alt

জাতীয়

বিমানবন্দর সড়ক, নীরব এলাকা! শব্দদূষণ কমেনি, কোথাও বেড়েছে

শাফিউল আল ইমরান : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে তিন কিলোমিটার ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার পর শব্দদূষণ খুব একটা কমেনি, বরং দু’টি স্থানে তা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। ওই এলাকার চারটি স্থানে এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে শব্দের মাত্রা এখনও স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২২ থেকে ২৮ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে চারটি স্থানের মধ্যে দুইটি স্থানে আগের তুলনায় শব্দ বেড়েছে আর দুইটি স্থানে আগের তুলনায় সমান্য কমেছে। তবে তা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে সম্প্রতি পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়; বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ডিএমপি এর সহযোগিতায় গত ১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দেড় কিলোমিটার উত্তর থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পর্যন্ত মোট ৩ কিলোমিটার এলাকাকে ‘নিরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে।

সম্প্রতি বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর ১০ সদস্যের একটি গবেষণা দল বিমানবন্দরের চারটি স্থানে ১৫ দিনে প্রায় ৫ হাজার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেন সেসব এলাকায় সহনীয় পর্যায়ে শব্দের মাত্রা আসেনি। জরিপটি প্রথম ধাপে ২৬ অক্টেবর থেকে ১০ দিন ও দ্বিতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর থেকে ৫ দিন করা হয়।

তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার আগে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে গড় শব্দমাত্রা ছিল ৮৯ দশমিক ১৯ ডেসিবল, আর পরে তা বেড়ে হয়েছে ৮৯ দশমিক ৬৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকার হিসেব ধরে যা স্বাভাবিকমাত্রার চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।

অভ্যন্তরীণ বিমানচলাচল প্রবেশপথের অবস্থাও তাই। আগে শব্দের মাত্রা ছিল ৮৩ দশমিক ৭১ ডেসিবল। অক্টোবরের পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ২০ ডেসিবল, যা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

লা মেরিডিয়েন হোটেলের সামনে শব্দদূষণ আগের চেয়ে সামান্য কমেছে। অক্টোবরের আগে সেখানে শব্দমাত্রা ছিল ৯২ দশমিক ০৩ ডেসিবল। আর ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার পর তা কমে হয়েছে ৮৭ দশমিক ৯২ ডেসিবল। যা এখন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

উত্তরায় স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে শব্দমাত্রা ৮৬ দশমিক ৩২ ডেসিবল থেকে কিছুটা কমে ৮৫ দশমিক ৪২ ডেসিবল হয়েছে। তবে এতাও স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।

দেশে পরিবেশ আইনুযায়ী আবাসিক এলাকায় দিনের সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের ৭০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনের ৭৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনের ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানান, বিমানবন্দর এলাকায় এখনও শব্দের মাত্রা স্বাভাবিক গ্রহণ মাত্রার চেয়ে বেশি। এলাকাগুলোকে নীরব এলাকা ঘোষণার পরও কোনো উন্নতি হয়নি।

শব্দদূষণ না কমার কারণ:

দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্সের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ শব্দদূষণ। এই দূষণ এখন ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে, ঘোষিত ‘নিরব এলাকায়’ শব্দদূষণ না কমার কারণ হিসেবে ক্যাপস পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছে।

প্রথমত; শব্দদূষণ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রচারণার অভাব, দ্বিতীয়ত; ‘নিরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করার সীমাবদ্ধতা, তৃতীয়ত; ড্রাইভার এবং যাত্রীদের ‘নিরব এলাকা’ সম্পর্কে যথার্থ অবগত না হওয়া, চতুর্ত; এয়ারপোর্টে বাসস্ট্যান্ড, পঞ্চমত; এয়ারপোর্টের মূল গেটের সামনে ইউটার্ন এর কারণে সৃষ্ট যানজটে শব্দদূষণ বেশি হয়।

২০১৬ ও ২০১৭ সালে সমন্বিত একটি অংশীদারিমূলক কর্মসূচির আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর যে শব্দদূষণের পরিমাপ করে সেখানে দূষণের জন্য গাড়ির হর্ন সবচেয়ে বেশি দায়ী।

সুপারিশ:

এয়ারপোর্ট এলাকাকে শব্দদূষণের ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ক্যাপস সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশমালার প্রস্তাব করে। সেগুলো হল; এয়ারপোর্ট এলাকায় ভিতর ও চারপাশে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। ওই এলাকায় এটি যে ‘নিরব এলাকা’ সেজন্য রাস্তাগুলোকে সবুজ বা অন্যকোন রং করে দেয়া যেতে পারে।

বিধিমালার সংজ্ঞা অনুযায়ী চিহ্নিত জোনসমূহে (নিরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট দিতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করা, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি ও চালকদের শব্দ সচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স দেয়া। ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার আগে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

রাষ্ট্রের সবেচ্চ ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কাউকে রাস্তায় সাইরেন বাজানোসহ ভিআইপি প্রটোকল না দেয়া। অনুমতি ব্যতীত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা এবং মাইকের শব্দ সীমিত করা।

ট্রাফিক পুলিশদের কানের সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) যেমন কান এবং শ্রুতি সুরক্ষার জন্য কানের প্লাগ বা ইয়ারম্যাফ ব্যবহার। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা। সড়কের পাশে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনি তৈরি করা।

আবাসিক এলাকাগুলোকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তরিত না করা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরের সমন্বয় সাধন করা। শব্দের মাত্রা অনুযায়ী যানবাহনের ছাড়পত্র দেয়া। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। পৃথক বাইসাইকেল লাইন চালু করা।

জেনারেটর এবং সবপ্রকার শব্দ সৃষ্টি যন্ত্রপাতির মান মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া। শব্দের মাত্রা হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যতীত শিল্প-কারখানা স্থাপনে ছাড়পত্র না দেয়া। কমিউনিটি ভিত্তিক কমিটি করে শব্দদূষণ সংক্রান্ত আইন ভঙের বিষয়ে তদারকি দায়িত্ব প্রদান করা। শব্দদূষণের ক্ষতি, প্রতিকার ও বিদ্যমান আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

ছবি

রূপপুর ‘দুর্নীতি’: টিউলিপকে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লিকে ঢাকার চিঠি

‘কৌশলে অনুন্নত দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলছে উন্নত দেশগুলো’

ছবি

ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, হাসপাতালের সেবা বিঘ্ন

পিলখানা হত্যার তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন

ছবি

মেঘনায় জাহাজে ৭ খুন, ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ ১ জনকে

ছবি

নিরাপত্তার অভাবেই চাঁদপুরে জাহাজে খুন হয় ৭ জন

জাহাজে হত্যার ঘটনা তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কমিটি

নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতাকর্মীদের আইনজীবীও নাশকতা মামলায় গ্রেফতার!

ছবি

আগাছা উপড়ে ফেলে সুন্দর নির্বাচন হবে, ইভিএম ছাড়াই: বদিউল আলম

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ

ছবি

পিলখানা হত্যায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় মামলার মুখে এস কে সুর চৌধুরী

ছবি

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা: জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

ছবি

পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেল আরও ২ প্রতিষ্ঠান

ছবি

হাসান আরিফ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশায়িত

শিক্ষক নিয়োগে ‘অনিয়মই’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘পঙ্গু’ করেছে : শিক্ষা উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য বেহাত, বিসিসির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করল ইসি

ছবি

‘সীমান্তে দুর্নীতি’, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বৈরশাসকদের অধ্যায় জেলেই শেষ হয়: প্রেস সচিব

ছবি

নির্বাচনে কারা আসবে বা যোগ্য, সে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি: বদিউল আলম মজুমদার

ছবি

উদ্বোধনের আগেই বদলে গেল ‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম

ছবি

উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক

ছবি

দেড় যুগের জঞ্জাল ২-৪ মাসে পরিষ্কার সম্ভব নয়: ধর্ম উপদেষ্টা

ছবি

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: সীমান্তে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো কঠিন হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

এনআইডির তথ্য বেহাত, কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে ইসির সম্পর্ক ছিন্ন

ছবি

হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক

ছবি

বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু: দুই দিনের রিমান্ডে ৩ আসামি

ছবি

দেশ কোনো দলের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি: ধর্ম উপদেষ্টা

বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন

ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ৮৫৮, আহত সাড়ে ১১ হাজার

ছবি

বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু: জড়িতদের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

১৫ বছরের করা অন্যায়ের জন্য পুলিশ দুঃখিত, লজ্জিত: আইজিপি

ছবি

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না : ইউনূস

ছবি

শিশু অধিকার নিশ্চিতের জন্য পৃথক অধিদপ্তরের প্রস্তাব ছয় আন্তর্জাতিক সংস্থার

ছবি

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার দৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

tab

জাতীয়

বিমানবন্দর সড়ক, নীরব এলাকা! শব্দদূষণ কমেনি, কোথাও বেড়েছে

শাফিউল আল ইমরান

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে তিন কিলোমিটার ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার পর শব্দদূষণ খুব একটা কমেনি, বরং দু’টি স্থানে তা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। ওই এলাকার চারটি স্থানে এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে শব্দের মাত্রা এখনও স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২২ থেকে ২৮ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে চারটি স্থানের মধ্যে দুইটি স্থানে আগের তুলনায় শব্দ বেড়েছে আর দুইটি স্থানে আগের তুলনায় সমান্য কমেছে। তবে তা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে সম্প্রতি পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়; বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ডিএমপি এর সহযোগিতায় গত ১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দেড় কিলোমিটার উত্তর থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পর্যন্ত মোট ৩ কিলোমিটার এলাকাকে ‘নিরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে।

সম্প্রতি বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর ১০ সদস্যের একটি গবেষণা দল বিমানবন্দরের চারটি স্থানে ১৫ দিনে প্রায় ৫ হাজার উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেন সেসব এলাকায় সহনীয় পর্যায়ে শব্দের মাত্রা আসেনি। জরিপটি প্রথম ধাপে ২৬ অক্টেবর থেকে ১০ দিন ও দ্বিতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর থেকে ৫ দিন করা হয়।

তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার আগে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে গড় শব্দমাত্রা ছিল ৮৯ দশমিক ১৯ ডেসিবল, আর পরে তা বেড়ে হয়েছে ৮৯ দশমিক ৬৮ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকার হিসেব ধরে যা স্বাভাবিকমাত্রার চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।

অভ্যন্তরীণ বিমানচলাচল প্রবেশপথের অবস্থাও তাই। আগে শব্দের মাত্রা ছিল ৮৩ দশমিক ৭১ ডেসিবল। অক্টোবরের পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ২০ ডেসিবল, যা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

লা মেরিডিয়েন হোটেলের সামনে শব্দদূষণ আগের চেয়ে সামান্য কমেছে। অক্টোবরের আগে সেখানে শব্দমাত্রা ছিল ৯২ দশমিক ০৩ ডেসিবল। আর ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার পর তা কমে হয়েছে ৮৭ দশমিক ৯২ ডেসিবল। যা এখন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

উত্তরায় স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে শব্দমাত্রা ৮৬ দশমিক ৩২ ডেসিবল থেকে কিছুটা কমে ৮৫ দশমিক ৪২ ডেসিবল হয়েছে। তবে এতাও স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।

দেশে পরিবেশ আইনুযায়ী আবাসিক এলাকায় দিনের সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের ৪৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের ৭০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনের ৭৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের আদর্শ মান দিনের ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানান, বিমানবন্দর এলাকায় এখনও শব্দের মাত্রা স্বাভাবিক গ্রহণ মাত্রার চেয়ে বেশি। এলাকাগুলোকে নীরব এলাকা ঘোষণার পরও কোনো উন্নতি হয়নি।

শব্দদূষণ না কমার কারণ:

দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্সের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ শব্দদূষণ। এই দূষণ এখন ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে, ঘোষিত ‘নিরব এলাকায়’ শব্দদূষণ না কমার কারণ হিসেবে ক্যাপস পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছে।

প্রথমত; শব্দদূষণ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রচারণার অভাব, দ্বিতীয়ত; ‘নিরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করার সীমাবদ্ধতা, তৃতীয়ত; ড্রাইভার এবং যাত্রীদের ‘নিরব এলাকা’ সম্পর্কে যথার্থ অবগত না হওয়া, চতুর্ত; এয়ারপোর্টে বাসস্ট্যান্ড, পঞ্চমত; এয়ারপোর্টের মূল গেটের সামনে ইউটার্ন এর কারণে সৃষ্ট যানজটে শব্দদূষণ বেশি হয়।

২০১৬ ও ২০১৭ সালে সমন্বিত একটি অংশীদারিমূলক কর্মসূচির আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর যে শব্দদূষণের পরিমাপ করে সেখানে দূষণের জন্য গাড়ির হর্ন সবচেয়ে বেশি দায়ী।

সুপারিশ:

এয়ারপোর্ট এলাকাকে শব্দদূষণের ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ক্যাপস সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশমালার প্রস্তাব করে। সেগুলো হল; এয়ারপোর্ট এলাকায় ভিতর ও চারপাশে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। ওই এলাকায় এটি যে ‘নিরব এলাকা’ সেজন্য রাস্তাগুলোকে সবুজ বা অন্যকোন রং করে দেয়া যেতে পারে।

বিধিমালার সংজ্ঞা অনুযায়ী চিহ্নিত জোনসমূহে (নিরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট দিতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করা, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি ও চালকদের শব্দ সচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স দেয়া। ‘নিরব এলাকা’ ঘোষণার আগে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

রাষ্ট্রের সবেচ্চ ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কাউকে রাস্তায় সাইরেন বাজানোসহ ভিআইপি প্রটোকল না দেয়া। অনুমতি ব্যতীত সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা এবং মাইকের শব্দ সীমিত করা।

ট্রাফিক পুলিশদের কানের সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) যেমন কান এবং শ্রুতি সুরক্ষার জন্য কানের প্লাগ বা ইয়ারম্যাফ ব্যবহার। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা। সড়কের পাশে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনি তৈরি করা।

আবাসিক এলাকাগুলোকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তরিত না করা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরের সমন্বয় সাধন করা। শব্দের মাত্রা অনুযায়ী যানবাহনের ছাড়পত্র দেয়া। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। পৃথক বাইসাইকেল লাইন চালু করা।

জেনারেটর এবং সবপ্রকার শব্দ সৃষ্টি যন্ত্রপাতির মান মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া। শব্দের মাত্রা হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যতীত শিল্প-কারখানা স্থাপনে ছাড়পত্র না দেয়া। কমিউনিটি ভিত্তিক কমিটি করে শব্দদূষণ সংক্রান্ত আইন ভঙের বিষয়ে তদারকি দায়িত্ব প্রদান করা। শব্দদূষণের ক্ষতি, প্রতিকার ও বিদ্যমান আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

back to top