ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সময়কার উচ্চ প্রবৃদ্ধিকে ‘ভুয়া’ দাবি করার পাশাপাশি তার শাসনামল নিয়ে প্রশ্ন না তোলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব একটা তাড়না নেই। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনমান নিয়েই আমার মধ্যে বেশি তাড়না কাজ করে।
“ফলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে আমি এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণের পুরো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।”
নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অনুরোধে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। এর তিন দিন আগে ছাত্র-জনতার তুমুল জনরোষের মুখে পালিয়ে ভারতে চলে যান।
এর আগের দেড় দশকে বাংলাদেশের উন্নয়ন আর অগ্রগতির পেছনে শেখ হাসিনা সরকারের অবদানের কথা বলা হয়েছিল। তার সরকার পতনের পর থেকে পাঁচ মাস ধরে সরকার পরিচালনা করছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডের ডাভোস সফর করছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সম্মেলনের ফাঁকে ‘সুইস আলপাইন’ রিসোর্টে বসে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারটি দেন তিনি।
ইউনূস বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) ডাভোসে এসে সবাইকে সবক দিতেন কীভাবে দেশ চালাতে হয়। কিন্তু কেউ তাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এটা মোটেও ভালো কোনো বৈশ্বিক ব্যবস্থা নয়।
“সব কিছুর জন্য বিশ্বের দায় আছে। তিনি (শেখ হাসিনা) বলতেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ভুয়া প্রবৃদ্ধি; পুরোপুরি ভুয়া।”
কেন ‘ভুয়া’ বলছেন, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি মুহাম্মদ ইউনূস। তবে বৃহত্তর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং সম্পদের বৈষম্য নিরসনে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। এক দশকের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। এরপর কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে।
২০২৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত-বর্ধনশীল একটি দেশ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্বাধীনতার পর অতি দরিদ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পায়।”
এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে; অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ ইউনূস।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কিংবা ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা তার নেই।
রয়টার্স বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিতে ভারতের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে ইউনূস সরকার।
ভারতের দীর্ঘদিনের ‘শত্রু’ চীনকে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস রয়টার্সকে বলেন, দিল্লির সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিষয়টি “আমাকে অনেক কষ্ট দেয়”।
বাংলাদেশের স্থল সীমান্তের প্রায় পুরোটাই ভারত-লাগোয়া মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুই দেশের সম্পর্ক যতটা সম্ভব শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না।”
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সময়কার উচ্চ প্রবৃদ্ধিকে ‘ভুয়া’ দাবি করার পাশাপাশি তার শাসনামল নিয়ে প্রশ্ন না তোলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব একটা তাড়না নেই। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনমান নিয়েই আমার মধ্যে বেশি তাড়না কাজ করে।
“ফলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে আমি এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণের পুরো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।”
নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অনুরোধে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। এর তিন দিন আগে ছাত্র-জনতার তুমুল জনরোষের মুখে পালিয়ে ভারতে চলে যান।
এর আগের দেড় দশকে বাংলাদেশের উন্নয়ন আর অগ্রগতির পেছনে শেখ হাসিনা সরকারের অবদানের কথা বলা হয়েছিল। তার সরকার পতনের পর থেকে পাঁচ মাস ধরে সরকার পরিচালনা করছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডের ডাভোস সফর করছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সম্মেলনের ফাঁকে ‘সুইস আলপাইন’ রিসোর্টে বসে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারটি দেন তিনি।
ইউনূস বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) ডাভোসে এসে সবাইকে সবক দিতেন কীভাবে দেশ চালাতে হয়। কিন্তু কেউ তাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। এটা মোটেও ভালো কোনো বৈশ্বিক ব্যবস্থা নয়।
“সব কিছুর জন্য বিশ্বের দায় আছে। তিনি (শেখ হাসিনা) বলতেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ভুয়া প্রবৃদ্ধি; পুরোপুরি ভুয়া।”
কেন ‘ভুয়া’ বলছেন, সেই ব্যাখ্যা অবশ্য দেননি মুহাম্মদ ইউনূস। তবে বৃহত্তর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং সম্পদের বৈষম্য নিরসনে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৫ শতাংশ। এক দশকের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। এরপর কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমতে থাকে।
২০২৩ সালে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত-বর্ধনশীল একটি দেশ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্বাধীনতার পর অতি দরিদ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পায়।”
এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে; অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ ইউনূস।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কিংবা ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা তার নেই।
রয়টার্স বলছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।
দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিতে ভারতের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে ইউনূস সরকার।
ভারতের দীর্ঘদিনের ‘শত্রু’ চীনকে বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস রয়টার্সকে বলেন, দিল্লির সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিষয়টি “আমাকে অনেক কষ্ট দেয়”।
বাংলাদেশের স্থল সীমান্তের প্রায় পুরোটাই ভারত-লাগোয়া মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুই দেশের সম্পর্ক যতটা সম্ভব শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না।”