alt

জাতীয়

মায়ের সঙ্গে বাবার মরদেহ নিতে মর্গে নবজাতক

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চার দিন বয়সী শিশুকন্যা মাসুমা জানে না বাবার (ইনসেটে মাসুদ) মরদেহ নিতে মা’সহ সেও মর্গে এসেছে-সংবাদ

‘মেয়ের নাম মাসুদের সঙ্গে মিলিয়ে মাসুমা রাখতে চেয়েছিলাম। মাসুদই বলেছিল। কিন্তু সেই মেয়েকেই রেখে চলে যেতে বাধ্য হলো মাসুদ। তাকে কেড়ে নেয়া হলো তার মেয়ের কাছ থেকে। আমার কাছ থেকে। এখন কী হবে আমাদের? আমার আর মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে?’ সদ্য নবজাতক কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের বাইরে বেঞ্চে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিহত রাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী মোসা. বিউটি আরা।

তিনি গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন। সেই মেয়েকে কোলে নিয়ে নিহত মাসুদের লাশ নিতে এসেছিলেন বিউটি। তিনি বলেন, ভাবতে পারিনি ওকে মর্গে দেখব। নিহত আবদুল্লাহ আল মাসুদ (৩৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিনোদপুরে মারধরের শিকার হন মাসুদ। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

হঠাৎ মাসুদের এমন মৃত্যুতে পাঁচ দিন আগে জন্ম নেয়া কন্যাসন্তান নিয়ে দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন স্ত্রী বিউটি আরা। স্বামী মাসুদকে হারিয়ে শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। অনেকটা নির্বাক হয়ে সন্তান কোলে নিয়ে বসেছিলেন। বিউটি আরা গভীর রাতে স্বামীর মৃত্যুর খবর পান।

মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা বলেন, বৃহস্পতিবার মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি। এরপর সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে গিয়ে উঠি। নিজে অসুস্থ থাকায় সংসারের কাজকর্মও ঠিকভাবে করা যাচ্ছিল না। মাসুদ বিকেলে বের হয় ওষুধ কেনার জন্য। সে যে গেল আর ফিরে এলো না।

তিনি বলেন, দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম। আমাদের পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকি। মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার জন্য কোয়ার্টার পেয়েছিল। সে নিজেও অসুস্থ ছিল। ১০ বছর ধরে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল না। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করত। মাসুদের কী দোষ ছিল? সে তো আন্দোলনের সময় অফিসে যেত, অফিস শেষ হলে বাসায় ফিরে আসত। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতো।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যান। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার ঘটনায় কোনো মামলা না হওয়ায় তাকে বোয়ালিয়া থানায় নেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

৮ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাসুদের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের উদ্দেশে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিনোদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকা-হয়েছে। এক পা না থাকা একটি পঙ্গু মানুষ কীভাবে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাবে? এটি তারা বুঝতে পারছেন না!

গত মৃত্যুর আগে নবজাতক শিশুর ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুল্লিলাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩-৯-২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সব আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খী ও বন্ধুবান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম এবং অসুস্থতা ও গণপিটুনি। তবে, বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের ওসি আরিফুল ইসলামকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন মাসুদ। ওই সময় তার ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাম পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেয়া হয় তার হাতের রগ। ওই হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আবদুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আবদুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই বহাল ছিলেন।

ছবি

ইউনূসের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের সংলাপ: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে আলোচনা

ছবি

এক ‘অত্যাচারীর’ বদলে ‘আরেক অত্যাচারী’ বিকল্প হিসেবে দেখছি না : দেবপ্রিয়

ছবি

কুমিল্লায় ‘কবরে’ থেকেও সমন্বয়কের মামলায় আসামি আওয়ামী লীগের মৃত ৩ নেতা

ছবি

ইলিশের দাম বেশি হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ খেতে পারেনা: মৎস্য উপদেষ্টা

ছবি

ঢাকা থেকে উপকূলীয় ৬ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে বিএনপি

ছবি

ঢাকার যানজট নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১১ প্রস্তাব

ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

ছবি

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্গাপূজায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ৭টি বিশেষ ট্রেন

ছবি

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ছবি

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন

বাবা-মায়ের পর মারা গেলো অগ্নিদগ্ধ শিশু বায়জিদও

ছবি

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিতে চান মুহাম্মদ ইউনূস-আনোয়ার ইব্রাহিম

ছবি

আরও বাংলাদেশি জনশক্তি মালয়েশিয়ায় নিতে সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি

ছবি

নিত্যপণ্যের ‘আগুন’ দামে পুড়ছে কম আয়ের মানুষ

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ৩১৭ জন, মৃত্যু নেই

ছবি

মালয়েশিয়ায় ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ

ছবি

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ছবি

ওয়াশিংটন-নিউইয়র্ক সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব

ছবি

বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসকূপ খননের কাজ দেওয়া হবে না: সরকারের সিদ্ধান্ত

ছবি

সাইবার নিরাপত্তা আইনে ১৪টি সংশোধন প্রস্তাব: বিতর্কের মধ্যে সরকারের উদ্যোগ

ছবি

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতির’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিজিবি

ছবি

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ-কাতার বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু

টাইম ১০০ নেক্সট ২০২৪-এ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

ছবি

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার

ছবি

৫ সংস্কার কমিশনের সদস্যদের নাম দিয়ে প্রজ্ঞাপন, থাকবে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিও

‘আয়নাঘরের’ আলামত নষ্টের প্রমাণ পেয়েছে গুম কমিশন

ছবি

গবেষণা: শিশুদের খেলনায় ক্ষতিকর রাসায়নিক

ছবি

অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত থেকে জনগণের স্বার্থ রক্ষার তাগিদ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের

গজারিয়ায় আওয়ামী লীগের ৫ কর্মী আটক,হত্যা মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ

ছবি

ডিসি নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ

ছবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

tab

জাতীয়

মায়ের সঙ্গে বাবার মরদেহ নিতে মর্গে নবজাতক

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

চার দিন বয়সী শিশুকন্যা মাসুমা জানে না বাবার (ইনসেটে মাসুদ) মরদেহ নিতে মা’সহ সেও মর্গে এসেছে-সংবাদ

সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘মেয়ের নাম মাসুদের সঙ্গে মিলিয়ে মাসুমা রাখতে চেয়েছিলাম। মাসুদই বলেছিল। কিন্তু সেই মেয়েকেই রেখে চলে যেতে বাধ্য হলো মাসুদ। তাকে কেড়ে নেয়া হলো তার মেয়ের কাছ থেকে। আমার কাছ থেকে। এখন কী হবে আমাদের? আমার আর মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে?’ সদ্য নবজাতক কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের বাইরে বেঞ্চে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিহত রাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদের স্ত্রী মোসা. বিউটি আরা।

তিনি গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন। সেই মেয়েকে কোলে নিয়ে নিহত মাসুদের লাশ নিতে এসেছিলেন বিউটি। তিনি বলেন, ভাবতে পারিনি ওকে মর্গে দেখব। নিহত আবদুল্লাহ আল মাসুদ (৩৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিনোদপুরে মারধরের শিকার হন মাসুদ। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

হঠাৎ মাসুদের এমন মৃত্যুতে পাঁচ দিন আগে জন্ম নেয়া কন্যাসন্তান নিয়ে দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন স্ত্রী বিউটি আরা। স্বামী মাসুদকে হারিয়ে শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন। অনেকটা নির্বাক হয়ে সন্তান কোলে নিয়ে বসেছিলেন। বিউটি আরা গভীর রাতে স্বামীর মৃত্যুর খবর পান।

মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা বলেন, বৃহস্পতিবার মিশন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি। এরপর সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে গিয়ে উঠি। নিজে অসুস্থ থাকায় সংসারের কাজকর্মও ঠিকভাবে করা যাচ্ছিল না। মাসুদ বিকেলে বের হয় ওষুধ কেনার জন্য। সে যে গেল আর ফিরে এলো না।

তিনি বলেন, দেড় বছর আগে দুই পরিবারের অমতে আমরা বিয়ে করেছিলাম। আমাদের পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকি। মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার জন্য কোয়ার্টার পেয়েছিল। সে নিজেও অসুস্থ ছিল। ১০ বছর ধরে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল না। কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাফেরা করত। মাসুদের কী দোষ ছিল? সে তো আন্দোলনের সময় অফিসে যেত, অফিস শেষ হলে বাসায় ফিরে আসত। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতো।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যান। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার ঘটনায় কোনো মামলা না হওয়ায় তাকে বোয়ালিয়া থানায় নেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

৮ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাসুদের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের উদ্দেশে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিনোদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকা-হয়েছে। এক পা না থাকা একটি পঙ্গু মানুষ কীভাবে ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাবে? এটি তারা বুঝতে পারছেন না!

গত মৃত্যুর আগে নবজাতক শিশুর ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুল্লিলাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩-৯-২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সব আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খী ও বন্ধুবান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, মৃত্যুর কারণ হিসেবে আপাতত মনে করা হচ্ছে শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখম এবং অসুস্থতা ও গণপিটুনি। তবে, বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের ওসি আরিফুল ইসলামকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন মাসুদ। ওই সময় তার ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাম পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেয়া হয় তার হাতের রগ। ওই হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আবদুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আবদুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই বহাল ছিলেন।

back to top