মঙ্গলবার রাত ৮টার কিছু পরে বঙ্গভবনের সামনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে আছেন শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ খান, এবং ফুটপাতের দোকানি শফিকুল ইসলাম সেলিম। যদিও আহতদের অবস্থা গুরুতর নয় বলে জানা গেছে।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মেহেদী হাসান জানান, বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে, যার ফলে কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, আহতদের অবস্থা গুরুতর নয় এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ও আন্দোলনের পটভূমি :
এ ঘটনা ঘটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলার পর। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে পৌঁছায়নি। তবে আন্দোলনকারীরা দাবি করছে, রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পেয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে তার দেওয়া বক্তব্য অসত্য। তারা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে মূলত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তারা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেন। সন্ধ্যার পর আন্দোলনকারীদের একটি দল ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয় এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গ্রেনেড ছোড়া :
সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশের গাড়িতে উঠে আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়, আর পুলিশ সেখানে পিছু হটে যায়।
আন্দোলনের নেতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ :
এই আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং আরিফ সোহেল। সংঘর্ষের পর রাতে তারা বঙ্গভবনে যান এবং সেনাবাহিনীর মাইক ব্যবহার করে বিক্ষোভরত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে উল্টো প্রতিক্রিয়া হয় এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। পরে হান্নান ও সোহেল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে পড়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি নিয়ে এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণআন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগের পর পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সে রাতেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা জানান।
কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর নতুন করে এই ইস্যুটি সামনে এসেছে। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র পাননি, যা আন্দোলনকারীদের দাবি এবং ক্ষোভের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পক্ষ থেকে এই ইস্যুকে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হলেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্য বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে চলেছে।
আইনি জটিলতা ও মতবিরোধ :
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ কথা বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং তাকে অপসারণ করা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে এখনো সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও সংসদ কার্যকর না থাকায় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনো কার্যকর উপায় আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি করা হলেও, এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
মঙ্গলবার রাত ৮টার কিছু পরে বঙ্গভবনের সামনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে আছেন শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ খান, এবং ফুটপাতের দোকানি শফিকুল ইসলাম সেলিম। যদিও আহতদের অবস্থা গুরুতর নয় বলে জানা গেছে।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মেহেদী হাসান জানান, বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে, যার ফলে কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, আহতদের অবস্থা গুরুতর নয় এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ও আন্দোলনের পটভূমি :
এ ঘটনা ঘটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলার পর। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে পৌঁছায়নি। তবে আন্দোলনকারীরা দাবি করছে, রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পেয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে তার দেওয়া বক্তব্য অসত্য। তারা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে মূলত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে তারা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেন। সন্ধ্যার পর আন্দোলনকারীদের একটি দল ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয় এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গ্রেনেড ছোড়া :
সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশের গাড়িতে উঠে আক্রমণ চালায়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়, আর পুলিশ সেখানে পিছু হটে যায়।
আন্দোলনের নেতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ :
এই আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং আরিফ সোহেল। সংঘর্ষের পর রাতে তারা বঙ্গভবনে যান এবং সেনাবাহিনীর মাইক ব্যবহার করে বিক্ষোভরত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে উল্টো প্রতিক্রিয়া হয় এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। পরে হান্নান ও সোহেল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে পড়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি নিয়ে এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণআন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগের পর পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সে রাতেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা জানান।
কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর নতুন করে এই ইস্যুটি সামনে এসেছে। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র পাননি, যা আন্দোলনকারীদের দাবি এবং ক্ষোভের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পক্ষ থেকে এই ইস্যুকে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হলেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্য বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে চলেছে।
আইনি জটিলতা ও মতবিরোধ :
রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ কথা বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন এবং তাকে অপসারণ করা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে এখনো সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও সংসদ কার্যকর না থাকায় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সরানোর কোনো কার্যকর উপায় আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি করা হলেও, এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।