সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জাতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাস্তবায়নের আহ্বান
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত চার কমিশন তাদের সুপারিশমালা উপস্থাপন করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমাদের কাজ কেবল একটি রিপোর্ট তৈরি করা নয়; বরং সেটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কারণ কমিশন যা বলছে, সেটি জনগণের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। আমাদের দায়িত্ব হলো এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে মানুষ এগুলোকে গ্রহণ করতে পারে। আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চাই এবং সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাব।”
চারটি সংস্কার কমিশন—সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন—তাদের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করে। প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন পথ তৈরি করছি। কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে সাংঘর্ষিক বিষয় মীমাংসা করতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন একটি প্রতিবেদন জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য থাকবে, কিছু বিষয়ে না-ও থাকতে পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়, সেগুলোকে একটি নথি হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। তবে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোকে সামনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে।”
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখার আহ্বান :
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের যে সুর এবং আকাঙ্ক্ষা, সেটি অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারণ আমাদের প্রচেষ্টার ভিত্তি সেই আকাঙ্ক্ষা। এটি জাতির অভ্যুত্থানের মূল উৎস। ৫ আগস্ট যে ঐক্যের ভিত্তিতে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল, সেটিকে সামনে রেখেই আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্যের জন্য কিছু বিষয় আগে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, আবার কিছু বিষয় পরে করতে হবে। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো একটি ঐকমত্যের চার্টার তৈরি করা, যেটি জাতির উন্নয়ন ও ঐক্যের পথ নির্দেশ করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “সংস্কারের বিষয়ে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলো জনগণের ভাষ্যই। তবে এগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে মানুষ সহজেই তা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের কাজ হলো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে এগিয়ে যাওয়া। আমরা জাতির সামনে একটি পরিচ্ছন্ন ও ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু কাজ নির্বাচনের আগে করা সম্ভব নয়। তবে গণঅভ্যুত্থান চার্টারের মাধ্যমে আমাদের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। এ চার্টারের ভিত্তিতে আমরা ভবিষ্যতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।”
বৈঠকের শেষ পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা চার কমিশনের কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “সুপারিশগুলোতে কিছু পুনরাবৃত্তি এবং সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে। এগুলো নিষ্পত্তি করে পরিচ্ছন্ন একটি ‘ক্লিন ভার্সন’ তৈরি করতে হবে। এ কাজ সম্পন্ন করার পর আমরা জাতির সামনে একটি পূর্ণাঙ্গ চার্টার উপস্থাপন করতে পারব।”
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন কাজ হলেও এটি অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্যের জন্য সবার অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এটি সহজ নয়, তবে যদি আমরা মন খুলে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই সফল হতে পারব। আমাদের লক্ষ্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন, যা গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথে এগিয়ে যাবে।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যান্য সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য জাতির পুনর্জন্ম। আমরা একটি নতুন পথ তৈরি করছি, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি উপহার দেবে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে অক্ষুণ্ন রেখে আমরা এগিয়ে যাব এবং এ প্রক্রিয়া সফল করতে সব পক্ষকে একত্রে কাজ করতে হবে।”
এভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জাতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাস্তবায়নের আহ্বান
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে গঠিত চার কমিশন তাদের সুপারিশমালা উপস্থাপন করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমাদের কাজ কেবল একটি রিপোর্ট তৈরি করা নয়; বরং সেটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। কারণ কমিশন যা বলছে, সেটি জনগণের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। আমাদের দায়িত্ব হলো এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে মানুষ এগুলোকে গ্রহণ করতে পারে। আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চাই এবং সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাব।”
চারটি সংস্কার কমিশন—সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন—তাদের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করে। প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন পথ তৈরি করছি। কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে সাংঘর্ষিক বিষয় মীমাংসা করতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন একটি প্রতিবেদন জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য থাকবে, কিছু বিষয়ে না-ও থাকতে পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়, সেগুলোকে একটি নথি হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। তবে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোকে সামনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে।”
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধরে রাখার আহ্বান :
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের যে সুর এবং আকাঙ্ক্ষা, সেটি অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারণ আমাদের প্রচেষ্টার ভিত্তি সেই আকাঙ্ক্ষা। এটি জাতির অভ্যুত্থানের মূল উৎস। ৫ আগস্ট যে ঐক্যের ভিত্তিতে পরিবর্তন শুরু হয়েছিল, সেটিকে সামনে রেখেই আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্যের জন্য কিছু বিষয় আগে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, আবার কিছু বিষয় পরে করতে হবে। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো একটি ঐকমত্যের চার্টার তৈরি করা, যেটি জাতির উন্নয়ন ও ঐক্যের পথ নির্দেশ করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “সংস্কারের বিষয়ে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলো জনগণের ভাষ্যই। তবে এগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে মানুষ সহজেই তা গ্রহণ করতে পারে। আমাদের কাজ হলো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে এগিয়ে যাওয়া। আমরা জাতির সামনে একটি পরিচ্ছন্ন ও ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু কাজ নির্বাচনের আগে করা সম্ভব নয়। তবে গণঅভ্যুত্থান চার্টারের মাধ্যমে আমাদের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। এ চার্টারের ভিত্তিতে আমরা ভবিষ্যতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।”
বৈঠকের শেষ পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা চার কমিশনের কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “সুপারিশগুলোতে কিছু পুনরাবৃত্তি এবং সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে। এগুলো নিষ্পত্তি করে পরিচ্ছন্ন একটি ‘ক্লিন ভার্সন’ তৈরি করতে হবে। এ কাজ সম্পন্ন করার পর আমরা জাতির সামনে একটি পূর্ণাঙ্গ চার্টার উপস্থাপন করতে পারব।”
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা কঠিন কাজ হলেও এটি অর্জন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “জাতীয় ঐক্যের জন্য সবার অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এটি সহজ নয়, তবে যদি আমরা মন খুলে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই সফল হতে পারব। আমাদের লক্ষ্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন, যা গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথে এগিয়ে যাবে।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ অন্যান্য সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য জাতির পুনর্জন্ম। আমরা একটি নতুন পথ তৈরি করছি, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি উপহার দেবে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে অক্ষুণ্ন রেখে আমরা এগিয়ে যাব এবং এ প্রক্রিয়া সফল করতে সব পক্ষকে একত্রে কাজ করতে হবে।”
এভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।