alt

জাতীয়

‘পণ্যের যে দাম! না খেয়ে মরণ লাগবো’

আমিরুল মোমিনিন সাগর : শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চড়া বাজার প্রতিনিয়তই চড়ছেই। নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য থেকে কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। আবার কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে হয়েছে কয়েকগুণ-বহুগুণ। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজ ও সোনালী মুরগির দাম। চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজিও। প্রায় সবজির কেজি এখন শত টাকার ওপর। কাঁচামরিচও বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০০ টাকায়। বাড়তি দাম থেকে ফার্মের মুরগির ডিম কিছুটা কমলেও সরকারের বেঁধে দেয়া দামে তা মিলছে না। তেল-চাল-ডাল-ময়দা-আলু-পেঁয়াজসহ প্রায় সব পণ্য বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আসা ক্রেতা বলছেন, নিত্যপণ্যের ‘আকাশ ছোঁয়া’ দাম! ‘না খেয়ে’ তো ‘মরণ লাগবো’। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ‘তরকারির যে দাম! ৩০-৩৫ হাজার টাকার সবজি এখন ৬০ হাজার ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কেনন লাগে।’ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ও স্থান ঘুরে এবং ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানী শ্যামলী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা রাজনের কাছে সবজির দরদাম জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘লম্বা বেগুন কেজি ১৬০ টাকা, গোল দেখুন ২২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ১০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ আড়াইশো গ্রাম ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, শুরু বই ১০০ টাকা, সিম ৩০০ টাকা।’

আপনি যে দাম বলতেছেন আসলে কি সঠিক বলতেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি কি মনে করতেছেন? যে-টা বেজতাছি (বিক্রি করতেছি) হেঁটাই।’

‘সবজির দাম এখনও কমেনি, ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নাই,’ বলেও জানান তিনি।

সবজির দাম শুনে ওই দোকানে সদাই করতে আসা ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী নকিব উচ্চস্বরে হাসতে (হা-হা-হা-হা) হাসতে বললেন, ‘দেশ ছেড়ে ভারত গেলে ভালো হইবো। ভারতে তো, অর্ধেকেরেও কম হইবো (পণ্যের দাম)।’

আপনি ভারতে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘হ’। কতদিন ছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম বহুদিন। রোগী নিয়ে গিয়েছিলাম। অনেকের ঘরে তো ২ কেজির নিচে (সবজি) হয় না, চাউল লাগবো, এইটা লাগবো, ঐইটা লাগবো। জিনিসের (পণ্যের) যে দাম দেখতেছি, না খেয়ে তো মরণ লাগবো।’

এমন সময় ওই দোকানে সদাই করতে আসা আরেক ক্রেতা দুটি লেবুর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা জানালেন ২০ টাকা। এরপর ক্রেতা বললেন তিনটা বিশ টাকা দেই। এবার ওই সবজি দোকানি বলে উঠলেন অসম্ভব।’

ওই সবজি বিক্রেতা রাজন নিজ থেকেই বললেন, ‘তরকারির যে দাম! ৬০ হাজার ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তরকারি কেনন লাগে।’ আগে এইসব তরকারি কিনতে কত লাগতো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ‘ত্রিশ-পাঁয়ত্রিশ (৩০-৩৫) হাজার টাকা।’

রাজনের দোকান থেকে কয়েকটি দোকান পর সৈকতের সবজির দোকান। তার কাছে সবজির দামের বিষয় জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কোন কোনটার দাম ১০ টাকা বাড়ছে আবার কোনটার দাম ১০ টাকা কমছে । সবজির কাহিনী হলো দোকানদাররা কেজিতে দশ টাকা বেশি চাইবে। আর যারা পরিচিত কাস্টমার তাদের সঙ্গে দুই নাম্বারি করা যায় না। যে দামে বিক্রি করি, সেই দামেই যাওয়া হয়।’

অপরিচিত কাস্টমার যদি দরদাম না করে তাহলে সে কি ১০ টাকা ধরা খাবে? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ সে ধরা খাবে। দরদাম করতেই হবে। কিছু ....কাস্টমারের জন্য এমনটা হয়েছে।’

সৈকতের সঙ্গে কথা বলতেই অন্য দোকান ডিম-আলু কিনে এই সবজি দোকানে সদাই করতে এলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মোফাজ্জল। তার হাতে ডিম আলু দেখে জানতে চাইলাম কত করে কিনলেন? তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ডিম ৫৫ টাকা হালি, ৫ টাকা কমছে। আর আলু ৬০ টাকা কেজি।

বাজারের দরদামের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে কোনো সিস্টেম নাই। চড় চড়া সব কিছুর দাম চড়া। সিন্ডিকেট যত দিন পর্যন্ত ভাঙতে না পারবে ততদিন দাম কমবে না। এই সরকার যদি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে জীবনেও কেউ আর ভাঙতে পারবে না।’

‘আমি বেতন পাই ২০ হাজার টাকা, লাগতাছে ২৫ হাজার, ৩০ হাজার। আর পাঁচ-দশ হাজার টাকা কই পামু।’ সামাল দিচ্ছেন কিভাবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘ঋণ হইতেছে।’

রাজধানীর সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে ও বাজার ভেদে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, বরবটি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। এক বাজার থেকে থেকে অন্য বাজারে সবজির দামের ব্যবধান কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। শ্যামলী কাঁচা বাজারে যে বেগুন কেজি ১৪০ বিক্রি হতে দেখা গেছে একই বেগুন সেগুন বাগিচা কাঁচা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আবার শ্যামলীতে বরবটি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও সেগুন বাগিচায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। অনুরুপ বেশকিছু পণ্যের দামের কিছুটা তারতম্য লক্ষ করা গেছে।

বাজারে দাম রেড়েছে সোনালী মুরগির। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। একই মুরগি দুই সপ্তাহ বিক্রি হয়েছিল ২৮০ টাকায়। আর তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২৬০ টাকায়। আর বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

আবারও বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা রেড়ে জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। একই পেঁয়াজ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

তবে, কিছুটা কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে বাজার ও স্থান ভেদে লাল রংয়ের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। একই ডিম গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়।

ওই বাজারে মুরগি বিক্রেতা হেলাল সংবাদকে জানালেন সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। কেজি বিক্রি করছেন ৩২০ টাকায়।’ ‘দাম আরও বাড়তে পারে,’ বলে জানালেন তিনি।

শুক্রবার রাজধানী সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারে ফাহিমের দোকানে ১৬৫ টাকা দরে ২ ডজন ডিম কিনে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া। বাজারে পণ্যের দামের বিষয়ে জানতে চাই তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কিয়ের (কিসের) দাম কমছে। খালি ডিমের দাম টা একটু কমেছে, তাও ডজন ১৬৫ টাকা।’

‘কী কিনবেন? ১২০ টাকা কেজি বেগুন, ৯০ টাকা মিস্টি কুমড়ার কেজি। ক্যমনে কমলো, কী কমলো, বলেন? আকাশ ছোঁয়া দাম।’

নিজের বাজার খরচের ব্যাগ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেখেন, ১ হাজার টাকার বাজার। ১ হাজার টাকার থেকে ৩০ টাকা ফিরছে। আমাগো মতো মানুষের....।’

১ হাজার টাকায় কী কী কিনলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘১ কেজি পোটল, ১ কেজি বেগুন, ১ কেজি আলু, তারপরে ১ কেজি মিষ্টি কুমুর ১ কেজি পেঁয়াজ আর একটু রসুন, ২০০ গ্রাম আদা আর ২ ডজন ডিম। চলে গেল ১ হাজার টাকা।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভোক্তা পর্যায়ে বেঁধে দোয়া দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোক্তা পর্যায়ে ১ কেজি বেগুনের যৌক্তিক মূল্য ৪৬ টাকা ৪৫ পয়সা হলেও বাজারে তা দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। পোটলের যৌক্তিক মূল্য ৪১ টাকা শূন্য ৬ পয়সা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকায়। কাঁচা মরিচের যৌক্তিক মুল্য কেজি ৬০ টাকা ২০ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি কয়েক গুণ দামে কেজি ৪০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি যৌক্তিক মূল্য ৬৫ টাকা ৪০ পয়সা হলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার যৌক্তিক মূল্য কেজি ৩২ টাকা ২৮ পয়সা নির্ধারণ করা থাকলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

হঠাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, ক্ষমা চাইলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা

দ্রব্যমূল্য : নিয়মনীতির ‘তোয়াক্কা করা হবে না’, আমলাদের হুঁশিয়ারি উপদেষ্টা আসিফের

ছবি

রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা হারাধন রায় নিহত ঘটনায় হত্যা মামলা নেবার প্রতিবাদে ১২ ঘন্টা আলটিমেটাম

যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন থেকে প্রথম দফায় ফিরছেন ৫৪ বাংলাদেশি

ছবি

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ও জামায়াতের পক্ষে অলি আহমেদের মন্তব্য

বিএসএমএমইউতে রোগিদের সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে-ডা.জাহিদ

ছবি

গণফোরামের সংলাপ: রাষ্ট্র সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান

ছবি

পুলিশ ট্রমায় রয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি সময়সাপেক্ষ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে শিগগির সার্চ কমিটি গঠন

ছবি

জুলাই-অগাস্ট মাসে গণহত্যার তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি

ছবি

স্থায়ী চাকরির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ আউটসোর্সিং কর্মীদের, যানজট

ছবি

সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ না করার দাবি

ছবি

সরকার পতনে জয়ী ভাবা অনেক দলের এজেন্ডায় রাষ্ট্র সংস্কার চিন্তা নেই : ড. ইফতেখারুজ্জামান

ছবি

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার একমাত্র এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার : আসিফ নজরুল

ছবি

ঢাকা সফরে আসছেন ফলকার টুর্ক

ছবি

বিকাল ৩ টা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

হত্যা মামলায় কামাল মজুমদার তিন দিনের রিমান্ডে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বিভ্রান্তি: ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্য

ছবি

পল্লী বিদ্যুতে অস্থিতিশীলতা : রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ৬ কর্মকর্তা রিমান্ডে

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

ছবি

গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য-এর দ্রোহ-দাহ স্বপ্নযাত্রা, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণের প্রত্যয়

ছবি

চিকিৎসা শেষে কাজে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

লেবানন থেকে ফিরতে চান ১৮০০ বাংলাদেশি

ছবি

বাংলাদেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ১৭ লাখ: জাতিসংঘ

ছবি

নির্বাচন কবে হতে পারে, জানালেন আসিফ নজরুল

ছবি

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প

ছবি

বায়তুল মোকাররম মসজিদের নতুন খতিব আবদুল মালেক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে রিভিউ আবেদনে ১০ যুক্তি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা, সঙ্গে আরও ৪৫

ছবি

হাসিনাকে এক মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত হলো আরও ৪ কমিশন, নেতৃত্বে যারা

ছবি

শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, ভারতেই থাকবেন: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি

রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই মতিয়া চৌধুরীর শেষ বিদায়

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮ জনের মৃত্যু

ছবি

২০২৫ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন দিলো সরকার

ছবি

পদত্যাগ করলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন

tab

জাতীয়

‘পণ্যের যে দাম! না খেয়ে মরণ লাগবো’

আমিরুল মোমিনিন সাগর

শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চড়া বাজার প্রতিনিয়তই চড়ছেই। নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য থেকে কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে। আবার কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়ে হয়েছে কয়েকগুণ-বহুগুণ। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজ ও সোনালী মুরগির দাম। চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজিও। প্রায় সবজির কেজি এখন শত টাকার ওপর। কাঁচামরিচও বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০০ টাকায়। বাড়তি দাম থেকে ফার্মের মুরগির ডিম কিছুটা কমলেও সরকারের বেঁধে দেয়া দামে তা মিলছে না। তেল-চাল-ডাল-ময়দা-আলু-পেঁয়াজসহ প্রায় সব পণ্য বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আসা ক্রেতা বলছেন, নিত্যপণ্যের ‘আকাশ ছোঁয়া’ দাম! ‘না খেয়ে’ তো ‘মরণ লাগবো’। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ‘তরকারির যে দাম! ৩০-৩৫ হাজার টাকার সবজি এখন ৬০ হাজার ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কেনন লাগে।’ রাজধানীর কয়েকটি বাজার ও স্থান ঘুরে এবং ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানী শ্যামলী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা রাজনের কাছে সবজির দরদাম জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘লম্বা বেগুন কেজি ১৬০ টাকা, গোল দেখুন ২২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ১০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ আড়াইশো গ্রাম ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা, শুরু বই ১০০ টাকা, সিম ৩০০ টাকা।’

আপনি যে দাম বলতেছেন আসলে কি সঠিক বলতেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি কি মনে করতেছেন? যে-টা বেজতাছি (বিক্রি করতেছি) হেঁটাই।’

‘সবজির দাম এখনও কমেনি, ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নাই,’ বলেও জানান তিনি।

সবজির দাম শুনে ওই দোকানে সদাই করতে আসা ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী নকিব উচ্চস্বরে হাসতে (হা-হা-হা-হা) হাসতে বললেন, ‘দেশ ছেড়ে ভারত গেলে ভালো হইবো। ভারতে তো, অর্ধেকেরেও কম হইবো (পণ্যের দাম)।’

আপনি ভারতে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘হ’। কতদিন ছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম বহুদিন। রোগী নিয়ে গিয়েছিলাম। অনেকের ঘরে তো ২ কেজির নিচে (সবজি) হয় না, চাউল লাগবো, এইটা লাগবো, ঐইটা লাগবো। জিনিসের (পণ্যের) যে দাম দেখতেছি, না খেয়ে তো মরণ লাগবো।’

এমন সময় ওই দোকানে সদাই করতে আসা আরেক ক্রেতা দুটি লেবুর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা জানালেন ২০ টাকা। এরপর ক্রেতা বললেন তিনটা বিশ টাকা দেই। এবার ওই সবজি দোকানি বলে উঠলেন অসম্ভব।’

ওই সবজি বিক্রেতা রাজন নিজ থেকেই বললেন, ‘তরকারির যে দাম! ৬০ হাজার ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তরকারি কেনন লাগে।’ আগে এইসব তরকারি কিনতে কত লাগতো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, ‘ত্রিশ-পাঁয়ত্রিশ (৩০-৩৫) হাজার টাকা।’

রাজনের দোকান থেকে কয়েকটি দোকান পর সৈকতের সবজির দোকান। তার কাছে সবজির দামের বিষয় জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কোন কোনটার দাম ১০ টাকা বাড়ছে আবার কোনটার দাম ১০ টাকা কমছে । সবজির কাহিনী হলো দোকানদাররা কেজিতে দশ টাকা বেশি চাইবে। আর যারা পরিচিত কাস্টমার তাদের সঙ্গে দুই নাম্বারি করা যায় না। যে দামে বিক্রি করি, সেই দামেই যাওয়া হয়।’

অপরিচিত কাস্টমার যদি দরদাম না করে তাহলে সে কি ১০ টাকা ধরা খাবে? এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ সে ধরা খাবে। দরদাম করতেই হবে। কিছু ....কাস্টমারের জন্য এমনটা হয়েছে।’

সৈকতের সঙ্গে কথা বলতেই অন্য দোকান ডিম-আলু কিনে এই সবজি দোকানে সদাই করতে এলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মোফাজ্জল। তার হাতে ডিম আলু দেখে জানতে চাইলাম কত করে কিনলেন? তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ডিম ৫৫ টাকা হালি, ৫ টাকা কমছে। আর আলু ৬০ টাকা কেজি।

বাজারের দরদামের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে কোনো সিস্টেম নাই। চড় চড়া সব কিছুর দাম চড়া। সিন্ডিকেট যত দিন পর্যন্ত ভাঙতে না পারবে ততদিন দাম কমবে না। এই সরকার যদি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে জীবনেও কেউ আর ভাঙতে পারবে না।’

‘আমি বেতন পাই ২০ হাজার টাকা, লাগতাছে ২৫ হাজার, ৩০ হাজার। আর পাঁচ-দশ হাজার টাকা কই পামু।’ সামাল দিচ্ছেন কিভাবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘ঋণ হইতেছে।’

রাজধানীর সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে ও বাজার ভেদে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়, বরবটি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। এক বাজার থেকে থেকে অন্য বাজারে সবজির দামের ব্যবধান কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। শ্যামলী কাঁচা বাজারে যে বেগুন কেজি ১৪০ বিক্রি হতে দেখা গেছে একই বেগুন সেগুন বাগিচা কাঁচা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আবার শ্যামলীতে বরবটি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও সেগুন বাগিচায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। অনুরুপ বেশকিছু পণ্যের দামের কিছুটা তারতম্য লক্ষ করা গেছে।

বাজারে দাম রেড়েছে সোনালী মুরগির। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। একই মুরগি দুই সপ্তাহ বিক্রি হয়েছিল ২৮০ টাকায়। আর তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২৬০ টাকায়। আর বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

আবারও বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা রেড়ে জাতভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। একই পেঁয়াজ গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

তবে, কিছুটা কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে বাজার ও স্থান ভেদে লাল রংয়ের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। একই ডিম গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়।

ওই বাজারে মুরগি বিক্রেতা হেলাল সংবাদকে জানালেন সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে। কেজি বিক্রি করছেন ৩২০ টাকায়।’ ‘দাম আরও বাড়তে পারে,’ বলে জানালেন তিনি।

শুক্রবার রাজধানী সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারে ফাহিমের দোকানে ১৬৫ টাকা দরে ২ ডজন ডিম কিনে বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ সেন্টু মিয়া। বাজারে পণ্যের দামের বিষয়ে জানতে চাই তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কিয়ের (কিসের) দাম কমছে। খালি ডিমের দাম টা একটু কমেছে, তাও ডজন ১৬৫ টাকা।’

‘কী কিনবেন? ১২০ টাকা কেজি বেগুন, ৯০ টাকা মিস্টি কুমড়ার কেজি। ক্যমনে কমলো, কী কমলো, বলেন? আকাশ ছোঁয়া দাম।’

নিজের বাজার খরচের ব্যাগ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দেখেন, ১ হাজার টাকার বাজার। ১ হাজার টাকার থেকে ৩০ টাকা ফিরছে। আমাগো মতো মানুষের....।’

১ হাজার টাকায় কী কী কিনলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘১ কেজি পোটল, ১ কেজি বেগুন, ১ কেজি আলু, তারপরে ১ কেজি মিষ্টি কুমুর ১ কেজি পেঁয়াজ আর একটু রসুন, ২০০ গ্রাম আদা আর ২ ডজন ডিম। চলে গেল ১ হাজার টাকা।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভোক্তা পর্যায়ে বেঁধে দোয়া দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোক্তা পর্যায়ে ১ কেজি বেগুনের যৌক্তিক মূল্য ৪৬ টাকা ৪৫ পয়সা হলেও বাজারে তা দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। পোটলের যৌক্তিক মূল্য ৪১ টাকা শূন্য ৬ পয়সা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকায়। কাঁচা মরিচের যৌক্তিক মুল্য কেজি ৬০ টাকা ২০ পয়সা হলেও বাজারে বিক্রি কয়েক গুণ দামে কেজি ৪০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি যৌক্তিক মূল্য ৬৫ টাকা ৪০ পয়সা হলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার যৌক্তিক মূল্য কেজি ৩২ টাকা ২৮ পয়সা নির্ধারণ করা থাকলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

back to top