সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেয়ার সময় চট্টগ্রামে আদালত এলাকার অদূরে সংঘর্ষ চলাকালে আহত হয়ে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালতের প্রবেশ সড়কে ‘হামলার শিকার’ হয়ে নিহত হন সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামের ওই আইনজীবী।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়কে আইনজীবী সাইফুলের ওপর হামলা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার দাবি, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই আইনজীবীকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আরও ২০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন। সাইফুল চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, আদালত ভবন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাইফুলকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে এবং বাকি ৬ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘হাসাপাতাল থেকে আমাদের পাওয়া তথ্যে জেনেছি নিহত ব্যক্তিকে লালদিঘী এলাকা থেকে আনা হয়েছে।’ নিহত সাইফুলের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে।
ঢাকায় গ্রেপ্তার চিন্ময় দাশকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মহানগর আদালত হাজির করা হয়। তাকে কড়া নিরাপত্তায় এদিন আদালতে আনার পর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হতে থাকেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। বিভিন্ন স্লোগানে তারা বিক্ষোভ করতে শুরু করেন।
সোয়া ১২টার দিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় আদালত ভবন থেকে নামিয়ে নিচে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় প্রিজন ভ্যান ঘিরে সনাতন সম্প্রদায়ের বিক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি সাধু সন্তুদেরও দেখা যায়।
এর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আদালত প্রাঙ্গণে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের এই মুখপাত্রকে কারাগারে নিতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেলা পৌঁনে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর আদালত চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীরা এদিক সেদিক ছুটতে থাকে। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত ভবন থেকে নেমে যাওয়ার সময় সড়কের দুই পাশে রাখা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং আইনজীবীদের ভবনের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে আদালত থেকে নেমে যাওয়ার সড়কে মুসলিম হাই স্কুলের সামনে সংঘর্ষ বেধে যায়। আইনজীবী, কর্মচারী ও দোকানদাররা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। তারা আদালতের সড়কের বিপরীতে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের হরিজন পাড়ার দিকে ধাওয়া দেয়। থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুটা সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন আহত অবস্থায় কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
চিন্ময় দাশ কারাগারে
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার বেলা পৌঁনে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় তারা। এদিন আদালত জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়ার পর বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন।
তারা জয় শ্রী রাম স্লোগানের পাশাপাশি ‘চেয়ে ছিলাম অধিকার, পেয়ে গেলাম কারাগার’, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ দাদার, ‘এক দুই তিন চার, সব শালারা বাটপার’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় অনেকে শঙ্খ ধ্বনি দেয়। এদিকে বেলা দেড়টার দিকে বিজিবি-পুলিশ বাঁশি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়া শুরু করে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগদ্বিক ছোটাছুটি শুরু করে।
বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া আইনজীবী-কর্মচারীদের
বিক্ষোভকারীরা আদালত ভবন থেকে নামার সময় তাদের ছোড়া ইটে মসজিদ কমপ্লেক্সের ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইনজীবীদের চেম্বারের গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় আইনজীবী, কর্মচারী ও দোকানিরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। এদিকে আইনজীবী এবং সাধারণ লোকজন জড়ো হয়ে বিপরীতে হরিজন পাড়ায় ধাওয়া করে। এ সময় থেমে থেমে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
চিন্ময় দাশের প্রিজন ভ্যান ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আদালত ভবনের সামনে এ বিক্ষোভে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে আইনজীবীরাও। আদালতের নিরাপত্তায় সকাল থেকে পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেছেন, ‘হাকিম আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করেছি।’ সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পু-রীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ যাতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারেন, সে বিষয়ে আদেশ চান তার আইনজীবীরা। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ সময় এজলাসের ভেতরে আইনজীবীরা এবং বাইরে সনাতনীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়ে তার মুক্তির দাবি করতে থাকেন।
সোয়া ১২টার দিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় আদালত ভবন থেকে নামিয়ে নিচে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় সনাতন সম্প্রদায়ের বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হয় প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় প্রিজন ভ্যান থেকে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমরা রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে নই। ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আশা দেখা দিয়েছে- আমরা সনাতনীরা তার অংশ। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ‘৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাবেন। আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেবেন- এটা আশা করছি। রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয়- এমন কিছু করব না।’
আজ আদালত বর্জনের ঘোষণা আইনজীবী সমিতির
গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃঞ্চ দাশকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার পথে সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। আজ চট্টগ্রামের কোনো আদালতে আইনজীবী সমিতির সদস্যরা কাজ করবেন না বলে জানান সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘সমিতির জরুরি সভায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এদিন আদালত চত্বরে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ করব।’ আইনজীবী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুলকে মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আামরা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’ আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়কে আইনজীবী সাইফুলের ওপর হামলা হয় বলে জানান সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন। এছাড়া সংঘর্ষে আহত আরও ৬ জন চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন।
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেয়ার সময় চট্টগ্রামে আদালত এলাকার অদূরে সংঘর্ষ চলাকালে আহত হয়ে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আদালতের প্রবেশ সড়কে ‘হামলার শিকার’ হয়ে নিহত হন সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামের ওই আইনজীবী।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়কে আইনজীবী সাইফুলের ওপর হামলা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার দাবি, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই আইনজীবীকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আরও ২০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন। সাইফুল চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, আদালত ভবন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাইফুলকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে এবং বাকি ৬ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘হাসাপাতাল থেকে আমাদের পাওয়া তথ্যে জেনেছি নিহত ব্যক্তিকে লালদিঘী এলাকা থেকে আনা হয়েছে।’ নিহত সাইফুলের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে।
ঢাকায় গ্রেপ্তার চিন্ময় দাশকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মহানগর আদালত হাজির করা হয়। তাকে কড়া নিরাপত্তায় এদিন আদালতে আনার পর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হতে থাকেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা। বিভিন্ন স্লোগানে তারা বিক্ষোভ করতে শুরু করেন।
সোয়া ১২টার দিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় আদালত ভবন থেকে নামিয়ে নিচে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় প্রিজন ভ্যান ঘিরে সনাতন সম্প্রদায়ের বিক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি সাধু সন্তুদেরও দেখা যায়।
এর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আদালত প্রাঙ্গণে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের এই মুখপাত্রকে কারাগারে নিতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেলা পৌঁনে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর আদালত চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীরা এদিক সেদিক ছুটতে থাকে। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত ভবন থেকে নেমে যাওয়ার সময় সড়কের দুই পাশে রাখা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং আইনজীবীদের ভবনের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে আদালত থেকে নেমে যাওয়ার সড়কে মুসলিম হাই স্কুলের সামনে সংঘর্ষ বেধে যায়। আইনজীবী, কর্মচারী ও দোকানদাররা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। তারা আদালতের সড়কের বিপরীতে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের হরিজন পাড়ার দিকে ধাওয়া দেয়। থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুটা সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন আহত অবস্থায় কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
চিন্ময় দাশ কারাগারে
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার বেলা পৌঁনে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় তারা। এদিন আদালত জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়ার পর বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন।
তারা জয় শ্রী রাম স্লোগানের পাশাপাশি ‘চেয়ে ছিলাম অধিকার, পেয়ে গেলাম কারাগার’, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ দাদার, ‘এক দুই তিন চার, সব শালারা বাটপার’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় অনেকে শঙ্খ ধ্বনি দেয়। এদিকে বেলা দেড়টার দিকে বিজিবি-পুলিশ বাঁশি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়া শুরু করে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগদ্বিক ছোটাছুটি শুরু করে।
বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া আইনজীবী-কর্মচারীদের
বিক্ষোভকারীরা আদালত ভবন থেকে নামার সময় তাদের ছোড়া ইটে মসজিদ কমপ্লেক্সের ভবনের দ্বিতীয় তলায় আইনজীবীদের চেম্বারের গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় আইনজীবী, কর্মচারী ও দোকানিরা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। এদিকে আইনজীবী এবং সাধারণ লোকজন জড়ো হয়ে বিপরীতে হরিজন পাড়ায় ধাওয়া করে। এ সময় থেমে থেমে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
চিন্ময় দাশের প্রিজন ভ্যান ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আদালত ভবনের সামনে এ বিক্ষোভে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে আইনজীবীরাও। আদালতের নিরাপত্তায় সকাল থেকে পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হলেও তাদের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেছেন, ‘হাকিম আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করেছি।’ সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পু-রীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ যাতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারেন, সে বিষয়ে আদেশ চান তার আইনজীবীরা। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ সময় এজলাসের ভেতরে আইনজীবীরা এবং বাইরে সনাতনীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়ে তার মুক্তির দাবি করতে থাকেন।
সোয়া ১২টার দিকে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে পুলিশ-বিজিবি-এপিবিএন সদস্যদের পাহারায় আদালত ভবন থেকে নামিয়ে নিচে রাখা প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় সনাতন সম্প্রদায়ের বিক্ষুব্ধ লোকজন জড়ো হয় প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় প্রিজন ভ্যান থেকে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছি। আমরা রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে নই। ৫ অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আশা দেখা দিয়েছে- আমরা সনাতনীরা তার অংশ। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ‘৮ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাবেন। আবেগকে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেবেন- এটা আশা করছি। রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয়- এমন কিছু করব না।’
আজ আদালত বর্জনের ঘোষণা আইনজীবী সমিতির
গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃঞ্চ দাশকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার পথে সংঘর্ষে এক আইনজীবী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আজ আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। আজ চট্টগ্রামের কোনো আদালতে আইনজীবী সমিতির সদস্যরা কাজ করবেন না বলে জানান সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘সমিতির জরুরি সভায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এদিন আদালত চত্বরে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ করব।’ আইনজীবী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুলকে মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আামরা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’ আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়কে আইনজীবী সাইফুলের ওপর হামলা হয় বলে জানান সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন। এছাড়া সংঘর্ষে আহত আরও ৬ জন চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন।