alt

জাতীয়

১৯৭১ এ পরিকল্পিত তালিকা করে বুদ্ধিজীবী হত্যা: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বেছে বেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তাদেরকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করেছিল জামায়াতে ইসলামী ও তার তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সমন্বয়ে গঠিত আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার নামে মিলিশিয়া বাহিনী।

পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হত্যকাণ্ডের অন্যতম ১৯৭১ এ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা। এই বুদ্ধিজীবীদের অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

https://sangbad.net.bd/images/2024/December/14Dec24/news/Intellectual.jpg

মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসই বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হলেও ১৪’ই ডিসেম্বর রাতে একযোগে বহু বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশের সেই সময়কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে ঢাকায় রায়ের বাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো ৯ মাস ধরেই পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে গণহত্যা করেছে। তাদের এই গণহত্যা থেকে বাংলাদেশের কেউ রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক-কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সব শ্রেণীপেশার মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তানিরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক পরাজয় বরণ করতে শুরু করে। হানাদার বাহিনী বুঝে ফেলে বাংলাদেশে তাদের দিন শেষ। এরপরই তারা পরিকল্পনা করে বুদ্ধিজীবি হত্যার।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি।

যেসব বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন তাদের তালিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়, ১৪৯ জন।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, আল-বদর বাহিনী হওয়ার আগেই বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংঘ পুরোপুরি আল-বদরে রূপান্তরিত হয়। তাদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা শহরে আল-বদররাই মাইক্রোবাসে করে সবাইকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

ঢাকার পতনের পর গভর্নর হাউজ, যেটি এখন বঙ্গভবন নামে পরিচিত, সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারাও ফরমান আলীর একটি ডায়রি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা।

জানা গেছে, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বাওয়ানির বাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু নথি পাওয়া যায়,যাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশনা পাওয়া যায়।

বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে ২০১৩ সালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদ- দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী সংগঠন আল-বদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মুঈনুদ্দীন বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের ঘটনার অপারেশন ইনচার্জ এবং আশরাফ ছিলেন চিফ এক্সিকিউটর (প্রধান বাস্তবায়নকারী)।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ।

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সহযোগিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানপ্রেমী দল ‘শান্তি কমিটি’ ও ‘রাজাকার’ বাহিনী গঠন করেছিল। রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে আনসার বাহিনীকে যুক্ত করে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে এটিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।

জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ও নেতৃত্বে শীর্ষ ঘাতক বাহিনী ‘আল-বদর’ গঠন করা হয়েছিল হিটলারের ‘গেস্টাপো’ ও ‘এসডি’র আদলে প্রধানত বুদ্ধিজীবীদের শনাক্ত করে হত্যার জন্য। যে বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, চৌধুরী মঈনউদ্দিন, আশরাফ উজ্জামান প্রমুখ। যাদের প্রধান নেতা বা গুরু ছিলেন গোলাম আযম। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘকে রূপান্তর করা হয়েছিল আল-বদর বাহিনীতে।

জুলাই আন্দোলন : সাবেক আইজিপিসহ সাড়ে ৯শ’ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

ডনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের চীন সফর শুরু

ছবি

অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন আলী ইমাম মজুমদার

ছবি

অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন মামুন

ছবি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

ছবি

পুলিশ-র‌্যাব-আনসারের পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

ছবি

সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার

ছবি

সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

ছবি

পৃথক হত্যা মামলায় সালমান, আনিসুল, ইনু, মেনন ও মামুন ফের রিমান্ডে

ছবি

ভোটার তালিকা হালনাগাদ: বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১৯ লাখ তথ্য সংগ্রহের আশায় ইসি

ছবি

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন অধ্যাপক ইউনূস

ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ

ছবি

শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পুতুলকে সরাতে দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে দুদক

ছবি

আরাকান আর্মির বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে: জাতিসংঘ দূত

বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ট্রাইব্যুনালে জাতিসংঘের সহযোগিতা

ছবি

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কে চিড় ধরবে না : রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ডেপুটি গভর্নরের বাসায় নগদ টাকা ও সঞ্চয়পত্র উদ্ধার

ছবি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

ছবি

রূপপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ শোধের সুরাহা হয়ে যোবে : রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

ছবি

বায়ু দুষণে বছরে দেশে ১ লাখ ২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু

ছবি

বিডিআর বিদ্রোহ : বিস্ফোরক মামলায় দুই শতাধিক আসামির জামিন

ছবি

সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচন হবে: সিইসি

ছবি

সুন্দরবনে বেড়েছে হরিণ, তবে থেমে নেই শিকার

প্রশাসনের সব স্তরে ‘অনিয়ম ও অসমতা’ নিরসনের দাবি

বাংলাদেশকে নিয়ে ২০২৪ সালে ভারতীয় অপতথ্যের প্রবাহ: বিশ্লেষণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

ছবি

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের সংকট: আদিবাসী গ্রাফিতি বিতর্কে প্রতিবাদ

ছবি

বনের ক্ষতি ও পরিবেশ সংকট: সরকারি–বেসরকারি প্রকল্পের প্রভাব

ছবি

উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কোটার সমালোচনা

ছবি

এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, মেয়েদের সংখ্যা বেশি

ছবি

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ৪৭ বাংলাদেশি

ছবি

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

ছবি

সাড়ে পাঁচ মাসে ৪০ মাজারে হামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

পদ্ধতিগত সংস্কার ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন থামবে না: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

tab

জাতীয়

১৯৭১ এ পরিকল্পিত তালিকা করে বুদ্ধিজীবী হত্যা: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে একাত্তরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বেছে বেছে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। তাদেরকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করেছিল জামায়াতে ইসলামী ও তার তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সমন্বয়ে গঠিত আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার নামে মিলিশিয়া বাহিনী।

পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হত্যকাণ্ডের অন্যতম ১৯৭১ এ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা। এই বুদ্ধিজীবীদের অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

https://sangbad.net.bd/images/2024/December/14Dec24/news/Intellectual.jpg

মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসই বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হলেও ১৪’ই ডিসেম্বর রাতে একযোগে বহু বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দেশের সেই সময়কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে ঢাকায় রায়ের বাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পুরো ৯ মাস ধরেই পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে গণহত্যা করেছে। তাদের এই গণহত্যা থেকে বাংলাদেশের কেউ রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, শ্রমিক-কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সব শ্রেণীপেশার মানুষ নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তানিরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পাকিস্তানিরা বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক পরাজয় বরণ করতে শুরু করে। হানাদার বাহিনী বুঝে ফেলে বাংলাদেশে তাদের দিন শেষ। এরপরই তারা পরিকল্পনা করে বুদ্ধিজীবি হত্যার।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি।

যেসব বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন তাদের তালিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী এবং সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়, ১৪৯ জন।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, আল-বদর বাহিনী হওয়ার আগেই বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংঘ পুরোপুরি আল-বদরে রূপান্তরিত হয়। তাদের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা শহরে আল-বদররাই মাইক্রোবাসে করে সবাইকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে।

ঢাকার পতনের পর গভর্নর হাউজ, যেটি এখন বঙ্গভবন নামে পরিচিত, সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারাও ফরমান আলীর একটি ডায়রি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা।

জানা গেছে, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বাওয়ানির বাসা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু নথি পাওয়া যায়,যাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর নির্দেশনা পাওয়া যায়।

বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে ২০১৩ সালে চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে মৃত্যুদ- দিয়েছে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের যুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী সংগঠন আল-বদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মুঈনুদ্দীন বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের ঘটনার অপারেশন ইনচার্জ এবং আশরাফ ছিলেন চিফ এক্সিকিউটর (প্রধান বাস্তবায়নকারী)।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ আবাসস্থল থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ।

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সহযোগিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপি প্রভৃতি ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানপ্রেমী দল ‘শান্তি কমিটি’ ও ‘রাজাকার’ বাহিনী গঠন করেছিল। রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে আনসার বাহিনীকে যুক্ত করে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে এটিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী বাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।

জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ও নেতৃত্বে শীর্ষ ঘাতক বাহিনী ‘আল-বদর’ গঠন করা হয়েছিল হিটলারের ‘গেস্টাপো’ ও ‘এসডি’র আদলে প্রধানত বুদ্ধিজীবীদের শনাক্ত করে হত্যার জন্য। যে বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, চৌধুরী মঈনউদ্দিন, আশরাফ উজ্জামান প্রমুখ। যাদের প্রধান নেতা বা গুরু ছিলেন গোলাম আযম। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘকে রূপান্তর করা হয়েছিল আল-বদর বাহিনীতে।

back to top