার ভিত্তিতে।’

তিনি প্রতিবেশীর সঙ্গে পারস্পারিক সমান সম্মান এবং ন্যায্যাতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষাথীদের এক প্রশ্নের উত্তরে ভারত-বাংলদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করতে আগ্রহী।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আজ সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া ১৫০ জন ছাত্র প্রতিনিধি সরকার প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ইভিএম বাদ, নতুন নীতিমালায় বড় পরিবর্তন

ছবি

হত্যাকারীদের বিচার না করে নির্বাচন নয়: নাহিদ

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারীর পর্যায়ে: উপদেষ্টা

শ্রীপুরে বই আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক কারাগারে

ওসমানী হাসপাতালের বারান্দায় দুই নারীর সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু

বিএমইটির ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে কেএনএফ কমান্ডারসহ নিহত ২

ছবি

সিলেটে পাথর কোয়ারী ‘দখল’: সবার স্বপ্ন এক

তাভেল্লা হত্যা: তিনজনের যাবজ্জীবন

ছবি

‘অপরাধকে লেবাস দিয়ে কালারিং করার প্রয়োজন নাই’

সরকারি কর্মচারীদের তদন্ত ছাড়া শাস্তি নয়, অধ্যাদেশ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন

রোহিঙ্গা নাগরিক মোস্তফা ‘পাচ্ছেন জুলাই শহীদের স্বীকৃতি’

কলাবাগানে ভাঙচুর-চাঁদাবাজি: বরখাস্ত ওসি ও এসআইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে সিআইডি

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু

ভোটের আগে টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ

ছবি

কুমিল্লার মুরাদনগরে এবার গণপিটুনি, দুই সন্তানসহ নিহত হলেন নারী

কোনো সেনা সদস্য ‘গুমে’ জড়িত থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা : সেনা সদর

স্থানীয় সরকার নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা প্রকাশ

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান ও বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ইস্যুতে ‘ঐকমত্য’

ছবি

বৃষ্টি ও ঝুঁকির কারণে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলল পানি উন্নয়ন বোর্ড

ছবি

পটিয়ার ঘটনায় ওসির স্থায়ী অপসারণসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

ছবি

উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের বাছাই পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ছবি

মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশিদের বিষয়ে জানতে চেয়েছে সরকার : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৮

ছবি

৯ কোটি টাকার অনুদান, পিচিং নিয়ে নির্মাতাদের অভিযোগ

ছবি

তাভেল্লা হত্যা: তিনজনের যাবজ্জীবন, বিএনপি নেতা কাইয়ুমসহ চারজন খালাস

ছবি

জুলাই স্মৃতি উদযাপনে ‘ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি বাতিল

ছবি

সংস্কার নিয়ে ৫৩ বছরে এমন আলোচনার সুযোগ হয়নি: আলী রীয়াজ

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ব্যাপকতা ও প্রভাবের মুখে শহর: ঝুঁকি হ্রাসে ঢাকায় আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: রাষ্ট্রদূত

ছবি

সাবেক এমপি ও ক্রিকেট অধিনায়ক দুর্জয় গ্রেপ্তার

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জামিন নামঞ্জুর

‘দুর্নীতি করতে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল করা হয়’

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১, আক্রান্ত ৪১৬ জন

ভুয়া তথ্য ঠেকাতে জাতিসংঘের উদ্যোগ চান প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দালাই লামা জানালেন, পুরনো নিয়ম মেনে উত্তরসূরি ঠিক করবে ট্রাস্ট

tab

জাতীয়

স্বপ্ন পূরণের আগে দমে যেও না : ইউনূস

বাসস

ছাত্র সংগঠক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’ তিনি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁও অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইউনূস। কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।

অধ্যাপক ইউনূস গত ১৫ বছরের অপশাসনের কথা স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এতদিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিল এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। এরা কি এখন চুপচুপ বসে থাকবে। না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদেরকে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’

দেশের সফল অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুযোগ আসেনি। তবে সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যত থাকবে না। রাষ্ট্র আর থাকবে না। কাজেই এটা শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা করতে হবে।’

তরুণরা কোনো যাদুমন্ত্রে বাংলাদেশে বিপ্লব সংঘটন করেছে, তা দেখতে সারা দুনিয়ার মানুষ এদেশে আসবে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দুনিয়ার মানুষ দেখতে আসবে, তোমাদের কাছ থেকে শিখতে আসবে। তোমাদের কাছে জানতে চাইবে- কোন মন্ত্র দিয়ে এই বিপ্লব করেছো। এই মন্ত্র তারা শিখতে চাইবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মন্ত্র কী, সেটা হয়ত তোমরা বুঝতে পারছো না। এটা একটা বড় মন্ত্র। এই মন্ত্র ধরে রাখো। মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়, আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদেরকে দেখতে না হয়।’

অভ্যুত্থান পরবর্তীতে তরুণরা দেশের হাল ধরেছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, তরুণরা দেশের হাল ধরেছে, তারা অনন্য এক বাংলাদেশ তৈরি করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ ও সঠিক। তোমরা নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকো। কেউ যদি স্বপ্ন পূরণের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়, সেটা গ্রহণ করো না।

তিনি বলেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে যদি আমরা দূরে সরে যায়, দেশবাসী তাহলে আমাদেরকে সতর্ক করে দেবে। আমাদের কারোর কোনো ইচ্ছা নেই এই স্বপ্নের বাইরে যাওয়ার। আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ হলো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। একযোগে এই কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেখছি আর ভাবছি কী একটা স্বপ্ন আমাদের সবার সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছো। যারা শহিদ হয়েছে, তাদের স্মরণ করি। যারা শহিদ হয়েছে, তারা চলে গেছে। তোমাদের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম তোমরাও শহিদ হয়ে যেতে পারতে। শহিদরা আজ আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো, সেই সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি।

আহতদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গিয়ে ইউনূস বলেন, ‘যখন হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এইরকমভাবে কীভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই দিকে পা চলে গেছে, ওই দিকে মাথা।’

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে ইউনূস বলেন, ‘একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বললো, ফুটফুটে একটা ছেলে, স্যার আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে স্যার ক্রিকেট খলেবো কী করে? ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আহতদের যতবার দেখি ততবার মনে প্রশ্ন জাগে, কী বাংলাদেশ আমরা বানিয়েছি যে এতগুলো তাজা প্রাণ, তাদেরকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো। আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের মূল্যের স্বপ্ন পূরণ করা।’

নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালে আহতদের দেখতে যাওয়ার কথা স্মরণ করে ইউনূস বলেন, ‘গতকাল একটা হাসপাতালে গেলাম আবার সেই দৃশ্য কঁচি কঁচি প্রাণ, মাথার খুলি উড়ে গেছে। মাথার অর্ধেক নাই, গুলি মাথার ভেতর রয়ে গেছে। রংপুরের হাসপাতালের দৃশ্য, এক্স-রে’তে দেখা যাচ্ছে ওখানে দাগ ছোট ছোট ফুটো করা, আমি বুঝতে পারলাম না আমাকে কী দেখাচ্ছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম। এগুলো কী? এতগুলো গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে, সে বেঁচে আছে রাবার বুলেট, যতবার দেখি যতবার শুনি আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয় যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করবো। এটার থেকে আমাদের বেরিয়ে যাবার উপায় নেই।’

তিনি বলেন, আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইলো, আমরা স্বপ্ন পূরণ করবো। হাসপাতালের দৃশ্য এবং আন্দোলনের প্রতিদিনের ঘটনা মানুষকে জানাতে হবে বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক দরকার। কিন্তু সেই সম্পর্ক হবে ন্যায্যাতা এবং সমতার ভিত্তিতে।’

তিনি প্রতিবেশীর সঙ্গে পারস্পারিক সমান সম্মান এবং ন্যায্যাতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষাথীদের এক প্রশ্নের উত্তরে ভারত-বাংলদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে সার্ক পুনরুজ্জীবনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করতে আগ্রহী।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আজ সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া ১৫০ জন ছাত্র প্রতিনিধি সরকার প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

back to top