রাজনীতি করতে হলে আওয়ামী লীগকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘ভালোভাবে’ ক্ষমা চাইতে হবে এবং ‘ক্লিন (পরিচ্ছন্ন)’ নেতৃত্ব আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। বিচার ও ক্ষমা চাওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে দেশে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হবে না। গত বুধবার বিকেলে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব এটাও বলেন যে, ‘আওয়ামী লীগের কেউ তো এসে বলছে না যে তারা হাসিনার নেতৃত্ব মানেন না বা তারা ক্লিন লিডারশিপ চান।’

আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজে ঘোষিত হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান জানতে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।

জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের টপ লিডারশিপ জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) রিপোর্টের ১৭তম পাতায় আছে, শেখ হাসিনা নিজেই ডাইরেক্টলি অর্ডার দিয়েছে গুম ও কিলিংয়ের। তারা (এইচআরডব্লিউ) অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং অফিসাররা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে। এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড হলো আমাদের চোখের সামনে। কত ছেলে নিহত হলো, কত ছেলে চোখ হারালো, অঙ্গ হারালো। কিন্তু তাদের কোনো অনুশোচনা নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) আবার বলছে, ৩ হাজার পুলিশ মারা গেছে। কতবড় জালিয়াতি, মিথ্যা কথা।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে যতদিন না তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমা চাচ্ছে, যতদিন না তাদের লিডারশিপকে ট্রায়ালের মধ্যে আনা হচ্ছে, যতদিন না তারা সাবমিটেড টু জাস্টিস, যতদিন না তারা অ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে আসছে। ততদিন তাদের প্রটেস্ট করতে দেয়া হবে না। তাদের আগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান, তাদের আগে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

*পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব*
আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে খুব ভালোভাবে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাদের একটা ‘ক্লিন (পরিচ্ছন্ন)’ নেতৃত্ব আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা ক্লিন আছে বা যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত না, তাদেরও তো দেখা যাচ্ছে না যে তারা অনুতপ্ত বা তারাও ক্ষমা চাননি। আওয়ামী লীগের কেউ এসেও তো বলছে না যে তারা হাসিনার নেতৃত্ব মানেন না বা তারা ক্লিন লিডারশিপ চান। কে এসে অনুতপ্ত হচ্ছে?’

*ভোট সংস্কারের পর*
নির্বাচন বিলম্ব করলে অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহম্মেদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট দুইটা ডেট দিয়েছি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট চূড়ান্ত হবে। তারপরই সংস্কারের কাজ শুরু হবে। যদি নূন্যতম সংস্কার হয় তাহলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আর যদি আরেকটু বেশি সংস্কারের দরকার হয় তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটি সরকারপ্রধান নিজেও বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। তবে ভোটের তারিখ কবে হবে সেটি নির্ভর করবে সংস্কারের ওপর।’

নির্বাচন কবে হবে, এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘এর বাইরে আর কী বলবো। আমি ১৩৩তম বার এটা বললাম।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশ চালানো যাচ্ছে না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রেস সচিব জানান, গত ছয় মাস দেশ খুবই ভাল ভাবেই সামাল দেয়া হচ্ছে। আপনি এই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন? এখন নুরুল হক নুর জাতীয় নেতা হয়ে গেছেন। উনি অনেক কথা বলছেন। তার সমর্থকদের জন্য তো উনি কথা বলবেনই। আমরা তার কথাকে সম্মান জানাই। কিন্তু আপনি গত ছয় মাসের রিপোর্ট কার্ড দেখেন। আমি তো বলবো ব্রিলিয়েন্ট।’

অতিবাহিত হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই।

*অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড*
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘দ্রুতই নতুন নীতিমালা অনুযায়ী কার্ড দেয়া হবে। এর আগ পর্যন্ত বিদ্যমান কার্ড চালু থাকবে।’

নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নীতিমালায় বিভিন্ন ধারা পরিবর্তন হবে উল্লেখ করে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘নতুন নীতিমালায় স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো কার্ড হবে না। কার্ডের মেয়াদ হবে তিন বছর। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু হলেই তার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হবে না, অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বাতিল হবে।’

তিনি বলেন, ‘পত্রিকার সার্কুলেশন অনুযায়ী কার্ড দেয়া হত, তাও ওঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর ভিত্তি করে কার্ড দেয়া হবে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত হলে রিভিউ আবেদন দেখা হবে।’

*নারী ফুটবল*
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারি ‘তৌহিদী জনতা’র সঙ্গে আয়োজক কমিটির সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার পর টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় নারী ফুটবল খেলা বন্ধ করতে মাঠে দেয়া টিনের বেড়া ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে একদল লোকের বিরুদ্ধে।

এই দুই ঘটনা প্রসঙ্গে উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘মেয়েদের ফুটবল খেলাকে প্রমোট করতে চায় এই সরকার। ওই ঘটনাকে সরকার খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে। ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান চায় সরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নারী ফুটবল দল আমাদের গর্ব। তারা সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী ফুটবল দলকে কীভাবে উজ্জীবিত করা যায় তা নিয়েও সরকার কাজ করছে।’

*সাত কলেজ*
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সরকারি সাত কলেজ বের হওয়ার ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা কাজ করছেন বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুতই আপনারা রেজাল্ট পাবেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।’

ব্রিফিংয়ে সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।