alt

জাতীয়

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা : সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার অধিকাংশই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অথচ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খরচ করা হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।

কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। খরচ হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে নগরের ১২শ’ কিলোমিটার নালা নির্মাণ কাজের ১৩৩ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যার অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। বাকি চার ধাপের কাজ করা সম্ভব হলে পুরো প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।

প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব দিলেও তা অনুমোদন হয়নি- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে আবারও প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।’ তবে শহরঘেঁষা নদ-নদীর তলদেশ ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করলেও নদীগুলো ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রকল্পে কোনো প্রস্তাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

এত কিছুর পরও বৃষ্টি হলেই নগরের রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, টিভিবাউন্ডারী রোড, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহির বাড়ি খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজার, গল্লামারি, গোবরচাকা নবীনগর, খালিশপুর মুজগুন্নি, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, রায়েরমহল ও বয়রা বাজারসহ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ও নিম্নœাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়।

নাগরিক নেতারা নগরবাসীর এ দুর্ভোগের কারণ হিসেবে বলছেন, ‘অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং ত্রুটিযুক্ত’ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কাজে ‘ধীরগতির’ কারণে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। বিশেষ করে রূপসা, ভৈরবসহ শহরঘেষা নদ-নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হলেও সেগুলোর ড্রেজিং বা খননের দিকে নজর না দিয়ে শুধুমাত্র নগরের নালা ভাঙা-গড়ার কাজ চলছে। তাছাড়া নগরের ২২টি খালের অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলের। এ কারণে বেশিরভাগ খালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে। খালগুলোর এ অবস্থার কারণে শহরে পানির চাপ বাড়ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

নগরের পিটিআই মোড়ের বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই মোড়ের ছয়টি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর আগে করা উঁচু স্থানগুলোর কারণে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। রূপসা নদীতে ভাটা শুরু না হলে এ পানি সরে না। তখন নোংরা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হয় আমাদের।’ প্রতি বর্ষায় নগরের এমন জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেন তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি টাকা ব্যয়েও প্রকৃতপক্ষে নগর জলজটমুক্ত হচ্ছে না। সঠিক তদারকির অভাবে এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না। এ কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন খুলনার মানুষ।’

আশরাফ-উজ-জামান আরও বলেন, ‘শুধু নালা নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নগরের কিছু জায়গায় উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শহরের তুলনায় ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় জোয়ারের সময় উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এ কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সময় লাগছে।’

নগরের মুজগুন্নি এলাকার আবদুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও নালার কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে নালা চলে গেছে, সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। নালা পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক সময় বড় একটি খাল ছিল। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না।’

কেসিসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে নালা নির্মাণ, খাল খনন, সøুইসগেট, পাম্পহাউস নির্মাণসহ ১৭৭টি কাজ করার কথা ছিল।

কেসিসি সূত্র বলছে, প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি নালা পুনর্নিমাণ করেছে কেসিসি। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনঃখনন ও ৩২টি নালার সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। তবে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কেসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, নগরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে নতুন করে পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে কেসিসি। প্রথমপর্যায়ের চলমান ড্রেনেজ প্রকল্পের বাকি চারধাপ এবং পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণ শেষ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে বলে আশা করছে কেসিসি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. মশিউজ্জামান বলেন, নগরের পানি রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। রূপসার তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি বের হতে পারে না, উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এজন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসায় একটি স্লুইসগেট ও পাম্প হাউজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাম্পহাউজ নির্মাণ হলে বৃষ্টির পানি পাম্প করে নদীতে ফেলে দেয়া হবে। আর নদীর পানিও নগরে প্রবেশ আটকে দেয়া হবে। ফলে নগরে আর বৃষ্টির পানি জমবে না।

প্রসঙ্গত, খুলনা শহরের জলাবদ্ধতার বাস্তবতা নিয়ে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১১ নভেম্বর দুপুরে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ এর উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যক্তি সচেতনতা খুব জরুরি। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আমাদের উদাসীন আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। টেকসই নগর উন্নয়নে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ঢাকাসহ অন্য শহরের প্রেক্ষাপটে খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় আছে। আমরা যদি পরিকল্পনায় আর কোনো ভুল না করি, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না করি, সময়ের কাজ সময়ে করি তাহলে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিভিন্ন দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব।

ছবি

ধর্মীয় সম্প্রীতির আহ্বান: অপপ্রচারে কান না দেওয়ার পরামর্শ

ছবি

কর অব্যাহতি কমানোর পরিকল্পনা: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

মানবিক ও ভয়মুক্ত সমাজ গঠনে জোর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আইজিপি: আয়নাঘর ও গুম-খুনের সংস্কৃতি এখন আর নেই

ছবি

সংখ্যালঘু নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহের জন্য সরকারের কাছে দাবী সনাতনী জোটের

ঢাকায় ফিরছেন কলকাতা ও ত্রিপুরার দুই কূটনীতিক

ছবি

শেখ হাসিনাকে ফেরানো সময় আসেনি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি

রেলওয়ের দখলকৃত জমি ছাড়ার নির্দেশ, সময়সীমা ১০ ডিসেম্বর

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ

ছবি

সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে খোলামেলা সংলাপের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

ওয়েলিংটনে হাই কমিশন খুলছে বাংলাদেশ

ছবি

ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বৈঠক সোমবার

ছবি

জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছেন কাজী নজরুল

ছবি

ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

৯ ডিসেম্বর ইইউর ২৮ দূতের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব হলেন সাংবাদিক ফয়েজ

ছবি

সীমান্তে এখন উত্তেজনা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন আইজিপি

ছবি

শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন

ছবি

কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে গেজেট জারির উদ্যোগ

১৭ কারাগার ঝুঁকিপূর্ণ, পালানো সাতশ’ আসামি এখনও অধরা: কারা মহাপরিদর্শক

ছবি

‘অর্থ পাচার’: যেভাবে ‘শুকিয়ে ফেলা হয়’ একটি দেশের অর্থনীতি

ছবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ছবি

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার যুক্তরাজ্যে :ক্ষোভ জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

দেশের প্রশ্নে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে: আসিফ নজরুল

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ

ছবি

আগামী সপ্তাহে ভারতের সাথে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

ছবি

এপিপিজির প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা’ তথ্য, হাই কমিশনারকে জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় ঐক্যের আহ্বান: মিথ্যা প্রচার ঠেকাতে এক জোট হওয়ার তাগিদ

ছবি

বাংলাদেশে আর কোনদিন ভারতের আধিপত্য চলবে না: হাসনাত আব্দুল্লাহ

ছবি

বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে আইসিবি, বিনিয়োগ হবে ‘এ’ শ্রেণির শেয়ারে

ছবি

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজনীতি প্রবেশ করবে না : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

৩ বছর পর জানা গেল মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর

ছবি

বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে, অতীতের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

tab

জাতীয়

খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প : ব্যয় পাঁচশ দুই কোটি টাকা, সুফল নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, খুলনা

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার অধিকাংশই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অথচ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খরচ করা হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।

কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। খরচ হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা। তবে এর মধ্যে নগরের ১২শ’ কিলোমিটার নালা নির্মাণ কাজের ১৩৩ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যার অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। বাকি চার ধাপের কাজ করা সম্ভব হলে পুরো প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।

প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব দিলেও তা অনুমোদন হয়নি- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে আবারও প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।’ তবে শহরঘেঁষা নদ-নদীর তলদেশ ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করলেও নদীগুলো ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রকল্পে কোনো প্রস্তাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

এত কিছুর পরও বৃষ্টি হলেই নগরের রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভীপাড়া, টিভিবাউন্ডারী রোড, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, মহির বাড়ি খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজার, গল্লামারি, গোবরচাকা নবীনগর, খালিশপুর মুজগুন্নি, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ি গেট, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, রায়েরমহল ও বয়রা বাজারসহ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ও নিম্নœাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়।

নাগরিক নেতারা নগরবাসীর এ দুর্ভোগের কারণ হিসেবে বলছেন, ‘অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত এবং ত্রুটিযুক্ত’ পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কাজে ‘ধীরগতির’ কারণে নগরবাসীর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। বিশেষ করে রূপসা, ভৈরবসহ শহরঘেষা নদ-নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হলেও সেগুলোর ড্রেজিং বা খননের দিকে নজর না দিয়ে শুধুমাত্র নগরের নালা ভাঙা-গড়ার কাজ চলছে। তাছাড়া নগরের ২২টি খালের অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলের। এ কারণে বেশিরভাগ খালের আয়তন সংকুচিত হয়েছে। খালগুলোর এ অবস্থার কারণে শহরে পানির চাপ বাড়ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

নগরের পিটিআই মোড়ের বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘একটু বৃষ্টি হলেই মোড়ের ছয়টি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। গত দুই বছর আগে করা উঁচু স্থানগুলোর কারণে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। রূপসা নদীতে ভাটা শুরু না হলে এ পানি সরে না। তখন নোংরা পানির মধ্যেই চলাচল করতে হয় আমাদের।’ প্রতি বর্ষায় নগরের এমন জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেন তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি টাকা ব্যয়েও প্রকৃতপক্ষে নগর জলজটমুক্ত হচ্ছে না। সঠিক তদারকির অভাবে এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না। এ কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন খুলনার মানুষ।’

আশরাফ-উজ-জামান আরও বলেন, ‘শুধু নালা নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নগরের কিছু জায়গায় উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় সেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শহরের তুলনায় ভৈরব ও রূপসা নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় জোয়ারের সময় উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এ কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে সময় লাগছে।’

নগরের মুজগুন্নি এলাকার আবদুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও নালার কাজ হলেও আমাদের ভোগান্তির কোনো কমতি হয়নি। বৃষ্টি হলেই নিচু এলাকা ডুবে যায়। সড়কটির পানি আবু নাসের হাসপাতাল ও নেভি স্কুলের মাঝখান দিয়ে যে নালা চলে গেছে, সেখান দিয়ে গিয়ে ময়ূর নদীতে পড়ে। নালা পাকা হয়ে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে এক সময় বড় একটি খাল ছিল। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলের কারণে এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য পানি নামতে পারছে না।’

কেসিসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে (প্রথমপর্যায়)’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে নালা নির্মাণ, খাল খনন, সøুইসগেট, পাম্পহাউস নির্মাণসহ ১৭৭টি কাজ করার কথা ছিল।

কেসিসি সূত্র বলছে, প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি নালা পুনর্নিমাণ করেছে কেসিসি। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনঃখনন ও ৩২টি নালার সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। তবে এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কেসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, নগরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে নতুন করে পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে কেসিসি। প্রথমপর্যায়ের চলমান ড্রেনেজ প্রকল্পের বাকি চারধাপ এবং পাম্পহাউজ ও সøুুইজগেট নির্মাণ শেষ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে বলে আশা করছে কেসিসি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. মশিউজ্জামান বলেন, নগরের পানি রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। রূপসার তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি বের হতে পারে না, উল্টো নদীর পানি নগরে প্রবেশ করে। এজন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসায় একটি স্লুইসগেট ও পাম্প হাউজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাম্পহাউজ নির্মাণ হলে বৃষ্টির পানি পাম্প করে নদীতে ফেলে দেয়া হবে। আর নদীর পানিও নগরে প্রবেশ আটকে দেয়া হবে। ফলে নগরে আর বৃষ্টির পানি জমবে না।

প্রসঙ্গত, খুলনা শহরের জলাবদ্ধতার বাস্তবতা নিয়ে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১১ নভেম্বর দুপুরে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ এর উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যক্তি সচেতনতা খুব জরুরি। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে আমাদের উদাসীন আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। টেকসই নগর উন্নয়নে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ঢাকাসহ অন্য শহরের প্রেক্ষাপটে খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় আছে। আমরা যদি পরিকল্পনায় আর কোনো ভুল না করি, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না করি, সময়ের কাজ সময়ে করি তাহলে জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিভিন্ন দপ্তর-প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব।

back to top