alt

কপ২৯ : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য অনুমোদিত

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ডিন ও অধ্যাপক, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ : বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ২০৩০ সালের জন্য সত্যিকারের কার্যকরী জলবায়ু পদক্ষেপের সঙ্গে মানবাধিকার সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য এবং পর্যাপ্ত, স্বচ্ছ ও বৈধ অর্থায়নে সম্মত হওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলিকে আজারবাইজান বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের ২৯তম বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন। জাতিসংঘের এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনে ৬৬,৭৭৮ জন অংশগ্রহণ করছেন। সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত নেতারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য বৈঠক করছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থ ও বাণিজ্যের বিষয়ে আলোচনার জন্য কঠোরভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। এ বছরের আবহাওয়া বিপর্যয় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও তহবিলের দাবিতে উৎসাহিত করেছে আর্টিকেল ৬-এর খসড়া সিদ্ধান্ত কপ২৯-এর প্রথম দিনে কোনো আপত্তি ছাড়াই গৃহীত হয়েছে। কপ২৯ প্রেসিডেন্সি কার্বন বাজার পরিচালনার নিয়ম নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা বাধার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত জয়ের আশা করছে।

সিভিল সোসাইটি গ্রুপগুলো মনে করেন কপ২৯-এর প্রথমদিনে কার্বন বাজারের ট্রেডিং অগ্রহণযোগ্য এবং পুরো প্রক্রিয়াটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষণœ করে। এটি বৈশ্বিক কার্বন বাজারের জন্য ফ্লাডগেট খুলে দিচ্ছে যা বিশ্বের দক্ষিণে অবস্থিত সম্প্রদায়ের উপর, আদিবাসীদের উপর, এবং ক্ষুদ্র কৃষক কৃষকদের উপর সর্বপ্রথম এবং সর্বাগ্রে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। কার্বন বাজারকে প্রাণবন্ত করার জন্য চূড়ান্ত নিয়মগুলো বাকুতে যথাযথ বিতর্ক ছাড়াই গৃহীত হতে পারে তারা বলেন, কার্বন বাজারের অর্থকে জলবায়ু অর্থায়নের স্থানে বিশাল অঙ্কে প্রতিস্থাপন করা উচিত নয় যার ফলে দরিদ্র দেশগুলি মনে করে যে তারা ধনী ব্যক্তিদের কাছে ঋণী।

গ্লোবাল উইটনেসের তথ্যমতে, ২০২২ সালে তেল ও গ্যাস শিল্প কর-পূর্ব মুনাফা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার করেছে। অনুমান করা হয়েছে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু ক্ষতির বার্ষিক ব্যয়ের ১০গুণ, যা বছরে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির তহবিল, এই ৪০০ বিলিয়ন ডলারের পরিমাণের ০.২% এরও কম।

মার্কিন জলবায়ু সম্পর্কিত দূত জন পোডেস্টা অন্যান্য রাষ্ট্রের সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিচ্ছন্ন শক্তি অর্থনীতিতে বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিকে মন্থর করতে পারেন তবে স্থগিত করতে পারেন না। তিনি আরও যোগ করেন যে, বিদায়ী রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের যুগান্তকারী জলবায়ু আইন, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ), যেটি ক্লিন এনার্জির জন্য বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি প্রদান করে, সেটি সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাবে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে কীভাবে জলবায়ু ভারসাম্য ভাঙনের ফলে যুদ্ধ এবং নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে তা আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, সারা বিশ্বে ১২০ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত মানুষের তিন-চতুর্থাংশ জলবায়ু ভারসাম্য ভাঙনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে বাস করছে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৬৫টি দেশ “চরম জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপদের” সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, “জলবায়ুর এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থা গভীর অবিচারের প্রতিনিধিত্ব করে। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া মানুষজন এবং সম্প্রদায়গুলো কার্বন নির্গমনের জন্য সবচেয়ে কম দায়ী হওয়া স্বত্বেও তাদেরকে সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। জলবায়ু অর্থায়নের বিলিয়ন ডলার তাদের কাছে পৌঁছায় না এবং মানবিক সহায়তাও পর্যাপ্তভাবে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানকে পূরণ করতে পারছে না। সমাধান হাতের কাছে আছে, কিন্তু আমাদের জরুরি পদক্ষেপ দরকার। যথাযথ সংস্থান এবং সহায়তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তরা আটকা পড়বে।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আজ যুক্তরাজ্যের জন্য একটি নতুন জলবায়ু লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাজ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের নির্গমন মাত্রার তুলনায় ৮১ শতাংশ নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা। লক্ষ্যটির উদ্দেশ্য হবে কার্বন নির্গমন হ্রাসের প্রথম জাতীয় পরিকল্পনাগুলির মধ্যে একটি, যা ‘জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান’ বা জাতিসংঘের পরিভাষায় এনডিসি হিসেবে পরিচিত। লক্ষ্যটি অর্জনের জন্য পাওয়ার সেক্টরকে ডিকার্বনাইজ করা হবে এবং অফশোরের ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হবে। সেইসঙ্গে কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ এবং পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগের মাত্রা বাড়ানো হবে।

কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ বলেছেন যে তার দেশ ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অনুসরণ করবে।

কপ২৯-এ, বাংলাদেশ একটি জাতীয় পরিকল্পনাকে সমর্থন করার জন্য তহবিল সুরক্ষিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু অঞ্চলের ৫০ মিলিয়নেরও বেশি লোককে উপকৃত করতে পারে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সপ্তম সর্বাধিক জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং তাপপ্রবাহসহ নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ১৩.৩ মিলিয়ন বাংলাদেশিকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই জলবায়ু সহনশীলতার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১২ই নভেম্বর আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ২৯ -এ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যোগ দিয়েছেন। তিনি এই সম্মেলনে দেশের জলবায়ু সংকটের কারণগুলোকে স্পটলাইট করার প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের, এনজিও এবং সুশীল সমাজের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার আগমনের পর একটি সমন্বয় সভায়, প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের অগ্রাধিকারগুলোকে কপ২৯-এর চূড়ান্ত ঘোষণায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

অনেক আশা নিয়ে কপ২৯ সম্মেলন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অনেক বড় বড় বিশ্ব নেতাদের অনুপস্থিতি জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। নির্বাচনী ওয়াদায় প্যারিস এগ্রিমেন্ট থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে যাওয়া এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের পরিবর্তে বর্তমানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের দাবির যে মুখোমুখি অবস্থান দাঁড়িয়েছে সেই স্থান থেকে বিশ্ব নেতারা কি সিদ্ধান্ত নেয় সেখানেই ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের ভবিষ্যৎ নিহিত থাকছে।

(ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপস)

ছবি

প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, অবস্থান কর্মসূচি চলবে

ছবি

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারি

ছবি

রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্যের সমালোচনা করল ঢাকা

ছবি

গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের, বিবেচনার আশ্বাস ইসির

ছবি

অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘিরে অনিরাপদ বোধ ‘করছে না’ প্রসিকিউশন

ছবি

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় ২২ সাক্ষী হাজির

ছবি

সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ঢাকা থেকে ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করবো, পদত্যাগ ‘উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর’: আসিফ মাহমুদ

ছবি

১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় নির্ধারণ—প্রসিকিউশন বলছে, তারা অনিরাপদ নয়

ছবি

অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী হিসেবে নাম প্রত্যাহার এম সরওয়ারের

ছবি

১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউনের আশঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৭৭ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

দলগুলো না পারলে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: প্রেস সচিব

কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধতার বিকল্প নেই: টিআইবি

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা: নতুন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আপত্তি আছে কিনা, জানাতে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি

ছবি

৪ দিনের সফরে চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত: রাজনাথ সিং

ছবি

ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না: প্রধান বিচারপতি

ছবি

প্রধান বিচারপতি: বিচার বিভাগকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রাখতে হলে সংস্কার অপরিহার্য

ছবি

রাজশাহীতে নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর : শফিকুল আলম

সাঁওতাল হত্যা দিবস: তিন হত্যার বিচার দাবি, সাঁওতালদের বিক্ষোভ

ছবি

আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন: কমিশনের প্রতিবাদ

ছবি

ইসি শতভাগ প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: মাছউদ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

tab

কপ২৯ : দীর্ঘ সময় পেরিয়ে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য অনুমোদিত

ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ডিন ও অধ্যাপক, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ২০৩০ সালের জন্য সত্যিকারের কার্যকরী জলবায়ু পদক্ষেপের সঙ্গে মানবাধিকার সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য এবং পর্যাপ্ত, স্বচ্ছ ও বৈধ অর্থায়নে সম্মত হওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলিকে আজারবাইজান বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের ২৯তম বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন। জাতিসংঘের এই বছরের জলবায়ু সম্মেলনে ৬৬,৭৭৮ জন অংশগ্রহণ করছেন। সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত নেতারা জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য বৈঠক করছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থ ও বাণিজ্যের বিষয়ে আলোচনার জন্য কঠোরভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। এ বছরের আবহাওয়া বিপর্যয় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও তহবিলের দাবিতে উৎসাহিত করেছে আর্টিকেল ৬-এর খসড়া সিদ্ধান্ত কপ২৯-এর প্রথম দিনে কোনো আপত্তি ছাড়াই গৃহীত হয়েছে। কপ২৯ প্রেসিডেন্সি কার্বন বাজার পরিচালনার নিয়ম নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা বাধার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত জয়ের আশা করছে।

সিভিল সোসাইটি গ্রুপগুলো মনে করেন কপ২৯-এর প্রথমদিনে কার্বন বাজারের ট্রেডিং অগ্রহণযোগ্য এবং পুরো প্রক্রিয়াটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষণœ করে। এটি বৈশ্বিক কার্বন বাজারের জন্য ফ্লাডগেট খুলে দিচ্ছে যা বিশ্বের দক্ষিণে অবস্থিত সম্প্রদায়ের উপর, আদিবাসীদের উপর, এবং ক্ষুদ্র কৃষক কৃষকদের উপর সর্বপ্রথম এবং সর্বাগ্রে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। কার্বন বাজারকে প্রাণবন্ত করার জন্য চূড়ান্ত নিয়মগুলো বাকুতে যথাযথ বিতর্ক ছাড়াই গৃহীত হতে পারে তারা বলেন, কার্বন বাজারের অর্থকে জলবায়ু অর্থায়নের স্থানে বিশাল অঙ্কে প্রতিস্থাপন করা উচিত নয় যার ফলে দরিদ্র দেশগুলি মনে করে যে তারা ধনী ব্যক্তিদের কাছে ঋণী।

গ্লোবাল উইটনেসের তথ্যমতে, ২০২২ সালে তেল ও গ্যাস শিল্প কর-পূর্ব মুনাফা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার করেছে। অনুমান করা হয়েছে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু ক্ষতির বার্ষিক ব্যয়ের ১০গুণ, যা বছরে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্য করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির তহবিল, এই ৪০০ বিলিয়ন ডলারের পরিমাণের ০.২% এরও কম।

মার্কিন জলবায়ু সম্পর্কিত দূত জন পোডেস্টা অন্যান্য রাষ্ট্রের সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিচ্ছন্ন শক্তি অর্থনীতিতে বিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিকে মন্থর করতে পারেন তবে স্থগিত করতে পারেন না। তিনি আরও যোগ করেন যে, বিদায়ী রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের যুগান্তকারী জলবায়ু আইন, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ), যেটি ক্লিন এনার্জির জন্য বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি প্রদান করে, সেটি সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাবে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে কীভাবে জলবায়ু ভারসাম্য ভাঙনের ফলে যুদ্ধ এবং নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলছে তা আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, সারা বিশ্বে ১২০ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত মানুষের তিন-চতুর্থাংশ জলবায়ু ভারসাম্য ভাঙনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে বাস করছে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৬৫টি দেশ “চরম জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপদের” সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, “জলবায়ুর এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থা গভীর অবিচারের প্রতিনিধিত্ব করে। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া মানুষজন এবং সম্প্রদায়গুলো কার্বন নির্গমনের জন্য সবচেয়ে কম দায়ী হওয়া স্বত্বেও তাদেরকে সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। জলবায়ু অর্থায়নের বিলিয়ন ডলার তাদের কাছে পৌঁছায় না এবং মানবিক সহায়তাও পর্যাপ্তভাবে ক্রমবর্ধমান ব্যবধানকে পূরণ করতে পারছে না। সমাধান হাতের কাছে আছে, কিন্তু আমাদের জরুরি পদক্ষেপ দরকার। যথাযথ সংস্থান এবং সহায়তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তরা আটকা পড়বে।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আজ যুক্তরাজ্যের জন্য একটি নতুন জলবায়ু লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাজ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের নির্গমন মাত্রার তুলনায় ৮১ শতাংশ নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা। লক্ষ্যটির উদ্দেশ্য হবে কার্বন নির্গমন হ্রাসের প্রথম জাতীয় পরিকল্পনাগুলির মধ্যে একটি, যা ‘জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান’ বা জাতিসংঘের পরিভাষায় এনডিসি হিসেবে পরিচিত। লক্ষ্যটি অর্জনের জন্য পাওয়ার সেক্টরকে ডিকার্বনাইজ করা হবে এবং অফশোরের ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হবে। সেইসঙ্গে কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ এবং পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগের মাত্রা বাড়ানো হবে।

কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ বলেছেন যে তার দেশ ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অনুসরণ করবে।

কপ২৯-এ, বাংলাদেশ একটি জাতীয় পরিকল্পনাকে সমর্থন করার জন্য তহবিল সুরক্ষিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু অঞ্চলের ৫০ মিলিয়নেরও বেশি লোককে উপকৃত করতে পারে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সপ্তম সর্বাধিক জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং তাপপ্রবাহসহ নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ১৩.৩ মিলিয়ন বাংলাদেশিকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই জলবায়ু সহনশীলতার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১২ই নভেম্বর আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ২৯ -এ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যোগ দিয়েছেন। তিনি এই সম্মেলনে দেশের জলবায়ু সংকটের কারণগুলোকে স্পটলাইট করার প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের, এনজিও এবং সুশীল সমাজের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার আগমনের পর একটি সমন্বয় সভায়, প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের অগ্রাধিকারগুলোকে কপ২৯-এর চূড়ান্ত ঘোষণায় অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

অনেক আশা নিয়ে কপ২৯ সম্মেলন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অনেক বড় বড় বিশ্ব নেতাদের অনুপস্থিতি জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। নির্বাচনী ওয়াদায় প্যারিস এগ্রিমেন্ট থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সরে যাওয়া এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের পরিবর্তে বর্তমানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের দাবির যে মুখোমুখি অবস্থান দাঁড়িয়েছে সেই স্থান থেকে বিশ্ব নেতারা কি সিদ্ধান্ত নেয় সেখানেই ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের ভবিষ্যৎ নিহিত থাকছে।

(ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপস)

back to top