পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের পর ইউপিডিএফের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও স্থবির পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। চলছে না যানবাহন, বন্ধ দোকানপাট। সতর্ক অবস্থানে নিরাপত্তা বাহিনী-সংবাদ
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের চার দিন পর স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। দুই জেলায় প্রত্যাহার করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসায় খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। তবে অবরোধ থাকায় খাগড়াছড়ি ও সাজেকে আটকা পড়েছে প্রায় দু’হাজার পর্যটক। ইউপিডিএফ’র ডাকে শনিবার সকাল থেকে ৭২ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ চলছে তিন জেলায়।
খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য অঞ্চল। প্রাণ যায় চারজনের। গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অনেকে।
খাগড়াছড়িতে আলোচিত ফার্নিচার ব্যবসায়ী মামুন হত্যাকা-ে মামলা হয়েছে। মামলায় তিন জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত নামা ১০-১২ পাহাড়ি ও বাঙালিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেÑ মো. শাকিল (২৭), মো. রফিকুল আলম (৫৬) ও মো. দিদারুল আলম। নিহতের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী মুক্তা আক্তার এজাহারে অভিযোগ করেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে তার স্বামী মো. মামুনকে অন্য আসামিদের নির্দেশে মো. শাকিল জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে সকালে জানতে পারে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলাটি দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে মোটরসাইকেল খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. মামুনকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে সহিংসতায় ছড়িয়ে পড়ে। দীঘিনালায় অর্ধশতাধিক দোকানপাটে আগুন, স্বণির্ভরে সেনাবাহিনীর ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনা অভিযোগ। সহিংসতার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন ও রাঙ্গামাটি একজনসহ ৪ জন নিহত হয়।
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় ‘পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলায় ও নির্বিচার গুলিতে’ চার জন নিহতের ঘটনা তদন্তের জন্য সরকার ঘোষিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিতে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিযেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ইউপিডিএফের সহ-সভাপতি নতুন কুমার চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে উক্ত দাবি জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ছাড়া অন্য কোনো তদন্ত কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ
তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে সাজেকে আটকা পড়েছেন এক হাজার ৫০০ জন পর্যটক। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও সব ধরনের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার খাগড়াছড়ি শহরের কিছু ব্যাটারিচালিত অটো, মোটরসাইকেল চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। অবরোধকে কেন্দ্র করে ৯টি উপজেলায় কোন ধরনের পিকেটিং বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর জানান, চলমান অবরোধে মাটিরাঙ্গায় ঢাকা-খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীণ আক্তার বলেন, ‘অবরোধের কারণে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় আটকে পড়া অন্তত ১ হাজার ৫০০ পর্যটকদের নিয়ে কোনো গাড়ি ছাড়া হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ আটকে পড়া সব পর্যটক নিরাপদ ও সুস্থ আছেন বলেও জানান শিরীণ আক্তার।
রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
রাঙ্গামাটিতে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। রোববার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বেলা ১১টা থেকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পৌরসভা এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯ মোতাবেক জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলো।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে জেলার পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
এর আগে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও সদর জোন কমান্ডারের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলেন এবং সহায়তার আশ্বাস দেন।
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকরা জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করবে। আমরা সেটি মন্ত্রণালয় প্রেরণ করব এবং পরবর্তীতে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের পর ইউপিডিএফের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও স্থবির পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। চলছে না যানবাহন, বন্ধ দোকানপাট। সতর্ক অবস্থানে নিরাপত্তা বাহিনী-সংবাদ
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের চার দিন পর স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। দুই জেলায় প্রত্যাহার করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসায় খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। তবে অবরোধ থাকায় খাগড়াছড়ি ও সাজেকে আটকা পড়েছে প্রায় দু’হাজার পর্যটক। ইউপিডিএফ’র ডাকে শনিবার সকাল থেকে ৭২ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ চলছে তিন জেলায়।
খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য অঞ্চল। প্রাণ যায় চারজনের। গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অনেকে।
খাগড়াছড়িতে আলোচিত ফার্নিচার ব্যবসায়ী মামুন হত্যাকা-ে মামলা হয়েছে। মামলায় তিন জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত নামা ১০-১২ পাহাড়ি ও বাঙালিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেÑ মো. শাকিল (২৭), মো. রফিকুল আলম (৫৬) ও মো. দিদারুল আলম। নিহতের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদী মুক্তা আক্তার এজাহারে অভিযোগ করেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে তার স্বামী মো. মামুনকে অন্য আসামিদের নির্দেশে মো. শাকিল জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে সকালে জানতে পারে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলাটি দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে মোটরসাইকেল খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. মামুনকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে সহিংসতায় ছড়িয়ে পড়ে। দীঘিনালায় অর্ধশতাধিক দোকানপাটে আগুন, স্বণির্ভরে সেনাবাহিনীর ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনা অভিযোগ। সহিংসতার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন ও রাঙ্গামাটি একজনসহ ৪ জন নিহত হয়।
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় ‘পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলায় ও নির্বিচার গুলিতে’ চার জন নিহতের ঘটনা তদন্তের জন্য সরকার ঘোষিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিতে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিযেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ইউপিডিএফের সহ-সভাপতি নতুন কুমার চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে উক্ত দাবি জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ছাড়া অন্য কোনো তদন্ত কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ
তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধের কারণে সাজেকে আটকা পড়েছেন এক হাজার ৫০০ জন পর্যটক। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও সব ধরনের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার খাগড়াছড়ি শহরের কিছু ব্যাটারিচালিত অটো, মোটরসাইকেল চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। অবরোধকে কেন্দ্র করে ৯টি উপজেলায় কোন ধরনের পিকেটিং বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর জানান, চলমান অবরোধে মাটিরাঙ্গায় ঢাকা-খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীণ আক্তার বলেন, ‘অবরোধের কারণে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় আটকে পড়া অন্তত ১ হাজার ৫০০ পর্যটকদের নিয়ে কোনো গাড়ি ছাড়া হয়নি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ আটকে পড়া সব পর্যটক নিরাপদ ও সুস্থ আছেন বলেও জানান শিরীণ আক্তার।
রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
রাঙ্গামাটিতে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। রোববার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় বেলা ১১টা থেকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার পৌরসভা এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯ মোতাবেক জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলো।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে জেলার পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
এর আগে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও সদর জোন কমান্ডারের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলেন এবং সহায়তার আশ্বাস দেন।
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকরা জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করবে। আমরা সেটি মন্ত্রণালয় প্রেরণ করব এবং পরবর্তীতে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।