alt

জাতীয়

২০ হাজার তরুণ এবং নারী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছে সরকার

শাফিউল আল ইমরান : শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

১২ হাজার নারী ও ৮ হাজার পুরুষ উদ্যোক্তা তৈরি সম্ভব হবে

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তাসলিমা সিকদার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল তার। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে তার কাজও চলে যায়।

তাসলিমা সিকদার সংবাদকে বলেন, ‘চাকরিটি চলে যাওয়ার পর আমি আর্থিক সমস্যায় পড়ি, তখন মাথায় সবসময় থাকতো কিছু একটা করি। শেষে মাথায় আসলো ফুড নিয়ে কাজ করার। করোনা থেমে যাবার পর থেকেই আমি ফুড নিয়ে কাজ করছি। সেই থেকে পথ চলা শুরু এখনও চলছে।’

তাসলিমা সিকদারের পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ডেইরি, বাটার ও ঘী। এছাড়া তিনি সিজনাল পণ্য হিসেবে আম, জাম, কাঠাল, তেতুল, বরুই ও জলপাইয়ের আচার তৈরি করেন। সেইসঙ্গে আছে আমস্বত্ব, কাঠালস্বত্ব ও মাছের ডিম।

উদ্যোক্তাদের বয়স : পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৩৫ বছর ও নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫০ বছর

তিনি বলেন, ‘এই জাতীয় প্রোডাক্টগুলো নিয়ে আস্তে আস্তে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি নিজেকে তৈরি করে ফেলি। এ নিয়ে আমি প্রচুর ট্রেনিং করেছি এটা নিয়েই আমি আমার প্রোডাক্টগুলোকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি।’

আর্থিক সমস্যা ছিল কিন্ত সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন আমার বিজেনস ভ্যালু তিন লাখ টাকা। এখনও প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করি।’

যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকল্প হতে ৭০ শতাংশ ভর্তূকি

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়ে কীভাবে জানলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া ও নেয়ার মাধ্যমে জড়িত। সেই সুবাদে জানতে পেরেছি পার্টনার (ডিএএম অংগ) প্রোজেক্টের বিষয়।’

গাজীপুর সদরের উদ্যোক্তা তামিমা আক্তার ন্যান্সি। হোমিওপ্যাথি বিষয়ে পড়াশোনা প্রক্টিস না করে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ভালো করায় এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তামিমা আক্তারের স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও এখন কাজ ছেড়ে দিয়ে তার ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন।

তামিমা আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘আমার এ উদ্যোক্তা হওয়াটাকে পরিবারের সবার নিকট থেকে অনেক সার্পোট পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমি অফিস তৈরি করেছি। ব্যবসার জন্য টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স করেছি। বিপণনের যে লাইসেন্সগুলো হয় সবগুলো করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি। আমি সেখানে ট্রেনিং নিয়ে একজন স্বাবলম্বী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেত চাই।’

শুধু তাসলিমা সিকদার বা তামিমা আক্তার ন্যান্সিই নয়, উদ্যমী ও তরুণদের আয়বর্ধন কাজে নিয়োজিত করতে দেশব্যাপী উদ্যোক্তা তৈরি করা। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচালাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার-ডিএএম অংগ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ২০ হাজার তরুণ এবং নারী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি কাজ করছে সরকার।

প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫ বছরে ২০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করবে। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ পুরুষ। অর্থাৎ ১২ হাজার মহিলা ও ৮ হাজার পুরুষ উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। উদ্যোক্তাদের বয়স পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ৮টি বিষয়ে ১২ দিনের অন দ্যা জব প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। হাতে কলমে প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সরকারি/বেসরকারি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনার (ডিএএম অংগ) প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে উদ্যোক্তাগণ কৃষি ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। উদ্যোক্তাদের কৃষি ব্যবসায় উদ্যোগ টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ইনকিউবেশন সাপোর্টে প্রদান করা হবে। পার্টনার (ডিএএম অংগ) প্রকল্প হতে অগ্রগামী উদ্যোক্তাদের ম্যাচিং গ্রান্টের মাধ্যমে পরিবহণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রপাতি দেয়া হবে। জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে উদ্যোক্তা মেলা আয়োজন করা হবে। সেরা উদ্যোক্তাদের জন্য থাকবে জাতীয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ের পুরস্কারের ব্যবস্থা।

এ ছাড়াও প্রকল্প হতে ৫টি কৃষিপণ্য যেমন; আলু, আম, কাঁঠাল, টমেটো এবং সুগন্ধি চাল এর ভ্যালু চেইন প্রমোশনাল বডি গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে ভ্যালুচেইন প্রমোশনাল বডির নীতিমালা কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে ৭শ’ ৬০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের ম্যাচিং গ্রান্ট সহায়তা করা হবে। ম্যাচিং গ্র্রান্ট হিসেবে গৃহ পর্যায়ে খাদ্য প্রকৃয়াকরণ যন্ত্রপাতি দেয়া হবে। এসব যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রকল্প হতে ৭০ শতাংশ ভর্তূকি দেয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তারা নিজে বহন করবে। মাঠ পর্যায়ে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে ভ্যালু চেইন প্রমোশনাল বডি প্রস্তুত করার জন্য ১৫ ক্যাটাগরির ২৫ জন করে সদস্য নিয়ে মার্কেট এক্টর বিজনেস স্কুল গঠন করা হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পার্টনার (ডিএএম অংগ) এর এজেন্সি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-ফারুক সংবাদকে বলেন, ‘চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ৩ হাজার উদ্যোক্তাকে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি উপকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এসব প্রশিক্ষণ ১০টি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি উপকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে হাতে-কলমে প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এ বছর ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরবর্তিতে আরও ২০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে অন-দ্যা-জব প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেয়ার পর প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের ইনকিউবেশন সাপোর্ট প্রদান করা হবে। তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য যেসব বাধা রয়েছে তা দূর করার প্রক্রিয়া নিয়ে ইনকিউবেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে।’

উদ্যোক্তাদের দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কান্ডারি উল্লেখ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মাসুদ করিম সংবাদকে বলেন, ‘উদ্যোক্তারা শুধু নিজে স্বাবলম্বী হয় না তারা সমাজের আরও দশ জনকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদেরও বিভিন্ন নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করে সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা কৃষি পণ্যের উৎপাদন পরবর্তী প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা তৈরীতে কাজ করছি।’

‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিক ও সম্মানজনক পেশায় পরিণত করা সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ নেয়া উদ্যোক্তারা তাদের প্রাণচাঞ্চল্য, কর্মস্পৃহা এবং জীবনী শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবেন,’ বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা তার।

ছবি

সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে খোলামেলা সংলাপের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

ওয়েলিংটনে হাই কমিশন খুলছে বাংলাদেশ

ছবি

ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বৈঠক সোমবার

ছবি

জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন কাজী নজরুল

ছবি

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

৯ ডিসেম্বর ইইউর ২৮ দূতের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব হলেন সাংবাদিক ফয়েজ

ছবি

সীমান্তে এখন উত্তেজনা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন আইজিপি

ছবি

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন

ছবি

কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে গেজেট জারির উদ্যোগ

১৭ কারাগার ঝুঁকিপূর্ণ, পালানো সাতশ’ আসামি এখনও অধরা: কারা মহাপরিদর্শক

ছবি

‘অর্থ পাচার’: যেভাবে ‘শুকিয়ে ফেলা হয়’ একটি দেশের অর্থনীতি

ছবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ছবি

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার যুক্তরাজ্যে :ক্ষোভ জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

দেশের প্রশ্নে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে: আসিফ নজরুল

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ

ছবি

আগামী সপ্তাহে ভারতের সাথে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

ছবি

এপিপিজির প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা’ তথ্য, হাই কমিশনারকে জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান: মিথ্যা প্রচার ঠেকাতে এক জোট হওয়ার তাগিদ

ছবি

বাংলাদেশে আর কোনদিন ভারতের আধিপত্য চলবে না: হাসনাত আব্দুল্লাহ

ছবি

বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে আইসিবি, বিনিয়োগ হবে ‘এ’ শ্রেণির শেয়ারে

ছবি

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজনীতি প্রবেশ করবে না : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

৩ বছর পর জানা গেল মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর

ছবি

বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে, অতীতের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

ছবি

ভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা : মাহফুজ আলম

ছবি

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (ইউরোচেম) এর আত্মপ্রকাশ

ছবি

ত্রিপুরায় বাংলাদেশিদের সেবা বন্ধ ঘোষণা

ছবি

ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রকাশের আহ্বান হাসনাতের

ছবি

আগরতলায় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

ছবি

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠক

এইচআরএসএসের প্রতিবেদন: নভেম্বরে গণপিটুনি ও রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ২৮

বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ সতর্কতা যুক্তরাজ্যের

ছবি

ভারতের হাইকমিশনারকে তলব, আগরতলায় কনস্যুলার সেবা বন্ধ

tab

জাতীয়

২০ হাজার তরুণ এবং নারী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছে সরকার

শাফিউল আল ইমরান

শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪

১২ হাজার নারী ও ৮ হাজার পুরুষ উদ্যোক্তা তৈরি সম্ভব হবে

ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তাসলিমা সিকদার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল তার। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে তার কাজও চলে যায়।

তাসলিমা সিকদার সংবাদকে বলেন, ‘চাকরিটি চলে যাওয়ার পর আমি আর্থিক সমস্যায় পড়ি, তখন মাথায় সবসময় থাকতো কিছু একটা করি। শেষে মাথায় আসলো ফুড নিয়ে কাজ করার। করোনা থেমে যাবার পর থেকেই আমি ফুড নিয়ে কাজ করছি। সেই থেকে পথ চলা শুরু এখনও চলছে।’

তাসলিমা সিকদারের পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ডেইরি, বাটার ও ঘী। এছাড়া তিনি সিজনাল পণ্য হিসেবে আম, জাম, কাঠাল, তেতুল, বরুই ও জলপাইয়ের আচার তৈরি করেন। সেইসঙ্গে আছে আমস্বত্ব, কাঠালস্বত্ব ও মাছের ডিম।

উদ্যোক্তাদের বয়স : পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৩৫ বছর ও নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫০ বছর

তিনি বলেন, ‘এই জাতীয় প্রোডাক্টগুলো নিয়ে আস্তে আস্তে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি নিজেকে তৈরি করে ফেলি। এ নিয়ে আমি প্রচুর ট্রেনিং করেছি এটা নিয়েই আমি আমার প্রোডাক্টগুলোকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি।’

আর্থিক সমস্যা ছিল কিন্ত সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে এখন আমার বিজেনস ভ্যালু তিন লাখ টাকা। এখনও প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করি।’

যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকল্প হতে ৭০ শতাংশ ভর্তূকি

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়ে কীভাবে জানলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া ও নেয়ার মাধ্যমে জড়িত। সেই সুবাদে জানতে পেরেছি পার্টনার (ডিএএম অংগ) প্রোজেক্টের বিষয়।’

গাজীপুর সদরের উদ্যোক্তা তামিমা আক্তার ন্যান্সি। হোমিওপ্যাথি বিষয়ে পড়াশোনা প্রক্টিস না করে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ভালো করায় এটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তামিমা আক্তারের স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও এখন কাজ ছেড়ে দিয়ে তার ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন।

তামিমা আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘আমার এ উদ্যোক্তা হওয়াটাকে পরিবারের সবার নিকট থেকে অনেক সার্পোট পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমি অফিস তৈরি করেছি। ব্যবসার জন্য টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স করেছি। বিপণনের যে লাইসেন্সগুলো হয় সবগুলো করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি। আমি সেখানে ট্রেনিং নিয়ে একজন স্বাবলম্বী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেত চাই।’

শুধু তাসলিমা সিকদার বা তামিমা আক্তার ন্যান্সিই নয়, উদ্যমী ও তরুণদের আয়বর্ধন কাজে নিয়োজিত করতে দেশব্যাপী উদ্যোক্তা তৈরি করা। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচালাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্ট্রিপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার-ডিএএম অংগ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ২০ হাজার তরুণ এবং নারী কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি কাজ করছে সরকার।

প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫ বছরে ২০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি করবে। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী ও ৪০ শতাংশ পুরুষ। অর্থাৎ ১২ হাজার মহিলা ও ৮ হাজার পুরুষ উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। উদ্যোক্তাদের বয়স পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ৮টি বিষয়ে ১২ দিনের অন দ্যা জব প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। হাতে কলমে প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য সরকারি/বেসরকারি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনার (ডিএএম অংগ) প্রকল্পের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে উদ্যোক্তাগণ কৃষি ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। উদ্যোক্তাদের কৃষি ব্যবসায় উদ্যোগ টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ইনকিউবেশন সাপোর্টে প্রদান করা হবে। পার্টনার (ডিএএম অংগ) প্রকল্প হতে অগ্রগামী উদ্যোক্তাদের ম্যাচিং গ্রান্টের মাধ্যমে পরিবহণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রপাতি দেয়া হবে। জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে উদ্যোক্তা মেলা আয়োজন করা হবে। সেরা উদ্যোক্তাদের জন্য থাকবে জাতীয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ের পুরস্কারের ব্যবস্থা।

এ ছাড়াও প্রকল্প হতে ৫টি কৃষিপণ্য যেমন; আলু, আম, কাঁঠাল, টমেটো এবং সুগন্ধি চাল এর ভ্যালু চেইন প্রমোশনাল বডি গঠন করা হবে। ইতিমধ্যে ভ্যালুচেইন প্রমোশনাল বডির নীতিমালা কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে ৭শ’ ৬০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

জানা গেছে, প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের ম্যাচিং গ্রান্ট সহায়তা করা হবে। ম্যাচিং গ্র্রান্ট হিসেবে গৃহ পর্যায়ে খাদ্য প্রকৃয়াকরণ যন্ত্রপাতি দেয়া হবে। এসব যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রকল্প হতে ৭০ শতাংশ ভর্তূকি দেয়া হবে। বাকি ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তারা নিজে বহন করবে। মাঠ পর্যায়ে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে ভ্যালু চেইন প্রমোশনাল বডি প্রস্তুত করার জন্য ১৫ ক্যাটাগরির ২৫ জন করে সদস্য নিয়ে মার্কেট এক্টর বিজনেস স্কুল গঠন করা হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পার্টনার (ডিএএম অংগ) এর এজেন্সি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-ফারুক সংবাদকে বলেন, ‘চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ৩ হাজার উদ্যোক্তাকে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি উপকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এসব প্রশিক্ষণ ১০টি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি উপকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে হাতে-কলমে প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য এ বছর ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পরবর্তিতে আরও ২০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে অন-দ্যা-জব প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেয়ার পর প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের ইনকিউবেশন সাপোর্ট প্রদান করা হবে। তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য যেসব বাধা রয়েছে তা দূর করার প্রক্রিয়া নিয়ে ইনকিউবেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করবে।’

উদ্যোক্তাদের দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কান্ডারি উল্লেখ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মাসুদ করিম সংবাদকে বলেন, ‘উদ্যোক্তারা শুধু নিজে স্বাবলম্বী হয় না তারা সমাজের আরও দশ জনকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদেরও বিভিন্ন নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করে সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা কৃষি পণ্যের উৎপাদন পরবর্তী প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা তৈরীতে কাজ করছি।’

‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কৃষিকে আধুনিক ও সম্মানজনক পেশায় পরিণত করা সম্ভব হবে। প্রশিক্ষণ নেয়া উদ্যোক্তারা তাদের প্রাণচাঞ্চল্য, কর্মস্পৃহা এবং জীবনী শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবেন,’ বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষি ভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা তার।

back to top