রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে ‘স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে’ রূপান্তরের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। দুপুর ১২টার দিকে পুরো সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়েন। অনেককে ব্যানার হাতে সড়কে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

গতকাল ছিল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মহাখালী, গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেইট ও মগবাজার এলাকায় তৈরি হয় তীব্র যানজট। অনেককে গণপরিবহন থেকে নেমে পায়ে হেটে চলাচল করতে দেখা গেছে।

বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন এই অবরোধের ফলে মহাখালী ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা, পথচারীরা ও অফিসগামী লোকজন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাখালী, মগবাজার থেকে গুলশান-বনানী সড়কে যানবাহনে অপেক্ষায় থাকতে হয়। দূরের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মালামাল, ব্যাগপত্র নিয়ে বাসে বা পরিবহনে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ব্যবসায়িক কাজে পুরানা পল্টন মোড় থেকে বাসে বেলা ১১টার দিকে রওনা হন মহাখালীর দিকে। তিনি গন্তব্যস্থলে পৌঁছান বিকাল ৩টার দিকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার ব্যবসায়িক ‘পার্টনার’ যানজটের কারণে তার অফিসে পৌঁছাতে পারেনি। এভাবে এদিন ওইসব এলাকায় যাতায়াতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষজনকে। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরসহ সাত দাবিতে পাঁচ শিক্ষার্থীর অনশনের মধ্যে বৃহস্পতিবার ৩০শে জানুয়ারি মহাখালী-গুলশান সড়ক আটকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

আন্দোলনকারীদের একজন আলী আহমদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তাদের পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় ‘রূপান্তরের’ দাবিতে অনশনে ছিলেন। ক্যাম্পাস ‘শাটডাউন’ থাকার পরও অধ্যক্ষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। অনশনকারীরা অসুস্থ হওয়ার পরও অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। ‘উল্টো’ শিক্ষার্থীদের দিকে মাইক দিয়ে ‘গান-বাজনা’ চালাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সড়ক অবরোধ করেন বলেও ওই শিক্ষার্থী জানান।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। এভাবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট করবে; আর সরকার বা শিক্ষা প্রশাসন নিশ্চুপ বসে বসে তা দেখবে সেটি চলতে পারে না। তাদের জন্য আমরা সাধারণ মানুষজন কেনো দুর্ভোগ পোহাবো?’

ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সাংবাদিকদের বলেন, তারা উত্তরা থেকে আসা যানবাহনগুলো ফ্লাইওভার দিয়ে ‘পাস’ করার চেষ্টা করছেন। বিপরীত দিকের গাড়িগুলোকেও বনানীর দিকে পাঠিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।

ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, তিতুমীর কলেজের আন্দোলনেরর ‘প্রভাব’ পড়েছে পুরো মহাখালী, তেজগাঁও এলাকায়। সড়কে গাড়ি ‘খুব স্লো পাস’ হচ্ছে; এতে ‘তীব্র জটলা’ তৈরি হয়েছে।

পুলিশ মহাখালী এলাকার সঙ্গে ‘সমন্বয়’ করে ‘রেগুলার ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল’ রাখার চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে, তাদের সেদিক দিয়ে পাস করে দেয়ার চেষ্টা করছি। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি।’

বুধবার ২৯শে জানুয়ারি বিকেল ৫টার পর থেকে কলেজটির মূল ফটকের সামনে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ ব্যানারে অনশন শুরু করেন কলেজটির একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা সাত দফা দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম তিতুমীর ঐক্যের সাত দফা দাবিগুলো হলো- তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা। শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ‘নতুবা’ অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন ও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নূন্যতম দুটি বিষয় ‘ল’ এবং ‘জার্নালিজম’ সাবজেক্ট সংযোজন করা।

এছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে দিকে ঢাকার শনিরআখড়া-যাত্রাবাড়ী এলাকার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক্ষার্থীরাও প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামগামী মহাসড়কেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারি সন্ধ্যায় দনিয়া কলেজের সামনে মিনহাজুল ইসলাম নামে এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।