হাইকোর্টের রায়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ খুলেছে, তার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বরর্তী সরকার ব্যবস্থা ‘সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক হবে না’ বলেই মনে করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তার কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়। এর ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের যে বিধান আওয়ামী লীগ করেছিল, তা বাতিল হয়ে তার জায়গায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ খুলল।
রায়ের পর একজন সংবাদিক অ্যাটর্নি জেনারেলের কাজে জানতে চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক হবে কিনা।
জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, হাইকোর্ট রায়ের মধ্য দিয়ে বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবেই বৈধ। আর সরকার পতনের পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত দিয়ে বলেছিল, সংসদ না থাকা অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ও কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘গোটা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলছে, এটা বৈধ এবং সাংবিধানিক সরকার হবে। ওইটার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সাংঘর্ষিক কোনো পজিশন নাই।’
১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন হলেও তখন বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি।
আদালতের এক রায়ের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করা হয়। হাইকোর্ট মঙ্গলবার ওই সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকেই বৈধতা দিল।
এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংবিধানে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান না থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায় কিনা, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছিলেন তিনি।
আপিল বিভাগের মতামত পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান।
হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করাটা যখন কোর্ট বলছে অবৈধ, দ্যাট মিনস ইন আদার ওয়ার্ডস, তত্ত্বাবধায়ক সিস্টেম বৈধ। এটা হচ্ছে একটা ইন্টারপ্রিটেশন।’
দ্বিতীয় ইন্টারপ্রিটেশন হল, আপনি যদি ত্রয়োদশ সংশোধনের জাজমেন্টের কথা চিন্তা করেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী (বাতিলের) জাজমেন্টেও ওখানে সাতজন (বিচারক) একমত হয়ে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্ডারে অন্তত দুটি নির্বাচন হতে হবে। সাত জনের মধ্যে পরবর্তীতে আবার তিনজন পল্টি মেরেছিলেন।
তখনকার প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সমালোচনা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘উনি মূল জাজমেন্ট থেকে ডেভিয়েট করে ১৭ মাস পরে এই আইন আসার পরে জাজমেন্টটা দিলেন এই আইনটা পাস হওয়ার আগে। জাজমেন্ট রিলিজ করলেন এই আইন আসার ১৭ মাস পরে।’
‘সেখানে যে উনি রায় দিলেন যে ঠিক আছে, পরবর্তী দুইটা নির্বাচন হবে তবে পার্লামেন্ট ঠিক করবে কোন ফর্মে হবে। উনাদের থেকে দলছুট হয়ে সিনহা বাবু বললেন যে না আগামী দুইটাই হবে কেয়ারটেকারের আন্ডারে আপনার জুডিসিয়ারিকে বাদ রাখা উচিৎ। তার আগের তিনজন তো বলেছিলেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ।
আওয়ামী লীগ আমলের আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে বিচার ব্যবস্থা ‘ধ্বংসের’ জন্য দায়ী করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এইগুলোর সাজা হওয়া উচিৎ। এইগুলোর কারণেই আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত, বাংলাদেশে মানুষ হত্যা হয়েছে। বাংলাদেশে খুন হয়েছে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, গুম হয়েছে। মৃত মানুষের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।’
মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
হাইকোর্টের রায়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ খুলেছে, তার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বরর্তী সরকার ব্যবস্থা ‘সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক হবে না’ বলেই মনে করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তার কিছু অংশ বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়। এর ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের যে বিধান আওয়ামী লীগ করেছিল, তা বাতিল হয়ে তার জায়গায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার পথ খুলল।
রায়ের পর একজন সংবাদিক অ্যাটর্নি জেনারেলের কাজে জানতে চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক হবে কিনা।
জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, হাইকোর্ট রায়ের মধ্য দিয়ে বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবেই বৈধ। আর সরকার পতনের পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত দিয়ে বলেছিল, সংসদ না থাকা অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ও কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘গোটা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলছে, এটা বৈধ এবং সাংবিধানিক সরকার হবে। ওইটার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সাংঘর্ষিক কোনো পজিশন নাই।’
১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন হলেও তখন বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি।
আদালতের এক রায়ের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করা হয়। হাইকোর্ট মঙ্গলবার ওই সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকেই বৈধতা দিল।
এদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সংবিধানে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান না থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায় কিনা, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছিলেন তিনি।
আপিল বিভাগের মতামত পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান।
হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করাটা যখন কোর্ট বলছে অবৈধ, দ্যাট মিনস ইন আদার ওয়ার্ডস, তত্ত্বাবধায়ক সিস্টেম বৈধ। এটা হচ্ছে একটা ইন্টারপ্রিটেশন।’
দ্বিতীয় ইন্টারপ্রিটেশন হল, আপনি যদি ত্রয়োদশ সংশোধনের জাজমেন্টের কথা চিন্তা করেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী (বাতিলের) জাজমেন্টেও ওখানে সাতজন (বিচারক) একমত হয়ে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্ডারে অন্তত দুটি নির্বাচন হতে হবে। সাত জনের মধ্যে পরবর্তীতে আবার তিনজন পল্টি মেরেছিলেন।
তখনকার প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সমালোচনা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘উনি মূল জাজমেন্ট থেকে ডেভিয়েট করে ১৭ মাস পরে এই আইন আসার পরে জাজমেন্টটা দিলেন এই আইনটা পাস হওয়ার আগে। জাজমেন্ট রিলিজ করলেন এই আইন আসার ১৭ মাস পরে।’
‘সেখানে যে উনি রায় দিলেন যে ঠিক আছে, পরবর্তী দুইটা নির্বাচন হবে তবে পার্লামেন্ট ঠিক করবে কোন ফর্মে হবে। উনাদের থেকে দলছুট হয়ে সিনহা বাবু বললেন যে না আগামী দুইটাই হবে কেয়ারটেকারের আন্ডারে আপনার জুডিসিয়ারিকে বাদ রাখা উচিৎ। তার আগের তিনজন তো বলেছিলেন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ।
আওয়ামী লীগ আমলের আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে বিচার ব্যবস্থা ‘ধ্বংসের’ জন্য দায়ী করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এইগুলোর সাজা হওয়া উচিৎ। এইগুলোর কারণেই আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত, বাংলাদেশে মানুষ হত্যা হয়েছে। বাংলাদেশে খুন হয়েছে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, গুম হয়েছে। মৃত মানুষের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।’