সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের দিন ৪ আগস্ট বিকেল থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে দেশের ৬৮টি জেলা ও মহানগরে সর্বমোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৯ জন হত্যার শিকার হয়েছে। এছাড়া ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন। ৯১৫টি বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৯৫৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বসতবাড়ী দখল হয়েছে ১টি। জমি/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে ২১টি। শারীরিক নির্যাতনে যখম হয়েছে ৩৮জন। সর্বমোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ১৭০৫টি পরিবারের সদস্যরা সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে। পরিবারগুলোর মধ্যে ১৫৭টি পরিবার রয়েছে যারা ইতোমধ্যে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এবং বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন বাকপ্রতিবন্ধী। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার ১৭০৫টি পরিবারের মধ্যে ৩৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিবার রয়েছে, যাদের বসতবাড়ী লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারের জমি জবরদখল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতিটি বিভাগেই এ ঘটনা ঘটেছে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও লোকজন আক্রান্ত হয়েছে। এ ১৭ দিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নর-নারী, কিশোর-কিশোরী, শিশু ও প্রতিবন্ধি মানুষ সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে এবং ট্রমায় আক্রান্তের সংখ্যা সারাদেশে আনুমানিক ২ কোটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা বর্তমানে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিন কালাতিপাত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি মি. নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে ১৯৭২ পরবর্তী ১৯৯০, ১৯৯২, ২০০১ থেকে ২০০৬, ২০১৩ থেকে ২০২১ এবং তৎপরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের বৃহদাংশ হিন্দু সম্প্রদায়, নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিগত সামরিক-বেসামরিক কোন সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হাজারো নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা কোনটিরই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি বা দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের ১৯-২০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ২০২৪ এ নেমে প্রায় ৮.৬%-এ এসে দাঁড়িয়েছে।
পঠিত বক্তব্যে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে শেখ হাসিনা পতন-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনাবলীর পাশাপাশি ১৯৯০-র অক্টোবর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার ঘটনাবলীর নিরপেক্ষ তদন্ত জাতিসংঘের তত্বধানে করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তথ্যানুসন্ধানে হাইকোর্টের নির্দেশনায় ২০০৯ সালে শাহাবউদ্দিন কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিটি ২০১১ সালে পূর্বতন সরকারের কাছে সুপারিশসম্বলিত রিপোর্ট পেশ করলেও তা’ আদৌ আলোর মুখ দেখে নি, সুপারিশ বাস্তবায়ন দূরের কথা। ২০১৩ সালের পর থেকে ২০২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে তারও কোন বিচার হয়নি। ২০২১ সালের দুর্গাপূজোর সময়কালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরুর পরপরই তৎকালীন এ্যাটর্নী জেনারেলের সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজের কাছে আবেদন দায়েরের সাথে সাথে তা স্থগিত হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় রুজুকৃত দুটি হত্যা মামলায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মানবাধিকার নেতা এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা দায়েরে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, দেশে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টার্গেট করে সমাজের এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে, বাড়িঘরে আজও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্গাপূজোর প্রতিমা ভাংচুর করা হচ্ছে। চাঁদাবাজিও অব্যাহতভাবে চলছে। সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষের মনোজাগতিক উপলব্ধিতে থাকা ভারতবিরোধীতা হিন্দুবিরোধীতায় পর্যবসিত হয়েছে। এরূপ মানসিকতাদোষে দুষ্ট এক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্বৃত্ত মহলবিশেষের প্ররোচনায় ও ইন্ধনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও পদত্যাগের হুমকি দিয়ে চলেছে। এসব ঘটনার সাথে যুক্ত দুর্বৃত্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
নির্মল রোজারিও মানবাধিকার নেতা রাণা দাশগুপ্তসহ সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জাতিসংঘের তত্তাবধানে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলীর সুষ্ঠু তদন্ত এবং চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অনতিবিলম্বে অবসানের দাবিতে আগামীকাল ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিকেল ৪টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। ঢাকায় এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় ও রঞ্জন কর্মকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট দিপংকর ঘোষ, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক বলরাম বাহাদুর, সহ-পেশাজীবী বিষয়ক সম্পাদক সুবীর দত্ত, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযোগ
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের দিন ৪ আগস্ট বিকেল থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে দেশের ৬৮টি জেলা ও মহানগরে সর্বমোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৯ জন হত্যার শিকার হয়েছে। এছাড়া ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ জন। ৯১৫টি বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৯৫৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বসতবাড়ী দখল হয়েছে ১টি। জমি/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে ২১টি। শারীরিক নির্যাতনে যখম হয়েছে ৩৮জন। সর্বমোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ১৭০৫টি পরিবারের সদস্যরা সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে। পরিবারগুলোর মধ্যে ১৫৭টি পরিবার রয়েছে যারা ইতোমধ্যে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এবং বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন বাকপ্রতিবন্ধী। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার ১৭০৫টি পরিবারের মধ্যে ৩৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিবার রয়েছে, যাদের বসতবাড়ী লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারের জমি জবরদখল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতিটি বিভাগেই এ ঘটনা ঘটেছে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও লোকজন আক্রান্ত হয়েছে। এ ১৭ দিনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নর-নারী, কিশোর-কিশোরী, শিশু ও প্রতিবন্ধি মানুষ সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে এবং ট্রমায় আক্রান্তের সংখ্যা সারাদেশে আনুমানিক ২ কোটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা বর্তমানে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিন কালাতিপাত করছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি মি. নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে ১৯৭২ পরবর্তী ১৯৯০, ১৯৯২, ২০০১ থেকে ২০০৬, ২০১৩ থেকে ২০২১ এবং তৎপরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাদের বৃহদাংশ হিন্দু সম্প্রদায়, নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিগত সামরিক-বেসামরিক কোন সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হাজারো নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা কোনটিরই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি বা দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের ১৯-২০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ২০২৪ এ নেমে প্রায় ৮.৬%-এ এসে দাঁড়িয়েছে।
পঠিত বক্তব্যে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে শেখ হাসিনা পতন-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক নৃশংসতার ঘটনাবলীর পাশাপাশি ১৯৯০-র অক্টোবর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার ঘটনাবলীর নিরপেক্ষ তদন্ত জাতিসংঘের তত্বধানে করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তথ্যানুসন্ধানে হাইকোর্টের নির্দেশনায় ২০০৯ সালে শাহাবউদ্দিন কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিটি ২০১১ সালে পূর্বতন সরকারের কাছে সুপারিশসম্বলিত রিপোর্ট পেশ করলেও তা’ আদৌ আলোর মুখ দেখে নি, সুপারিশ বাস্তবায়ন দূরের কথা। ২০১৩ সালের পর থেকে ২০২১ সালের পূর্ব পর্যন্ত যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে তারও কোন বিচার হয়নি। ২০২১ সালের দুর্গাপূজোর সময়কালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরুর পরপরই তৎকালীন এ্যাটর্নী জেনারেলের সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজের কাছে আবেদন দায়েরের সাথে সাথে তা স্থগিত হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় রুজুকৃত দুটি হত্যা মামলায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মানবাধিকার নেতা এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলা দায়েরে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, দেশে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টার্গেট করে সমাজের এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে, বাড়িঘরে আজও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্গাপূজোর প্রতিমা ভাংচুর করা হচ্ছে। চাঁদাবাজিও অব্যাহতভাবে চলছে। সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণীর মানুষের মনোজাগতিক উপলব্ধিতে থাকা ভারতবিরোধীতা হিন্দুবিরোধীতায় পর্যবসিত হয়েছে। এরূপ মানসিকতাদোষে দুষ্ট এক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্বৃত্ত মহলবিশেষের প্ররোচনায় ও ইন্ধনে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও পদত্যাগের হুমকি দিয়ে চলেছে। এসব ঘটনার সাথে যুক্ত দুর্বৃত্তদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
নির্মল রোজারিও মানবাধিকার নেতা রাণা দাশগুপ্তসহ সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জাতিসংঘের তত্তাবধানে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাবলীর সুষ্ঠু তদন্ত এবং চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অনতিবিলম্বে অবসানের দাবিতে আগামীকাল ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিকেল ৪টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। ঢাকায় এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় ও রঞ্জন কর্মকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট দিপংকর ঘোষ, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক বলরাম বাহাদুর, সহ-পেশাজীবী বিষয়ক সম্পাদক সুবীর দত্ত, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা প্রমুখ।