কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকেও কোনো সমঝোতা হয়নি। রানিং স্টাফ প্রতিনিধিরা বৈঠক শেষে জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা আরও আলোচনা করবেন, তবে কর্মবিরতি চলবে। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি কর্মবিরতি শুরু করে।
কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা স্টেশনে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম রানিং স্টাফ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকটি দুপুর দেড়টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে শুরু হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে বৈঠক শেষ হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান বলেন, “আমরা দীর্ঘক্ষণ রেল সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে আমাদের কর্মবিরতি চলবে।”
রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম জানান, বিকেলে রেলভবনে আরও একটি বৈঠক হবে। সেখানে পরিস্থিতি নিরসনের চেষ্টা করা হবে।
গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ হিসেবে পরিচিত। সারাদেশে প্রায় ১,৭০০ রানিং স্টাফ কাজ করেন। দৈনিক ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাদের। অতিরিক্ত কাজের জন্য তারা আগে বিশেষ আর্থিক সুবিধা পেতেন, যাকে বলা হয় মাইলেজ।
মাইলেজের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে তারা মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। এর ফলে মাসিক আয় আড়াই থেকে তিন মাসের সমপরিমাণ হয়ে যেত। এ ছাড়া অবসরকালীন ভাতা হিসেবে মূল বেতনের অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ পেতেন।
তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই রানিং স্টাফরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
গত ২২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে রানিং স্টাফরা মাইলেজভিত্তিক পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রে আরোপিত দুটি শর্ত প্রত্যাহারসহ একাধিক দাবি জানান। দাবি পূরণ না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা।
রানিং স্টাফদের অভিযোগ, ২০২২ সালের পর থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য তারা রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না।
২. মাসিক রানিং অ্যালাউন্স মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার সময় সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যা রেলওয়ের প্রচলিত বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, যাত্রীরা আগাম টিকিট কাটলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, রানিং স্টাফদের দাবি পূরণের বিষয়টি অর্থ বিভাগের হাতে। তিনি বলেন, “আমরা অর্থ বিভাগের কাছে বিষয়টি তুলেছি। তাদের কিছু দাবি ইতোমধ্যেই পূরণ করা হয়েছে। বাকিটা নিয়ে আরও আলোচনা চলছে।”
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “রেল কর্মীদের ওভারটাইম সংক্রান্ত যৌক্তিক দাবি আমরা আগেই মেনে নিয়েছি। তবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে সব দাবি একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের চলমান অর্থ সংকট রয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব সুবিধা দিয়েছি। এখন যদি তারা আরও সব দাবি পূরণের কথা বলে, তাহলে আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করতে হবে। মানবিক কারণেও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।”
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রানিং স্টাফদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা হলেও এখন পর্যন্ত অচলাবস্থা নিরসনের কোনো সুনির্দিষ্ট পথ পাওয়া যায়নি। রানিং স্টাফদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করায় সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, যাত্রীরা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। স্টেশনে আসা এক যাত্রী জানান, “টিকিট কেটেও ট্রেন না চলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সমাধান না হলে আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।”
সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে উভয় পক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টাই এ সংকট নিরসনের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি
মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
আন্দোলনরত রানিং স্টাফদের সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকেও কোনো সমঝোতা হয়নি। রানিং স্টাফ প্রতিনিধিরা বৈঠক শেষে জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা আরও আলোচনা করবেন, তবে কর্মবিরতি চলবে। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিকের দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি কর্মবিরতি শুরু করে।
কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আগাম টিকেট কাটা যাত্রীরা স্টেশনে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম রানিং স্টাফ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকটি দুপুর দেড়টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি রুমে শুরু হয়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে বৈঠক শেষ হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান বলেন, “আমরা দীর্ঘক্ষণ রেল সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে আমাদের কর্মবিরতি চলবে।”
রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম জানান, বিকেলে রেলভবনে আরও একটি বৈঠক হবে। সেখানে পরিস্থিতি নিরসনের চেষ্টা করা হবে।
গার্ড, লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ হিসেবে পরিচিত। সারাদেশে প্রায় ১,৭০০ রানিং স্টাফ কাজ করেন। দৈনিক ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাদের। অতিরিক্ত কাজের জন্য তারা আগে বিশেষ আর্থিক সুবিধা পেতেন, যাকে বলা হয় মাইলেজ।
মাইলেজের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে তারা মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। এর ফলে মাসিক আয় আড়াই থেকে তিন মাসের সমপরিমাণ হয়ে যেত। এ ছাড়া অবসরকালীন ভাতা হিসেবে মূল বেতনের অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ পেতেন।
তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই রানিং স্টাফরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
গত ২২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে রানিং স্টাফরা মাইলেজভিত্তিক পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান এবং নিয়োগপত্রে আরোপিত দুটি শর্ত প্রত্যাহারসহ একাধিক দাবি জানান। দাবি পূরণ না হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা।
রানিং স্টাফদের অভিযোগ, ২০২২ সালের পর থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য তারা রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না।
২. মাসিক রানিং অ্যালাউন্স মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার সময় সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যা রেলওয়ের প্রচলিত বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, যাত্রীরা আগাম টিকিট কাটলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, রানিং স্টাফদের দাবি পূরণের বিষয়টি অর্থ বিভাগের হাতে। তিনি বলেন, “আমরা অর্থ বিভাগের কাছে বিষয়টি তুলেছি। তাদের কিছু দাবি ইতোমধ্যেই পূরণ করা হয়েছে। বাকিটা নিয়ে আরও আলোচনা চলছে।”
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “রেল কর্মীদের ওভারটাইম সংক্রান্ত যৌক্তিক দাবি আমরা আগেই মেনে নিয়েছি। তবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে সব দাবি একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের চলমান অর্থ সংকট রয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব সুবিধা দিয়েছি। এখন যদি তারা আরও সব দাবি পূরণের কথা বলে, তাহলে আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করতে হবে। মানবিক কারণেও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।”
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রানিং স্টাফদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা হলেও এখন পর্যন্ত অচলাবস্থা নিরসনের কোনো সুনির্দিষ্ট পথ পাওয়া যায়নি। রানিং স্টাফদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করায় সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, যাত্রীরা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। স্টেশনে আসা এক যাত্রী জানান, “টিকিট কেটেও ট্রেন না চলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত সমাধান না হলে আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।”
সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে উভয় পক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টাই এ সংকট নিরসনের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।