alt

১৯৭১ এ পরিকল্পিত তালিকা করে বুদ্ধিজীবী হত্যা: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বেছে বেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তাদেরকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করেছিল জামায়াতে ইসলামী ও তার তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সমন্বয়ে গঠিত আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার নামে মিলিশিয়া বাহিনী।

পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হত্যকাণ্ডের অন্যতম ১৯৭১ এ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা। এই বুদ্ধিজীবীদের অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

https://sangbad.net.bd/images/2024/December/14Dec24/news/Intellectual.jpg

মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসই বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হলেও ১৪’ই ডিসেম্বর রাতে একযোগে বহু বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশের সেই সময়কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে ঢাকায় রায়ের বাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো ৯ মাস ধরেই পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে গণহত্যা করেছে। তাদের এই গণহত্যা থেকে বাংলাদেশের কেউ রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক-কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সব শ্রেণীপেশার মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তানিরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক পরাজয় বরণ করতে শুরু করে। হানাদার বাহিনী বুঝে ফেলে বাংলাদেশে তাদের দিন শেষ। এরপরই তারা পরিকল্পনা করে বুদ্ধিজীবি হত্যার।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি।

যেসব বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন তাদের তালিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়, ১৪৯ জন।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, আল-বদর বাহিনী হওয়ার আগেই বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংঘ পুরোপুরি আল-বদরে রূপান্তরিত হয়। তাদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা শহরে আল-বদররাই মাইক্রোবাসে করে সবাইকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

ঢাকার পতনের পর গভর্নর হাউজ, যেটি এখন বঙ্গভবন নামে পরিচিত, সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারাও ফরমান আলীর একটি ডায়রি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা।

জানা গেছে, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বাওয়ানির বাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু নথি পাওয়া যায়,যাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশনা পাওয়া যায়।

বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে ২০১৩ সালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদ- দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী সংগঠন আল-বদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মুঈনুদ্দীন বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের ঘটনার অপারেশন ইনচার্জ এবং আশরাফ ছিলেন চিফ এক্সিকিউটর (প্রধান বাস্তবায়নকারী)।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ।

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সহযোগিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানপ্রেমী দল ‘শান্তি কমিটি’ ও ‘রাজাকার’ বাহিনী গঠন করেছিল। রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে আনসার বাহিনীকে যুক্ত করে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে এটিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।

জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ও নেতৃত্বে শীর্ষ ঘাতক বাহিনী ‘আল-বদর’ গঠন করা হয়েছিল হিটলারের ‘গেস্টাপো’ ও ‘এসডি’র আদলে প্রধানত বুদ্ধিজীবীদের শনাক্ত করে হত্যার জন্য। যে বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, চৌধুরী মঈনউদ্দিন, আশরাফ উজ্জামান প্রমুখ। যাদের প্রধান নেতা বা গুরু ছিলেন গোলাম আযম। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘকে রূপান্তর করা হয়েছিল আল-বদর বাহিনীতে।

ছবি

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ৬ জনের মৃত্যু: হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩ জন

ছবি

জেইসির মাধ্যমে বাংলাদেশ-পাকিস্তান দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত, আজ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর

চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

এক লাখ কর্মী নিয়োগ, প্রধান উপদেষ্টাকে অগ্রগতি জানালো জাপানি প্রতিনিধিদল

ছবি

মঙ্গলবার সরকারের হাতে যাবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা

ছবি

নভেম্বরের পরও চলবে উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম: অন্তর্বর্তী সরকারের স্পষ্টীকরণ

ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১

ছবি

অর্থ পাচারের মামলায় সম্রাট ও আরমানের জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হওয়া ও নৈতিক নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান শিক্ষা উপদেষ্টার

ডেঙ্গু: একদিনে সর্বোচ্চ ১১৪৩ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৪

ছবি

শাহজালালে আগুন: অনুসন্ধানে ঢাকায় তুরস্কের বিশেষজ্ঞ দল

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউলসহ দুই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেড়েছে

ছবি

মেট্রো রেললাইনের বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যু, ৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন

সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর

ছবি

বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেয়া হবে না, হাইকোর্টের প্রশ্ন

আরপিও সংশোধন: রাষ্ট্রপতি সই করলেই জারি হবে অধ্যাদেশ

ছবি

অমর একুশে বইমেলা ‘যথা সময়েই’ অনুষ্ঠিত হবে: প্রেস সচিব

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেবে

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রম নভেম্বরেই শেষ : তথ্য উপদেষ্টার

ছবি

বাংলাদেশ–পাকিস্তান সহযোগিতা বাড়াতে আলোচনায় সাহির শামশাদ মির্জা ও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

ছবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে, উপকূলে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত

ছবি

গুম প্রতিরোধে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: আসিফ নজরুল

ছবি

বিমানবন্দরের আগুন তদন্তে বিশেষজ্ঞ আসছেন ৪ দেশ থেকে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সামনে ‘সংঘাতের আলামত’ দেখতে পাচ্ছেন মাহফুজ আলম

ছবি

ডেঙ্গুতে শিশু ও কিশোর আক্রান্ত ১০ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

রাষ্ট্র নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ হলে ন্যায়ের জন্য লড়াই অপরিহার্য: প্রধান বিচারপতি

ছবি

কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে বিদেশি বিশেষজ্ঞরা আসছেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

লিবিয়া সরকারের দ্বিতীয় চার্টার ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩০৯ বাংলাদেশি

ছবি

মানসিক সুস্থতাকে এগিয়ে নিতে তরুণ সমাজকে দায়িত্বশীল হতে হবে: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা

ছবি

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সর্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেয়ার নিন্দা জানালো বাংলাদেশ

ছবি

বাংলাদেশি স্থপতি রেজোয়ানের ভাসমান স্কুল পেল ইউনেস্কোর কনফুসিয়াস পুরস্কার

tab

১৯৭১ এ পরিকল্পিত তালিকা করে বুদ্ধিজীবী হত্যা: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বেছে বেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তাদেরকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করেছিল জামায়াতে ইসলামী ও তার তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সমন্বয়ে গঠিত আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার নামে মিলিশিয়া বাহিনী।

পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হত্যকাণ্ডের অন্যতম ১৯৭১ এ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা। এই বুদ্ধিজীবীদের অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

https://sangbad.net.bd/images/2024/December/14Dec24/news/Intellectual.jpg

মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসই বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হলেও ১৪’ই ডিসেম্বর রাতে একযোগে বহু বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশের সেই সময়কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে ঢাকায় রায়ের বাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো ৯ মাস ধরেই পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে গণহত্যা করেছে। তাদের এই গণহত্যা থেকে বাংলাদেশের কেউ রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক-কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সব শ্রেণীপেশার মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তানিরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক পরাজয় বরণ করতে শুরু করে। হানাদার বাহিনী বুঝে ফেলে বাংলাদেশে তাদের দিন শেষ। এরপরই তারা পরিকল্পনা করে বুদ্ধিজীবি হত্যার।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি।

যেসব বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন তাদের তালিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়, ১৪৯ জন।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, আল-বদর বাহিনী হওয়ার আগেই বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংঘ পুরোপুরি আল-বদরে রূপান্তরিত হয়। তাদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা শহরে আল-বদররাই মাইক্রোবাসে করে সবাইকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

ঢাকার পতনের পর গভর্নর হাউজ, যেটি এখন বঙ্গভবন নামে পরিচিত, সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারাও ফরমান আলীর একটি ডায়রি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা।

জানা গেছে, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বাওয়ানির বাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু নথি পাওয়া যায়,যাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশনা পাওয়া যায়।

বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে ২০১৩ সালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদ- দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী সংগঠন আল-বদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মুঈনুদ্দীন বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের ঘটনার অপারেশন ইনচার্জ এবং আশরাফ ছিলেন চিফ এক্সিকিউটর (প্রধান বাস্তবায়নকারী)।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ।

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সহযোগিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানপ্রেমী দল ‘শান্তি কমিটি’ ও ‘রাজাকার’ বাহিনী গঠন করেছিল। রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে আনসার বাহিনীকে যুক্ত করে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে এটিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।

জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ও নেতৃত্বে শীর্ষ ঘাতক বাহিনী ‘আল-বদর’ গঠন করা হয়েছিল হিটলারের ‘গেস্টাপো’ ও ‘এসডি’র আদলে প্রধানত বুদ্ধিজীবীদের শনাক্ত করে হত্যার জন্য। যে বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, চৌধুরী মঈনউদ্দিন, আশরাফ উজ্জামান প্রমুখ। যাদের প্রধান নেতা বা গুরু ছিলেন গোলাম আযম। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘকে রূপান্তর করা হয়েছিল আল-বদর বাহিনীতে।

back to top