তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে যে খবর ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এখনও এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি এবং এটি একটি গুজব হতে পারে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকায় তথ্য ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম জানান, তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকায় এই খবর দেখে অবগত হয়েছেন, তবে তার জানামতে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরো বলেন, যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

নাহিদ বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে, পত্রিকাতে এটা আসলে কোন উৎস থেকে বলা হয়েছে, সেটা তো পরিষ্কার করে নাই। আর এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি এবং রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করার পরিস্থিতি হলে আনুষ্ঠানিকভাবে বলব। এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমার জায়গা থেকে বা আসিফের জায়গা থেকে যতটুকু জানি হয়নি।”

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণ দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও আসছে জুনে পদত্যাগ করতে পারেন। এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

নাহিদ ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “আমরা তো সরকারের কার্যক্রমই করছি। এই আলাপটা আসছিল যখন আসলে বলা হচ্ছিল সরকারে থেকে রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করতে। তখন আমি বলেছিলাম কথার পরিপ্রেক্ষিতে, নতুন রাজনৈতিক দল হোক বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বলুক, আমরা সরকারে থাকা অবস্থায় সেটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হব না।”

এক প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বলেন, “বিচার চলমান থাকায় এ বিষয়ে সরকার এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। বিচার কার্যক্রমটা আগে দেখতে চাই, আদালত কী বলে বা বিচার কার্যক্রমে কতটুকু আগায়।”

তিনি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তার মতামতও প্রকাশ করেন। নাহিদ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার বিষয় আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ছাত্ররাও বলেছে—আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে যে ফ্যাসিজম করেছে, জুলাইয়ে যে গণহত্যা করেছে, তারপর আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার অধিকার নাই। আওয়ামী লীগ ব্যানারে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ নাই সেটা আমরা মনে করি।”

এছাড়াও, নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান এবং সেখানে থাকছেন। এ সময়ের মধ্যে জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ এবং গুমের অভিযোগ উঠেছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এই প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা সরকারের কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, তা সরকারের সিদ্ধান্ত হতে হবে এবং বিচার কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হলেও, সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে নাহিদ ইসলাম এ বিষয়ে তার মতামত স্পষ্ট করে জানিয়েছেন এবং বলেছেন, যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।