সংবিধান সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব সংবিধান কমিশনের
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য একাধিক প্রস্তাব পেশ করেছে। এতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের সীমা নির্ধারণ এবং সংসদীয় নির্বাচনের ন্যূনতম বয়স কমানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুধবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবনায় দুটি আইনসভার কক্ষ প্রবর্তনের কথা বলেছে। একটি নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং অন্যটি উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর।
প্রস্তাবিত আইনসভার কাঠামো ও কার্যক্রম :
প্রস্তাবিত নিম্নকক্ষ ৪০০ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এর মধ্যে ৩০০ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং ১০০ জন নারী প্রার্থী দেশব্যাপী পৃথক নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হবেন।
নিম্নকক্ষ নিয়ে আরও সুপারিশ:
১. প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে মোট আসনের ১০ শতাংশ তরুণ প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
২. নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়সসীমা ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. দুজন ডেপুটি স্পিকার থাকবে, যার একজন বিরোধীদল থেকে মনোনীত হবেন।
৪. সংসদ সদস্যরা অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন।
৫. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধীদলের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবে।
উচ্চকক্ষ ১০৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। ১০০ জন সদস্য প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দলীয় প্রার্থিতা থেকে আসবেন। বাকি পাঁচটি আসন পূরণে রাষ্ট্রপতি অনগ্রসর গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবেন।
উচ্চকক্ষের অন্যান্য সুপারিশ:
১. পিআর পদ্ধতির ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব পেতে দলগুলোকে জাতীয় নির্বাচনে অন্তত ১ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে হবে।
২. উচ্চকক্ষের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার কক্ষের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের সীমা নির্ধারণ :
কমিশন একজন ব্যক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সীমা দুইবার নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এই শর্ত একটানা বা ভিন্ন মেয়াদে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও চার বছরের জন্য সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে হবে, যেখানে আইনসভার উভয় কক্ষ এবং বিভিন্ন স্থানীয় পরিষদের প্রতিনিধিদের ভোট থাকবে।
রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব দিয়েছে। এই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের তদারকি করবে এবং পরবর্তী সরকার শপথ নেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।
প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
১. প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
২. এই সরকারে সর্বোচ্চ ১৫ জন উপদেষ্টা থাকবেন।
৩. প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টারা রাজনৈতিক দল থেকে স্বাধীন থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ সুপারিশগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হলেও এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য হলো জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা।”
সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়াও নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও অন্যান্য সদস্যরা এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন।
এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে একটি আধুনিক, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার আশা করছে কমিশন। সংশোধিত সংবিধান দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংবিধান সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব সংবিধান কমিশনের
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য একাধিক প্রস্তাব পেশ করেছে। এতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের সীমা নির্ধারণ এবং সংসদীয় নির্বাচনের ন্যূনতম বয়স কমানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুধবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবনায় দুটি আইনসভার কক্ষ প্রবর্তনের কথা বলেছে। একটি নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) এবং অন্যটি উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর।
প্রস্তাবিত আইনসভার কাঠামো ও কার্যক্রম :
প্রস্তাবিত নিম্নকক্ষ ৪০০ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এর মধ্যে ৩০০ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং ১০০ জন নারী প্রার্থী দেশব্যাপী পৃথক নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হবেন।
নিম্নকক্ষ নিয়ে আরও সুপারিশ:
১. প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে মোট আসনের ১০ শতাংশ তরুণ প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।
২. নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়সসীমা ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. দুজন ডেপুটি স্পিকার থাকবে, যার একজন বিরোধীদল থেকে মনোনীত হবেন।
৪. সংসদ সদস্যরা অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন।
৫. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধীদলের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবে।
উচ্চকক্ষ ১০৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। ১০০ জন সদস্য প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দলীয় প্রার্থিতা থেকে আসবেন। বাকি পাঁচটি আসন পূরণে রাষ্ট্রপতি অনগ্রসর গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবেন।
উচ্চকক্ষের অন্যান্য সুপারিশ:
১. পিআর পদ্ধতির ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব পেতে দলগুলোকে জাতীয় নির্বাচনে অন্তত ১ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে হবে।
২. উচ্চকক্ষের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার কক্ষের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের সীমা নির্ধারণ :
কমিশন একজন ব্যক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সীমা দুইবার নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এই শর্ত একটানা বা ভিন্ন মেয়াদে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও চার বছরের জন্য সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে হবে, যেখানে আইনসভার উভয় কক্ষ এবং বিভিন্ন স্থানীয় পরিষদের প্রতিনিধিদের ভোট থাকবে।
রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব দিয়েছে। এই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের তদারকি করবে এবং পরবর্তী সরকার শপথ নেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।
প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
১. প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
২. এই সরকারে সর্বোচ্চ ১৫ জন উপদেষ্টা থাকবেন।
৩. প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টারা রাজনৈতিক দল থেকে স্বাধীন থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ সুপারিশগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হলেও এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য হলো জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা।”
সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়াও নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও অন্যান্য সদস্যরা এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন।
এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে একটি আধুনিক, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার আশা করছে কমিশন। সংশোধিত সংবিধান দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।