alt

জাতীয়

ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব নয়: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের চ্যালেঞ্জ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্রের জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ—সবক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা। রাষ্ট্র যদি এই অবস্থান না নেয়, তবে তা অন্য ধর্মাবলম্বীদের আলাদা করে দেবে, যা কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের নীতি হতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সোমবার অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’। দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণধর্মী জার্নাল ‘সর্বজনকথা’।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি ছিল। তিনি বলেন, "ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় এ নীতি মানা হয়নি। কিন্তু এই শব্দটি বাদ দেওয়া হলে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।"

তিনি আরও বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তখন তা একটি বৈষম্যমূলক কাঠামো তৈরি করে। ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাই মুসলমানদের জন্য নিরাপত্তার একটি বড় জায়গা। অথচ বর্তমান বাস্তবতায় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠলেও তা অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।"

আলোচনায় তিনি গণ-অভ্যুত্থানের পর মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আসা সংকটের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, "গণ-অভ্যুত্থানের সময় নারী, পুরুষ, বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষ একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া, সহিংসতা করা এবং ধর্মের নামে দমনমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।"

তিনি আরও যোগ করেন, "গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে গণচৈতন্যের দরকার ছিল, তা এখন অনেকটাই দুর্বল। আন্দোলনের পর এমন কিছু পক্ষ আবির্ভূত হয়েছে, যারা সহিষ্ণুতা নয়, বরং অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে।"

আনু মুহাম্মদ বলেন, "পাকিস্তানের ২২ পরিবারের তুলনায় বাংলাদেশের ২২ পরিবার অনেক বেশি সম্পদশালী হয়ে উঠেছে। অথচ এই লুণ্ঠিত সম্পদ রাষ্ট্রের মালিকানায় আনার উদ্যোগ দেখা যায় না। বরং জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বাড়ানো হচ্ছে।"

তিনি মনে করেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জ্বালানি খাতে নীতিগত পরিবর্তন আনা জরুরি। তবে এই পরিবর্তন আনার পথে অদৃশ্য এক শক্তির প্রভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণে কিছু অদৃশ্য শক্তি কাজ করে, যারা আলোচনার বাইরে থাকে।"

রাজনৈতিক দলের কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, "দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের অবসরের বয়স নির্ধারণ করা উচিত। পাশাপাশি দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটি যেন নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।"

তিনি বলেন, একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল তখনই আদর্শিক হবে, যখন তা সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারবে। এতে নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীসহ সব শ্রেণির মানুষ প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবে।

আলোচনায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির তীব্র সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, "শেখ হাসিনার সরকার যে লুটপাট এবং সম্পদ পাচারের মডেল তৈরি করেছে, তার মূল নীতিনির্ধারক হচ্ছে এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।"

তিনি আরও বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকারও এই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলা হলেও তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকলে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।"

গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের তাগিদ দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, "শিল্প, কৃষি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে যে ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, তা সামগ্রিকভাবে পরিকল্পিত হওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের পথে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে।"

সেমিনারে আরও আলোচকরা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। তবে সবার মূল বক্তব্য ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমতাভিত্তিক নীতি অপরিহার্য।

ছবি

সচিবালয়ের সামনে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের লাঠিপেটা

হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়টি রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

‘ডেভিল হান্টে’র ৫ম দিনে আরও ৫৬৬ জন গ্রেপ্তার

আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, নিশ্চিত হতে আরও তদন্ত প্রয়োজন: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

ছবি

আবারও শাহবাগ অবরোধ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের: জলকামান, লাঠিচার্জেও অনড়, টেনে-হিঁচড়ে সরালো পুলিশ, আটক ১৪

‘মার্চ টু ঢাকা’ ঠেকাতে হাসিনা সরকারের যে পরিকল্পনার কথা জানালো জাতিসংঘ

ছবি

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে আহ্বান এইচআরডব্লিউ’র

ছবি

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর পঞ্চম দিনে গ্রেপ্তার ৫৬৬

ছবি

২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক পোলট্রি মেলা

ছবি

হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে তাগিদ দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত:পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মুখপাত্র

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমিরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

ছবি

১০ মিনিটে অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

দুবাই পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন

ছবি

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখতে হবে: মহিউদ্দিন রুবেল

ঢাকার বাইরেও ‘আয়নাঘর’ আছে, খুঁজে বের করা হবে: প্রেস সচিব

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮০০ কোটি টাকা চাইলো ইসি

ছবি

আওয়ামী লীগ দেশে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা

শেখ হাসিনা, তার সরকার ও দলের শীর্ষদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘প্রমাণ’ পেয়েছে জাতিসংঘ

মৃত্যুদণ্ড থাকলে ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা ‘করবে না’ জাতিসংঘ

ছবি

টর্চার সেলে আটক থাকার কক্ষ শনাক্ত করলেন দুই উপদেষ্টা

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

ছবি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা চাইল ইসি

ছবি

আ. লীগ সরকার সর্বক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠিত করেছিল

হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

বাংলাদেশের জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন: শফিকুল আলম

বিক্ষোভকারীদের দমাতে ‘প্রাণঘাতি বলপ্রয়োগের’ নির্দেশ দেয় সরকার : জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন

ছবি

ডেভিল হান্টে অস্ত্র উদ্ধার ‘আশানুরূপ নয়’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে ড. ইউনূস

ছবি

বইমেলায় হামলা: মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত

ছবি

সংস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন চান প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

সংবিধান সংস্কার কমিশনের জরিপ : ‌নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় ৮৬% মানুষ

ছবি

অপারেশন ডেভিল হান্ট: অভিযানের তৃতীয় দিনে গ্রেপ্তার ৬০৭ জন

গরম শুরুর আগেই আদানির পুরো বিদ্যুৎ চাইছে বাংলাদেশ

ছবি

শহীদ মিনারে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা, দাবি পূরণে ২৪ ঘণ্টা

ছবি

‘ডেভিল হান্টের’ তৃতীয় দিনে হাতিয়ায় গোলাগুলি, বোমা বিস্ফোরণ

tab

জাতীয়

ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব নয়: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের চ্যালেঞ্জ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে রাষ্ট্রের জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ—সবক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা। রাষ্ট্র যদি এই অবস্থান না নেয়, তবে তা অন্য ধর্মাবলম্বীদের আলাদা করে দেবে, যা কোনোভাবেই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের নীতি হতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে সোমবার অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথ: বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সন্ধানে’। দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণধর্মী জার্নাল ‘সর্বজনকথা’।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি ছিল। তিনি বলেন, "ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় এ নীতি মানা হয়নি। কিন্তু এই শব্দটি বাদ দেওয়া হলে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।"

তিনি আরও বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তখন তা একটি বৈষম্যমূলক কাঠামো তৈরি করে। ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাই মুসলমানদের জন্য নিরাপত্তার একটি বড় জায়গা। অথচ বর্তমান বাস্তবতায় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠলেও তা অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।"

আলোচনায় তিনি গণ-অভ্যুত্থানের পর মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আসা সংকটের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, "গণ-অভ্যুত্থানের সময় নারী, পুরুষ, বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষ একসঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া, সহিংসতা করা এবং ধর্মের নামে দমনমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।"

তিনি আরও যোগ করেন, "গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে গণচৈতন্যের দরকার ছিল, তা এখন অনেকটাই দুর্বল। আন্দোলনের পর এমন কিছু পক্ষ আবির্ভূত হয়েছে, যারা সহিষ্ণুতা নয়, বরং অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে।"

আনু মুহাম্মদ বলেন, "পাকিস্তানের ২২ পরিবারের তুলনায় বাংলাদেশের ২২ পরিবার অনেক বেশি সম্পদশালী হয়ে উঠেছে। অথচ এই লুণ্ঠিত সম্পদ রাষ্ট্রের মালিকানায় আনার উদ্যোগ দেখা যায় না। বরং জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বাড়ানো হচ্ছে।"

তিনি মনে করেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জ্বালানি খাতে নীতিগত পরিবর্তন আনা জরুরি। তবে এই পরিবর্তন আনার পথে অদৃশ্য এক শক্তির প্রভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণে কিছু অদৃশ্য শক্তি কাজ করে, যারা আলোচনার বাইরে থাকে।"

রাজনৈতিক দলের কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, "দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের অবসরের বয়স নির্ধারণ করা উচিত। পাশাপাশি দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটি যেন নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।"

তিনি বলেন, একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল তখনই আদর্শিক হবে, যখন তা সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারবে। এতে নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীসহ সব শ্রেণির মানুষ প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবে।

আলোচনায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির তীব্র সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, "শেখ হাসিনার সরকার যে লুটপাট এবং সম্পদ পাচারের মডেল তৈরি করেছে, তার মূল নীতিনির্ধারক হচ্ছে এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।"

তিনি আরও বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকারও এই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলা হলেও তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকলে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।"

গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের তাগিদ দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, "শিল্প, কৃষি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে যে ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, তা সামগ্রিকভাবে পরিকল্পিত হওয়া জরুরি। এই পরিবর্তনের পথে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হবে।"

সেমিনারে আরও আলোচকরা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। তবে সবার মূল বক্তব্য ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমতাভিত্তিক নীতি অপরিহার্য।

back to top