গুম হওয়া পরিবারগুলোর প্রতিবাদের প্ল্যাটফরম ‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা তুলির ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে ধরে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পর আবার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ জানিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর।
সেখানে বলা হয়েছে, “রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকা থেকে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১৪৪৫ ঘটিকায় জনাব সাইফুল ইসলাম শ্যামল নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ১৬৪০ ঘটিকায় নিজ বাসায় দিয়ে আসা হয়।”
শাহীনবাগের যে বাসা থেকে শ্যামলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ওই বাসাটিই ‘মায়ের ডাক’ এর দাপ্তরিক ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেখান থেকে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। পরে রাতে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর ভাষ্য আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, “সাইফুল ইসলাম শ্যামল এর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছিল এবং যার প্রেক্ষিতে তিনি কারাভোগ করেছিলেন। এছাড়াও আরেকটি মামলায় ২০১৬ সালে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সাইফুল ইসলাম শ্যামলের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
“সাইফুল ইসলাম শ্যামল ‘মায়ের ডাক’ নামক সংগঠনের প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির বড় ভাই হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে তার পারিবারিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের অপপ্রচার অনাকাঙ্ক্ষিত।”
শাহীনবাগ কেন্দ্রীয় মসজিদের (ইসলাম সাহেবের মসজিদ) পাশে সানজিদা তুলিদের বাসা। তাদের তিনভাই ও তিনবোনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম শ্যামল তৃতীয়। ওই মসজিদ ও সংলগ্ন মাদ্রাসার মোতয়াল্লি হিসেবে রয়েছেন শ্যামল, পাশাপাশি পৈত্রিক সম্পত্তির দেখভাল করেন।
শ্যামলের ছোট ভাই স্থানীয় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও শাহীনবাগ থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ই সুমনের মা হাজেরা খাতুনকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনটি।
গত প্রায় ১১ বছর ধরে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে পেতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে গেছেন সানজিদা। ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সময় তাদের বাসায় গেছেন, এটি নিয়ে রাজনীতিতে অনেক আলোচনাও হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যে ৫৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, সানজিদা তুলি সেই কমিটিরও সদস্য।
শাহীনবাগের সেই বাসা থেকে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে ছুটে যান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, গুম হওয়া পরিবারগুলোর সদস্য, মানবাধিকারকর্মীসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় পুরনো তিনতলা বাড়িটির ড্রয়িং রুম ভর্তি মানুষ। সবাই কথা বলছেন শ্যামলকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে।
পরে বাসার ভেতরে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সঙ্গে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সানজিদা তুলি এবং তার মা হাজেরা খাতুন।
তুলি বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে একদল সেনা সদস্য তিনটি গাড়িতে করে তাদের বাসায় যান। তারা বাসায় দেড়ঘণ্টা অবস্থান করে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যান। বিকেল ৫টার পরে তারা আবার শ্যামলকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যান।
“তারা বাসায় ঢুকে সবার সঙ্গেই খুব রুঢ় আচরণ করেছে। তারা কেন এসেছে, কী অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের কিছুই বলেনি।”
তিনি বলেন, “আমি আমার এক ভাইকে হারিয়েছি। যার জন্য আমাদের পুরো পরিবারটা এখনো ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা যে মায়ের ডাক শুরু করেছিলাম এই বাসাটা হচ্ছে তার কেন্দ্র। এখান থেকে যদি এভাবে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে গুম হওয়া এই মানুষগুলোর পরিবারের কাছে কী বার্তা যাবে?”
তুলির অভিযোগের বিষয়ে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সেনাবাহিনী কর্তৃক অসৌজন্যমূলক আচরণ এর দাবি ভিত্তিহীন।”
মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪
গুম হওয়া পরিবারগুলোর প্রতিবাদের প্ল্যাটফরম ‘মায়ের ডাক’ এর সংগঠক সানজিদা তুলির ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে ধরে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পর আবার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ জানিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর।
সেখানে বলা হয়েছে, “রাজধানীর শাহীনবাগ এলাকা থেকে আজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১৪৪৫ ঘটিকায় জনাব সাইফুল ইসলাম শ্যামল নামক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ১৬৪০ ঘটিকায় নিজ বাসায় দিয়ে আসা হয়।”
শাহীনবাগের যে বাসা থেকে শ্যামলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ওই বাসাটিই ‘মায়ের ডাক’ এর দাপ্তরিক ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেখান থেকে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। পরে রাতে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর ভাষ্য আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, “সাইফুল ইসলাম শ্যামল এর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছিল এবং যার প্রেক্ষিতে তিনি কারাভোগ করেছিলেন। এছাড়াও আরেকটি মামলায় ২০১৬ সালে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সাইফুল ইসলাম শ্যামলের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
“সাইফুল ইসলাম শ্যামল ‘মায়ের ডাক’ নামক সংগঠনের প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলির বড় ভাই হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে তার পারিবারিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের অপপ্রচার অনাকাঙ্ক্ষিত।”
শাহীনবাগ কেন্দ্রীয় মসজিদের (ইসলাম সাহেবের মসজিদ) পাশে সানজিদা তুলিদের বাসা। তাদের তিনভাই ও তিনবোনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম শ্যামল তৃতীয়। ওই মসজিদ ও সংলগ্ন মাদ্রাসার মোতয়াল্লি হিসেবে রয়েছেন শ্যামল, পাশাপাশি পৈত্রিক সম্পত্তির দেখভাল করেন।
শ্যামলের ছোট ভাই স্থানীয় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও শাহীনবাগ থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ই সুমনের মা হাজেরা খাতুনকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনটি।
গত প্রায় ১১ বছর ধরে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে পেতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে গেছেন সানজিদা। ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সময় তাদের বাসায় গেছেন, এটি নিয়ে রাজনীতিতে অনেক আলোচনাও হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যে ৫৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, সানজিদা তুলি সেই কমিটিরও সদস্য।
শাহীনবাগের সেই বাসা থেকে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে ছুটে যান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, গুম হওয়া পরিবারগুলোর সদস্য, মানবাধিকারকর্মীসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় পুরনো তিনতলা বাড়িটির ড্রয়িং রুম ভর্তি মানুষ। সবাই কথা বলছেন শ্যামলকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে।
পরে বাসার ভেতরে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সঙ্গে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সানজিদা তুলি এবং তার মা হাজেরা খাতুন।
তুলি বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে একদল সেনা সদস্য তিনটি গাড়িতে করে তাদের বাসায় যান। তারা বাসায় দেড়ঘণ্টা অবস্থান করে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যান। বিকেল ৫টার পরে তারা আবার শ্যামলকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যান।
“তারা বাসায় ঢুকে সবার সঙ্গেই খুব রুঢ় আচরণ করেছে। তারা কেন এসেছে, কী অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ধরে নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের কিছুই বলেনি।”
তিনি বলেন, “আমি আমার এক ভাইকে হারিয়েছি। যার জন্য আমাদের পুরো পরিবারটা এখনো ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা যে মায়ের ডাক শুরু করেছিলাম এই বাসাটা হচ্ছে তার কেন্দ্র। এখান থেকে যদি এভাবে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে গুম হওয়া এই মানুষগুলোর পরিবারের কাছে কী বার্তা যাবে?”
তুলির অভিযোগের বিষয়ে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সেনাবাহিনী কর্তৃক অসৌজন্যমূলক আচরণ এর দাবি ভিত্তিহীন।”