এসডোর গবেষণা
২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭ টি পণ্যেই সীসা শনাক্ত যা ৫৯ শতাংশ
শিশুদের খেলনা বর্ণমালা সেট, পানির মগ ও স্টেশনারি ব্যাগের মতো দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যে উচ্চ মাত্রায় সীসা পাওয়া গেছে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পণ্যের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সীসা ব্যবহার হচ্ছে বলে গবেষণায় বলা হয়। যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের।
দেশে এ নিয়ে এখনো কোনো আইন বা নিয়ম নেই। তবে, বেশিরভাগ দেশে সীসার নিরাপদ সীমা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার গবেষণা সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকে আয়োজিত এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এর রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাজার থেকে সংগ্রহ করা ২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭ টি পণ্যেই সীসা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৫৯ শতাংশ পণ্যে ৯০ পিপিএমের অধিক মাত্রার সীসা রয়েছে, যাতে ১৩৭০ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
‘দ্য সাইলেন্ট পয়জন: ট্রেসেস অফ লেড ইন চাইল্ডহুড ট্রেজার্স’ শীর্ষক এই গবেষণা এসডোর ২০১৩ সালের গবেষণার ধারাবাহিকতা। যা ২০২৩ সালে ফিলিপাইনের ‘ব্যান টক্সিক্স’ নামক বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে আবারো বাংলাদেশে শিশুদের খেলনা পরীক্ষা করা হয়। ব্যান টক্সিক্স-এর গবেষকরা বাংলাদেশে এসে স্থানীয় বাজার থেকে সরাসরি শিশুদের পণ্য সংগ্রহ করেছে এ গবেষণার জন্য। এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স(এক্সআরএফ) মেশিন ব্যবহার করে সেগুলোতে সীসার মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিভিন্ন দেশ, যেমন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান, মার্কিন যুক্তরাই এবং অস্ট্রেলিয়ায় সীসার মাত্রার জন্য সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ নিয়ে এখনো এমন কোনো আইন বা নিয়ম নেই। বেশিরভাগ দেশে সীসার নিরাপদ সীমা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করা হয়েছে। সীসার পাশাপাশি ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, বেরিয়াম ও পারদও আছে এসব শিশু পণ্যে।
গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমুহ:
পরীক্ষিত ২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭টি পণ্যেই সীসার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৯২টি পণ্যে সীসার পরিমাণ নিরাপদ সীমা ৯০ পিপিএমের চেয়ে বেশি। একটি শিশুদের পানির মগে ১৩৮০ পিপিএম সীসা, ২৪৭ পিপিএম আর্সেনিক এবং ১৩৯০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে।
শিশুদের ব্যবহৃত আরেকটি মগে ২২০ পিপিএম সীসা, ৩১৫ পিপিএম ক্যাডমিয়াম এবং ১৬৮০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। শিশুদের ব্যবহৃত স্টেশনারি ব্যাগে ৫৮০ পিপিএম সীসা, ১২৮০ পিপিএম বেরিয়াম, এবং ৮৮ পিপিএম পারদ পাওয়া গেছে-যা পড়াশোনার সরঞ্জামকেও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত করেছে। একটি পুতুল সেটে ১৬০ পিপিএম সীসা এবং ১৫০০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে-যা শিশুর প্রিয় খেলনাকেও বিপদজনক করেছে।
এছাড়া আরেকটি নামকরা শপিংমল থেকে সংগ্রহ করা পুতুল সেটেও ৫০০ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে উচ্চমানের পণ্যও সীসা থেকে মুক্ত নয়। একটি বর্ণমালা সেটের একটি উজ্জ্বল বর্ণমালার অক্ষরে ৬৬০ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে।
এসডোর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ বলেন, শিশুদের পণ্যে সীসার উপস্থিতি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষার জন্য আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন খেলনার সুরক্ষা নিয়ে বলেন, খেলনা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক, কিন্তু যখন তাতে সীসার মতো বিষাক্ত পদার্থ থাকে, তখন তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এই খেলনাগুলি শিশুদের স্বাস্থ্য এবং বিকাশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। নিরাপদভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতে খেলনাগুলি সীসামুক্ত হওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা করেন এসডোর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট শ্যানন ইফাত আলম।
এসডোর গবেষণা
২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭ টি পণ্যেই সীসা শনাক্ত যা ৫৯ শতাংশ
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
শিশুদের খেলনা বর্ণমালা সেট, পানির মগ ও স্টেশনারি ব্যাগের মতো দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যে উচ্চ মাত্রায় সীসা পাওয়া গেছে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পণ্যের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও দীর্ঘস্থায়ী করতে সীসা ব্যবহার হচ্ছে বলে গবেষণায় বলা হয়। যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের।
দেশে এ নিয়ে এখনো কোনো আইন বা নিয়ম নেই। তবে, বেশিরভাগ দেশে সীসার নিরাপদ সীমা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার গবেষণা সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকে আয়োজিত এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এর রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাজার থেকে সংগ্রহ করা ২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭ টি পণ্যেই সীসা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৫৯ শতাংশ পণ্যে ৯০ পিপিএমের অধিক মাত্রার সীসা রয়েছে, যাতে ১৩৭০ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
‘দ্য সাইলেন্ট পয়জন: ট্রেসেস অফ লেড ইন চাইল্ডহুড ট্রেজার্স’ শীর্ষক এই গবেষণা এসডোর ২০১৩ সালের গবেষণার ধারাবাহিকতা। যা ২০২৩ সালে ফিলিপাইনের ‘ব্যান টক্সিক্স’ নামক বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে আবারো বাংলাদেশে শিশুদের খেলনা পরীক্ষা করা হয়। ব্যান টক্সিক্স-এর গবেষকরা বাংলাদেশে এসে স্থানীয় বাজার থেকে সরাসরি শিশুদের পণ্য সংগ্রহ করেছে এ গবেষণার জন্য। এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স(এক্সআরএফ) মেশিন ব্যবহার করে সেগুলোতে সীসার মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিভিন্ন দেশ, যেমন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান, মার্কিন যুক্তরাই এবং অস্ট্রেলিয়ায় সীসার মাত্রার জন্য সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ নিয়ে এখনো এমন কোনো আইন বা নিয়ম নেই। বেশিরভাগ দেশে সীসার নিরাপদ সীমা ৯০ পিপিএম নির্ধারণ করা হয়েছে। সীসার পাশাপাশি ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, বেরিয়াম ও পারদও আছে এসব শিশু পণ্যে।
গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলসমুহ:
পরীক্ষিত ২৫০টি পণ্যের মধ্যে ১৫৭টি পণ্যেই সীসার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৯২টি পণ্যে সীসার পরিমাণ নিরাপদ সীমা ৯০ পিপিএমের চেয়ে বেশি। একটি শিশুদের পানির মগে ১৩৮০ পিপিএম সীসা, ২৪৭ পিপিএম আর্সেনিক এবং ১৩৯০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে।
শিশুদের ব্যবহৃত আরেকটি মগে ২২০ পিপিএম সীসা, ৩১৫ পিপিএম ক্যাডমিয়াম এবং ১৬৮০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। শিশুদের ব্যবহৃত স্টেশনারি ব্যাগে ৫৮০ পিপিএম সীসা, ১২৮০ পিপিএম বেরিয়াম, এবং ৮৮ পিপিএম পারদ পাওয়া গেছে-যা পড়াশোনার সরঞ্জামকেও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত করেছে। একটি পুতুল সেটে ১৬০ পিপিএম সীসা এবং ১৫০০ পিপিএম ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে-যা শিশুর প্রিয় খেলনাকেও বিপদজনক করেছে।
এছাড়া আরেকটি নামকরা শপিংমল থেকে সংগ্রহ করা পুতুল সেটেও ৫০০ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে উচ্চমানের পণ্যও সীসা থেকে মুক্ত নয়। একটি বর্ণমালা সেটের একটি উজ্জ্বল বর্ণমালার অক্ষরে ৬৬০ পিপিএম সীসা পাওয়া গেছে।
এসডোর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ বলেন, শিশুদের পণ্যে সীসার উপস্থিতি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষার জন্য আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন খেলনার সুরক্ষা নিয়ে বলেন, খেলনা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক, কিন্তু যখন তাতে সীসার মতো বিষাক্ত পদার্থ থাকে, তখন তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। এই খেলনাগুলি শিশুদের স্বাস্থ্য এবং বিকাশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। নিরাপদভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতে খেলনাগুলি সীসামুক্ত হওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা করেন এসডোর প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট শ্যানন ইফাত আলম।