ক্ষমতায় থাকার লোভ নেই, সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে—জাহাজে হজযাত্রা ২০২৬ সালে
নির্বাচন কবে হবে—এই প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে বড় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই প্রধান ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তবে এই দুই জনের বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বলে উল্লেখ করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
কক্সবাজারের হিলডাউন সার্কিট হাউজে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে ধর্ম উপদেষ্টা এই তথ্য জানান। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, সেনাপ্রধান এবং আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নয়।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র দুর্বল থেকে যাবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কারের প্রেক্ষাপট
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট শপথ নেয়ার পর থেকেই একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণা করেনি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। যদি কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আরও ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “সরকার বর্তমানে সংস্কারে মনোনিবেশ করছে। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে দেশের গণতন্ত্রে স্থিতিশীলতা আসবে না। এজন্য সরকার সময় নিচ্ছে এবং গভীরভাবে কাজ করছে।”
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য
সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, “বাস্তবতার নিরিখে মনে হয় আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে।”
তবে ধর্ম উপদেষ্টা এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটি আইন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত মতামত, সরকারের বক্তব্য নয়। সরকার এখনো নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেনি।”
অন্যদিকে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য ১ থেকে ১.৫ বছরের মধ্যে সংস্কার শেষ করা উচিত।”
ক্ষমতা লোভের অভিযোগে জবাব
ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন ক্ষমতায় থাকার লোভ সংক্রান্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার অভিযোগেরও জবাব দেন। কিছু রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেছেন যে উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে এবং তারা ক্ষমতা ছাড়তে চান না।
ধর্ম উপদেষ্টা এই অভিযোগকে ‘ভুল ধারণা’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমাদের কোনো ক্ষমতা লোভ নেই। আমরা এসেছি দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্কারের জন্য, আর দায়িত্ব শেষ হলে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাব।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের কাজ একটাই, তা হলো সংস্কারের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি মজবুত করা।”
২০২৫ সালে জাহাজে হজযাত্রা সম্ভব নয়
সরকার জাহাজে করে হজযাত্রা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, “এই বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে ২০২৫ সালে এ ধরনের যাত্রা সম্ভব হবে না, তবে ২০২৬ সালে জাহাজে হজযাত্রার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।”
মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতি ও সংস্কার
ধর্ম উপদেষ্টা মডেল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে—এটি আমরা প্রমাণ পেয়েছি। কিছু মসজিদ পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ফ্লোরে ফাটল ধরা পড়েছে। এ ধরনের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে।”
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার নিয়েও কথা বলেন তিনি। “বিগত সময়ে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক ভিত্তি থেকে সরে গিয়েছিল। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানও সংস্কারের আওতায় আসবে।”
কক্সবাজারে ধর্ম উপদেষ্টার কর্মসূচি
ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন দুই দিনের সফরে কক্সবাজারে আসেন। শুক্রবার সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর নবনির্মিত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন তিনি। বিকালে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সার্কিট হাউসে একটি আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রামুর চাকমারকুল বড় মাদ্রাসা পরিদর্শন করে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ করেন ধর্ম উপদেষ্টা। শনিবার চকরিয়া-পেকুয়ায় আরও কিছু কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।
ক্ষমতায় থাকার লোভ নেই, সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে—জাহাজে হজযাত্রা ২০২৬ সালে
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
নির্বাচন কবে হবে—এই প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে বড় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই প্রধান ব্যক্তি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তবে এই দুই জনের বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত মতামত’ বলে উল্লেখ করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
কক্সবাজারের হিলডাউন সার্কিট হাউজে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে ধর্ম উপদেষ্টা এই তথ্য জানান। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, সেনাপ্রধান এবং আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নয়।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র দুর্বল থেকে যাবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কারের প্রেক্ষাপট
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট শপথ নেয়ার পর থেকেই একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণা করেনি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। যদি কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে আরও ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “সরকার বর্তমানে সংস্কারে মনোনিবেশ করছে। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে দেশের গণতন্ত্রে স্থিতিশীলতা আসবে না। এজন্য সরকার সময় নিচ্ছে এবং গভীরভাবে কাজ করছে।”
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য
সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, “বাস্তবতার নিরিখে মনে হয় আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে।”
তবে ধর্ম উপদেষ্টা এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটি আইন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত মতামত, সরকারের বক্তব্য নয়। সরকার এখনো নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেনি।”
অন্যদিকে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য ১ থেকে ১.৫ বছরের মধ্যে সংস্কার শেষ করা উচিত।”
ক্ষমতা লোভের অভিযোগে জবাব
ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন ক্ষমতায় থাকার লোভ সংক্রান্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার অভিযোগেরও জবাব দেন। কিছু রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেছেন যে উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে এবং তারা ক্ষমতা ছাড়তে চান না।
ধর্ম উপদেষ্টা এই অভিযোগকে ‘ভুল ধারণা’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমাদের কোনো ক্ষমতা লোভ নেই। আমরা এসেছি দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্কারের জন্য, আর দায়িত্ব শেষ হলে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাব।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের কাজ একটাই, তা হলো সংস্কারের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি মজবুত করা।”
২০২৫ সালে জাহাজে হজযাত্রা সম্ভব নয়
সরকার জাহাজে করে হজযাত্রা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, “এই বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে ২০২৫ সালে এ ধরনের যাত্রা সম্ভব হবে না, তবে ২০২৬ সালে জাহাজে হজযাত্রার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।”
মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতি ও সংস্কার
ধর্ম উপদেষ্টা মডেল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “মডেল মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে—এটি আমরা প্রমাণ পেয়েছি। কিছু মসজিদ পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ফ্লোরে ফাটল ধরা পড়েছে। এ ধরনের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে।”
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার নিয়েও কথা বলেন তিনি। “বিগত সময়ে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক ভিত্তি থেকে সরে গিয়েছিল। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানও সংস্কারের আওতায় আসবে।”
কক্সবাজারে ধর্ম উপদেষ্টার কর্মসূচি
ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন দুই দিনের সফরে কক্সবাজারে আসেন। শুক্রবার সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর নবনির্মিত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন তিনি। বিকালে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সার্কিট হাউসে একটি আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রামুর চাকমারকুল বড় মাদ্রাসা পরিদর্শন করে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ করেন ধর্ম উপদেষ্টা। শনিবার চকরিয়া-পেকুয়ায় আরও কিছু কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তার।