পাকিস্তানের সঙ্গে যাতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া যায় সে জন্য একাত্তর সালের অসমাপ্ত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো বারবার উঠে আসছে। আসুন এগুলো মিটিয়ে ফেলি যাতে, আমরা সামনে এগোতে পারি।’
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিশরের রাজধানী কায়রোতে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শেহবাজকে এ কথা বলেন। ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মুহাম্মদ ইউনূস এখন কায়রোতে রয়েছেন। এর ফাঁকে একটি হোটেলে তারা বৈঠকে বসেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠককালে এই দুই নেতা চিনি শিল্প ও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার মতো নতুন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
একাত্তর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি (বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে) বিষয়গুলো সমাধান করেছে, ‘কিন্তু যদি অন্য কোনো অসমাপ্ত বিষয় থাকে, তবে তা খতিয়ে দেখতে তিনি আগ্রহী’।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের স্রোতধারা পেরিয়ে পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। সে সময় গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনাসহ অনিষ্পন্ন বিভিন্ন বিষয় এখনো রয়ে গেছে।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলো চিরতরে সমাধান করা ভালো হবে।’
ইউনুস ও শেহবাজ বাণিজ্য, ব্যবসা বাড়ানো এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে সার্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনুস তার সরকারের পরিকল্পনা হল ‘অত্যাবশ্যক সংস্কার’ বাস্তবায়ন করা এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা। তিনি বলেন যে, তিনি সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য একটি ‘ঐকমত্য গঠন’ কমিশনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের আহ্বান জানান।
‘আমরা সত্যিই আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী,’ বলেন শেহবাজ।
তিনি সার্ক পুনরুজ্জীবনের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের উদ্যোগ এবং এই আঞ্চলিক সংস্থাটির শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সম্ভাবনার নিয়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানান।
ইউনূস বলেন, ‘এটি একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার।’
‘আমি সার্কের ধারণার একজন বড় ভক্ত। আমি বারবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। আমি চাই, এমনকি একটি ছবি তোলার জন্য হলেও সার্ক নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন হোক, কারণ এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলোর উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দেন।
তিনি বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে বলে জানান।
শেহবাজ বলেন, ‘প্রায় এক দশক আগে পাঞ্জাবের ডেঙ্গু প্রতিরোধের লড়াইকে বিশ্বমানের হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারি।’
মুহাম্মদ ইউনূস তার সমর্থনের জন্য শেহবাজ শরিফকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্দিকী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দারকে ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং দার তা গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
পাকিস্তানের সঙ্গে যাতে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া যায় সে জন্য একাত্তর সালের অসমাপ্ত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো বারবার উঠে আসছে। আসুন এগুলো মিটিয়ে ফেলি যাতে, আমরা সামনে এগোতে পারি।’
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিশরের রাজধানী কায়রোতে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শেহবাজকে এ কথা বলেন। ডি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে মুহাম্মদ ইউনূস এখন কায়রোতে রয়েছেন। এর ফাঁকে একটি হোটেলে তারা বৈঠকে বসেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠককালে এই দুই নেতা চিনি শিল্প ও ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার মতো নতুন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
একাত্তর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি (বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে) বিষয়গুলো সমাধান করেছে, ‘কিন্তু যদি অন্য কোনো অসমাপ্ত বিষয় থাকে, তবে তা খতিয়ে দেখতে তিনি আগ্রহী’।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের স্রোতধারা পেরিয়ে পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। সে সময় গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনাসহ অনিষ্পন্ন বিভিন্ন বিষয় এখনো রয়ে গেছে।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এগুলো চিরতরে সমাধান করা ভালো হবে।’
ইউনুস ও শেহবাজ বাণিজ্য, ব্যবসা বাড়ানো এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে সার্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনুস তার সরকারের পরিকল্পনা হল ‘অত্যাবশ্যক সংস্কার’ বাস্তবায়ন করা এবং ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা। তিনি বলেন যে, তিনি সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য একটি ‘ঐকমত্য গঠন’ কমিশনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের আহ্বান জানান।
‘আমরা সত্যিই আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী,’ বলেন শেহবাজ।
তিনি সার্ক পুনরুজ্জীবনের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের উদ্যোগ এবং এই আঞ্চলিক সংস্থাটির শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সম্ভাবনার নিয়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানান।
ইউনূস বলেন, ‘এটি একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার।’
‘আমি সার্কের ধারণার একজন বড় ভক্ত। আমি বারবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। আমি চাই, এমনকি একটি ছবি তোলার জন্য হলেও সার্ক নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলন হোক, কারণ এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলোর উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দেন।
তিনি বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলায় পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে বলে জানান।
শেহবাজ বলেন, ‘প্রায় এক দশক আগে পাঞ্জাবের ডেঙ্গু প্রতিরোধের লড়াইকে বিশ্বমানের হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে পারি।’
মুহাম্মদ ইউনূস তার সমর্থনের জন্য শেহবাজ শরিফকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সিদ্দিকী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দারকে ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং দার তা গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।