সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ঐক্যমত্যের খোঁজে সরকার
বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে চারটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শুরু হবে। মূল লক্ষ্য হলো সুপারিশমালার ভিত্তিতে ঐকমত্য তৈরি করে সেগুলো বাস্তবায়ন করা।
আজ বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এ সময় সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কমিশনগুলোর কাজ আরও সমন্বয় করার জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তবে জানুয়ারির মধ্যেই এই চারটি কমিশনের সুপারিশমালা চূড়ান্ত হবে। বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ এখনও প্রক্রিয়াধীন, যা শেষ হওয়ার জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে।
সরকার আগেই জানিয়েছিল যে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা প্রাপ্তির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “রাজনৈতিক সংলাপ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হতে পারে। তবে কমিশনগুলোর কাজ যদি আগে শেষ হয়, সংলাপ হয়তো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শুরু হবে।”
তিনি আরও জানান, “সংলাপ শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিনিময় প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। দলগুলো তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ আলোচনায় সহায়তা করবে।”
সংস্কার কমিশনের গঠন ও কাজের অগ্রগতি :
জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ও প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি নতুন কমিশন গঠিত হয়:
১. নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
২. পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন
৩. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
৪. দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
৫. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
৬. সংবিধান সংস্কার কমিশন
এখন পর্যন্ত নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান, এবং দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রতিটি কমিশন তাদের সুপারিশমালায় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বিকক্ষ সংসদ গঠন, মৌলিক অধিকার সনদকে আরও কার্যকর করা এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং বহুত্ববাদের মতো নতুন মূলনীতি সংযোজন।
নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রায় ১৫০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচনী অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, এবং নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি রোধে স্বাধীন তদন্ত ক্ষমতা, অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তি, এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশেষ কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।
পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো, আধুনিকায়ন, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা তৈরি করা হবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। তবে এই প্রক্রিয়া সফল করতে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য অপরিহার্য।”
প্রতিবেদন জমাদানের সময় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে জনগণের প্রত্যাশা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটবে।”
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়, তবে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ঐক্যমত্যের খোঁজে সরকার
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে চারটি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শুরু হবে। মূল লক্ষ্য হলো সুপারিশমালার ভিত্তিতে ঐকমত্য তৈরি করে সেগুলো বাস্তবায়ন করা।
আজ বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এ সময় সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কমিশনগুলোর কাজ আরও সমন্বয় করার জন্য এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তবে জানুয়ারির মধ্যেই এই চারটি কমিশনের সুপারিশমালা চূড়ান্ত হবে। বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ এখনও প্রক্রিয়াধীন, যা শেষ হওয়ার জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে।
সরকার আগেই জানিয়েছিল যে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা প্রাপ্তির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “রাজনৈতিক সংলাপ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হতে পারে। তবে কমিশনগুলোর কাজ যদি আগে শেষ হয়, সংলাপ হয়তো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শুরু হবে।”
তিনি আরও জানান, “সংলাপ শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিনিময় প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। দলগুলো তাদের লিখিত মতামত দিয়েছে, যা ভবিষ্যৎ আলোচনায় সহায়তা করবে।”
সংস্কার কমিশনের গঠন ও কাজের অগ্রগতি :
জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ও প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি নতুন কমিশন গঠিত হয়:
১. নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
২. পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন
৩. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
৪. দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
৫. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
৬. সংবিধান সংস্কার কমিশন
এখন পর্যন্ত নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান, এবং দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রতিটি কমিশন তাদের সুপারিশমালায় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বিকক্ষ সংসদ গঠন, মৌলিক অধিকার সনদকে আরও কার্যকর করা এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং বহুত্ববাদের মতো নতুন মূলনীতি সংযোজন।
নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রায় ১৫০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচনী অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, এবং নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি রোধে স্বাধীন তদন্ত ক্ষমতা, অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তি, এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশেষ কাঠামো প্রণয়নের সুপারিশ করেছে।
পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো, আধুনিকায়ন, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা তৈরি করা হবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। তবে এই প্রক্রিয়া সফল করতে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য অপরিহার্য।”
প্রতিবেদন জমাদানের সময় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে জনগণের প্রত্যাশা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটবে।”
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়, তবে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হবে।