রাজধানীর পূর্বাচলে গাড়ি চাপায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা নিতে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীর বিভ্রান্তিকর মন্তব্য ও গণমাধ্যমে ‘হতকাণ্ড’কে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করে মামলার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে গাড়ির ধাক্কায় মুহতাসিম নিহত হন। আহত হন আরও দুই শিক্ষার্থী। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ পাঁচ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিবৃতি দিয়েছেন সহপাঠীরা।
আজ শনিবার দুপুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লিখিত এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মামলা নিতে পুলিশ অসহযোগিতা করেছে। বিবৃতি পড়েন নিহতের তিন সহপাঠী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিকেলে সহপাঠী নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতের দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেবেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে ‘হত্যাকাণ্ড’কে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছে।
বিবৃতি পড়েন নিহতের তিন সহপাঠী। তাঁরা সবাই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। লিখিত বিবৃতিতে ওই দিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। কীভাবে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন, হাসপাতালে গেছেন, সেই বর্ণনা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাস্থলে গিয়ে একপর্যায়ে তাঁরা দেখতে পান, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেট কারটির চালক এবং তাঁর সহযাত্রীদের প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীরা ঘিরে রেখেছেন।
উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তাঁরা জানান, মাসুদ, অমিত ও মেহেদিকে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নীলা মার্কেট মোড়ে কতর্ব্যরত পুলিশ দাঁড় করায়। এ সময় পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়া গতিতে এসে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলসহ তিনজনকে আঘাত করে। প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরী।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, চালক মুবিন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চালকের বাবাকেও সেখানে দেখেন। পরে তাঁরা প্রাইভেট কারে অ্যালকোহল ও মাদকজাতীয় নেশাদ্রব্য দেখেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছায়। পুলিশ প্রাইভেট কারের চালকসহ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরে তাঁদের রূপগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও তাঁদের সঙ্গে থানায় পৌঁছান। থানায় ঘটনার বিবরণ জানার পরে কর্তব্যরত এসআই মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন। পরদিন সকাল আটটায় আরও একদল শিক্ষার্থী বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, প্রধান নিরাপত্তাকর্মীসহ থানায় যান। তখন থানায় কোনো ওসি ছিলেন না এবং যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি দেরি করতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক পর ওসি থানায় আসেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং চালকের পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্তের মা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে জানান।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি
১. যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ।
২. আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে।
৩. নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে।
৪. তদন্ত কার্যক্রমে বাধাদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে হবে।
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
রাজধানীর পূর্বাচলে গাড়ি চাপায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা নিতে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীর বিভ্রান্তিকর মন্তব্য ও গণমাধ্যমে ‘হতকাণ্ড’কে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করে মামলার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে গাড়ির ধাক্কায় মুহতাসিম নিহত হন। আহত হন আরও দুই শিক্ষার্থী। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ পাঁচ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিবৃতি দিয়েছেন সহপাঠীরা।
আজ শনিবার দুপুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লিখিত এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মামলা নিতে পুলিশ অসহযোগিতা করেছে। বিবৃতি পড়েন নিহতের তিন সহপাঠী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিকেলে সহপাঠী নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতের দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেবেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে ‘হত্যাকাণ্ড’কে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছে।
বিবৃতি পড়েন নিহতের তিন সহপাঠী। তাঁরা সবাই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। লিখিত বিবৃতিতে ওই দিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। কীভাবে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন, হাসপাতালে গেছেন, সেই বর্ণনা দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাস্থলে গিয়ে একপর্যায়ে তাঁরা দেখতে পান, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেট কারটির চালক এবং তাঁর সহযাত্রীদের প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারীরা ঘিরে রেখেছেন।
উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তাঁরা জানান, মাসুদ, অমিত ও মেহেদিকে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নীলা মার্কেট মোড়ে কতর্ব্যরত পুলিশ দাঁড় করায়। এ সময় পেছন থেকে একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়া গতিতে এসে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেলসহ তিনজনকে আঘাত করে। প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরী।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, চালক মুবিন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চালকের বাবাকেও সেখানে দেখেন। পরে তাঁরা প্রাইভেট কারে অ্যালকোহল ও মাদকজাতীয় নেশাদ্রব্য দেখেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছায়। পুলিশ প্রাইভেট কারের চালকসহ তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথমে রূপগঞ্জ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং পরে তাঁদের রূপগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও তাঁদের সঙ্গে থানায় পৌঁছান। থানায় ঘটনার বিবরণ জানার পরে কর্তব্যরত এসআই মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন। পরদিন সকাল আটটায় আরও একদল শিক্ষার্থী বুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা, প্রধান নিরাপত্তাকর্মীসহ থানায় যান। তখন থানায় কোনো ওসি ছিলেন না এবং যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি দেরি করতে থাকেন। ঘণ্টাখানেক পর ওসি থানায় আসেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং চালকের পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্তের মা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে জানান।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি
১. যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ।
২. আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার অবশ্যই বিবাদীপক্ষকে বহন করতে হবে।
৩. নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করতে হবে।
৪. তদন্ত কার্যক্রমে বাধাদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায় এবং সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে হবে।