জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত কিছু সুপারিশ সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে প্রশাসনে তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষশষ পর্যন্ত আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের’ প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ ও অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ রাখার যে প্রস্তাব জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আনতে যাচ্ছে তা বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মন্তব্য করে তারা ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
একইসঙ্গে আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তারা।
বুধবার সকালে ঢাকার ইস্কাটনে বিয়াম মিলনায়তনে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান।
প্রশাসন ক্যাডারে চাকরিরত কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অবসরে যাওয়া এই ক্যাডারের কর্মকর্তারাও সভায় যোগদন। বিভিন্ন জেলা থেকে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এবং উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভায় যুক্ত হন।
*কমিশন গঠন*
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঠামো সংস্কারের ঘোষণা দেয়।
এর অংশ হিসেবে ৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গঠন করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। গণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে এই কমিশনের প্রধান করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। এই কমিটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১১ জন।
*অপসারণ চাই*
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রতিবাদ সভায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মুয়ীদ ভাই (সংস্কার কমিশন প্রধান) পারিবারিকভাবে কলঙ্কিত ব্যক্তি, বিতর্কিত কর্মকর্তা। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুয়ীদ ভাইয়ের অপসারণ চাই।’
তিনি বলেন, ‘যদি তাকে কমিশন থেকে বাদ না দেয়া হয় বা পদত্যাগ না করেন তাহলে কীভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হয় আমাদের জানা আছে।’
*আন্দোলন শুরু*
প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুধবার থেকে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হল জানিয়ে এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আগামী ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ ঘোষণার প্রস্তাব করছি। আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করব, কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করব, সংবাদ সম্মেলন করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোনো ক্যাডারের অস্তিত্ব দেখতে চাই না। সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ আমাদের আন্দোলন শুরু হলো, এই আন্দোলন চলবে।’
এর আগে একই সভায় প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামাল কমিশন প্রধানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাতে সমর্থন জানান।
*আলোচনার শুরু যেভাবে*
আগামী ৩১শে ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও তার আগেই কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
এ সময় কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের কিছু বিষয় তুলে ধরেন তারা।
যেমন, পরীক্ষার মাধ্যমে জনপ্রশাসনে উপ-সচিব পদে নিয়োগ হবে বলে জানান কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। বলেন, ‘ডেপুটি সেক্রেটারি লেভেলে পরীক্ষা হবে, সেখানে সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে।’
একই সঙ্গে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়, তা বদলে এই অনুপাত প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারদের জন্য ৫০ শতাংশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
*প্রশাসনে সুবিচার*
বুধবারের প্রতিবাদ সভায় প্রশাসনের ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল কোটা তুলে দেয়ার জন্য। সংস্কার কমিশনের উচিত এই কোটা তুলে দেয়া। কিন্তু সেটা না করে তারা উল্টো কোটা বাড়ানোর চিন্তা করছেন, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘এই কমিশনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সুবিচার পাবেন না। তাই তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।’
ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদ বলেন, ‘জেলা ও উপজেলায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা এরশাদ সরকারের আমলে খর্ব করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে সেই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কোটামুক্ত পদোন্নতি চাই।’
*প্রশাসনে দ্বন্দ্ব*
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সংস্কারের বদলে প্রশাসনে দ্বন্দ্ব লাগানো হয়েছে। এমনকি এটি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবেও বর্ণনা করেন কেউ কেউ। গত তিন নির্বাচনের জন্য একতরফা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়ী করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠিত হওয়া গত দেড় দশকে একটি নির্দিষ্ট ক্যাডারের দায় নয়, আরও ক্যাডার রয়েছে যারা নির্বাচনকেন্দ্রিক দায়িত্ব সামলেছেন বিভিন্নভাবে।
*ষড়যন্ত্র*
প্রতিবাদ সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন হয়ে গেছে। কমিশনগুলোতে কালক্ষেপণের পাঁয়তারা হচ্ছে।’
প্রশাসনকে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা গেছে? এমন প্রশ্ন রেখে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘একটা আন্ডার গ্রাজুয়েট ছাত্রকে এতো বড় একটা স্থানে কেন নেয়া হলো? এটা নাকি সরকারের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি চাপিয়েই দেয়া হয় তাহলে মুয়ীদ (জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান) সাহেব সেটা অস্বীকার করতে পারতো। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।’
এদিকে, সংস্কার কমিশনের পুরো প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই নানা সিদ্ধান্ত সামনে আনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, এর ফলে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সঙ্কট নিরসনে প্রশাসন ক্যাডারের কনিষ্ঠ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান সাবেক কর্মকর্তারা।
*কমিশনে যারা*
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশন সদস্যরা হলেন- সাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান; সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও সাবেক যুগ্ম সচিব রিজওয়ান খায়ের; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ কা ফিরোজ আহমদ; শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান; বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা অধ্যাপক সৈয়দা শাহিনা সোবহান, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান।
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত কিছু সুপারিশ সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে প্রশাসনে তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও অসন্তোষশষ পর্যন্ত আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের’ প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ ও অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ রাখার যে প্রস্তাব জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আনতে যাচ্ছে তা বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মন্তব্য করে তারা ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
একইসঙ্গে আগামী ৪ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তারা।
বুধবার সকালে ঢাকার ইস্কাটনে বিয়াম মিলনায়তনে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান।
প্রশাসন ক্যাডারে চাকরিরত কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অবসরে যাওয়া এই ক্যাডারের কর্মকর্তারাও সভায় যোগদন। বিভিন্ন জেলা থেকে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) এবং উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভায় যুক্ত হন।
*কমিশন গঠন*
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঠামো সংস্কারের ঘোষণা দেয়।
এর অংশ হিসেবে ৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গঠন করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। গণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে এই কমিশনের প্রধান করা হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। এই কমিটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১১ জন।
*অপসারণ চাই*
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রতিবাদ সভায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মুয়ীদ ভাই (সংস্কার কমিশন প্রধান) পারিবারিকভাবে কলঙ্কিত ব্যক্তি, বিতর্কিত কর্মকর্তা। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুয়ীদ ভাইয়ের অপসারণ চাই।’
তিনি বলেন, ‘যদি তাকে কমিশন থেকে বাদ না দেয়া হয় বা পদত্যাগ না করেন তাহলে কীভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হয় আমাদের জানা আছে।’
*আন্দোলন শুরু*
প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুধবার থেকে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হল জানিয়ে এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আগামী ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ ঘোষণার প্রস্তাব করছি। আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করব, কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করব, সংবাদ সম্মেলন করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোনো ক্যাডারের অস্তিত্ব দেখতে চাই না। সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ আমাদের আন্দোলন শুরু হলো, এই আন্দোলন চলবে।’
এর আগে একই সভায় প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন কামাল কমিশন প্রধানের পদত্যাগের দাবি তোলেন। সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা তাতে সমর্থন জানান।
*আলোচনার শুরু যেভাবে*
আগামী ৩১শে ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও তার আগেই কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
এ সময় কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের কিছু বিষয় তুলে ধরেন তারা।
যেমন, পরীক্ষার মাধ্যমে জনপ্রশাসনে উপ-সচিব পদে নিয়োগ হবে বলে জানান কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। বলেন, ‘ডেপুটি সেক্রেটারি লেভেলে পরীক্ষা হবে, সেখানে সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে।’
একই সঙ্গে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়, তা বদলে এই অনুপাত প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারদের জন্য ৫০ শতাংশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
*প্রশাসনে সুবিচার*
বুধবারের প্রতিবাদ সভায় প্রশাসনের ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল কোটা তুলে দেয়ার জন্য। সংস্কার কমিশনের উচিত এই কোটা তুলে দেয়া। কিন্তু সেটা না করে তারা উল্টো কোটা বাড়ানোর চিন্তা করছেন, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘এই কমিশনের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সুবিচার পাবেন না। তাই তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।’
ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদ বলেন, ‘জেলা ও উপজেলায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা এরশাদ সরকারের আমলে খর্ব করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয়ভাবে সেই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কোটামুক্ত পদোন্নতি চাই।’
*প্রশাসনে দ্বন্দ্ব*
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সংস্কারের বদলে প্রশাসনে দ্বন্দ্ব লাগানো হয়েছে। এমনকি এটি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবেও বর্ণনা করেন কেউ কেউ। গত তিন নির্বাচনের জন্য একতরফা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়ী করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠিত হওয়া গত দেড় দশকে একটি নির্দিষ্ট ক্যাডারের দায় নয়, আরও ক্যাডার রয়েছে যারা নির্বাচনকেন্দ্রিক দায়িত্ব সামলেছেন বিভিন্নভাবে।
*ষড়যন্ত্র*
প্রতিবাদ সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন হয়ে গেছে। কমিশনগুলোতে কালক্ষেপণের পাঁয়তারা হচ্ছে।’
প্রশাসনকে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা গেছে? এমন প্রশ্ন রেখে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘একটা আন্ডার গ্রাজুয়েট ছাত্রকে এতো বড় একটা স্থানে কেন নেয়া হলো? এটা নাকি সরকারের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি চাপিয়েই দেয়া হয় তাহলে মুয়ীদ (জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান) সাহেব সেটা অস্বীকার করতে পারতো। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।’
এদিকে, সংস্কার কমিশনের পুরো প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই নানা সিদ্ধান্ত সামনে আনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, এর ফলে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সঙ্কট নিরসনে প্রশাসন ক্যাডারের কনিষ্ঠ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান সাবেক কর্মকর্তারা।
*কমিশনে যারা*
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশন সদস্যরা হলেন- সাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান; সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও সাবেক যুগ্ম সচিব রিজওয়ান খায়ের; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ কা ফিরোজ আহমদ; শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান; বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা অধ্যাপক সৈয়দা শাহিনা সোবহান, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান।