আর্থিক সহায়তার অভাব: চিকিৎসা খরচে সংকটে পরিবারগুলো
২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুতই সহিংস রূপ নেয়, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাদের সংগ্রাম শুধু শারীরিক ক্ষত সারানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; মানসিক আঘাত ও সামাজিক পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জও তাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে বাধা সৃষ্টি করে। সরকারের প্রতিশ্রুত নীতি পরিবর্তনের আশ্বাস সত্ত্বেও, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছিল অপর্যাপ্ত। আহতদের পরিবারের উপর পড়া অর্থনৈতিক চাপ ও মানসিক সংকট এই আন্দোলনের নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। শিক্ষার্থীদের এই সংগ্রাম শুধু একটি আন্দোলনের নয়, বরং সামাজিক সুবিচারের দাবি বলেও জানান ছাত্রদের প্রতিনিধি রেয়াত লোদী ।
জুলাইয়ের আন্দোলনে নোয়াখালীর ছেলে সাইফুল ইসলাম কিভাবে আহত হয়েছিলেন সেই বিষয় বলেন, অ্যাই যহন বাসায় ফিরতেছিলাম ৪ তারিখে আন্দোলনে সময় তহন ছাত্রলীগ এবং পুলিশের গুলিতে পেটে একটা গুলি লাইগজে । অ্যার পাকস্থলী ও কিডনির পাশে গুলি লাইজে। ডাক্তার বইলেছ্ছে, গুলি বাইর করা ঝুঁহিপূর্ণ। গুলিটা নাকি এহনো শরীরের ভেতরেই রইছে ।
বর্তমানে নিটোরে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে আর্থিক সমস্যা তার চিকিৎসাকে জটিল করে তুলেছে বলে সাইফুল জানান, "জুলাই ফাউন্ডেশন থেইকা এক লাখ সাত’শ টাকা পাইছি । যে অর্থ দিয়েছ্ছে তা যথেষ্ট না। অ্যাই জানি না, ভবিষ্যতে কেন্ন্যে চইলবো। আঘাতের কারনে অ্যাই পরিবার অর্থ চাফে পইড়ছ্ছে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়ইতা তৈরি হইছ্ছে।
যাত্রাবাড়ীর মোহাম্মদ মিনহাজ, যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন, জানান, “একজনকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও পুলিশের গুলিতে আহত হই। এখন কাজ করার ক্ষমতা নেই, আর পরিবার চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য ৪-৫ লাখ টাকা সাহায্য পেলেও তা যথেষ্ট নয়। পরিবারের সাত সদস্যের বোঝা নিয়ে আমরা কঠিন সময় পার করছি।”
চট্টগ্রামের তারেক বিন হাসান বলেন, “নিউ মার্কেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে আমার বাম হাতের তিনটি আঙুলের হাড় ভেঙে গেছে। হাতটি আর কার্যকর নয়। চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড় লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছি, কিন্তু অপারেশন ও থেরাপি চালিয়ে যেতে আরও অর্থ প্রয়োজন। পরিবার চরম সংকটে আছে, আর আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি না।”
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ আহমাদ জানান, “একটি পুলিশ ভ্যান আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। হাঁটুর হাড় চূর্ণ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আছি, তবে স্বপ্নগুলো ভেঙে গেছে।”
ছাত্রপ্রতিনিধি রেয়াত লোদী বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত সংকটে পড়েছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অনেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (নিটোর)-এ চিকিৎসা নিয়েছেন। আমি ৯ নভেম্বর নিটোরে দায়িত্ব গ্রহণের পর আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার মান উন্নত করার উদ্যোগ নেই। আহতদের যাচাই-বাছাই করে সঠিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আহতদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করছি, নিটোরে আহতদের চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। সরকারও এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে।
নিটোরে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল কেনান জানান, “আন্দোলনের আহতদের চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে। হাড়ভাঙা চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। থাইল্যান্ড ও ইউকে থেকে চিকিৎসকরা এসে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।”
গণঅভ্যুত্থানের সময় ৫৮৩ জন গুলিবিদ্ধ হন, এবং ৮ জনের মৃত্যু ঘটে। প্রায় ২১ জনের অঙ্গহানি হয়েছে। চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতা করলেও এটি যথেষ্ট নয়।
আন্দোলনের আহতদের পুনর্বাসন এবং মানসিক পুনরুদ্ধারে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন, তাদের সঠিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আর্থিক সহায়তার অভাব: চিকিৎসা খরচে সংকটে পরিবারগুলো
বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫
২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দ্রুতই সহিংস রূপ নেয়, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাদের সংগ্রাম শুধু শারীরিক ক্ষত সারানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; মানসিক আঘাত ও সামাজিক পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জও তাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে বাধা সৃষ্টি করে। সরকারের প্রতিশ্রুত নীতি পরিবর্তনের আশ্বাস সত্ত্বেও, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছিল অপর্যাপ্ত। আহতদের পরিবারের উপর পড়া অর্থনৈতিক চাপ ও মানসিক সংকট এই আন্দোলনের নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। শিক্ষার্থীদের এই সংগ্রাম শুধু একটি আন্দোলনের নয়, বরং সামাজিক সুবিচারের দাবি বলেও জানান ছাত্রদের প্রতিনিধি রেয়াত লোদী ।
জুলাইয়ের আন্দোলনে নোয়াখালীর ছেলে সাইফুল ইসলাম কিভাবে আহত হয়েছিলেন সেই বিষয় বলেন, অ্যাই যহন বাসায় ফিরতেছিলাম ৪ তারিখে আন্দোলনে সময় তহন ছাত্রলীগ এবং পুলিশের গুলিতে পেটে একটা গুলি লাইগজে । অ্যার পাকস্থলী ও কিডনির পাশে গুলি লাইজে। ডাক্তার বইলেছ্ছে, গুলি বাইর করা ঝুঁহিপূর্ণ। গুলিটা নাকি এহনো শরীরের ভেতরেই রইছে ।
বর্তমানে নিটোরে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে আর্থিক সমস্যা তার চিকিৎসাকে জটিল করে তুলেছে বলে সাইফুল জানান, "জুলাই ফাউন্ডেশন থেইকা এক লাখ সাত’শ টাকা পাইছি । যে অর্থ দিয়েছ্ছে তা যথেষ্ট না। অ্যাই জানি না, ভবিষ্যতে কেন্ন্যে চইলবো। আঘাতের কারনে অ্যাই পরিবার অর্থ চাফে পইড়ছ্ছে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়ইতা তৈরি হইছ্ছে।
যাত্রাবাড়ীর মোহাম্মদ মিনহাজ, যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন, জানান, “একজনকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও পুলিশের গুলিতে আহত হই। এখন কাজ করার ক্ষমতা নেই, আর পরিবার চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য ৪-৫ লাখ টাকা সাহায্য পেলেও তা যথেষ্ট নয়। পরিবারের সাত সদস্যের বোঝা নিয়ে আমরা কঠিন সময় পার করছি।”
চট্টগ্রামের তারেক বিন হাসান বলেন, “নিউ মার্কেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে আমার বাম হাতের তিনটি আঙুলের হাড় ভেঙে গেছে। হাতটি আর কার্যকর নয়। চিকিৎসার জন্য প্রায় দেড় লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছি, কিন্তু অপারেশন ও থেরাপি চালিয়ে যেতে আরও অর্থ প্রয়োজন। পরিবার চরম সংকটে আছে, আর আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছি না।”
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ আহমাদ জানান, “একটি পুলিশ ভ্যান আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। হাঁটুর হাড় চূর্ণ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক চলাফেরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আছি, তবে স্বপ্নগুলো ভেঙে গেছে।”
ছাত্রপ্রতিনিধি রেয়াত লোদী বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত সংকটে পড়েছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অনেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (নিটোর)-এ চিকিৎসা নিয়েছেন। আমি ৯ নভেম্বর নিটোরে দায়িত্ব গ্রহণের পর আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার মান উন্নত করার উদ্যোগ নেই। আহতদের যাচাই-বাছাই করে সঠিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আহতদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করছি, নিটোরে আহতদের চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। সরকারও এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে।
নিটোরে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল কেনান জানান, “আন্দোলনের আহতদের চিকিৎসা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে। হাড়ভাঙা চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। থাইল্যান্ড ও ইউকে থেকে চিকিৎসকরা এসে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।”
গণঅভ্যুত্থানের সময় ৫৮৩ জন গুলিবিদ্ধ হন, এবং ৮ জনের মৃত্যু ঘটে। প্রায় ২১ জনের অঙ্গহানি হয়েছে। চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বিভিন্ন সংগঠন সহযোগিতা করলেও এটি যথেষ্ট নয়।
আন্দোলনের আহতদের পুনর্বাসন এবং মানসিক পুনরুদ্ধারে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন, তাদের সঠিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।