স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, দেশে এখনো বেশিরভাগ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রসবের হার কম। হাসপাতালগুলোর চিত্র উদ্বেগজনক, চিকিৎসক সংকট প্রকট।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ‘গ্রামীণ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দাইমাদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উবিনীগ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আয়োজনে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “মাতৃস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে বেলা ১টা–২টার পর চিকিৎসক পাওয়া যায় না। যেখানে ৫০ জন মায়ের শয্যা রয়েছে, সেখানে ১০০ মাকে রাখা হচ্ছে। এক শয্যায় তিনজন শিশুকে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট প্রচণ্ড। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নেই, অনেকেই দেশে অবস্থান করেন না, পড়াশোনা ও প্রাইভেট প্র্যাকটিসের কারণে বিদেশে চলে যান।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের কাছে এমন কোনো মেকানিজম নেই, যে জাদুবলে পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব। সমস্যা চিনি, কিন্তু সমাধানের হাতিয়ার আমার হাতে নেই। আমি চাইলেই ডাক্তার নিয়োগ দিতে পারব না। তবে কিছু সুপারিশ রেখে যাব, যাতে পরবর্তী সরকার তা গ্রহণ করে।”
প্রসবকালীন জটিলতা ও বিপদ চিহ্নিত করতে দাইমাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, “মায়ের অবস্থা জটিল বুঝতে পারলে দাইমারা যেন প্রসবের চেষ্টা না করে, হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।”
সভায় অংশ নেওয়া দাইমারা জানান, তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে গর্ভকালীন ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রসব করানোর পরিবর্তে মাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা দাইমা মমতাজ বেগম বলেন, “গর্ভবতী মায়ের যদি হঠাৎ রক্তপাত শুরু হয়, মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা দেয়, অতিরিক্ত জ্বর বা খিঁচুনি হয় কিংবা প্রসব বিলম্বিত হয়—এসব বিপদের লক্ষণ হিসেবে শিখেছি। তখন আমরা হাসপাতালে যেতে বলি।”
আলোচনায় বক্তারা জানান, চিকিৎসকেরা অনেক সময় স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা না করে অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন) ব্যবস্থা নেন, যা একদিকে অযাচিত সিজারিয়ান বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে রোগীদের আর্থিকভাবে চাপে ফেলছে।
ওজিএসবি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী বলেন, “গ্রামে ৫৩ শতাংশ প্রসব দাইমাদের হাতে হয়। বাড়িতে প্রসবের ফলে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। ২২ শতাংশ প্রসূতি মা রাস্তায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান। প্রতি ১০০টি স্বাভাবিক প্রসবের মধ্যে ১৫টিতে জটিলতা থাকে। করোনার সময় চিকিৎসকরা না থাকলেও দাইমারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “দাইমাদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো দরকার, যেন তারা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করতে পারেন এবং প্রসবকালীন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরিন বলেন, “প্রসবব্যথা যেকোনো সময় উঠতে পারে, কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক সবসময় পাওয়া যায় না। দাইমারা নিঃস্বার্থভাবে মায়েদের পাশে দাঁড়ান, তাদের অবদানকে অস্বীকার করা যাবে না। তাই দাইমাদের আরও প্রশিক্ষণ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।”
তিনি দাইমাদের জন্য সম্মানী ভাতা চালুর সুপারিশ করেন।
আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সীমু।
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, দেশে এখনো বেশিরভাগ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রসবের হার কম। হাসপাতালগুলোর চিত্র উদ্বেগজনক, চিকিৎসক সংকট প্রকট।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ‘গ্রামীণ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দাইমাদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উবিনীগ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার আয়োজনে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “মাতৃস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে বেলা ১টা–২টার পর চিকিৎসক পাওয়া যায় না। যেখানে ৫০ জন মায়ের শয্যা রয়েছে, সেখানে ১০০ মাকে রাখা হচ্ছে। এক শয্যায় তিনজন শিশুকে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট প্রচণ্ড। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নেই, অনেকেই দেশে অবস্থান করেন না, পড়াশোনা ও প্রাইভেট প্র্যাকটিসের কারণে বিদেশে চলে যান।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের কাছে এমন কোনো মেকানিজম নেই, যে জাদুবলে পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব। সমস্যা চিনি, কিন্তু সমাধানের হাতিয়ার আমার হাতে নেই। আমি চাইলেই ডাক্তার নিয়োগ দিতে পারব না। তবে কিছু সুপারিশ রেখে যাব, যাতে পরবর্তী সরকার তা গ্রহণ করে।”
প্রসবকালীন জটিলতা ও বিপদ চিহ্নিত করতে দাইমাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, “মায়ের অবস্থা জটিল বুঝতে পারলে দাইমারা যেন প্রসবের চেষ্টা না করে, হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।”
সভায় অংশ নেওয়া দাইমারা জানান, তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে গর্ভকালীন ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রসব করানোর পরিবর্তে মাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা দাইমা মমতাজ বেগম বলেন, “গর্ভবতী মায়ের যদি হঠাৎ রক্তপাত শুরু হয়, মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা দেয়, অতিরিক্ত জ্বর বা খিঁচুনি হয় কিংবা প্রসব বিলম্বিত হয়—এসব বিপদের লক্ষণ হিসেবে শিখেছি। তখন আমরা হাসপাতালে যেতে বলি।”
আলোচনায় বক্তারা জানান, চিকিৎসকেরা অনেক সময় স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা না করে অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন) ব্যবস্থা নেন, যা একদিকে অযাচিত সিজারিয়ান বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে রোগীদের আর্থিকভাবে চাপে ফেলছে।
ওজিএসবি’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী বলেন, “গ্রামে ৫৩ শতাংশ প্রসব দাইমাদের হাতে হয়। বাড়িতে প্রসবের ফলে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। ২২ শতাংশ প্রসূতি মা রাস্তায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান। প্রতি ১০০টি স্বাভাবিক প্রসবের মধ্যে ১৫টিতে জটিলতা থাকে। করোনার সময় চিকিৎসকরা না থাকলেও দাইমারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “দাইমাদের প্রশিক্ষণ বাড়ানো দরকার, যেন তারা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করতে পারেন এবং প্রসবকালীন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরিন বলেন, “প্রসবব্যথা যেকোনো সময় উঠতে পারে, কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক সবসময় পাওয়া যায় না। দাইমারা নিঃস্বার্থভাবে মায়েদের পাশে দাঁড়ান, তাদের অবদানকে অস্বীকার করা যাবে না। তাই দাইমাদের আরও প্রশিক্ষণ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।”
তিনি দাইমাদের জন্য সম্মানী ভাতা চালুর সুপারিশ করেন।
আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার পরিচালক সীমা দাস সীমু।