alt

জাতীয়

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিতে চান মুহাম্মদ ইউনূস-আনোয়ার ইব্রাহিম

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস-সংবাদ

বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। একই সঙ্গে টিকেট জটিলতায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার শ্রমিককে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান অধ্যাপক ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিম।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় ঝামেলায় পড়েছেন, প্রথম দফায় ১৮ হাজার ব্যক্তিকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশে যেসব মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরও সুবিধা দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছি।

আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশে আরও জনশক্তি প্রয়োজন। তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া সেমি কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনোলজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক, মানবিক, বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কথা বলেছি।

মালয়েশিয়ায় যেসব কর্মী আছেন তারা কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আধুনিক দাস নয়। এ বিষয়ে আমরা পরিষ্কার ধারণা রাখি। তবে বিদেশি অনেক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ রয়েছে। তাদের বিষয়টা ভিন্ন। এ দুটি বিষয়কে এক না করার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দুদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘যখন আপনারা আমাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, সাত হাজার বা তার বেশিদের বিষয় বিবেচনার জন্য, যারা নিবন্ধন করেও রাজনৈতিক অবস্থা, এখানকার অভ্যুত্থানের কারণে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেটা বিবেচনা করেছি।’

এই সংখ্যা ১৮ হাজার হওয়ার কথা অধ্যাপক ইউনূস মনে করিয়ে দিলে ইব্রাহিম বলেন, প্রথম ধাপে সাত হাজার জনের যাওয়ার উদ্যোগ দ্রুত নেয়া হবে। সব সন্তোষজনক হলে বাকিদেরও ক্রমান্বয়ে নেয়া হবে।

চলতি বছর নতুন-পুরাতন বিদেশি কর্মীদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমানের টিকেট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে ওই সময়ের মধ্যে যেতে পারেননি প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি।

বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যেতে না পারা এই কর্মীদের নিতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়ার কথাই জানালেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই ১৮ হাজার (কর্মী) সব ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে এবং এটা (যেতে না পারা) তাদের দোষ নয়। সুতরাং প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও পরিবর্তন করা আমাদের দায়িত্ব।’

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘সিন্ডিকেটের তৎপরতা’ নিয়ে এক প্রশ্নে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, এক্ষেত্রে অতীতের পদ্ধতি ভেঙে দিয়েছেন তারা। এখন ‘স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগ হচ্ছে।

‘কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়। আমাদের মাথাব্যথা হলো এটা নিশ্চিত করা যে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা যেন ঠিকমতো মানা হয়। আমাদের শ্রমিক দরকার এবং তাদের প্রতি যেন ‘আধুনিক দাসের’ মতো আচরণ করা না হয়।’

সব দেশের কর্মীদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম থাকার কথা তুলে ধরে মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে, প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হতে হবে এবং তথাকথিত ‘সিলেক্টেড’ লোকদেরও কঠোরভাবে নীতি মানতে হবে।’

শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা এবং কাজের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় কেউ ঘটালে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা তুলে ধরে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা তাদের বাদ দিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছি এবং বাদও দিয়েছি।’

অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে যে সমালোচনা হয়, সেটা ‘উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘অনুগ্রহ করে নিশ্চিত থাকুন যে, আমি নিজেও এই বাজে সিস্টেম এবং নির্যাতনের সিস্টেমের ভুক্তভোগী। সুতরাং এটাকে চলতে দেয়ার কিংবা কোনোভাবে উপেক্ষা করার সরকার আমরা নই।’

শুক্রবার দুপুর ২টার পর সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। বাংলাদেশে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকায় এটাই কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম সফর। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বিমানবন্দরে আনোয়ার ইব্রাহিমকে স্বাগত জানাতে তিন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন । এরপর বিমানবন্দরেই দুই নেতা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক উপমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আরও কিছু প্রতিনিধি আসেন।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানান হয়, ‘পুরনো বন্ধু’ আনোয়ার ইব্রাহিমকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে পেরে প্রধান উপদেষ্টা ‘খুবই আনন্দিত’।

বিমানবন্দরে একান্ত বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। অভ্যুত্থানে ছাত্র-নাগরিকের আত্মদান ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক ‘হত্যাযজ্ঞের’ বর্ণনা দেন। আলাপচারিতায় মালয়েশিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সে দেশের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ যোগাযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।

সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে দুই নেতা একই গাড়িতে করে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পৌঁছান। সেখানে তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চাই। দুই দেশই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কর্মসংস্থান তৈরি, ভিসা সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রতিদিন চারশ থেকে পাঁচশ রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে, এটা উদ্বেগের বিষয়। তবে এটির সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে। এ সংকটে কেবল বাংলাদেশই নয়, মালয়েশিয়াও ভুক্তভোগী। এটি নিরসনে একসঙ্গে কাজ করছি। বিভিন্ন আঞ্চলিক জোটকে এতে সম্পৃক্ত করার কথাও জানান তিনি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, মানুষের মর্যাদা রক্ষায় ড. ইউনূসের ভূমিকা আমরা জানি। তাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। তাই তার ওপর ভরসা রাখছি। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন থাকবে।

এ সময় ড. ইউনূস বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিজ দেশের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

ছবি

বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে উপদেষ্টা হাসান আরিফের দাফন সোমবার

ছবি

মূল্যস্ফীতি যা হচ্ছে তাই দেখাচ্ছি, ‘কারচুপি নাই’: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত সমাজের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের বিচার হয় না : উপদেষ্টা নাহিদ

ছবি

চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি, দুদিনের মধ্যে অভিযান: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

সচিবালয়ে হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত

ছবি

উপদেষ্টা মাহফুজের ফেইসবুক পোস্টে ‘তীব্র প্রতিবাদ’ ভারতের

ছবি

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, শিশুসহ নিহত ৬

ছবি

গাড়িচাপায় বুয়েটছাত্রের মৃত্যু: চালকসহ ২ জনই ছিলেন ‘মদ্যপ’

ছবি

আধুনিক উৎপাদন ও কৃষির নামে সার-কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে

ছবি

উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা গেছেন

ছবি

‘ফ্যান্টাসি থেকে’ ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা, আটকদের দুজন কিশোর

ছবি

সাবেক এমপি আনারের দেহাংশের সঙ্গে মিলেছে মেয়ের ডিএনএ

ছবি

ছুটির দিনেও খুবই অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বায়ু

ছবি

উত্তরায় রেস্টুরেন্টে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

ছবি

ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান ড. ইউনূসের

ইজতেমা ময়দান সুনশান, বিবদমান গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

ছবি

একাত্তরের বিষয়গুলো ‘আসুন মিটিয়ে ফেলি, যাতে সামনে এগোতে পারি, শেহবাজকে ইউনূস

ছবি

আগামীকাল রাজধানীতে শুরু ২ দিনব্যাপী আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা

ছবি

বদিউল আলমের বক্তব্য প্রত্যাখান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

ছবি

ডি-৮ সহযোগিতা এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দুর্নীতি বন্ধ করে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানো হবে : উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় জাদুঘরের সভাপতি হলেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম

ছবি

গুমের ঘটনায় সাবেক–বর্তমান ২০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ে আইএমএফের সম্মতি

ছবি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা হলেন এহসানুল হক সমাজী

ছবি

টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠের পাশে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ভুয়া: রিউমর স্ক্যানার

ছবি

খাদ্যের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

ছবি

বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে মালয়েশিয়া: মন্ত্রী

ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটা অংশ গ্রহনমুলক নির্বাচন হবে : রংপুরে বদিউল আলম মজুমদার

ম্যান্ডেট আছে সংস্কার শেষে নির্বাচনের : সিলেটে উপদেষ্টা সাখাওয়াত

ছবি

সংঘর্ষের দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছেন সাদ ও জুবায়েরপন্থিরা

ছবি

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের উদ্যোগ সরকারের

ছবি

মিসরে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ইজতেমা ময়দানের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে এক জনের বেশি চলাচল নিষেধ

ছবি

ইজতেমা: এটা শহীদ হয়ে জান্নাতে যাওয়ার জায়গা হতে পারে না- বললেন সারজিস

ছবি

দুই পক্ষের সংঘর্ষ: টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ খালি করার সিদ্ধান্ত

tab

জাতীয়

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিতে চান মুহাম্মদ ইউনূস-আনোয়ার ইব্রাহিম

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস-সংবাদ

শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। একই সঙ্গে টিকেট জটিলতায় মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার শ্রমিককে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানান সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিন্টালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান অধ্যাপক ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিম।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব কর্মী মালয়েশিয়ায় ঝামেলায় পড়েছেন, প্রথম দফায় ১৮ হাজার ব্যক্তিকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। বাংলাদেশে যেসব মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরও সুবিধা দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছি।

আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশে আরও জনশক্তি প্রয়োজন। তবে উভয় দেশের মধ্যে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া সেমি কন্ডাক্টর, ডেটা সেন্টার, এআই, নিউ টেকনোলজির বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক, মানবিক, বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে কথা বলেছি।

মালয়েশিয়ায় যেসব কর্মী আছেন তারা কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আধুনিক দাস নয়। এ বিষয়ে আমরা পরিষ্কার ধারণা রাখি। তবে বিদেশি অনেক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ রয়েছে। তাদের বিষয়টা ভিন্ন। এ দুটি বিষয়কে এক না করার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দুদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘যখন আপনারা আমাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, সাত হাজার বা তার বেশিদের বিষয় বিবেচনার জন্য, যারা নিবন্ধন করেও রাজনৈতিক অবস্থা, এখানকার অভ্যুত্থানের কারণে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেটা বিবেচনা করেছি।’

এই সংখ্যা ১৮ হাজার হওয়ার কথা অধ্যাপক ইউনূস মনে করিয়ে দিলে ইব্রাহিম বলেন, প্রথম ধাপে সাত হাজার জনের যাওয়ার উদ্যোগ দ্রুত নেয়া হবে। সব সন্তোষজনক হলে বাকিদেরও ক্রমান্বয়ে নেয়া হবে।

চলতি বছর নতুন-পুরাতন বিদেশি কর্মীদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমানের টিকেট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে ওই সময়ের মধ্যে যেতে পারেননি প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি।

বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যেতে না পারা এই কর্মীদের নিতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়ার কথাই জানালেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই ১৮ হাজার (কর্মী) সব ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে এবং এটা (যেতে না পারা) তাদের দোষ নয়। সুতরাং প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও পরিবর্তন করা আমাদের দায়িত্ব।’

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘সিন্ডিকেটের তৎপরতা’ নিয়ে এক প্রশ্নে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, এক্ষেত্রে অতীতের পদ্ধতি ভেঙে দিয়েছেন তারা। এখন ‘স্বচ্ছ’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগ হচ্ছে।

‘কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়। আমাদের মাথাব্যথা হলো এটা নিশ্চিত করা যে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা যেন ঠিকমতো মানা হয়। আমাদের শ্রমিক দরকার এবং তাদের প্রতি যেন ‘আধুনিক দাসের’ মতো আচরণ করা না হয়।’

সব দেশের কর্মীদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম থাকার কথা তুলে ধরে মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে, প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হতে হবে এবং তথাকথিত ‘সিলেক্টেড’ লোকদেরও কঠোরভাবে নীতি মানতে হবে।’

শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা এবং কাজের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় কেউ ঘটালে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা তুলে ধরে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা তাদের বাদ দিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছি এবং বাদও দিয়েছি।’

অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে যে সমালোচনা হয়, সেটা ‘উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘অনুগ্রহ করে নিশ্চিত থাকুন যে, আমি নিজেও এই বাজে সিস্টেম এবং নির্যাতনের সিস্টেমের ভুক্তভোগী। সুতরাং এটাকে চলতে দেয়ার কিংবা কোনোভাবে উপেক্ষা করার সরকার আমরা নই।’

শুক্রবার দুপুর ২টার পর সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। বাংলাদেশে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকায় এটাই কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম সফর। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বিমানবন্দরে আনোয়ার ইব্রাহিমকে স্বাগত জানাতে তিন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন । এরপর বিমানবন্দরেই দুই নেতা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী, পরিবহন উপমন্ত্রী, ধর্ম বিষয়ক উপমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আরও কিছু প্রতিনিধি আসেন।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানান হয়, ‘পুরনো বন্ধু’ আনোয়ার ইব্রাহিমকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে পেরে প্রধান উপদেষ্টা ‘খুবই আনন্দিত’।

বিমানবন্দরে একান্ত বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। অভ্যুত্থানে ছাত্র-নাগরিকের আত্মদান ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক ‘হত্যাযজ্ঞের’ বর্ণনা দেন। আলাপচারিতায় মালয়েশিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সে দেশের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ যোগাযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।

সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে দুই নেতা একই গাড়িতে করে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পৌঁছান। সেখানে তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চাই। দুই দেশই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কর্মসংস্থান তৈরি, ভিসা সহজীকরণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রতিদিন চারশ থেকে পাঁচশ রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে, এটা উদ্বেগের বিষয়। তবে এটির সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে। এ সংকটে কেবল বাংলাদেশই নয়, মালয়েশিয়াও ভুক্তভোগী। এটি নিরসনে একসঙ্গে কাজ করছি। বিভিন্ন আঞ্চলিক জোটকে এতে সম্পৃক্ত করার কথাও জানান তিনি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, মানুষের মর্যাদা রক্ষায় ড. ইউনূসের ভূমিকা আমরা জানি। তাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। তাই তার ওপর ভরসা রাখছি। বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন থাকবে।

এ সময় ড. ইউনূস বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম নিজ দেশের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

back to top