alt

জাতীয়

গণপিটুনিতে ২০২৪ সালে নিহতের সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণের বেশি: আসক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে হওয়া বিচার)এর নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাগুলো ছিল উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করে আসক বলেছে, এবার গণপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণের বেশি।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বছরের শেষ দিনে এ প্রতিবেদন দিয়েছে আসক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

‘মব জাস্টিসের’ প্রসঙ্গ তুলে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি সমালোচনার ঝড় তোলে। চলমান পরিস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যা বা মব জাস্টিজের মতো ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতা ও কর্মীরা হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তার ওপর হামলা হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে মধ্যরাতে তিনি মারা যান। মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হয়ে তিনি ডান পা হারিয়েছিলেন। বাঁ পা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন। তিনি কৃত্রিম পা নিয়ে চলাফেরা করতেন।

বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হয়নি
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এলেও এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হয়নি। এমনকি এ ক্ষেত্রে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২১ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন, পুলিশের গুলিতে ৩ জন, পুলিশ হেফাজতে ১ জন আত্মহত্যা করেছে, র‌্যাবের হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ১ জন, বিজিবির ক্রসফায়ারে ১ জন, যৌথ বাহিনীর হেফাজতে গ্রেপ্তারের ও পরে শারীরিক নির্যাতনে ৭ জন, নৌবাহিনীর নির্যাতনে ১ জন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হেফাজতে ১ জনের মৃত্যু ঘটে। এই ২১ জনের মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনে নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা সাজা নিষিদ্ধ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এমন চর্চায় বা আচরণে জড়িত ছিলেন। নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংঘটিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে। থানাগুলোতে আটক ব্যক্তিদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৮৫৮
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোট ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৫৫১ জন। পত্রিকায় প্রকাশিত সূত্রে আসক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী এবং ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকিশোর রয়েছে ১২৯ জন। জুলাই অভ্যুত্থানে বিশেষত নিজ বাসায় গুলিতে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক। এছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু
আসকের হিসাব অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ১৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪০৮টি বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৩৬টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ১১৩টি, মন্দির ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩২টি, হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে ৯২টি প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। এসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩ জন এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১ জন নাগরিকের মৃত্যু ঘটেছে, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮২ জন।

আদিবাসীর অধিকার
আসক বলেছে, বিগত বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালেও সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই তংগোঝিরি এলাকায় ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে পূর্ব-বেতছড়াপাড়ার ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এর আগে তাদের কাছে দুর্বৃত্তরা চাঁদা দাবি করেছিল। এরপর বসতবাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটে।

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক যুবক প্রাণ হারান। মূলত এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষ শুরু হয় পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হন এবং ৫০ জন আহত হন। বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

বিগত সরকারের পতনের পর তিনদিনে উত্তরাঞ্চলে আদিবাসীর ওপর হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্ট দুপুর থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীদের প্রায় ৭০টি পরিবারের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। বিশেষ করে দিনাজপুরের ছয়টি উপজেলায় আদিবাসীদের ওপর হামলা করা হয়। দেশের একমাত্র সিধু-কানুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

চিত্র নায়িকা অঞ্জনা মারা গেছেন

মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ‘অনভিজ্ঞ, অদক্ষরা’, পরিবর্তন চায় ২৫ ক্যাডার

ছবি

শৈত্যপ্রবাহ ১৩ জেলায়, শীতের অনুভূতি কমার আভাস

ছবি

প্রথম ধাপের ছয় সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প, রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫

রাঙামাটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক সন্ত্রাসী নিহত

চিন্ময়ের জামিন আবেদন নাকচ

৪৩তম বিসিএসে ২২৭ প্রার্থী ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদনে’ বাদ’ পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন

হালনাগাদ খসড়া তালিকা: নতুন ভোটার ১৮ লাখের বেশি

এলপি গ্যাসের দামে ডলারের প্রভাব, সুফল নেই দেশে

ছবি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান

ছবি

অবশেষে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে জাতীয় কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম

ছবি

বাংলা‌দেশি-ভারতীয় আটক জেলেদের হস্তান্তর ৫ জানুয়া‌রি

ছবি

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের ‘পুনর্বিবেচনার’ সুযোগ

ছবি

ভ্যাট বাড়লেও নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ‘মুজিব কিল্লা’ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করবে দুদক

ছবি

বিএফআইইউর সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে ১.৪৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দুদকের মামলা

ছবি

শুধু ব্যক্তি নয়, জনস্বার্থে ব্যবসা করা উচিত : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়ের জামিন আবেদন জজ আদালতেও খারিজ

ছবি

আইএমএফের চাপে পণ্য ও সেবায় বাড়তি ভ্যাটের খড়্গ

ছবি

হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ: দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৬ লাখ

ছবি

আজ রাজবাড়ী যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

রাজধানীতে বেড়েছে শীতের অনুভূতি

হলো না বই উৎসব, অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন, বই ওয়েবসাইটে

ছবি

৪৩তম বিসিএস: বাদপড়া প্রার্থীদের সচিবালয়ে অবস্থান, জনপ্রশাসন সচিবের কাছে আবেদন

ছবি

জুলাই ফাউন্ডেশনের টাকা পেতে অনেকে ‘জালিয়াতির আশ্রয়’ নেন : সারজিস আলম

ছবি

২০২৪ সালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার নির্মম চিত্র: আহতদের সংগ্রাম ও পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ

ছবি

ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা ও স্বার্থের ইস্যু পাশাপাশি চলবে: তৌহিদ

ডেঙ্গু ঃ ২ বছরে আক্রান্ত ৪ লাখ ও মৃত্যু-২২শ

ছবি

শীত জনিত রোগে আক্রান্ত দেড় লাখ ও মৃত্যু- ৫১ জন

ছবি

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ২৬৭ জনের সচিবালয়ে অবস্থান, অন্তর্ভুক্তির দাবি

ছবি

ইউনূসকে নিয়ে জিনিউজের প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বানোয়াট: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ছবি

পাঠ্যবই ছাপাটা এবার যুদ্ধের মতো, কবে সব দিতে পারবো জানি না : শিক্ষা উপদেষ্টা

ছবি

মে থেকে ফিটনেসবিহীন বাস থাকবে না : বিআরটিএ চেয়ারম্যান

ছবি

বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে ক্রেতাদের দগ্ধ হওয়ার বছর

tab

জাতীয়

গণপিটুনিতে ২০২৪ সালে নিহতের সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণের বেশি: আসক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে হওয়া বিচার)এর নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাগুলো ছিল উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করে আসক বলেছে, এবার গণপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণের বেশি।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বছরের শেষ দিনে এ প্রতিবেদন দিয়েছে আসক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

‘মব জাস্টিসের’ প্রসঙ্গ তুলে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি সমালোচনার ঝড় তোলে। চলমান পরিস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যা বা মব জাস্টিজের মতো ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতা ও কর্মীরা হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তার ওপর হামলা হয়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে মধ্যরাতে তিনি মারা যান। মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হয়ে তিনি ডান পা হারিয়েছিলেন। বাঁ পা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন। তিনি কৃত্রিম পা নিয়ে চলাফেরা করতেন।

বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হয়নি
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এলেও এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হয়নি। এমনকি এ ক্ষেত্রে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২১ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন, পুলিশের গুলিতে ৩ জন, পুলিশ হেফাজতে ১ জন আত্মহত্যা করেছে, র‌্যাবের হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ১ জন, বিজিবির ক্রসফায়ারে ১ জন, যৌথ বাহিনীর হেফাজতে গ্রেপ্তারের ও পরে শারীরিক নির্যাতনে ৭ জন, নৌবাহিনীর নির্যাতনে ১ জন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হেফাজতে ১ জনের মৃত্যু ঘটে। এই ২১ জনের মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনে নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা সাজা নিষিদ্ধ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এমন চর্চায় বা আচরণে জড়িত ছিলেন। নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংঘটিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে। থানাগুলোতে আটক ব্যক্তিদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৮৫৮
আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোট ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৫৫১ জন। পত্রিকায় প্রকাশিত সূত্রে আসক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী এবং ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকিশোর রয়েছে ১২৯ জন। জুলাই অভ্যুত্থানে বিশেষত নিজ বাসায় গুলিতে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক। এছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু
আসকের হিসাব অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দির ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ১৪৭টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪০৮টি বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৩৬টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ১১৩টি, মন্দির ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৩২টি, হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে ৯২টি প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। এসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩ জন এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১ জন নাগরিকের মৃত্যু ঘটেছে, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮২ জন।

আদিবাসীর অধিকার
আসক বলেছে, বিগত বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালেও সমতল ও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই তংগোঝিরি এলাকায় ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে পূর্ব-বেতছড়াপাড়ার ১৭টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এর আগে তাদের কাছে দুর্বৃত্তরা চাঁদা দাবি করেছিল। এরপর বসতবাড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটে।

১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন নামের এক যুবক প্রাণ হারান। মূলত এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সংঘর্ষ শুরু হয় পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে। এ ঘটনায় ৪ জন নিহত হন এবং ৫০ জন আহত হন। বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

বিগত সরকারের পতনের পর তিনদিনে উত্তরাঞ্চলে আদিবাসীর ওপর হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্ট দুপুর থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীদের প্রায় ৭০টি পরিবারের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। বিশেষ করে দিনাজপুরের ছয়টি উপজেলায় আদিবাসীদের ওপর হামলা করা হয়। দেশের একমাত্র সিধু-কানুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

back to top