একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যেসব বীর সন্তান রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে বাংলাদেশ নামে ভুখ-ে বিজয় বার্তা এনে দিয়েছিল এবার বিজয় দিবসে সেইসব বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতি আজ বিজয় দিবস উদযাপন করছে। ৫৫ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং দুই লাখ নারীর সমভ্র সম্মানের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে।
একই সঙ্গে বিজয় দিবস পালন করতে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখ-শান্তির বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানিয়েছে সব বয়সের ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিজয় দিবসে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানাতে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে লাখো মানুষ সমবেত হয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে হাজারো মানুষ সমবেত হয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
বিজয় দিবসের দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে। বিজয় দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে।
বিজয় দিবসে সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির পক্ষ থেকে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে পরিদর্শন শেষে তার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ঢাকা সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা সাভারে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। উভয় নেতা সকাল ৭টা ৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রর্দশন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। শ্রদ্ধা জানানো হয় বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পক্ষ থেকে।
প্রধান উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিফাত রশীদসহ বিদেশি কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা জানান। এরপরই সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন, পেশাজীবী পরিষদ আর জনতার ঢল বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৬ই ডিসেম্বর সোমবার ছিল সরকারি ছুটিরদিন। রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা করা হয়। জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও টেলিভিশন চ্যানেরগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে।
কোরআনখানি ও বিশেষ দোয়া
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সকালে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মুহিবুল্লাহিল বাকী। এ সময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন।
প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা নিবেদন
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
স্মৃতিসৌধে গণমানুষের ঢল
একাত্তরের এদিনে পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে বাঙালি জাতি। তাই বিজয় দিবস পালনে সব শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল আলাদা রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি চলে যাওযার পর পরে গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। পরে দলে দলে মানুষ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে বিজয়ের স্বাদ নিতে। নামে গণমানুষের ঢল।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সমভ্রমের বিনিময়ে যে বিজয় পেয়েছে বাঙালি, সেই বিজয়ের দিনে শহীদদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে জাতি। বিজয়ের আনন্দে দলে দলে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছে মানুষ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন ১৬ ডিসেম্বরে সেখানে যারা এসেছেন, কারও হাতে ফুলের তোড়া, কেউবা এসেছেন মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে, কারও আবার হাতেই জাতীয় পতাকা।
পোশাক শ্রমিক আনিসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে সকাল সকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছি। আজকের দিনে আমরা বিজয় পেয়েছি। আমরা যুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে যুদ্ধে জয়লাভের আনন্দ পাই। এজন্য প্রতিবারই আসি। এছাড়া আমার সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে জানাতে আমি পরিবারসহ জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছি।
গাজীপুর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছেন আহসান হাবীব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি চাকরি করি। পরিবারকে খুব বেশি সময় দিতে পারি না। তাই বিজয় দিবসের ছুটিতে পরিবার নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেক মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। আমরা এসে সর্বপ্রথম শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। পরে ঘুরে ঘুরে বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মণ্ডল শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একসঙ্গে অনেকে যুদ্ধ করেছি। এদের মধ্যে অনেকেই এখানে শুয়ে আছেন। তাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা মানুষ দেখাচ্ছে গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে। এভাবেই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা সমুন্নত থাকুক। ইতিহাস বিকৃত করা কোনোভাবেই একটা জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। শেকড়কে ভুলে গেলে কখনও মঙ্গল হয় না। এভাবেই আমার শহীদ ভাইরা মানুষের মনে শ্রদ্ধার জায়গা দখল করে রাখবে দিনের পর দিন।
বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। এদের মধ্যে শ্রদ্ধা জানানো শেষ হলে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর যেসব বীর সন্তান রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে বাংলাদেশ নামে ভুখ-ে বিজয় বার্তা এনে দিয়েছিল এবার বিজয় দিবসে সেইসব বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতি আজ বিজয় দিবস উদযাপন করছে। ৫৫ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং দুই লাখ নারীর সমভ্র সম্মানের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম লাভ করে।
একই সঙ্গে বিজয় দিবস পালন করতে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখ-শান্তির বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানিয়েছে সব বয়সের ও সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিজয় দিবসে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানাতে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে লাখো মানুষ সমবেত হয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে হাজারো মানুষ সমবেত হয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
বিজয় দিবসের দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয় ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে। বিজয় দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে।
বিজয় দিবসে সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির পক্ষ থেকে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে পরিদর্শন শেষে তার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ঢাকা সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা সাভারে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। উভয় নেতা সকাল ৭টা ৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রর্দশন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। শ্রদ্ধা জানানো হয় বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পক্ষ থেকে।
প্রধান উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিফাত রশীদসহ বিদেশি কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা জানান। এরপরই সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন, পেশাজীবী পরিষদ আর জনতার ঢল বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৬ই ডিসেম্বর সোমবার ছিল সরকারি ছুটিরদিন। রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরগুলোতে বিভিন্ন ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা করা হয়। জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও টেলিভিশন চ্যানেরগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে।
কোরআনখানি ও বিশেষ দোয়া
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সকালে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মুহিবুল্লাহিল বাকী। এ সময় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন।
প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা নিবেদন
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে সেখানে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
স্মৃতিসৌধে গণমানুষের ঢল
একাত্তরের এদিনে পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে বাঙালি জাতি। তাই বিজয় দিবস পালনে সব শ্রেণীপেশার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল আলাদা রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি চলে যাওযার পর পরে গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। পরে দলে দলে মানুষ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে বিজয়ের স্বাদ নিতে। নামে গণমানুষের ঢল।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সমভ্রমের বিনিময়ে যে বিজয় পেয়েছে বাঙালি, সেই বিজয়ের দিনে শহীদদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে জাতি। বিজয়ের আনন্দে দলে দলে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছে মানুষ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন ১৬ ডিসেম্বরে সেখানে যারা এসেছেন, কারও হাতে ফুলের তোড়া, কেউবা এসেছেন মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে, কারও আবার হাতেই জাতীয় পতাকা।
পোশাক শ্রমিক আনিসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে সকাল সকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছি। আজকের দিনে আমরা বিজয় পেয়েছি। আমরা যুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে যুদ্ধে জয়লাভের আনন্দ পাই। এজন্য প্রতিবারই আসি। এছাড়া আমার সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে জানাতে আমি পরিবারসহ জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছি।
গাজীপুর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছেন আহসান হাবীব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি চাকরি করি। পরিবারকে খুব বেশি সময় দিতে পারি না। তাই বিজয় দিবসের ছুটিতে পরিবার নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসেছি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেক মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। আমরা এসে সর্বপ্রথম শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। পরে ঘুরে ঘুরে বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মণ্ডল শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একসঙ্গে অনেকে যুদ্ধ করেছি। এদের মধ্যে অনেকেই এখানে শুয়ে আছেন। তাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা মানুষ দেখাচ্ছে গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে। এভাবেই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা সমুন্নত থাকুক। ইতিহাস বিকৃত করা কোনোভাবেই একটা জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। শেকড়কে ভুলে গেলে কখনও মঙ্গল হয় না। এভাবেই আমার শহীদ ভাইরা মানুষের মনে শ্রদ্ধার জায়গা দখল করে রাখবে দিনের পর দিন।
বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। এদের মধ্যে শ্রদ্ধা জানানো শেষ হলে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।