alt

জাতীয়

‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ: ‘সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

শুক্রবার জাতীয় সংলাপে পরিবেশ উপদেষ্টাসহ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা-সংবাদ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে সেই গণতন্ত্রের সুফল জনগণ পাবে না। এমন অভিমত উঠে এসেছে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানী শুরু হওয়া ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে। সংলাপে বক্তৃতায় একাধিক বক্তা বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনকে ‘মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে’। এর ফলে জুলাই অভ্যুত্থানে যে সাফল্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে তা ম্লান হয়ে যেতে পারে বলে বক্তারা অভিমত দিয়েছেন।

শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) এ সংলাপের আয়োজন করে। ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক দুই দিনের সংলাপে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জুলাই পরবর্তী পরিস্থিতি এবং জনগনের আকাক্সক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন।

সকালে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জুলাই গণআন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের মঞ্চে উপবেশনের মধ্য দিয়ে। পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফার্মগেট নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান সংলাপের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।

গণঅভ্যুত্থানে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতরা রক্ত দেয়নি। তারা দেশটাতে একটা সংস্কার দেখতে চায়।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্য ‘দেখা গেছে’। ‘এখন বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা কী হবে সেই ঐক্য দরকার। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জনগণকে ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কারের পথে নিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ আপনি যত ভালো সংবিধান তৈরি করেন না কেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে সেই সংবিধান আবারও ভাঙা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জোর দিতে হবে।’ বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান সভাপতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের দুর্বলতা হচ্ছে রাজনীতি। ৭২ সালে নতুন সংবিধান এলেও একটি সুষ্ঠু রাজনীতি গড়ে উঠেনি। মূলত হাজার বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, কেউ ভালো শাসন করেনি।’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস আপাতত নেই। তারা যদি ভবিষ্যতে নিজেদের পুনর্গঠন করে সামনে আসে, তাহলে হয়ত মানুষ ভবিষ্যতে ভেবে দেখবে।’

বর্তমান সংস্কার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ভেতর থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। একদিনে এগুলো ঠিক হবে না। ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যেতে হবে।’

অর্থনীতিবিদ মুশতাক হুসাইন খান বলেন, সংস্কার আর নির্বাচনের মধ্যে ‘ফাটল ধরানোর চেষ্টা’ করা হচ্ছে। এতে ক্ষতি হবে দেশের। ‘বাংলাদেশের আসল সমস্যা ছিল ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হওয়া। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার কেবল আইন পরিবর্তন করে নাই। নিজেদের আইনও নিজেরা ভাঙার শক্তি অর্জন করেছিল, এটাই ছিল সমস্যা। তাই আইন ঠিক করতে হবে, আবার ক্ষমতার কাঠামোও ঠিক করতে হবে।’

সংস্কারের মাধ্যমে শুধু আইনকানুন পরিবর্তন করলে হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি গোপন ক্ষমতা কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ গোপন ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। কারণ, দলের পরিবর্তন হলেও গোপন শক্তিটি নতুন দলের সঙ্গে ভিড়ে যাবে। এ কাজটা এখনই করতে হবে। তা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে।’

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতার গোপন কাঠানো ভাঙতে না পারলে আপনারা ভালো কিছু চাইলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ আপনার দলেরই এমপি, নেতারা তা ঠেকিয়ে দেবে।’

সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করে সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন ঘটানোর জন্য সব চিন্তা ও ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটা ছিল জুলাই আন্দোলনের একটা অভূতপূর্ব দৃশ্য।’

‘এখন এক ধরনের অনৈক্যের সুর শোনা যাচ্ছে যা অভ্যুত্থানের পক্ষের মানুষকে চিন্তিত করছে। ঐক্য না হলে সংস্কার হবে না, সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে না। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে।’

সংলাপের শুরুতে কথা বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক, নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল আওয়াল, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।

আবু বকর বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা এবং গণঅভ্যুত্থানে আহত নিহতদের জন্য এটা অপমানজনক।’

গণআন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সঠিক পুনর্বাসন ও খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কিনা, সেই প্রশ্ন তোলেন যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিত নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল আওয়াল।

তিনি বলেন, ‘একটি হত্যাকাণ্ডে একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে এক হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়ার কথা, দুইজন করে জড়িত থাকলে দুই হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হত। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ২৩ জন পুলিশ।’

‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে? তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব যে বিচার হবে? খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে বিচারের নামে এমন রঙ্গমঞ্চ কেন? আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, কিন্তু বিচারের কথা জোর দিয়ে বলেন না।’

রবিউল অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের ভাগ্নে জড়িত। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার ‘লোকেশনের তথ্য’ পুলিশের কাছে দিলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।

নিহত পরিবার ও আহতদের সহায়তার বিষয়টি দ্রুত করার দাবি জানান উত্তরায় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন মনিশা মাফরুহা।

ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা আবুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেয়া হয়নি। দুটো মসজিদে মরদেহের গোসল করাতে দেয়া হয়নি। জনগণ এত রক্ত নির্বাচনের জন্য দেয়নি। আপনার এই দেশটা সংস্কার করুন।’

নিহতদের পরিবার ও আহতদের নিরাপত্তা দেয়ার কথাও বলেন আবুল হাসান।

ছবি

গণহত্যাকারীদের বিচার আগামী বিজয় দিবসের আগেই : আইন উপদেষ্টা

ছবি

এক্সপ্রেসওয়েতে বাসটির দ্রুতগতির কারণ কী, চালকেরা কোথায়—জানা যায়নি ২৪ ঘণ্টায়ও

ছবি

আনন্দবাজারের খবর ‘বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন’: আইএসপিআর

ছবি

উড়োজাহাজ জব্দের খবর ‘বিভ্রান্তিকর’: বিমান

ছবি

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড শিগগিরই: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

চাকরি বিধি লঙ্ঘনের জন্য আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : নাহিদ

ছবি

ইসরায়েলি হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন তেদরোস

ছবি

ফের বাজার থেকে উধাও সয়াবিন তেল

ছবি

মায়ানমার হয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নির্বিঘ্ন সংযোগ প্রয়োজন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

সচিবালয়কে দালালদের হাটবাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছিল : ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

ছবি

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: সাংবাদিকেরা আপাতত ঢুকতে পারবেন না, অস্থায়ী পাসও বাতিল

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার তদন্ত শুরু

ছবি

‘সংস্কারবিহীন নির্বাচন’ দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না : ইউনূস

আমান আযমীকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন বাতিল

ছবি

‘থার্টিফার্স্ট নাইটে ঢাকায় শব্দদূষণ শিল্প এলাকাকেও ছাড়িয়ে যায়’

ছবি

নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান

ছবি

সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সঠিক তথ্য উপস্থাপন গুজব ছড়ানো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: পররাষ্ট্র সচিব

ছবি

‘উত্তম কৃষি চর্চা’র মাধ্যমে দেশের বাজারে এলো প্রথম কৃষিপণ্য

ছবি

আন্দোলনে আহতদের জীবনের পথ পালটে যাচ্ছে

ছবি

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি

ছবি

আগুনের সূত্রপাত তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ফায়ার সার্ভিসের সদস্যকে চাপা দেওয়া ট্রাকচালক আটক শিক্ষার্থীদের হাতে

ছবি

সচিবালয়ে আগুন: ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্য নিহত

ছবি

সচিবালয়ের আগুন ছড়িয়েছে ৪টি তলায়, নিয়ন্ত্রণে এসেছে ৫ ঘণ্টা পর

ছবি

সচিবালয়ের আগুন ৭ নম্বর ভবনে আগুন

উপসচিব পদোন্নতিতে আগের কোটা বহাল রাখার অনুরোধ

ছবি

রোহিঙ্গাদের সমাবেশ : শরণার্থী জীবন আর নয়, মায়ানমারে ফিরে যেতে চাই

দ্রুত নির্বাচনের জন্য এত মানুষ শহীদ হয়নি: আসিফ মাহমুদ

ছবি

জাহাজে খুন: লস্কর ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে ‘মাস্টারের অত্যাচারে’ এই হত্যাকাণ্ড

ছবি

সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

কমিশনের সুপারিশে প্রশাসনে অসন্তোষ, আন্দোলনে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা

ছবি

কয়েদি হত্যা মামলাতেও আসামি শেখ হাসিনা

ছবি

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং বিয়াম ফাউন্ডেশন চুক্তি স্বাক্ষর: পুনর্বাসন এলাকায় নতুন স্কুল চালু

ছবি

বিশ্বশান্তি কামনা বড়দিনের প্রার্থনায়

tab

জাতীয়

‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ: ‘সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে’

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার জাতীয় সংলাপে পরিবেশ উপদেষ্টাসহ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা-সংবাদ

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে সেই গণতন্ত্রের সুফল জনগণ পাবে না। এমন অভিমত উঠে এসেছে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানী শুরু হওয়া ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে। সংলাপে বক্তৃতায় একাধিক বক্তা বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনকে ‘মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে’। এর ফলে জুলাই অভ্যুত্থানে যে সাফল্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে তা ম্লান হয়ে যেতে পারে বলে বক্তারা অভিমত দিয়েছেন।

শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) এ সংলাপের আয়োজন করে। ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক দুই দিনের সংলাপে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জুলাই পরবর্তী পরিস্থিতি এবং জনগনের আকাক্সক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন।

সকালে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জুলাই গণআন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের মঞ্চে উপবেশনের মধ্য দিয়ে। পরে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফার্মগেট নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান সংলাপের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়।

গণঅভ্যুত্থানে নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, ‘শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতরা রক্ত দেয়নি। তারা দেশটাতে একটা সংস্কার দেখতে চায়।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিষয়ে একটা জাতীয় ঐক্য ‘দেখা গেছে’। ‘এখন বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা কী হবে সেই ঐক্য দরকার। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও জনগণকে ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কারের পথে নিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ আপনি যত ভালো সংবিধান তৈরি করেন না কেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে সেই সংবিধান আবারও ভাঙা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের জোর দিতে হবে।’ বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান সভাপতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের দুর্বলতা হচ্ছে রাজনীতি। ৭২ সালে নতুন সংবিধান এলেও একটি সুষ্ঠু রাজনীতি গড়ে উঠেনি। মূলত হাজার বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, কেউ ভালো শাসন করেনি।’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা বিশ্বাস আপাতত নেই। তারা যদি ভবিষ্যতে নিজেদের পুনর্গঠন করে সামনে আসে, তাহলে হয়ত মানুষ ভবিষ্যতে ভেবে দেখবে।’

বর্তমান সংস্কার আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ভেতর থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। একদিনে এগুলো ঠিক হবে না। ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যেতে হবে।’

অর্থনীতিবিদ মুশতাক হুসাইন খান বলেন, সংস্কার আর নির্বাচনের মধ্যে ‘ফাটল ধরানোর চেষ্টা’ করা হচ্ছে। এতে ক্ষতি হবে দেশের। ‘বাংলাদেশের আসল সমস্যা ছিল ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত হওয়া। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার কেবল আইন পরিবর্তন করে নাই। নিজেদের আইনও নিজেরা ভাঙার শক্তি অর্জন করেছিল, এটাই ছিল সমস্যা। তাই আইন ঠিক করতে হবে, আবার ক্ষমতার কাঠামোও ঠিক করতে হবে।’

সংস্কারের মাধ্যমে শুধু আইনকানুন পরিবর্তন করলে হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি গোপন ক্ষমতা কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ গোপন ক্ষমতার বিন্যাস ভাঙতে হবে। কারণ, দলের পরিবর্তন হলেও গোপন শক্তিটি নতুন দলের সঙ্গে ভিড়ে যাবে। এ কাজটা এখনই করতে হবে। তা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে।’

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতার গোপন কাঠানো ভাঙতে না পারলে আপনারা ভালো কিছু চাইলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ আপনার দলেরই এমপি, নেতারা তা ঠেকিয়ে দেবে।’

সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করে সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন ঘটানোর জন্য সব চিন্তা ও ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এটা ছিল জুলাই আন্দোলনের একটা অভূতপূর্ব দৃশ্য।’

‘এখন এক ধরনের অনৈক্যের সুর শোনা যাচ্ছে যা অভ্যুত্থানের পক্ষের মানুষকে চিন্তিত করছে। ঐক্য না হলে সংস্কার হবে না, সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে না। এ জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে।’

সংলাপের শুরুতে কথা বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক, নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল আওয়াল, উত্তরা চব্বিশের সংগঠক মনিশা মাফরুহা, নিহত শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান।

আবু বকর বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চার মাসের মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য ব্যর্থতা এবং গণঅভ্যুত্থানে আহত নিহতদের জন্য এটা অপমানজনক।’

গণআন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সঠিক পুনর্বাসন ও খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আদৌ বিচার হবে কিনা, সেই প্রশ্ন তোলেন যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিত নিহত ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল আওয়াল।

তিনি বলেন, ‘একটি হত্যাকাণ্ডে একজন করে পুলিশ জড়িত থাকলে এক হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়ার কথা, দুইজন করে জড়িত থাকলে দুই হাজার পুলিশ গ্রেপ্তার হত। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ২৩ জন পুলিশ।’

‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে? তাহলে আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব যে বিচার হবে? খুনিদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে বিচারের নামে এমন রঙ্গমঞ্চ কেন? আপনারা সংস্কারের কথা বলেন, কিন্তু বিচারের কথা জোর দিয়ে বলেন না।’

রবিউল অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ীতে গণহত্যায় ডিএমপি কমিশনারের ভাগ্নে জড়িত। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার ‘লোকেশনের তথ্য’ পুলিশের কাছে দিলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।

নিহত পরিবার ও আহতদের সহায়তার বিষয়টি দ্রুত করার দাবি জানান উত্তরায় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠন মনিশা মাফরুহা।

ছেলের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা আবুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘ছেলের জানাজা এলাকায় দিতে দেয়া হয়নি। দুটো মসজিদে মরদেহের গোসল করাতে দেয়া হয়নি। জনগণ এত রক্ত নির্বাচনের জন্য দেয়নি। আপনার এই দেশটা সংস্কার করুন।’

নিহতদের পরিবার ও আহতদের নিরাপত্তা দেয়ার কথাও বলেন আবুল হাসান।

back to top