alt

জাতীয়

এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের আভাস দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রধান সব সংস্কার শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবেদন রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে ‘অল্প কিছু’ সংস্কার করে ২০২৫ সালের শেষে দিকেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ‘হয়তো’ সম্ভব হবে। তবে প্রত্যাশিত সব সংস্কার করতে হলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচির ধারণা দিতে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। তিনি ভাষণে নির্বাচন, গুম কমিশনের প্রতিবেদন, শ্বেতপত্র, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, অর্থপাচার, ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

১৬ই ডিসেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।

ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি সব প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘আর যদি এরসঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম পর্যায়ে যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, সেসব কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করার কথাও ভাষণে বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এর কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতামত বিনিময় করে যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা।’ ছয় কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাবার পর আসছে জানুয়ারি মাসেই ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তকালীন সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব’, সেহেতু তিনি নিজেই এ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। তার সঙ্গে এ কমিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ।

ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ আর অগণিত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ জনতার আত্মত্যাগের কথা; যার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই অর্জনকে আমাদের দোষে সম্পূর্ণতা দিতে পারিনি। সর্বশেষ এবং প্রচ-তম আঘাত হানল এক স্বৈরাচারী সরকার। সে প্রতিজ্ঞা করেই বসেছিল এদেশের মঙ্গল হতে পারে এমন কিছুই সে অবশিষ্ট থাকতে দেবে না।’

গত জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে সেই ‘স্বৈরাচারী’ সরকারের পতনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ বছরের বিজয় দিবস বিশেষ কারণে মহা আনন্দের দিন। মাত্র চার মাস আগে একটি অসম্ভব সম্ভব হয়ে গেল, দেশের সবাই মিলে একজোটে হুঙ্কার দিয়ে উঠল, পৃথিবীর ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে আমাদের প্রিয় দেশকে মুক্ত করেছে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান।’

ঐক্য অটুট
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যে হাজার হাজার শহীদ এবং আহতদের আত্মত্যাগ এবং ছাত্র-জনতার অটুট ঐক্যের মাধ্যমে এই গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হল, তাদের সবাইকে স্মরণ করি এবং আজ এবারের মহা বিজয়ের দিনে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।’ চার মাসের ব্যবধানে সেই ঐক্য কোথাও ‘শিথিল হয়নি’ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পে আমরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

তখন থেকেই আলোচনা চলছে, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচন কবে হবে?

এরমধ্যে সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, এমনকি সেনাপ্রধানও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টাদের বা অন্য কারো মতামত ব্যক্তিগত, নিজস্ব। নির্বাচনের সময় বা দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা নিজে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একশ’ দিন পূর্তিতে গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন’ যাত্রা শুরু করেছে, সেই ট্রেন আর ‘থামবে না’। তার একমাসের মাথায় সোমবার বিজয় দিবসের সকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে কথা বললেন।

*নির্বাচন কমিশন*
সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরার এক পর্যায়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সংস্কারের যে আকাক্সক্ষা, সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাই, কেননা এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি ও তারিখ।’

ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হল ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। তাদের হাতে অনেক কাজ।’

*ভোটার তালিকা*
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা সবচেয়ে বড় কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরও কঠিন হল এজন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হবার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ।’

ইউনূস আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।’

এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ-তরুণী ভোটারেরা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে ‘ঐতিহ্য’ সৃষ্টি করবে, সেই প্রত্যাশার কথাও বলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। নতুন ভোটার ছাড়াও যাদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল, তারা ভোটার তালিকায় আছেন কিনা, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। ভুয়া ভোটারদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কাজে তিনি ‘বিশেষ মনোযোগ’ দেয়ার কথাও বলেন।

*প্রবাসী ভোট*
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেন, ‘এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।’

তবে সব প্রস্তুতি এবং সংস্কারের জন্য যে সময় দরকার, সে কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এরসঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।’

প্রত্যাশিত লক্ষ্য পূরণে সবাইকে গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘সজাগ থাকুন। নিজের লক্ষ্যকে জাতির লক্ষ্যের সঙ্গে একীভূত করুন। পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।’

*ঐতিহাসিক ঘটনা*
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূতেরা একসঙ্গে ঢাকায় এসে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করলেন। তারা একত্রে ঢাকায় এলেন শুধু এই বার্তা দেয়ার জন্য যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।

*অর্থনীতি, ব্যাংকিং*
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভাষণে বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজন ও সংস্কার ছাড়াও আপনারা আমাদের ওপর অনেকগুলো দায়িত্ব দিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছ থেকে আমরা বিপর্যস্ত এক অর্থনীতি পেয়েছি। আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’

তিনি বলেন, গত চার মাসে এ অবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা আর নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। কোনো ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হয়নি। ব্যাংক যতই দুর্বলই হোক, তাকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে আরোপ করা বিধিনিষেধ এখন আর নেই বলেও জানান তিনি।

অর্থনীতির সাফল্যের ব্যাপারে দেশে ও বিদেশে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকসহ সব দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার সক্ষম হয়েছে। তারা নতুন উদ্যোগে ও নতুন উৎসাহে আমাদের সঙ্গে নতুন আর্থিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছে।’

*রিজার্ভ*
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের নভেম্বরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বছরের হিসাবে এই প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এসবের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।’

পোশাকশ্রমিকদের বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

*মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য*
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আমরা এখনও পাইনি। তবে আমার বিশ্বাস, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমে আসবে। গত কয়েক মাসে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা সরবরাহ বাড়িয়ে, আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়ে, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ও বাজার তদারকির মধ্য দিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

*চাঁদাবাজি*
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব হলে আমরা আশা করি, জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আপনাদের কষ্টে সমব্যথী। তবে আমরা জানি, সরকারের কাজ কেবল সমবেদনা জানানো নয়; আমরা আপনাদের কষ্ট কমিয়ে আনতে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

আসন্ন পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে সবার সহযোগিতাতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেছে, বাজারে পণ্য সরবরাহের কোনো সংকট হবে না। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে যদি কেউ কৃত্রিম কোনো সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করে, আমরা তাকে কঠোর হাতে দমন করব। বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বিকল্প কৃষিবাজার চালু করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

*স্বৈরশাসক ও দোসরদের বিচার*
এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত পতিত স্বৈরশাসক ও তার দোসরদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আসামিদের বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ তারা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও অন্য পর্যবেক্ষকদের জন্য বিচারপ্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বিচারের যেকোনো অংশ চাইলে যে কেউ রেকর্ড করার সুযোগ পাবেন। আইসিসি প্রসিকিউটর করিম খান সম্প্রতি আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি আইসিটি প্রসিকিউটর ও অন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং আইসিটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আলাদাভাবে আমরা গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করব বলে তাকে জানিয়েছি।’

*দেশে-বিদেশ বিপুল অর্থ*
জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরাজিত শক্তি তাদের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা প্রতিদিন দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে নানা ভঙ্গিতে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের আয়ত্তে রয়েছে। তাদের সুবিধাভোগীরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। আমাদের ঐক্য অটুট থাকলে, তারা আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে ব্যর্থ করতে পারবে না।

ছবি

লেবানন থে‌কে ৯৪ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে

ছবি

মিশরের পথে প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: সিইসি

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার বাতিলের সুপারিশ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তের সময় বাড়ালো ট্রাইব্যুনাল

২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে : প্রেস উইং

ছবি

অন্তর্বর্তী সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘সাংঘর্ষিক’ নয়: অ্যাটর্নি জেনারেল

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনীর ৫টি অনুচ্ছেদ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়

আতসবাজি বন্ধ,ফানুস উড়ানো যাবে না : নিরাপত্তায় থাকবে বোম ডিসপোজাল ইউনিট

ছবি

২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলে আস্থা নষ্ট, তিন নির্বাচন নিয়ে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ

ছবি

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ জারির আগে পর্যালোচনার সময় বাড়ানোর আহ্বান টিআইবির

ছবি

ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেপ্তারের তথ্য ছিল না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার আলাদা করার সুপারিশ

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ঐতিহাসিক রায়: পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারা বাতিল

ছবি

নাম পরিবর্তন করে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ হবে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’: অ্যাটর্নি জেনারেল

ছবি

হাসিনা পরিবারের সদস্যদের ‘দুর্নীতি’ অনুসন্ধান করবে দুদক

ছবি

জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসি সম্পূর্ণ প্রস্তুত : নাসির উদ্দীন

ছবি

ইভিএমে নয়, ব্যালটে হবে জাতীয় নির্বাচন : সিইসি

ছবি

জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ল ২ মাস

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ : হাইকোর্ট

ছবি

চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বন্ধে সুপারিশ করবে কমিশন

ছবি

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, শুক্রবার থেকে সারাদেশে বৃষ্টি

ছবি

সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জন আসামিকে আনা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে

ছবি

পিলখানা হত্যা: ৫ দিনের মধ্যে পুনঃতদন্ত কমিটি হবে, জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী রায়ের অপেক্ষা

ছবি

বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

ছবি

মোদির পোস্টের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন আসিফ নজরুল

ছবি

বাংলাদেশ-ভারতের সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের অফিসারদের সাক্ষাৎ

ছবি

সারদায় প্রশিক্ষণরত ২৫ এএসপিকে শোকজ

‘২০২৪ সালের বিজয় স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিয়েছে’ — নাহিদ ইসলাম

ছবি

জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা

ছবি

২০২৫ সালের শেষ দিক জাতীয় নির্বাচন হতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আজ সকাল ১০টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস

tab

জাতীয়

এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের আভাস দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রধান সব সংস্কার শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবেদন রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে ‘অল্প কিছু’ সংস্কার করে ২০২৫ সালের শেষে দিকেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ‘হয়তো’ সম্ভব হবে। তবে প্রত্যাশিত সব সংস্কার করতে হলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচির ধারণা দিতে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান। তিনি ভাষণে নির্বাচন, গুম কমিশনের প্রতিবেদন, শ্বেতপত্র, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, অর্থপাচার, ঐকমত্য কমিশন গঠন, সংস্কার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

১৬ই ডিসেম্বর সোমবার সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।

ভাষণে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি সব প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘আর যদি এরসঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম পর্যায়ে যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, সেসব কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করার কথাও ভাষণে বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এর কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতামত বিনিময় করে যে সমস্ত বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা।’ ছয় কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাবার পর আসছে জানুয়ারি মাসেই ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্বর্তকালীন সরকারের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব’, সেহেতু তিনি নিজেই এ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। তার সঙ্গে এ কমিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রিয়াজ।

ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদ আর অগণিত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ জনতার আত্মত্যাগের কথা; যার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেই অর্জনকে আমাদের দোষে সম্পূর্ণতা দিতে পারিনি। সর্বশেষ এবং প্রচ-তম আঘাত হানল এক স্বৈরাচারী সরকার। সে প্রতিজ্ঞা করেই বসেছিল এদেশের মঙ্গল হতে পারে এমন কিছুই সে অবশিষ্ট থাকতে দেবে না।’

গত জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে সেই ‘স্বৈরাচারী’ সরকারের পতনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ বছরের বিজয় দিবস বিশেষ কারণে মহা আনন্দের দিন। মাত্র চার মাস আগে একটি অসম্ভব সম্ভব হয়ে গেল, দেশের সবাই মিলে একজোটে হুঙ্কার দিয়ে উঠল, পৃথিবীর ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসককে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে আমাদের প্রিয় দেশকে মুক্ত করেছে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থান।’

ঐক্য অটুট
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যে হাজার হাজার শহীদ এবং আহতদের আত্মত্যাগ এবং ছাত্র-জনতার অটুট ঐক্যের মাধ্যমে এই গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হল, তাদের সবাইকে স্মরণ করি এবং আজ এবারের মহা বিজয়ের দিনে সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই।’ চার মাসের ব্যবধানে সেই ঐক্য কোথাও ‘শিথিল হয়নি’ মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পে আমরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরমধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

তখন থেকেই আলোচনা চলছে, অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচন কবে হবে?

এরমধ্যে সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, এমনকি সেনাপ্রধানও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে উপদেষ্টাদের বা অন্য কারো মতামত ব্যক্তিগত, নিজস্ব। নির্বাচনের সময় বা দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা নিজে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একশ’ দিন পূর্তিতে গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন’ যাত্রা শুরু করেছে, সেই ট্রেন আর ‘থামবে না’। তার একমাসের মাথায় সোমবার বিজয় দিবসের সকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে কথা বললেন।

*নির্বাচন কমিশন*
সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরার এক পর্যায়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সংস্কারের যে আকাক্সক্ষা, সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাই, কেননা এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি ও তারিখ।’

ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হল ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। তাদের হাতে অনেক কাজ।’

*ভোটার তালিকা*
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা সবচেয়ে বড় কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরও কঠিন হল এজন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হবার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ।’

ইউনূস আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।’

এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের তরুণ-তরুণী ভোটারেরা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে ‘ঐতিহ্য’ সৃষ্টি করবে, সেই প্রত্যাশার কথাও বলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। নতুন ভোটার ছাড়াও যাদের আগে থেকে ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা ছিল, তারা ভোটার তালিকায় আছেন কিনা, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। ভুয়া ভোটারদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কাজে তিনি ‘বিশেষ মনোযোগ’ দেয়ার কথাও বলেন।

*প্রবাসী ভোট*
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেন, ‘এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।’

তবে সব প্রস্তুতি এবং সংস্কারের জন্য যে সময় দরকার, সে কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এরসঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।’

প্রত্যাশিত লক্ষ্য পূরণে সবাইকে গণঅভ্যুত্থানের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘সজাগ থাকুন। নিজের লক্ষ্যকে জাতির লক্ষ্যের সঙ্গে একীভূত করুন। পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য অর্জন থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।’

*ঐতিহাসিক ঘটনা*
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূতেরা একসঙ্গে ঢাকায় এসে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করলেন। তারা একত্রে ঢাকায় এলেন শুধু এই বার্তা দেয়ার জন্য যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রস্তুত।

*অর্থনীতি, ব্যাংকিং*
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভাষণে বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজন ও সংস্কার ছাড়াও আপনারা আমাদের ওপর অনেকগুলো দায়িত্ব দিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। ফ্যাসিবাদী সরকারের কাছ থেকে আমরা বিপর্যস্ত এক অর্থনীতি পেয়েছি। আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।’

তিনি বলেন, গত চার মাসে এ অবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা আর নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরে আসছে। কোনো ব্যাংক বন্ধ করে দিতে হয়নি। ব্যাংক যতই দুর্বলই হোক, তাকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ব্যাংক থেকে আমানতকারীদের টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে আরোপ করা বিধিনিষেধ এখন আর নেই বলেও জানান তিনি।

অর্থনীতির সাফল্যের ব্যাপারে দেশে ও বিদেশে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকসহ সব দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার সক্ষম হয়েছে। তারা নতুন উদ্যোগে ও নতুন উৎসাহে আমাদের সঙ্গে নতুন আর্থিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছে।’

*রিজার্ভ*
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের নভেম্বরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি আয় ছিল ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বছরের হিসাবে এই প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এসবের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।’

পোশাকশ্রমিকদের বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের বার্ষিক মজুরি ৯ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

*মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য*
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আমরা এখনও পাইনি। তবে আমার বিশ্বাস, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমে আসবে। গত কয়েক মাসে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আমরা সরবরাহ বাড়িয়ে, আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়ে, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ও বাজার তদারকির মধ্য দিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।

*চাঁদাবাজি*
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব হলে আমরা আশা করি, জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আপনাদের কষ্টে সমব্যথী। তবে আমরা জানি, সরকারের কাজ কেবল সমবেদনা জানানো নয়; আমরা আপনাদের কষ্ট কমিয়ে আনতে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

আসন্ন পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে সবার সহযোগিতাতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেছে, বাজারে পণ্য সরবরাহের কোনো সংকট হবে না। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে যদি কেউ কৃত্রিম কোনো সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করে, আমরা তাকে কঠোর হাতে দমন করব। বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বিকল্প কৃষিবাজার চালু করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

*স্বৈরশাসক ও দোসরদের বিচার*
এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত পতিত স্বৈরশাসক ও তার দোসরদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আসামিদের বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ তারা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও অন্য পর্যবেক্ষকদের জন্য বিচারপ্রক্রিয়া উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বিচারের যেকোনো অংশ চাইলে যে কেউ রেকর্ড করার সুযোগ পাবেন। আইসিসি প্রসিকিউটর করিম খান সম্প্রতি আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি আইসিটি প্রসিকিউটর ও অন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং আইসিটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আলাদাভাবে আমরা গণহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করব বলে তাকে জানিয়েছি।’

*দেশে-বিদেশ বিপুল অর্থ*
জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরাজিত শক্তি তাদের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তারা প্রতিদিন দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে নানা ভঙ্গিতে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের আয়ত্তে রয়েছে। তাদের সুবিধাভোগীরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। আমাদের ঐক্য অটুট থাকলে, তারা আমাদের লক্ষ্য অর্জনকে ব্যর্থ করতে পারবে না।

back to top