জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি (চিত্রকর্ম) বাদ দেয়ার প্রতিবাদে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে ওই গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া একটি পক্ষ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এই হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’।
নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। এই গ্রাফিতি সরিয়ে সেখানে নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে, তাতে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘বল বীর/ চির উন্নত/ মম শির’ লেখা রয়েছে।
ওই গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করলে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। একইসময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একই ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়।
এর আগে বুধবার সকালে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা। সমাবেশ শেষে তারা রোকেয়া হল হয়ে কলাভবন ও মধুর ক্যান্টিন প্রদক্ষিণ করে এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যরা বেলা ১১টার দিকেই পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’ সেখানে পৌঁছালে তৈরি হয় উত্তেজনা।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানান, দুই পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকলে সেখানে পুলিশ অবস্থান নেয়। তারপরও দুই পক্ষের মধ্যে এক দফা ‘মারামারি’ হয়।
ওই সময় পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র অবস্থান থেকে একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’র ওপর হামলা চালায় বলে এনসিটিবির ওই কর্মীর দাবি।
তিনি জানান, বেদম পিটুনি খেয়ে আদিবাসী ছাত্র জনতার কর্মসূচিতে অংশগ্রণকারীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যায়। তখন ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যদের লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার সংগঠক অলিক মৃ বলেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তাদের ১১ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির’ আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘উপজাতিদের হামলায়’ স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে জানা গেছে, এনসিটিবির সামনে হমালার ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৯ জনকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ধনজেতরা (২৮), ফুটন্ত চাকমা (২২), অন্তত ধামাই (৩৫), রূপাইয়া ¯্রষ্টো তনচঙ্গা (২৫), ইসাবা শুহরাত (৩২), রেংইয়ং ¤্র (২৭), ডোনাযই ¤্রাে (২৫) ও শৈলী (২৭) ঢাবির শিক্ষার্থী। এছাড়া ডিবিসি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জুয়েলকে (৩৫) আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।
আদিবাসী ছাত্রজনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেয়া শান্তিময় চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবস্থান নেয়ার সময় স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির নামের সংগঠনের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অতর্কিত লাঠি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
এর আগে ‘আদিবাসী ছাত্রজনতার’ সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, ‘একদল বিচ্ছিন্নতাবাদীর চাপে পড়ে তারা সেই গ্রাফিতি মুছে ফেলেছে। আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনসিটিবির কি রাষ্ট্র চালায় নাকি সরকার রাষ্ট্র চালায়? আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের যেমন অধিকার আছে, আমাদেরও সেই অধিকার আছে। কিন্তু উল্টো আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিচ্ছেন তারা।’
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত ওই ‘গ্রাফিতি’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে অলিক মৃ বলেন, ‘এখন থেকে পাঠ্যবইয়ে আদিবাসীদের যথাযথ মর্যাদা থাকতে হবে।’
যদিও ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠার রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত অখ- ভারতের কল্পিত গ্রাফিতিটি বাদ দেয়ায় আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি ছিল।’
জিয়া বলেন, ‘এনসিটিবি আশ্বাস দিয়েছিল আমাদের দাবি মেনে নেবে, তদন্ত কমিটি করবে। এখনও এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা পুনরায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।’
একই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাবি শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বিদেশি প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদের আদিবাসী দাবি করলেও তারা তা নয়। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আমাদের ভুখণ্ডে বাঙালিদের সঙ্গে সহাবস্থান করছে।’
আদিবাসী বলতে ‘আদি বাসিন্দা’ বোঝায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোতে।’
২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয় উল্লেখ করে মুহিউদ্দিন বলেন, ওই ঘোষণাপত্রে এমন কিছু ‘বিতর্কিত অনুচ্ছেদ’ রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আদিবাসী অঞ্চলের ওপর রাষ্ট্রের ‘নিয়ন্ত্রণ ও অখ-তা’ থাকে না।
দেশে কোনো উপজাতীয় আদিবাসী না থাকায় বাংলাদেশ ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ওই ঘোষণাপত্রের একটি অনুচ্ছেদে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আরেকটি অনুচ্ছেদে স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার দেয়া হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার জন্য হুমকি হওয়ায় তারা ‘সংবিধানবিরোধী ওই শব্দ’ পাঠ্যবই থেকে বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ :
এনসিটিবি ভবনের সামনে বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ কমিটির।
বুধবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এনসিটিবি ভবনের সামনে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক সংগঠনের হামলায় বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকরা মারাত্মক আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও অনেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এই ধরণের ‘ন্যাক্কারজনক হামলা’র ঘটনা ঘটত না মন্তব্য করে পোস্টে বলা হয়, ‘মিছিল কিংবা সমাবেশে হামলা পতিত নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদি সংগঠন ছাত্রলীগিয় কায়দার বহিঃপ্রকাশ।’
হামলার সঙ্গে জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে অতি শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি (চিত্রকর্ম) বাদ দেয়ার প্রতিবাদে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে ওই গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া একটি পক্ষ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এই হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’।
নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। এই গ্রাফিতি সরিয়ে সেখানে নতুন গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে, তাতে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘বল বীর/ চির উন্নত/ মম শির’ লেখা রয়েছে।
ওই গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করলে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে গ্রাফিতিটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। একইসময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একই ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়।
এর আগে বুধবার সকালে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা। সমাবেশ শেষে তারা রোকেয়া হল হয়ে কলাভবন ও মধুর ক্যান্টিন প্রদক্ষিণ করে এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যরা বেলা ১১টার দিকেই পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’ সেখানে পৌঁছালে তৈরি হয় উত্তেজনা।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানান, দুই পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকলে সেখানে পুলিশ অবস্থান নেয়। তারপরও দুই পক্ষের মধ্যে এক দফা ‘মারামারি’ হয়।
ওই সময় পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র অবস্থান থেকে একটি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা’র ওপর হামলা চালায় বলে এনসিটিবির ওই কর্মীর দাবি।
তিনি জানান, বেদম পিটুনি খেয়ে আদিবাসী ছাত্র জনতার কর্মসূচিতে অংশগ্রণকারীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যায়। তখন ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যদের লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান করতে দেখা যায়।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার সংগঠক অলিক মৃ বলেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তাদের ১১ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির’ আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘উপজাতিদের হামলায়’ স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে জানা গেছে, এনসিটিবির সামনে হমালার ঘটনায় সাংবাদিকসহ ৯ জনকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ধনজেতরা (২৮), ফুটন্ত চাকমা (২২), অন্তত ধামাই (৩৫), রূপাইয়া ¯্রষ্টো তনচঙ্গা (২৫), ইসাবা শুহরাত (৩২), রেংইয়ং ¤্র (২৭), ডোনাযই ¤্রাে (২৫) ও শৈলী (২৭) ঢাবির শিক্ষার্থী। এছাড়া ডিবিসি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জুয়েলকে (৩৫) আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।
আদিবাসী ছাত্রজনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেয়া শান্তিময় চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবস্থান নেয়ার সময় স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির নামের সংগঠনের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অতর্কিত লাঠি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
এর আগে ‘আদিবাসী ছাত্রজনতার’ সমাবেশে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, ‘একদল বিচ্ছিন্নতাবাদীর চাপে পড়ে তারা সেই গ্রাফিতি মুছে ফেলেছে। আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনসিটিবির কি রাষ্ট্র চালায় নাকি সরকার রাষ্ট্র চালায়? আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের যেমন অধিকার আছে, আমাদেরও সেই অধিকার আছে। কিন্তু উল্টো আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিচ্ছেন তারা।’
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত ওই ‘গ্রাফিতি’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে অলিক মৃ বলেন, ‘এখন থেকে পাঠ্যবইয়ে আদিবাসীদের যথাযথ মর্যাদা থাকতে হবে।’
যদিও ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠার রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত অখ- ভারতের কল্পিত গ্রাফিতিটি বাদ দেয়ায় আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি ছিল।’
জিয়া বলেন, ‘এনসিটিবি আশ্বাস দিয়েছিল আমাদের দাবি মেনে নেবে, তদন্ত কমিটি করবে। এখনও এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা পুনরায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।’
একই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাবি শিক্ষার্থী মুহম্মদ মুহিউদ্দীন রাহাত বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বিদেশি প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে নিজেদের আদিবাসী দাবি করলেও তারা তা নয়। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আমাদের ভুখণ্ডে বাঙালিদের সঙ্গে সহাবস্থান করছে।’
আদিবাসী বলতে ‘আদি বাসিন্দা’ বোঝায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আদি নিবাস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোতে।’
২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয় উল্লেখ করে মুহিউদ্দিন বলেন, ওই ঘোষণাপত্রে এমন কিছু ‘বিতর্কিত অনুচ্ছেদ’ রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে আদিবাসী অঞ্চলের ওপর রাষ্ট্রের ‘নিয়ন্ত্রণ ও অখ-তা’ থাকে না।
দেশে কোনো উপজাতীয় আদিবাসী না থাকায় বাংলাদেশ ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ওই ঘোষণাপত্রের একটি অনুচ্ছেদে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আরেকটি অনুচ্ছেদে স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার দেয়া হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার জন্য হুমকি হওয়ায় তারা ‘সংবিধানবিরোধী ওই শব্দ’ পাঠ্যবই থেকে বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিবাদ :
এনসিটিবি ভবনের সামনে বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ কমিটির।
বুধবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এনসিটিবি ভবনের সামনে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক সংগঠনের হামলায় বিভিন্ন জাতিসত্তার নাগরিকরা মারাত্মক আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও অনেকেই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে এই ধরণের ‘ন্যাক্কারজনক হামলা’র ঘটনা ঘটত না মন্তব্য করে পোস্টে বলা হয়, ‘মিছিল কিংবা সমাবেশে হামলা পতিত নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদি সংগঠন ছাত্রলীগিয় কায়দার বহিঃপ্রকাশ।’
হামলার সঙ্গে জড়িতদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে অতি শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে হবে।’