alt

রাষ্ট্রপতির ভবিষ্যৎ, সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক না রাজনৈতিক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন আজকের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি তুলেছে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই দাবির কথা বলতে শুরু করেছিলেন অক্টোবরের শুরুতেই। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগের’ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতির এক বক্তব্য গত শনিবার পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টার মন্তব্যকে ঘিরে ওই দাবি প্রবল হয়েছে; ঘেরাও হয়েছে বঙ্গভবন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনো সুযোগ আছে কি না। রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় যদি পদত্যাগ করেন, সেক্ষেত্রে কার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচন করা হবে, সেটিও প্রশ্ন।

সাংবিধানিক সংকট দেখছেন কয়েকজন আইনজীবী

সংবিধান নিয়ে গবেষণা করেন এমন কয়েকজন আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব না। কারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন সংসদ সদস্যরা। রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের ক্ষমতাও জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত।’

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং পরবর্তী করণীয় প্রসঙ্গে তারা বলছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র দেবেন স্পিকারের উদ্দেশে। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত স্পিকার এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। স্পিকার পদত্যাগ করায় এটিও সম্ভব হচ্ছে না।’

ভিন্নমত তথ্য উপদেষ্টার
তবে আইনজীবীদের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি (রাষ্ট্রপতির অপসারণ) কোনো ‘সাংবিধানিক প্রশ্ন হতে পারে না’।

তার ভাষায়, ‘রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না-এ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়, এটি একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’ ‘রাজনৈতিক সমঝোতা বা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শূন্যতায় সংকট দেখছে বিএনপি

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বুধবার সকালে যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধি দল। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে দেশে ‘নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট’ যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানায় দলটি। প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ছিলেন।

বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, সেটা বিএনপির কাম্য নয়।’

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হবে- এমন তথ্য পাওয়া যায় একটি সূত্র থেকে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বুধবার দুপুরে যমুনার সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ‘সিদ্ধান্ত হয়নি’।

**নতুন আলোচনা**
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনার) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তার কাছেই শপথ নেয়।

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদকের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’

**আইন উপদেষ্টার বক্তব্য**
আর ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন ‘শপথ ভঙ্গ করেছেন’ দাবি করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, এরপরও তাকে রাষ্ট্রপতি পদে রাখা চলে কি না, তা বিবেচনার সুযোগ সংবিধানে আছে।

‘মিথ্যাচার, শপথ লঙ্ঘনের পর মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতায় আছেন কি না, এমন প্রশ্ন তুলে ‘সেটা উপদেষ্টাম-লীর সবাইকে ভেবে দেখতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

**সমর্থন অন্তর্বর্তী সরকারের **
এরপর ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তেব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার একমত।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টা এদিন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।

**পাঁচ দফা**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গত ৩ অক্টোবর এক ফেইসবুক পোস্টে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি সামনে আনেন। পরে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমও একই দাবির কথা ফেইসবুকে বলেন।

মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ‘এ সপ্তাহের মধ্যেই’ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান বাতিল, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে।

আর ‘রক্তিম জুলাই ২৪’, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি,’ ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ ‘ইনকিলাব মঞ্চ’সহ বিভিন্ন ব্যানারে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন অংশ বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।

**বঙ্গভবনের বাইরে বিক্ষোভ**
বঙ্গভবনের বাইরে তাদের বিক্ষোভ চলে গভীর রাতেও। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বঙ্গভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন সেনা সদস্যরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক রাতে বঙ্গভবনের সামনে গিয়ে দুই দিন সময় চেয়ে আন্দোলনকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও গণ অধিকার পরিষদের একাংশ অনড় থাকেন। তখন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন তারা। এ পরিস্থিতিতে মধ্যরাত পর্যন্ত বঙ্গভবনের বাইরে নাটকীয়তা চলে।

**সংবিধানে যা আছে**
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।

৫২ অনুচ্ছেদে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার সুযোগ আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং সংসদের কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে। ৫৩ অনুচ্ছেদে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে অপসারণের যে কথা বলা আছে, সেখানেও সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থনের শর্ত আছে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন জানানোর পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ফলে সংসদে অভিসংশনের কোনো সুযোগ এখন নেই বলে মন দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকেন বা দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বা রাষ্ট্রপতি আবার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার।

কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার অবর্তমানে যিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৫ আগস্ট। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণের ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা।

অবশ্য সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ক্ষেত্রমত স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে।

**আইনজীবীদের বক্তব্য**
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে এখন অপসারণ করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাবস্থা হলে রাষ্ট্রপতি সংসদ পুনর্বহাল করতে পারেন। কিন্তু এখন তো যুদ্ধাবস্থাও নয়।’

আরেক আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বা অভিসংশনের আর এখন কোনো আইনি পন্থা নেই।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে করতে পারেন। সংবিধানে বলা আছে। এছাড়া, আর কোনো সুযোগ নেই এখন।’

‘মিথ্যাচার, শপথ লঙ্ঘণের পর মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতায় আছেন কি না, সেটা উপদেষ্টাম-লীর সবাইকে ভেবে দেখতে হবে’- আইন উপদেষ্টার এই মন্তব্যের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ভাবতে পারেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদ তো রাষ্ট্রপতির কাছেই শপথ নিয়েছেন। তারা তো রাষ্ট্রপতিকে একসেপ্ট করে নিয়েছেন। ভাববে বলতে তারা দেখবে রাষ্ট্রপতিকে তারা চাচ্ছে কি চাচ্ছে না- এসব নিয়ে ভাবার তো সুযোগ আছে। উপদেষ্টা পরিষদ কেন, যে কোনো মানুষই ভাবতে পারে। যাদের ক্ষমতা আছে তারা ভাবতে পারেন। কিন্তু কিছু করার নেই।’

**ভিন্নমত**
সংসদ না থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে অপসারণ করা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভুঁইয়া একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পদত্যাগ করতে হবে।’ পদত্যাগ না করলে কী করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করতে বলতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষমতা সংসদের। এখন সংসদ নেই, তাহলে নতুন রাষ্ট্রপতি হবে কী করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তো সাংবিধানিক সরকার নেই। এটা বিপ্লবী সরকার। এখন সবকিছু সংবিধান মেনে চলবে না। কিছু সংবিধান মেনে চলবে, কিছু মেনে চলবে না। সংবিধানের স্পিরিটে কাজটা করতে হবে। এটা জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী হবে।’

তবে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, বর্তমানে সংবিধান বহাল থাকায় আইনি বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয় এখন আলোচনা করে লাভ নেই। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সংবিধানের অধীনেই শপথ নিয়েছে, এই সংবিধান অনুযায়ী চলাই তাদের দায়িত্ব।

**পরবর্তী সংসদ বৈধতা দিতে হবে **
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিনের অভিমত ছেপেছে একটি পত্রিকা। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘একটি গণ-অভ্যুত্থান যখন সফল হয়, তখন সেটা নিজেই তার বৈধতা সৃষ্টি করে। সংবিধান, প্রচলিত রীতিনীতি বা আইনকানুন তখন অকেজো এবং অকার্যকর হয়ে যায়। এ রকম অবস্থায় পুরোনো পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা বিদ্যমান সংবিধানকে পুরোপুরি বা আংশিক গ্রহণ বা বর্জনও করতে পারেন। সে পদ্ধতি অনুসারেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সৃষ্টি এবং কার্যকর হয়েছে। একই কথা রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি যদি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতিকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করতে পারে।’

তবে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই আদেশকে বৈধতা দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসেও এ রকম ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী সেভাবেই হয়েছিল।’

**রাষ্ট্রপতি অভিশংসনের ইতিহাস**
বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে তার আগেই তিনি পদত্যাগ করে ফেলায় এ বিষয়ে সংসদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে হয়নি। ২০০১ সালের নভেম্বরে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ২০০২ সালে অপসারণের উদ্যোগ নেয় তখনকার সরকার। সংসদে সেই প্রস্তুতির মধ্যে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

আর দুইজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে হত্যা করা হয়।

ছবি

প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, অবস্থান কর্মসূচি চলবে

ছবি

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারি

ছবি

রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করল ঢাকা

ছবি

গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের, বিবেচনার আশ্বাস ইসির

ছবি

অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘিরে অনিরাপদ বোধ ‘করছে না’ প্রসিকিউশন

ছবি

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় ২২ সাক্ষী হাজির

ছবি

সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ঢাকা থেকে ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করবো, পদত্যাগ ‘উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর’: আসিফ মাহমুদ

ছবি

১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় নির্ধারণ—প্রসিকিউশন বলছে, তারা অনিরাপদ নয়

ছবি

অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী হিসেবে নাম প্রত্যাহার এম সরওয়ারের

ছবি

১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউনের আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

দলগুলো না পারলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব

কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধতার বিকল্প নেই: টিআইবি

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা: নতুন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা, জানাতে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি

ছবি

৪ দিনের সফরে চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত: রাজনাথ সিং

ছবি

ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না: প্রধান বিচারপতি

ছবি

প্রধান বিচারপতি: বিচার বিভাগকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রাখতে হলে সংস্কার অপরিহার্য

ছবি

রাজশাহীতে নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর : শফিকুল আলম

সাঁওতাল হত্যা দিবস: তিন হত্যার বিচার দাবি, সাঁওতালদের বিক্ষোভ

ছবি

আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন: কমিশনের প্রতিবাদ

ছবি

ইসি শতভাগ প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: মাছউদ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

tab

রাষ্ট্রপতির ভবিষ্যৎ, সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক না রাজনৈতিক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন আজকের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি তুলেছে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই দাবির কথা বলতে শুরু করেছিলেন অক্টোবরের শুরুতেই। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগের’ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতির এক বক্তব্য গত শনিবার পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টার মন্তব্যকে ঘিরে ওই দাবি প্রবল হয়েছে; ঘেরাও হয়েছে বঙ্গভবন।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনো সুযোগ আছে কি না। রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় যদি পদত্যাগ করেন, সেক্ষেত্রে কার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচন করা হবে, সেটিও প্রশ্ন।

সাংবিধানিক সংকট দেখছেন কয়েকজন আইনজীবী

সংবিধান নিয়ে গবেষণা করেন এমন কয়েকজন আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব না। কারণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন সংসদ সদস্যরা। রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের ক্ষমতাও জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত।’

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং পরবর্তী করণীয় প্রসঙ্গে তারা বলছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র দেবেন স্পিকারের উদ্দেশে। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত স্পিকার এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। স্পিকার পদত্যাগ করায় এটিও সম্ভব হচ্ছে না।’

ভিন্নমত তথ্য উপদেষ্টার
তবে আইনজীবীদের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বুধবার (২৩ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি (রাষ্ট্রপতির অপসারণ) কোনো ‘সাংবিধানিক প্রশ্ন হতে পারে না’।

তার ভাষায়, ‘রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না-এ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়, এটি একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’ ‘রাজনৈতিক সমঝোতা বা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শূন্যতায় সংকট দেখছে বিএনপি

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বুধবার সকালে যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধি দল। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে দেশে ‘নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট’ যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানায় দলটি। প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ছিলেন।

বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, সেটা বিএনপির কাম্য নয়।’

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হবে- এমন তথ্য পাওয়া যায় একটি সূত্র থেকে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বুধবার দুপুরে যমুনার সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ‘সিদ্ধান্ত হয়নি’।

**নতুন আলোচনা**
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনার) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তার কাছেই শপথ নেয়।

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদকের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’

**আইন উপদেষ্টার বক্তব্য**
আর ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন ‘শপথ ভঙ্গ করেছেন’ দাবি করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, এরপরও তাকে রাষ্ট্রপতি পদে রাখা চলে কি না, তা বিবেচনার সুযোগ সংবিধানে আছে।

‘মিথ্যাচার, শপথ লঙ্ঘনের পর মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতায় আছেন কি না, এমন প্রশ্ন তুলে ‘সেটা উপদেষ্টাম-লীর সবাইকে ভেবে দেখতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

**সমর্থন অন্তর্বর্তী সরকারের **
এরপর ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তেব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার একমত।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টা এদিন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।

**পাঁচ দফা**
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গত ৩ অক্টোবর এক ফেইসবুক পোস্টে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি সামনে আনেন। পরে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমও একই দাবির কথা ফেইসবুকে বলেন।

মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারে সমাবেশ করে ‘এ সপ্তাহের মধ্যেই’ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, সংবিধান বাতিল, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে।

আর ‘রক্তিম জুলাই ২৪’, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি,’ ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ ‘ইনকিলাব মঞ্চ’সহ বিভিন্ন ব্যানারে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন অংশ বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।

**বঙ্গভবনের বাইরে বিক্ষোভ**
বঙ্গভবনের বাইরে তাদের বিক্ষোভ চলে গভীর রাতেও। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে বঙ্গভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন সেনা সদস্যরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক রাতে বঙ্গভবনের সামনে গিয়ে দুই দিন সময় চেয়ে আন্দোলনকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করলেও গণ অধিকার পরিষদের একাংশ অনড় থাকেন। তখন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকেন তারা। এ পরিস্থিতিতে মধ্যরাত পর্যন্ত বঙ্গভবনের বাইরে নাটকীয়তা চলে।

**সংবিধানে যা আছে**
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।

৫২ অনুচ্ছেদে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার সুযোগ আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং সংসদের কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে। ৫৩ অনুচ্ছেদে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে অপসারণের যে কথা বলা আছে, সেখানেও সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থনের শর্ত আছে।

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন জানানোর পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ফলে সংসদে অভিসংশনের কোনো সুযোগ এখন নেই বলে মন দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকেন বা দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হন, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বা রাষ্ট্রপতি আবার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার।

কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার অবর্তমানে যিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেই ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৫ আগস্ট। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণের ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা।

অবশ্য সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ক্ষেত্রমত স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে।

**আইনজীবীদের বক্তব্য**
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে এখন অপসারণ করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাবস্থা হলে রাষ্ট্রপতি সংসদ পুনর্বহাল করতে পারেন। কিন্তু এখন তো যুদ্ধাবস্থাও নয়।’

আরেক আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বা অভিসংশনের আর এখন কোনো আইনি পন্থা নেই।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে করতে পারেন। সংবিধানে বলা আছে। এছাড়া, আর কোনো সুযোগ নেই এখন।’

‘মিথ্যাচার, শপথ লঙ্ঘণের পর মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতায় আছেন কি না, সেটা উপদেষ্টাম-লীর সবাইকে ভেবে দেখতে হবে’- আইন উপদেষ্টার এই মন্তব্যের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ভাবতে পারেন। তবে উপদেষ্টা পরিষদ তো রাষ্ট্রপতির কাছেই শপথ নিয়েছেন। তারা তো রাষ্ট্রপতিকে একসেপ্ট করে নিয়েছেন। ভাববে বলতে তারা দেখবে রাষ্ট্রপতিকে তারা চাচ্ছে কি চাচ্ছে না- এসব নিয়ে ভাবার তো সুযোগ আছে। উপদেষ্টা পরিষদ কেন, যে কোনো মানুষই ভাবতে পারে। যাদের ক্ষমতা আছে তারা ভাবতে পারেন। কিন্তু কিছু করার নেই।’

**ভিন্নমত**
সংসদ না থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে অপসারণ করা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভুঁইয়া একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পদত্যাগ করতে হবে।’ পদত্যাগ না করলে কী করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করতে বলতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষমতা সংসদের। এখন সংসদ নেই, তাহলে নতুন রাষ্ট্রপতি হবে কী করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তো সাংবিধানিক সরকার নেই। এটা বিপ্লবী সরকার। এখন সবকিছু সংবিধান মেনে চলবে না। কিছু সংবিধান মেনে চলবে, কিছু মেনে চলবে না। সংবিধানের স্পিরিটে কাজটা করতে হবে। এটা জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী হবে।’

তবে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, বর্তমানে সংবিধান বহাল থাকায় আইনি বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয় এখন আলোচনা করে লাভ নেই। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সংবিধানের অধীনেই শপথ নিয়েছে, এই সংবিধান অনুযায়ী চলাই তাদের দায়িত্ব।

**পরবর্তী সংসদ বৈধতা দিতে হবে **
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিনের অভিমত ছেপেছে একটি পত্রিকা। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘একটি গণ-অভ্যুত্থান যখন সফল হয়, তখন সেটা নিজেই তার বৈধতা সৃষ্টি করে। সংবিধান, প্রচলিত রীতিনীতি বা আইনকানুন তখন অকেজো এবং অকার্যকর হয়ে যায়। এ রকম অবস্থায় পুরোনো পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা বিদ্যমান সংবিধানকে পুরোপুরি বা আংশিক গ্রহণ বা বর্জনও করতে পারেন। সে পদ্ধতি অনুসারেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সৃষ্টি এবং কার্যকর হয়েছে। একই কথা রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি যদি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতিকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করতে পারে।’

তবে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই আদেশকে বৈধতা দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসেও এ রকম ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী সেভাবেই হয়েছিল।’

**রাষ্ট্রপতি অভিশংসনের ইতিহাস**
বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে তার আগেই তিনি পদত্যাগ করে ফেলায় এ বিষয়ে সংসদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে হয়নি। ২০০১ সালের নভেম্বরে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ২০০২ সালে অপসারণের উদ্যোগ নেয় তখনকার সরকার। সংসদে সেই প্রস্তুতির মধ্যে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

আর দুইজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এবং জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে হত্যা করা হয়।

back to top