দেশে আগামী বছরই হয়তো নির্বাচিত সরকার দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারবিষয়ক এই মত একান্তই তার ব্যক্তিগত। শেষমেশ কী হবে, তিনি জানেন না।’
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এবিসিডি সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে অংশ নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘গত সরকারের আমলে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি ভালো প্রকল্প আছে। কিন্তু ওই সব প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোই ‘প্রেস্টিজ প্রকল্প’ বা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য নেয়া হয়েছিল। এসব নিয়ে কী করা যায়, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ কীভাবে সমতামূলক সমাজ নির্মাণ করতে পারে-এ প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বড় ধরনের সম্পদের স্বল্পতায় আছে। অনেক টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। মানুষের টাকা ব্যাংকে আছে, কিন্তু ব্যাংকের টাকা বাইরে চলে গেছে। বেক্সিমকোর মতো বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থিতিপত্রে অনেক টাকা থাকলেও বাস্তবে দেশের মধ্যে নেই। শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয়। কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে?’
এই বাস্তবতায় সমতামূলক সমাজ নির্মাণ কঠিন। সম্পদস্বল্পতার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন বলে মন্তব্য করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এখন ডায়ালাইসিস মেশিন কেনা হবে নাকি জনস্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করা হবে-এটা নৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নৈতিক উভয়সংকটের জবাব অমর্ত্য সেন বা জন রলসের মতো অর্থনীতিবিদেরাও দিতে পারবেন না। বৈষম্য দূর করতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দরকার যা থেকে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ।’
একই অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল বলেন, ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বাংলাদেশকে বের করতে হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রযুক্তির ব্যবহার জেনো বাড়ানো যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের মতে, এ কাজে এগুতে হলে প্রথমেই মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কৌশল নিতে হবে। পাশাপাশি সেবা ও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন বাড়াতে বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা সাজানোর পরামর্শ দেন ইন্দরমিত এস গিল।
‘সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং আত্মমর্যাদা’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজন করেছে অ্যানুয়াল বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্ট (এবিসিডি)-২০২৪। গতকাল থেকে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে চলবে এই উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
উন্নয়নবিষয়ক সমসাময়িক বিষয় ও বিতর্ক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্ট গবেষকদের গবেষণাকাজ উপস্থাপন করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
১২টি একাডেমিক সেশনে মোট ৩০টি গবেষণাপত্র, ১২টি পাবলিক লেকচার এবং ২টি মুখ্য বক্তৃতা চারদিনে উপস্থাপন করা হবে এই সম্মেলনে। অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়বস্তু মূলত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠন, দারিদ্র্য, মূল্যস্ফীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা, জ্বালানি, পরিবেশ, নগরায়ণ, বাল্যবিবাহসহ আরও অন্যান্য উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়।
শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪
দেশে আগামী বছরই হয়তো নির্বাচিত সরকার দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারবিষয়ক এই মত একান্তই তার ব্যক্তিগত। শেষমেশ কী হবে, তিনি জানেন না।’
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উদ্যোগে আয়োজিত এবিসিডি সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে অংশ নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘গত সরকারের আমলে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি ভালো প্রকল্প আছে। কিন্তু ওই সব প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোই ‘প্রেস্টিজ প্রকল্প’ বা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য নেয়া হয়েছিল। এসব নিয়ে কী করা যায়, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ কীভাবে সমতামূলক সমাজ নির্মাণ করতে পারে-এ প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বড় ধরনের সম্পদের স্বল্পতায় আছে। অনেক টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। মানুষের টাকা ব্যাংকে আছে, কিন্তু ব্যাংকের টাকা বাইরে চলে গেছে। বেক্সিমকোর মতো বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থিতিপত্রে অনেক টাকা থাকলেও বাস্তবে দেশের মধ্যে নেই। শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয়। কিন্তু টাকা আসবে কোথা থেকে?’
এই বাস্তবতায় সমতামূলক সমাজ নির্মাণ কঠিন। সম্পদস্বল্পতার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো কঠিন বলে মন্তব্য করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এখন ডায়ালাইসিস মেশিন কেনা হবে নাকি জনস্বাস্থ্যে বিনিয়োগ করা হবে-এটা নৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নৈতিক উভয়সংকটের জবাব অমর্ত্য সেন বা জন রলসের মতো অর্থনীতিবিদেরাও দিতে পারবেন না। বৈষম্য দূর করতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দরকার যা থেকে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ।’
একই অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল বলেন, ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বাংলাদেশকে বের করতে হলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি ও প্রযুক্তির ব্যবহার জেনো বাড়ানো যায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের মতে, এ কাজে এগুতে হলে প্রথমেই মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কৌশল নিতে হবে। পাশাপাশি সেবা ও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন বাড়াতে বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ। একই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা সাজানোর পরামর্শ দেন ইন্দরমিত এস গিল।
‘সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং আত্মমর্যাদা’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজন করেছে অ্যানুয়াল বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্ট (এবিসিডি)-২০২৪। গতকাল থেকে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে চলবে এই উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
উন্নয়নবিষয়ক সমসাময়িক বিষয় ও বিতর্ক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্ট গবেষকদের গবেষণাকাজ উপস্থাপন করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
১২টি একাডেমিক সেশনে মোট ৩০টি গবেষণাপত্র, ১২টি পাবলিক লেকচার এবং ২টি মুখ্য বক্তৃতা চারদিনে উপস্থাপন করা হবে এই সম্মেলনে। অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়বস্তু মূলত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠন, দারিদ্র্য, মূল্যস্ফীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা, জ্বালানি, পরিবেশ, নগরায়ণ, বাল্যবিবাহসহ আরও অন্যান্য উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়।