নির্বাচন সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনা করে এবার নিজেরাই প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব তৈরির কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকা আইন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালার মতো বিষয় পর্যালোচনা করছে তারা। পর্যালোচনা শেষে বিদ্যমান ‘জটিলতা’ দূর করতে সরকারের কাছে ইসি কিছু আইন সংস্কারের জন্য সংশোধন প্রস্তাব পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক আইন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সীমানা নির্ধারণ করতে চাচ্ছি ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান ও সবশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।’ গতকাল নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের তৃতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও ছিলেন।
সভায় সীমানা নির্ধারণ আইনের পাশাপাশি ভোটার তালিকা আইন ও পর্যবেক্ষণ নীতিমালাসহ ১১টি বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় ‘কয়েকটি’ কমিটিও গঠন হয়। ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, তাদেরকে আগামী সভায় নিজেদের প্রস্তুতি তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
সভা শেষে ইসি সানাউল্লাহ সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১ নিয়ে আলোচনা করেছি। জানতে পেরেছি বর্তমান আইনে দুটি বিষয় মূলত সমস্যা সৃষ্টি করছে। তার একটি হলো, জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে এই সীমানা নির্ধারণটি করা হয়েছে। আমরা যেটা প্রস্তাব করতে চাচ্ছি, সেটি হলো ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এটাকে শুধু জনসংখ্যার ওপর অথবা জনশুমারির ওপর রাখলে দেখা যাবে শহরের দিকের আসন সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকবে এবং অন্য এলাকাগুলোর আসন সংখ্যা কমে যাবে এতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না বলে কমিশন মনে করে।’
সংসদীয় আসনের সীমানা সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি আরও জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৪১টি সংসদীয় আসনে ২৪৮টি সীমানা সংক্রান্ত আবেদন এসেছে। যার বেশির ভাগই আগের সীমানা ফিরে পেতে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করছি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
অন্য সমস্যা ‘সংসদীয় আসনের সীমা নির্ধারণ আইন-২০২১’ এর একটি উপধারা। এই উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এ আইনের একটি উপধারা রয়েছে, সেই উপধারায় একটি টাইপিং মিস্টেক আছে। আমাদের কাছে তাই মনে হচ্ছে এবং আমরা আমাদের রেকর্ডের দিক থেকে এমনটাই পেয়েছি। উপধারা ২-কে ধারণ করে উপধারা-৩ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল আমাদের এখান থেকে। সেখানে টাইপিং মিস্টেকের কারণে সম্ভবত এখানে উপধারা এক হয়ে গিয়েছে, ফলে যেটা দাঁড়িয়েছে যে নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারবে না। আসলে সেটা হওয়ার কথা নয়। আমরা সমস্যাটি তুলে ধরে সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করব।’
সীমানা নির্ধারণ আইনের বিষয়ে ইসি সুপারিশ আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের কমিশনে আসুক, তারপর কমিশন মনে করলে পাঠাবে।’
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে ইসির আইন সংশোধন প্রস্তাব কোনো জটিলতা তৈরি করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকেও কোনো ইনপুট দেয়া হলে সেটা আরো কাজে দেবে। এখানে বিরোধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
‘সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে না’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করছি, আমাদের দ্রুত এটা প্রয়োজন। আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। সংস্কারটা জনগণের দাবি। আমরাও এর বাইরে নই।’
জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩০টি আসনে ব্যাপক রদবদল এনেছিল বিগত ড. এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন। এরপর তার আমলের আসন বহাল রেখে টুকটাক বিন্যাস করে দায়িত্ব শেষ করে নির্বাচন আয়োজনকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। তবে, নতুন কমিশন গঠনের পর ২০০৮ সালের আগের সীমানা ফেরত দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
নির্বাচন সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনা করে এবার নিজেরাই প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব তৈরির কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকা আইন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালার মতো বিষয় পর্যালোচনা করছে তারা। পর্যালোচনা শেষে বিদ্যমান ‘জটিলতা’ দূর করতে সরকারের কাছে ইসি কিছু আইন সংস্কারের জন্য সংশোধন প্রস্তাব পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক আইন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সীমানা নির্ধারণ করতে চাচ্ছি ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান ও সবশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।’ গতকাল নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের তৃতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও ছিলেন।
সভায় সীমানা নির্ধারণ আইনের পাশাপাশি ভোটার তালিকা আইন ও পর্যবেক্ষণ নীতিমালাসহ ১১টি বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় ‘কয়েকটি’ কমিটিও গঠন হয়। ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের প্রস্তাব তৈরির জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, তাদেরকে আগামী সভায় নিজেদের প্রস্তুতি তুলে ধরতে বলা হয়েছে।
সভা শেষে ইসি সানাউল্লাহ সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১ নিয়ে আলোচনা করেছি। জানতে পেরেছি বর্তমান আইনে দুটি বিষয় মূলত সমস্যা সৃষ্টি করছে। তার একটি হলো, জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে এই সীমানা নির্ধারণটি করা হয়েছে। আমরা যেটা প্রস্তাব করতে চাচ্ছি, সেটি হলো ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এটাকে শুধু জনসংখ্যার ওপর অথবা জনশুমারির ওপর রাখলে দেখা যাবে শহরের দিকের আসন সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকবে এবং অন্য এলাকাগুলোর আসন সংখ্যা কমে যাবে এতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না বলে কমিশন মনে করে।’
সংসদীয় আসনের সীমানা সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি আরও জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৪১টি সংসদীয় আসনে ২৪৮টি সীমানা সংক্রান্ত আবেদন এসেছে। যার বেশির ভাগই আগের সীমানা ফিরে পেতে। আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করছি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
অন্য সমস্যা ‘সংসদীয় আসনের সীমা নির্ধারণ আইন-২০২১’ এর একটি উপধারা। এই উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে বলে জানান ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এ আইনের একটি উপধারা রয়েছে, সেই উপধারায় একটি টাইপিং মিস্টেক আছে। আমাদের কাছে তাই মনে হচ্ছে এবং আমরা আমাদের রেকর্ডের দিক থেকে এমনটাই পেয়েছি। উপধারা ২-কে ধারণ করে উপধারা-৩ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল আমাদের এখান থেকে। সেখানে টাইপিং মিস্টেকের কারণে সম্ভবত এখানে উপধারা এক হয়ে গিয়েছে, ফলে যেটা দাঁড়িয়েছে যে নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারবে না। আসলে সেটা হওয়ার কথা নয়। আমরা সমস্যাটি তুলে ধরে সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করব।’
সীমানা নির্ধারণ আইনের বিষয়ে ইসি সুপারিশ আকারে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের কমিশনে আসুক, তারপর কমিশন মনে করলে পাঠাবে।’
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে ইসির আইন সংশোধন প্রস্তাব কোনো জটিলতা তৈরি করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকেও কোনো ইনপুট দেয়া হলে সেটা আরো কাজে দেবে। এখানে বিরোধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
‘সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে না’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা করছি, আমাদের দ্রুত এটা প্রয়োজন। আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। সংস্কারটা জনগণের দাবি। আমরাও এর বাইরে নই।’
জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩০টি আসনে ব্যাপক রদবদল এনেছিল বিগত ড. এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন। এরপর তার আমলের আসন বহাল রেখে টুকটাক বিন্যাস করে দায়িত্ব শেষ করে নির্বাচন আয়োজনকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। তবে, নতুন কমিশন গঠনের পর ২০০৮ সালের আগের সীমানা ফেরত দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।