অবশেষে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান ছেড়েছে তাবলীগ জামাতের বিবাদমান দুই গ্রুপ। ফাঁকা মাঠের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ইজতেমা ময়দান এলাকায় দেখা যায়, মাঠের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাঠের ভেতরে শামিয়ানা ও বাঁশের খুঁটি সরানোর কাজ করছেন কিছু মানুষ।
তবে মাঠ দখলকে কেন্দ্র দু’পক্ষের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় এখনো (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে তাবলীগ জামাতের বিবাদমান দুই গ্রুপ শুরায়ে নেজামের অংশ (জুবায়ের পন্থি) এবং ভারতের মাওলানা সাদপন্থি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আলাদা স্থানে তারা এই কর্মসূচি করে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দখলকে ঘিরে ১৮ ডিসেম্বর বুধবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় নিজ নিজ অবস্থান পরিস্কার করতেই তাদের এই সংবাদ সম্মেলন বলে জানা গেছে।
নিহত ‘৩ জন’, বলছে পুলিশ
বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বিবদমান দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চারজন জানালেও, তিনজন মারা গেছেন বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও ইজতেমার শুরায়ে নেজামের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান সংবাদকে বলেন, ইজতেমায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনের মরদেহ পেয়েছি। তাদের আমরা ময়নাতদন্ত করেছি। এরমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে দুইজনের এবং গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
জিএমপি কমিশনার আরও বলেন, যেহেতু আমি তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করেছি, তাই মৃতের সংখ্যা আমার হিসাবে তিনজন।
শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের পন্থি) মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান সংবাদকে বলেন, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হামলায় নিহত সাথী ভাই আমিনুল হক উরফে বাচ্চু মিয়ার নাম ভুলে আমিনুল ইসলাম ও বাচ্চু মিয়া বলে দুই বার উচ্চারণ করায় একজনকে দুইজন বলা হয়েছে। আসলে আমিনুল হক ও বাচ্চু মিয়া একই ব্যক্তি, দুই ব্যক্তি নয়। ফলে নিহতের সংখ্যা চার নয়, তিন।
নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের আমিনুল হক উরফে বাচ্চু মিয়া (৭০)। ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল হোসেন (৬০), অপরজন হলেন- বগুড়া জেলার তাজুল ইসলাম (৭০)।
সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষ যা বলেছেন
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গাজীপুরের শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের পন্থি) অনুসারীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে দলের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, সাদপন্থিরা ইজতেমা করতে চাইলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
হাবিবুল্লাহ রায়হানের অভিযোগ, সাদপন্থিদের ‘হামলায়’ তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এই হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হবে। ‘মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা করার অনুমতি না থাকলেও তারা জোড় করে ঢুকে প্রশাসনের আদেশ অমান্য করেছে। সাদপন্থিরা যদি ইজতেমা মাঠ দখলের চেষ্টা করে তাহলে সাধারণ মুসল্লিরা তাদের প্রতিহত করবে। নির্ধারিত সময়েই বিশ্ব ইজতেমা পালন করা হবে।’ তিনি সাদ অনুসারীদের বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান।
একই দিনে রাজধানীতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাবলীগের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। বেলা আড়াইটায় ঢাকার মিরপুর-১ এ সংবাদ সম্মেলনটি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, মুফতী মুআজ বিন নূর, মুফতী শফিউল্লাহ, মুফতী আজিমুদ্দীন, মাওলানা আনাস প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তাগণ তাবলীগে সৃষ্ট বিভক্তি, ‘মামুনুল হক ও জুবায়েরপন্থিদের নৃশংস হামলা’ এবং তাবলীগ নিয়ন্ত্রণের ‘ষড়যন্ত্রের’ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন।
তারা বলেন, তাবলীগে ‘মামুনুল হক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষগুলোর’ হস্তক্ষেপ ও বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা ‘রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে তাবলীগ জামাতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করছেন। এর ফলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচেষ্টা ‘বারবার ব্যর্থ হচ্ছে’।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো, আগামি বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের স্বাভাবিক কার্যক্রম নির্বিঘেœ পরিচালনা করতে দেয়া, ইজতেমা ময়দান সরকার নিয়ন্ত্রণে রেখে সাদপন্থিদের ইজতেমার আগে ময়দান বুঝিয়ে দেয়া, আগামি বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিশ্চিত করা, সারাদেশে সাদপন্থিদের ওপর আক্রমণ ও নির্যাতন বন্ধ করা ও মসজিদে-মসজিদে বাধা সৃষ্টি রোধে কার্যকর নেয়া এবং তাবলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
অবশেষে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দান ছেড়েছে তাবলীগ জামাতের বিবাদমান দুই গ্রুপ। ফাঁকা মাঠের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ইজতেমা ময়দান এলাকায় দেখা যায়, মাঠের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মাঠের ভেতরে শামিয়ানা ও বাঁশের খুঁটি সরানোর কাজ করছেন কিছু মানুষ।
তবে মাঠ দখলকে কেন্দ্র দু’পক্ষের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় এখনো (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে, পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে তাবলীগ জামাতের বিবাদমান দুই গ্রুপ শুরায়ে নেজামের অংশ (জুবায়ের পন্থি) এবং ভারতের মাওলানা সাদপন্থি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আলাদা স্থানে তারা এই কর্মসূচি করে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দখলকে ঘিরে ১৮ ডিসেম্বর বুধবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় নিজ নিজ অবস্থান পরিস্কার করতেই তাদের এই সংবাদ সম্মেলন বলে জানা গেছে।
নিহত ‘৩ জন’, বলছে পুলিশ
বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বিবদমান দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চারজন জানালেও, তিনজন মারা গেছেন বলে গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও ইজতেমার শুরায়ে নেজামের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান সংবাদকে বলেন, ইজতেমায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনের মরদেহ পেয়েছি। তাদের আমরা ময়নাতদন্ত করেছি। এরমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে দুইজনের এবং গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
জিএমপি কমিশনার আরও বলেন, যেহেতু আমি তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করেছি, তাই মৃতের সংখ্যা আমার হিসাবে তিনজন।
শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের পন্থি) মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান সংবাদকে বলেন, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হামলায় নিহত সাথী ভাই আমিনুল হক উরফে বাচ্চু মিয়ার নাম ভুলে আমিনুল ইসলাম ও বাচ্চু মিয়া বলে দুই বার উচ্চারণ করায় একজনকে দুইজন বলা হয়েছে। আসলে আমিনুল হক ও বাচ্চু মিয়া একই ব্যক্তি, দুই ব্যক্তি নয়। ফলে নিহতের সংখ্যা চার নয়, তিন।
নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামের আমিনুল হক উরফে বাচ্চু মিয়া (৭০)। ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল হোসেন (৬০), অপরজন হলেন- বগুড়া জেলার তাজুল ইসলাম (৭০)।
সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষ যা বলেছেন
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গাজীপুরের শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের পন্থি) অনুসারীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে দলের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, সাদপন্থিরা ইজতেমা করতে চাইলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
হাবিবুল্লাহ রায়হানের অভিযোগ, সাদপন্থিদের ‘হামলায়’ তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এই হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হবে। ‘মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা করার অনুমতি না থাকলেও তারা জোড় করে ঢুকে প্রশাসনের আদেশ অমান্য করেছে। সাদপন্থিরা যদি ইজতেমা মাঠ দখলের চেষ্টা করে তাহলে সাধারণ মুসল্লিরা তাদের প্রতিহত করবে। নির্ধারিত সময়েই বিশ্ব ইজতেমা পালন করা হবে।’ তিনি সাদ অনুসারীদের বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান।
একই দিনে রাজধানীতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তাবলীগের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। বেলা আড়াইটায় ঢাকার মিরপুর-১ এ সংবাদ সম্মেলনটি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা জিয়া বিন কাসেম, মুফতী মুআজ বিন নূর, মুফতী শফিউল্লাহ, মুফতী আজিমুদ্দীন, মাওলানা আনাস প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তাগণ তাবলীগে সৃষ্ট বিভক্তি, ‘মামুনুল হক ও জুবায়েরপন্থিদের নৃশংস হামলা’ এবং তাবলীগ নিয়ন্ত্রণের ‘ষড়যন্ত্রের’ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন।
তারা বলেন, তাবলীগে ‘মামুনুল হক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পক্ষগুলোর’ হস্তক্ষেপ ও বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, মামুনুল হক ও তার অনুসারীরা ‘রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব’ কাজে লাগিয়ে তাবলীগ জামাতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করছেন। এর ফলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচেষ্টা ‘বারবার ব্যর্থ হচ্ছে’।
সংবাদ সম্মেলনে তারা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো, আগামি বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের স্বাভাবিক কার্যক্রম নির্বিঘেœ পরিচালনা করতে দেয়া, ইজতেমা ময়দান সরকার নিয়ন্ত্রণে রেখে সাদপন্থিদের ইজতেমার আগে ময়দান বুঝিয়ে দেয়া, আগামি বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিশ্চিত করা, সারাদেশে সাদপন্থিদের ওপর আক্রমণ ও নির্যাতন বন্ধ করা ও মসজিদে-মসজিদে বাধা সৃষ্টি রোধে কার্যকর নেয়া এবং তাবলীগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।