বাজারে এখন ভোজ্যতেল সয়াবিনের সংকট চলছে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। কোনো কোনো মুদি দোকানে পাওয়া গেলেও বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘ডিলাররা বলতেছে, কোম্পানি মাল দেয় না।’ চাহিদার তুলনায় সামান্য পরিমান মাল (পণ্য) কোনো কোম্পানি দিলেও ‘সঙ্গে অন্য মাল (পণ্য) নিতে হচ্ছে।’
সয়াবিন তেলের সংকট নিয়ে শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) কথা হয় রাজধানী শ্যামলী কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি বাহার মিয়ার সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তেল সট (সংকট), কোনো কোম্পানির তেল (সয়াবিন) নাই। ১০-১৫ দিন ধরে সয়াবিন তেলই দিচ্ছে না। ডিলার পয়েন্টেও মাল নাই। কোম্পানি ছাড়ে না। ডিলাররা বলতেছে, কোম্পানি মাল দিচ্ছে না।’
একই উত্তর দেন এই বাজারের আরেক মুদি দোকানি টুলু মিয়া। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তেলই নাই, ১০-১৫ দিন ধরে। কোম্পানি মাল দেয় না।’ ‘কাল (বৃহস্পতিবার) এক কোম্পানির ডিলারের লোক এসে বলছিল, গায়ের রেটে যা আছে এই দামে নগদ টাকা দিলে মাল (পণ্য) পাবেন। আমি দোকানে ছিলাম না। আজ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিলাম ১২ হাজার টাকার তেল আনছে। তাও হাফ লিটার আর ১ লিটার ওজনের। ২-৫ লিটারের বোতল পায়নি। ১৮৩ টাকা গায়ের রেট, ১৮০ টাকা দিয়ে আনছে।’ জানান তিনি। ১ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়েতো লেখা আছে ১৬৭ টাকা? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কেনলা, এটার দাম বেশি।’ ‘কোথায় যাইতেছিলাম আর কোথায় যাইতেছি,’ দাম নিয়ে পরিশেষে বলেন তিনি।
এক মহিলার কাছে ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ টাকায় বিক্রি করছিলেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুদি দোকান মেসার্স মায়ের দোয় স্টোরের বিক্রেতা বাবলু মিয়া। তার কাছে জানতে চাই- বোতলের গায়ের রেটের চেয়ে বেশি বিক্রি করছেন কেন? জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গায়ের রেটের চেয়ে বেশি দামে কিনছি, বেশি দামে বিক্রি করছি। ১ লিটার ১৬৮ টাকা কিনছি, ১৭০ টাকা বিক্রি করছি।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজ সারাদিন আমি ৩টা ৫ লিটার ওজনের তেল বিক্রি করছি। এর আগে প্রত্যেকদিন দিন ৫ লিটার তেল বেচি ৪০-৫০ কার্টুন। এই বাজারে প্রতিদিন লাগে ৫ হাজার কার্টুন, আসতাছে ৩০-৫০ কার্টুন। মহল্লার দোকনদাররা সয়াবিন তেল পাচ্ছে না, এখানে এসে চাপ সৃষ্টি করছে। চাহিদা আর বাড়ি গেছে। একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে যখন সংকট তখন বুঝতে হবে সারাদেশেই সংকট।’
তিনি জানান, ‘১০ কাটুন তেলের লগে কোম্পানি ৬ বস্তা আটা নিতে হচ্ছে লগে আরও ৫ লিটারের ৩ কাটুন সরিষার তেল। ৩২ হাজার টাকার সয়াবিন তেলের লগে আঠারো হাজার টাকার অন্য মাল দিছে। না নিলে সয়াবিন তেল দিবে না। পাশের এক ক্রেতাকে দেখিয়ে বলেন, ‘এখন কথা হলো, আমি সয়াবিন তেলের লগে অন্য মাল নিছি, এই লোককে তেলের লগে অন্য মাল কি দিতে পারবো, উনি সেটা নিবে কী?’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) শুক্রবারের বাজারদর হিসাবে, খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা। যদিও ওই পরিমান বোতলের গায়ে লেখা দাম ছিল ১৬৭ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৫-১৬৮ টাকা।
সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট শুরু হলে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক–কর কমায়। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমে ১০ থেকে ১১ টাকা। শুল্ক-কর কমালেও বাজারে তার প্রভাব না পড়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বৃহস্পতিবার এক সভা করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন রমজান উপলক্ষে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হওয়ার কথা (ঋণপত্র খোলা), তা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। ওই সভার প্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। শুল্ক কমানোর পরও কেন ভোজ্যতেলের দাম কমছে না, সেটি দ্রুততম সময়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তুু সরবরাহ বাড়লেও সবজির বাজার এখনও চড়া। বেশিরভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপর। বাজারে নতুন আলুর কেজি ১২০ টাক আর পুরানো আলু আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ টাকা। এছাড়া করলা-বরবটি-শিম-১০০ টাকা, বেগুন-পোটল ৮০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা গাজর ১০০ টাকায়। একপিস লাউ ৮০ টাকা, একপিস ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামলী কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ-আলুসহ কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছেন সোহেল। দরদাম ও বেচা-বিক্রির কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে সংবাদকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ আজ ১৩৫ টাকা কেজি আর আলু ৮০ টাকাই। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১২০ টাকা।’ ‘আশা অনুযায়ী বিক্রি নাই, বেচাবিক্রি তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে,’ জানান সোহেল।
বাজারে পণ্যের দামের বিষয়ে কথা হয় ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মো. ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘জিনিসের দাম বেশি, ব্যায় হিসেবে কারই আয়টা ঠিক মতো হচ্ছে না। সবাই সংকটের মধ্যেই আছে। গরিব লোকরা তবুও কোন না কোন কাজ করতে পারছে। মধ্যম শ্রেণীর লোকের কষ্টটা বেশি, তারা না পারতেছে হাত পাতাতে, না পারতাছে আর একটা ইনকামের রাস্তা তৈরি করতে।’
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
বাজারে এখন ভোজ্যতেল সয়াবিনের সংকট চলছে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে। কোনো কোনো মুদি দোকানে পাওয়া গেলেও বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘ডিলাররা বলতেছে, কোম্পানি মাল দেয় না।’ চাহিদার তুলনায় সামান্য পরিমান মাল (পণ্য) কোনো কোম্পানি দিলেও ‘সঙ্গে অন্য মাল (পণ্য) নিতে হচ্ছে।’
সয়াবিন তেলের সংকট নিয়ে শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) কথা হয় রাজধানী শ্যামলী কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি বাহার মিয়ার সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তেল সট (সংকট), কোনো কোম্পানির তেল (সয়াবিন) নাই। ১০-১৫ দিন ধরে সয়াবিন তেলই দিচ্ছে না। ডিলার পয়েন্টেও মাল নাই। কোম্পানি ছাড়ে না। ডিলাররা বলতেছে, কোম্পানি মাল দিচ্ছে না।’
একই উত্তর দেন এই বাজারের আরেক মুদি দোকানি টুলু মিয়া। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘তেলই নাই, ১০-১৫ দিন ধরে। কোম্পানি মাল দেয় না।’ ‘কাল (বৃহস্পতিবার) এক কোম্পানির ডিলারের লোক এসে বলছিল, গায়ের রেটে যা আছে এই দামে নগদ টাকা দিলে মাল (পণ্য) পাবেন। আমি দোকানে ছিলাম না। আজ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিলাম ১২ হাজার টাকার তেল আনছে। তাও হাফ লিটার আর ১ লিটার ওজনের। ২-৫ লিটারের বোতল পায়নি। ১৮৩ টাকা গায়ের রেট, ১৮০ টাকা দিয়ে আনছে।’ জানান তিনি। ১ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের গায়েতো লেখা আছে ১৬৭ টাকা? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কেনলা, এটার দাম বেশি।’ ‘কোথায় যাইতেছিলাম আর কোথায় যাইতেছি,’ দাম নিয়ে পরিশেষে বলেন তিনি।
এক মহিলার কাছে ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ টাকায় বিক্রি করছিলেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুদি দোকান মেসার্স মায়ের দোয় স্টোরের বিক্রেতা বাবলু মিয়া। তার কাছে জানতে চাই- বোতলের গায়ের রেটের চেয়ে বেশি বিক্রি করছেন কেন? জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘গায়ের রেটের চেয়ে বেশি দামে কিনছি, বেশি দামে বিক্রি করছি। ১ লিটার ১৬৮ টাকা কিনছি, ১৭০ টাকা বিক্রি করছি।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজ সারাদিন আমি ৩টা ৫ লিটার ওজনের তেল বিক্রি করছি। এর আগে প্রত্যেকদিন দিন ৫ লিটার তেল বেচি ৪০-৫০ কার্টুন। এই বাজারে প্রতিদিন লাগে ৫ হাজার কার্টুন, আসতাছে ৩০-৫০ কার্টুন। মহল্লার দোকনদাররা সয়াবিন তেল পাচ্ছে না, এখানে এসে চাপ সৃষ্টি করছে। চাহিদা আর বাড়ি গেছে। একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে যখন সংকট তখন বুঝতে হবে সারাদেশেই সংকট।’
তিনি জানান, ‘১০ কাটুন তেলের লগে কোম্পানি ৬ বস্তা আটা নিতে হচ্ছে লগে আরও ৫ লিটারের ৩ কাটুন সরিষার তেল। ৩২ হাজার টাকার সয়াবিন তেলের লগে আঠারো হাজার টাকার অন্য মাল দিছে। না নিলে সয়াবিন তেল দিবে না। পাশের এক ক্রেতাকে দেখিয়ে বলেন, ‘এখন কথা হলো, আমি সয়াবিন তেলের লগে অন্য মাল নিছি, এই লোককে তেলের লগে অন্য মাল কি দিতে পারবো, উনি সেটা নিবে কী?’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) শুক্রবারের বাজারদর হিসাবে, খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা। যদিও ওই পরিমান বোতলের গায়ে লেখা দাম ছিল ১৬৭ টাকা আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৫-১৬৮ টাকা।
সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট শুরু হলে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক–কর কমায়। এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমে ১০ থেকে ১১ টাকা। শুল্ক-কর কমালেও বাজারে তার প্রভাব না পড়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
ভোজ্যতেল পরিশোধন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বৃহস্পতিবার এক সভা করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন রমজান উপলক্ষে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হওয়ার কথা (ঋণপত্র খোলা), তা স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। ওই সভার প্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। শুল্ক কমানোর পরও কেন ভোজ্যতেলের দাম কমছে না, সেটি দ্রুততম সময়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তুু সরবরাহ বাড়লেও সবজির বাজার এখনও চড়া। বেশিরভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপর। বাজারে নতুন আলুর কেজি ১২০ টাক আর পুরানো আলু আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ টাকা। এছাড়া করলা-বরবটি-শিম-১০০ টাকা, বেগুন-পোটল ৮০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা গাজর ১০০ টাকায়। একপিস লাউ ৮০ টাকা, একপিস ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামলী কাঁচাবাজারে দেশি পেঁয়াজ-আলুসহ কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছেন সোহেল। দরদাম ও বেচা-বিক্রির কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে সংবাদকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজ আজ ১৩৫ টাকা কেজি আর আলু ৮০ টাকাই। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১২০ টাকা।’ ‘আশা অনুযায়ী বিক্রি নাই, বেচাবিক্রি তিন ভাগের এক ভাগ কমে গেছে,’ জানান সোহেল।
বাজারে পণ্যের দামের বিষয়ে কথা হয় ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মো. ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘জিনিসের দাম বেশি, ব্যায় হিসেবে কারই আয়টা ঠিক মতো হচ্ছে না। সবাই সংকটের মধ্যেই আছে। গরিব লোকরা তবুও কোন না কোন কাজ করতে পারছে। মধ্যম শ্রেণীর লোকের কষ্টটা বেশি, তারা না পারতেছে হাত পাতাতে, না পারতাছে আর একটা ইনকামের রাস্তা তৈরি করতে।’