alt

জাতীয়

‘আয়নাঘরের’ আলামত নষ্টের প্রমাণ পেয়েছে গুম কমিশন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে বহুল আলোচিত গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’বা বন্দিশালা-র সন্ধান পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি। বন্দীশালা ঘুরে দেখে আলামত নষ্টের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।

গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের কার্যক্রম শুরুর পর ১৩ কর্মদিবসে ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অনুসন্ধান কমিশনের সভাপতি। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলটি (জেআইসি) ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের ভেতরেই। দোতলা ওই ভবনে ২২টি সেল আছে।

কমিশনের সভাপতি বলেন, সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র‌্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছি। ১ অক্টোবর আমরা ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছি। তবে সেখানে কোনো বন্দী আমরা পাইনি। সম্ভবত ৫ আগস্টের পর সেখানে থেকে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। র‌্যাবেরটায় আমরা এখনও পরিদর্শন করি নাই, সামনে করব।’

ইতোমধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভার্চুয়ালি কাজ শুরুর পর ১৩ দিনে তারা ৪০০ অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেছেন বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। ৭৫ জন সশরীরে এসে তাদের বিবৃতি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘অনেকে লিখিতভাবে অভিযোগ পাঠিয়েছেন, অনেকে ইমেইলে পাঠিয়েছেন। আপনারা বুঝতেছেন এটা একটা সময়সাপেক্ষ কাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যারা গুম হয়েছেন, তাদের অভিযোগগুলো নিয়েই আমরা কাজ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরও আমরা ডাকব। বক্তব্যের জন্য সমন দেব। অভিযুক্তরা না এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাপ নেই আমাদের ওপর।’

তবে আয়নাঘরের বিভিন্ন আলামত নষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স তারা নষ্ট করে দিয়েছে ওয়ালে পেইন্ট করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভিক্টিমরা বলেছিল ওয়ালে তাদের অনেক কথা, নাম এগুলো লেখা ছিল। অনেকের ফোন নম্বর, অনেকের ঠিকানা লেখা ছিল। ওই জিনিসগুলো পেইন্ট হওয়ার কারণে সেটা আর আমরা ওখানে পাইনি। গত ৫ আগস্ট যখন রেজিম চেইঞ্জ হল, তার পরপরই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা।

কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগীর পরিচয় দিয়ে তাকে আলাদা করব না। প্রতিটি অভিযোগ আমরা শুনতে চাই। কী হয়েছিল তা জানতে চাই। কীভাবে আইন না মেনে বন্দী করে রাখা হয়েছিল তা বুঝতে চাই।’

৪০০ অভিযোগের মধ্যে অনেকগুলো ঘটনাই প্রথম সামনে এসেছে বলে জানান কমিশনের আরেক সদস্য মিজ নাবিলা ইদ্রিস। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় এর আগে কেউ কখনও গুম নিয়ে কথা বলেননি। থানায় তাদের জিডিও নেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা সবাইকে কমিশনে আসতে আহ্বান জানাই। আমরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে চাই। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক অভিযোগ আসছে। কেউ আসতে না পারলে ডাকযোগে, ইমেইলে অভিযোগ পাঠাতে পারেন। আমরা সেগুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আমরা ফোন করে তাদের কথাগুলো শুনে নেব।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা যাবে। গত ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন। অভিযোগ জানাতে প্রথমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হলেও পরে তা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনকালে বহু মানুষকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। সরকার পতনের পর ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা, ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাশেম আরমান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমি দীর্ঘদিন পরে ফিরে এসে তাদেরকে ‘আয়নাঘরে’ আটকে রাখার অভিযোগ তোলেন।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিখোঁজ অনেক মানুষের সন্ধান বের করার দাবি তোলেন গুমের শিকার ব্যক্তির স্বজনরা।

বিগত সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারা জানান, ১৫৫ জন গুম হওয়া ব্যক্তি এখনও তাদের পরিবারের কাছে ফেরেনি। দ্রুত তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

ছবি

বৃষ্টিপাত কমার আভাস, সরানো হলো সতর্ক সংকেত

ছবি

১৮ বিচারককে অবসরে পাঠাল সরকার

প্রধান উপদেষ্টার উপহারের আম গেলো ত্রিপুরা

৯৮৪টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ উত্তীর্ণ, ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে খসড়া অনুমোদন

৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য ভিত্তিহীন: পিএসসি

নির্মাণাধীন ভবনে সাবেক সচিব, বিচারক ও কর্মকর্তার ফ্ল্যাট, অনুসন্ধানে দুদক

দেশে আবার ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সবাই একমত: আলী রীয়াজ

সরকারি নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধনের নির্দেশনা বাতিল

এস আলম ও পরিবারের সিঙ্গাপুরে ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

অর্থ আত্মসাৎ স্বাস্থ্যের সাবেক পরিচালকসহ ২ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় সড়কে প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বার

ছবি

প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে এসএসসিতে অদম্য লিতুন জিরার চমক

ডেঙ্গু: চলতি বছরে আক্রান্ত প্রায় ১৪ হাজার, মোট মৃত্যু ৫৪ জনের

ছবি

বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনী: নাহিদ

ছবি

মোবাইল তুলতে গিয়ে ৪ চা শ্রমিকের মৃত্যু, বাগানে শোকের ছায়া

শাপলা-দোয়েল বাদ, যুক্ত হচ্ছে বেগুন, লাউ, লিচু

আইসিসিতে বিচার দাবি অ্যামনেস্টির

ছবি

নোয়াখালীতে টানা ভারী বর্ষণে পানিবন্দী ৬৩,৮৬০ পরিবার, আশ্রয়কেন্দ্রে ২৬৮ পরিবার, জনদুর্ভোগ চরমে

গণমাধ্যম সংস্কারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১২ নতুন সিদ্ধান্ত

আরপিও, নির্বাচন কর্মকর্তা, আইন সংশোধনসহ এক গুচ্ছ সুপারিশ নিয়ে ইসির বৈঠক

পাসের হারে শীর্ষে রাজশাহী, পিছিয়ে বরিশাল বোর্ড

মার্কিন শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা আজ শেষ হচ্ছে, প্রথম দিনের আলোচনায় ‘বেশিরভাগ ইস্যুতে ঐকমত্য’

ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সন্তুষ্ট বিএনপি

ছবি

১৫ বছর পর এসএসসি ও সমমানের ফলে ছন্দপতন, ১৯ লাখ পরীক্ষার্থীর ছয় লাখই ফেল

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার বিচার শুরু, দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হলেন সাবেক আইজিপি মামুন

ছবি

চীন ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

১৮ জুলাই গ্রাহকদের ১ জিবি ফ্রি ডেটা দিতে নির্দেশনা জারি করেছে বিটিআরসি

ছবি

শহীদ ও আহতদের জন্য আলাদা দুটি ফ্ল্যাট প্রকল্প একনেকে যাচ্ছে

ছবি

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী ঐচ্ছিক প্রোটোকলসহ কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

মাধ্যমিকে পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে অগ্রগতি, কিন্তু এখন মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি: আলী রীয়াজ

ছবি

শাপলা-দোয়েল বাদ, নতুন তালিকায় ১১৫ প্রতীক

ছবি

বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের এবার বাদ দেওয়ার চিন্তা

ছবি

জুলাই আহতদের জন্য ঢাকায় দেড় হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে সরকার

ছবি

শেখ হাসিনার কল রেকর্ড ‘ট্রেলারমাত্র’, উদ্ধার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা: তাজুল ইসলাম

tab

জাতীয়

‘আয়নাঘরের’ আলামত নষ্টের প্রমাণ পেয়েছে গুম কমিশন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে বহুল আলোচিত গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’বা বন্দিশালা-র সন্ধান পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারি। বন্দীশালা ঘুরে দেখে আলামত নষ্টের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন।

গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশনের কার্যক্রম শুরুর পর ১৩ কর্মদিবসে ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অনুসন্ধান কমিশনের সভাপতি। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলটি (জেআইসি) ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের ভেতরেই। দোতলা ওই ভবনে ২২টি সেল আছে।

কমিশনের সভাপতি বলেন, সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র‌্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছি। ১ অক্টোবর আমরা ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছি। তবে সেখানে কোনো বন্দী আমরা পাইনি। সম্ভবত ৫ আগস্টের পর সেখানে থেকে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। র‌্যাবেরটায় আমরা এখনও পরিদর্শন করি নাই, সামনে করব।’

ইতোমধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভার্চুয়ালি কাজ শুরুর পর ১৩ দিনে তারা ৪০০ অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেছেন বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। ৭৫ জন সশরীরে এসে তাদের বিবৃতি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘অনেকে লিখিতভাবে অভিযোগ পাঠিয়েছেন, অনেকে ইমেইলে পাঠিয়েছেন। আপনারা বুঝতেছেন এটা একটা সময়সাপেক্ষ কাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যারা গুম হয়েছেন, তাদের অভিযোগগুলো নিয়েই আমরা কাজ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরও আমরা ডাকব। বক্তব্যের জন্য সমন দেব। অভিযুক্তরা না এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি বলেন, ‘আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাপ নেই আমাদের ওপর।’

তবে আয়নাঘরের বিভিন্ন আলামত নষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স তারা নষ্ট করে দিয়েছে ওয়ালে পেইন্ট করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভিক্টিমরা বলেছিল ওয়ালে তাদের অনেক কথা, নাম এগুলো লেখা ছিল। অনেকের ফোন নম্বর, অনেকের ঠিকানা লেখা ছিল। ওই জিনিসগুলো পেইন্ট হওয়ার কারণে সেটা আর আমরা ওখানে পাইনি। গত ৫ আগস্ট যখন রেজিম চেইঞ্জ হল, তার পরপরই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা।

কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগীর পরিচয় দিয়ে তাকে আলাদা করব না। প্রতিটি অভিযোগ আমরা শুনতে চাই। কী হয়েছিল তা জানতে চাই। কীভাবে আইন না মেনে বন্দী করে রাখা হয়েছিল তা বুঝতে চাই।’

৪০০ অভিযোগের মধ্যে অনেকগুলো ঘটনাই প্রথম সামনে এসেছে বলে জানান কমিশনের আরেক সদস্য মিজ নাবিলা ইদ্রিস। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় এর আগে কেউ কখনও গুম নিয়ে কথা বলেননি। থানায় তাদের জিডিও নেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা সবাইকে কমিশনে আসতে আহ্বান জানাই। আমরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে চাই। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক অভিযোগ আসছে। কেউ আসতে না পারলে ডাকযোগে, ইমেইলে অভিযোগ পাঠাতে পারেন। আমরা সেগুলোও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আমরা ফোন করে তাদের কথাগুলো শুনে নেব।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের হাতে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা যাবে। গত ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন। অভিযোগ জানাতে প্রথমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হলেও পরে তা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনকালে বহু মানুষকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। সরকার পতনের পর ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা, ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাশেম আরমান এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমি দীর্ঘদিন পরে ফিরে এসে তাদেরকে ‘আয়নাঘরে’ আটকে রাখার অভিযোগ তোলেন।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিখোঁজ অনেক মানুষের সন্ধান বের করার দাবি তোলেন গুমের শিকার ব্যক্তির স্বজনরা।

বিগত সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তারা জানান, ১৫৫ জন গুম হওয়া ব্যক্তি এখনও তাদের পরিবারের কাছে ফেরেনি। দ্রুত তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

back to top