অগ্রিম টাকা নিয়ে ‘শিক্ষাভবন’ নির্মাণ না করা ঠিকাদারদের তালিকা চেয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ধরনের ঠিকাদারের তালিকা প্রণয়ন ও কাজের প্রকৃত অগ্রগতি চাওয়া হয়েছে। আর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অগ্রিম নেয়া টাকার সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। অন্যথায় এর জন্য দায়ী ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইইডির সদ্যনিয়োগ পাওয়া প্রধান প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী।
ম্যুরাল নির্মাণের নামে নেয়া অগ্রিম বিল ফেরত
জানা গেছে, রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে অবস্থিত ইইডির প্রধান কার্যালয়ের সামনে ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের জন্য চলতি বছর এক ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়। এজন্য গত জুনে ওই ঠিকাদারকে ইইডির ‘রাজস্ব’ খাত থেকে অগ্রিম বিল হিসেবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে কোনো কাজ হয়নি। পুরো টাকাই ‘ভাগভাটোয়ারার’ অভিযোগ উঠে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ পায়। এতে বেকায়দায় পড়ে ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের কাজ নেয়া ঠিদাকার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। আতœগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই ঠিকাদার ইয়াছিন আলী (মেসার্স ইয়াছিন এন্টারপ্রাইজ)।
ওই প্রতিষ্ঠানের কব্জায় থাকা আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ওইসব কাজের বিল পেতেও বেকায়দায় পড়তে পারেন-এমন আশঙ্কায় সম্প্রতি ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের নামে নেয়া অগ্রিম বিল ‘২৪ লাখ ৭১ হাজার ১১৫’ টাকা ব্যাংক চালানের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে ফেরত দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে ওই কাজের জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির ঢাকা মেট্রো সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেনহাজুল হক সংবাদকে বলেছেন, ‘ম্যুরাল নির্মাণের জন্য আমার কাজে একটি এস্টিমেট চাওয়া হয়েছিল প্রধান কার্যালয় থেকে। আমি একটি এস্টিমেট তৈরি করে দিয়েছিলাম। এরপর আমাকে কিছু জানানো হয়নি। এটি আমাদের ঢাকা মেট্রো অফিস থেকে হয়ে থাকতে পারে।’
আংশিক কাজ করেই পুরো বিল
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুরে আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেরিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী। এখন ওই ঠিকাদারকে খুঁজেই পাচ্ছেন না ইইডি’র প্রকৌশলীরা।
রাজধানীর ইডেন সরকারি মহিলা কলেজে একটি পুকুর ‘বিউটিফিকেশন’ এর নামে প্রায় ৫২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। কারণ পুরো বিল বা টাকা পরিশোধ হলেও কী কী কাজ বাকি রয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করা হচ্ছে না বলে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামসুন নাহার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘পুকুরের পাড় বাধাঁইসহ কিছু কাজ হয়েছে। অনেক কাজ বাকি রয়েছে; সেগুলি হচ্ছে না।’
এছাড়া মিরপুরে আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা, দক্ষিণ খানের মৈনের টেক উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ভাবে কদমতলী থানার নতুন জুরাইন কেএম মঈনউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা থানার উত্তরা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দারুস সালাম থানার হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলেও একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে; কিন্তু কাজ বন্ধ রয়েছে। শুধু ঢাকায় এ রকম শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ না করেই বিল ভাগানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে ইইডির ঢাকা মেট্রো সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেনহাজুল হক বলেছেন, ‘এসব কাজের বিল যখন দেয়া হয়েছিল তখন অন্য একজন এই দায়িত্বে ছিল। তখন তারা কী বিবেচনায় অগ্রিম বিল দিয়েছিল সেটি আমি জানি না।’
কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ নেয়া ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নানাভাবে চেষ্টা করছি কাজগুলি আদায় করার জন্য। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু হয়েছে; কয়েকটি কাজ পুরোপুরি সম্পন্নও হয়েছে।’
ঢাকা মেট্রো সার্কেলের অন্য একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ঢাকায় অন্তত একশ’টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবন সংস্কারের নামে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আংশিক কাজ করেই পুরো বিল ভাগিয়ে নেয়া হয়েছে।
চলমান কাজের সংস্কার
জানা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইইডির প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালে ১১৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই টাকার মাধ্যমে একটি মূল ভবন এবং আরেকটি অডিটোরিয়াম ও সেমিনার ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত মূল ভবনের নির্মাণ কাজই শেষ হয়নি। অডিটোরিয়াম ‘প্লিন্থ’ হয়ে আর হয়নি। এখন কাজ আর না করে নতুন রেটে দরপত্র আহ্বান করে বাকি কাজ করানোর পরিকল্পনা করছেন ইইডির ঢাকা জোন অফিসের প্রকৌশলীরা। এতে সরকারের প্রায় ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
একজন জেষ্ঠ প্রকৌশলী জানিয়েছেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রধান কার্যালয়ের কিছু কাজ ঝুঁলিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে নির্মাণাধীন কিছু অংশের কাজ দ্রুত শেষ করতে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরেই তাগাদা দিয়ে আসছিল। এই চাপ সামলাতে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ ইইডির রাজস্ব খাতের অর্থায়নে চলমান কাজেরই সংস্কার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ইইডির প্রধান কার্যালয় নির্মাণের ধীরগতিতে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন।
‘কঠোর’ অবস্থানে শিক্ষা প্রশাসন
অগ্রিম বিল দাতা ও গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন ইইডির সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে সারাদেশে কর্মরত ইইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন।
যেসব প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের নামে ঠিকাদারদের ‘অগ্রিম’ বিল দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে সেইসব প্রতিষ্ঠানে তালিকা চেয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। একই সঙ্গে তিনি যারা অগ্রিম বিল ভাগিয়েছেন এবং যারা দিয়েছেন তাদেরকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে অগ্রিম বিলের সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন-এমন তিনজন প্রকৌশলী সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না। ঠিকাদারকে কাজের জন্য অগ্রিম বিল দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। এরপরও যারা তা করেছেন তাদেরই এর দায় নিতে হবে।’
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত ১২ নভেম্বর নিজ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সব প্রকল্পকে রাজনৈতিক ও সিন্ডিকেট মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কোনোভাবেই ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না।
সরকার প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারেও কঠোর হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে নীতিমালা করা হচ্ছে।
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
অগ্রিম টাকা নিয়ে ‘শিক্ষাভবন’ নির্মাণ না করা ঠিকাদারদের তালিকা চেয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ধরনের ঠিকাদারের তালিকা প্রণয়ন ও কাজের প্রকৃত অগ্রগতি চাওয়া হয়েছে। আর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অগ্রিম নেয়া টাকার সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। অন্যথায় এর জন্য দায়ী ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইইডির সদ্যনিয়োগ পাওয়া প্রধান প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী।
ম্যুরাল নির্মাণের নামে নেয়া অগ্রিম বিল ফেরত
জানা গেছে, রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে অবস্থিত ইইডির প্রধান কার্যালয়ের সামনে ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের জন্য চলতি বছর এক ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হয়। এজন্য গত জুনে ওই ঠিকাদারকে ইইডির ‘রাজস্ব’ খাত থেকে অগ্রিম বিল হিসেবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে কোনো কাজ হয়নি। পুরো টাকাই ‘ভাগভাটোয়ারার’ অভিযোগ উঠে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ পায়। এতে বেকায়দায় পড়ে ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের কাজ নেয়া ঠিদাকার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। আতœগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই ঠিকাদার ইয়াছিন আলী (মেসার্স ইয়াছিন এন্টারপ্রাইজ)।
ওই প্রতিষ্ঠানের কব্জায় থাকা আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ওইসব কাজের বিল পেতেও বেকায়দায় পড়তে পারেন-এমন আশঙ্কায় সম্প্রতি ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল’ নির্মাণের নামে নেয়া অগ্রিম বিল ‘২৪ লাখ ৭১ হাজার ১১৫’ টাকা ব্যাংক চালানের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে ফেরত দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে ওই কাজের জামানতের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির ঢাকা মেট্রো সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেনহাজুল হক সংবাদকে বলেছেন, ‘ম্যুরাল নির্মাণের জন্য আমার কাজে একটি এস্টিমেট চাওয়া হয়েছিল প্রধান কার্যালয় থেকে। আমি একটি এস্টিমেট তৈরি করে দিয়েছিলাম। এরপর আমাকে কিছু জানানো হয়নি। এটি আমাদের ঢাকা মেট্রো অফিস থেকে হয়ে থাকতে পারে।’
আংশিক কাজ করেই পুরো বিল
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুরে আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা অগ্রিম দেয়া হয়। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দেরিতে নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী। এখন ওই ঠিকাদারকে খুঁজেই পাচ্ছেন না ইইডি’র প্রকৌশলীরা।
রাজধানীর ইডেন সরকারি মহিলা কলেজে একটি পুকুর ‘বিউটিফিকেশন’ এর নামে প্রায় ৫২ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। কারণ পুরো বিল বা টাকা পরিশোধ হলেও কী কী কাজ বাকি রয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে তা অবহিত করা হচ্ছে না বলে কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামসুন নাহার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘পুকুরের পাড় বাধাঁইসহ কিছু কাজ হয়েছে। অনেক কাজ বাকি রয়েছে; সেগুলি হচ্ছে না।’
এছাড়া মিরপুরে আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা, দক্ষিণ খানের মৈনের টেক উচ্চ বিদ্যালয়ে কাজের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই ভাবে কদমতলী থানার নতুন জুরাইন কেএম মঈনউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা থানার উত্তরা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দারুস সালাম থানার হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলেও একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে; কিন্তু কাজ বন্ধ রয়েছে। শুধু ঢাকায় এ রকম শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ না করেই বিল ভাগানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব বিষয়ে ইইডির ঢাকা মেট্রো সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মেনহাজুল হক বলেছেন, ‘এসব কাজের বিল যখন দেয়া হয়েছিল তখন অন্য একজন এই দায়িত্বে ছিল। তখন তারা কী বিবেচনায় অগ্রিম বিল দিয়েছিল সেটি আমি জানি না।’
কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ নেয়া ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নানাভাবে চেষ্টা করছি কাজগুলি আদায় করার জন্য। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু হয়েছে; কয়েকটি কাজ পুরোপুরি সম্পন্নও হয়েছে।’
ঢাকা মেট্রো সার্কেলের অন্য একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ঢাকায় অন্তত একশ’টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবন সংস্কারের নামে ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আংশিক কাজ করেই পুরো বিল ভাগিয়ে নেয়া হয়েছে।
চলমান কাজের সংস্কার
জানা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইইডির প্রধান কার্যালয় নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালে ১১৯ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই টাকার মাধ্যমে একটি মূল ভবন এবং আরেকটি অডিটোরিয়াম ও সেমিনার ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত মূল ভবনের নির্মাণ কাজই শেষ হয়নি। অডিটোরিয়াম ‘প্লিন্থ’ হয়ে আর হয়নি। এখন কাজ আর না করে নতুন রেটে দরপত্র আহ্বান করে বাকি কাজ করানোর পরিকল্পনা করছেন ইইডির ঢাকা জোন অফিসের প্রকৌশলীরা। এতে সরকারের প্রায় ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
একজন জেষ্ঠ প্রকৌশলী জানিয়েছেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রধান কার্যালয়ের কিছু কাজ ঝুঁলিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে নির্মাণাধীন কিছু অংশের কাজ দ্রুত শেষ করতে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরেই তাগাদা দিয়ে আসছিল। এই চাপ সামলাতে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ ইইডির রাজস্ব খাতের অর্থায়নে চলমান কাজেরই সংস্কার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ইইডির প্রধান কার্যালয় নির্মাণের ধীরগতিতে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন।
‘কঠোর’ অবস্থানে শিক্ষা প্রশাসন
অগ্রিম বিল দাতা ও গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন ইইডির সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে সারাদেশে কর্মরত ইইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন।
যেসব প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের নামে ঠিকাদারদের ‘অগ্রিম’ বিল দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে সেইসব প্রতিষ্ঠানে তালিকা চেয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। একই সঙ্গে তিনি যারা অগ্রিম বিল ভাগিয়েছেন এবং যারা দিয়েছেন তাদেরকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে অগ্রিম বিলের সমপরিমাণ কাজ সম্পন্ন করার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন-এমন তিনজন প্রকৌশলী সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না। ঠিকাদারকে কাজের জন্য অগ্রিম বিল দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। এরপরও যারা তা করেছেন তাদেরই এর দায় নিতে হবে।’
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত ১২ নভেম্বর নিজ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সব প্রকল্পকে রাজনৈতিক ও সিন্ডিকেট মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কোনোভাবেই ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না।
সরকার প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারেও কঠোর হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে নীতিমালা করা হচ্ছে।