চালের চালবাজির আর শেষ নাই। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। একমাসে জাতভেদে বস্তায় বেড়েছে তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে কয়েক দফায় চাল আমদানির পরও কমেনি দাম। এতে বিপাকে পড়ে ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার-পাঁচদিন ধরে চালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থির।
জীবন-জিবিকা নিয়ে ৩১ জানুয়ারি রাজধানির পুরানা পল্টনে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মী মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এ মাসে এখনও বেতন পাইনি, কবে পাবো জানি না। তাই বাসা ভাড়াও দিতে পারি নাই। এদিকে কার্ডে তেমন আর বিদ্যুৎ নাই, যে কোনো সময় লাইন কেটে যেতে পারে। বাসায় চাল নাই, বাজারও করতে পারছি না।’
সর্বশেষ চাল কিনেছেন কবে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দশদিন আগে। তার আগেই ২৫ কেজি ওজনের যে মিনিকেট চালের বস্তা কিনতাম ১৬০০ টাকায় সেই চালের বস্তা এখন ২১০০ টাকা। দাম বাড়ার তখন আর বস্তা কিনতে পারি নাই, তাই ১০ কেজি কিনেছিলাম।’
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে ও স্থানভেদে শুক্রবার খুচরায় মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এছাড়া বিআর আটশ জাতের চাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা আর স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়।
চালের দরদাম-বেচাবিক্রি নিয়ে শুক্রবার কথা হয় রাজধানী মহাখালি কাঁচাবাজারের ‘মেসার্স মানিক ট্রেডাসের স্বত্তাধিকারী মানিক’র সঙ্গে। আমদানির পরও চালের দাম কমছে না কেন, আপনি কী মনে করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ চালের দাম কমলে আমাদের ব্যবসা ভালো থাকে, বাড়লে থাকে না।’ দাম বাড়লে কী মানুষ কম খায়? জবাবে তিনি বলেন, ‘কম খায়, মানুষের অবস্থা এমনিই ভালো না। তার ওপর চালের দাম যে বাড়ছে! সিজনের সময় চালের দাম কমবো, না কমে উল্টা পার বস্তায় বাইরা গেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।’
এই বাজারেই মানিকের একটা দোকান পরেই চাল বিক্রি করছেন মো. ফিরোজ আলম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কিল খাই আমরা, গুতা খাই আমরা জরিমানা দেই আমরা আর মাল কামায় আড়তদারা ।’ ‘মোটা স্বর্ণা চাল খুচরায় কেজি ৫৮ টাকা আর বেশি নিলে ৫৬ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান ফিরোজ।
ফিরোজ আলমের সঙ্গে যখন এ প্রতিবেদকের কথা চলছিল তখন পাশের আরেক খুচরা চাল বিক্রেতা সোলায়মান ক্ষোভ ঝাড়েন। বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে ম্যাজিস্টেট আয়ে, পুলিশ আয়ে আনসার লয়ে আনে জরিমানা করে আমাদের। আরে ব্যাটা জরিমানা কর গিয়ে মিল-এ, জরিমানা কর গিয়ে আড়তদাররে, যাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। আমরা ..চাল বেঁচি না, দশহাজার টাকা জরিমানা অক্ষনে দেওয়ান লাগিবো, না দিলে দোকান..।’
পাশের আরেক দোকানিকে দেখিয়ে সোলায়মান বলেন, ‘এই মিয়া ময়মনসিংহ থেকে এক বস্তা লাল চাল নিয়া আইছে। এক বস্তা তো চালের স্লিপ থাকে না। একবস্তা চাল কিনে এখানে থুয়ে দিছে (দোকানে রাখছে)। এখন হ্যারা (ম্যাজিস্টেট) কয় কতো করে বেঁচো, দাম কতো, স্লিপ দেও। ..বললো এটার তো আর
স্লিপ নাই, এটা তো কোম্পানির মাল না। মানলোই না ৫টা হাজার টাকা জরিমান নিছে। এটা কি ঠিক, না জুলুম, কন? ৫ হাজার টাকা খারাত থেকে দেয়া লাগছে। কতা কইলে ১০ হাজার হইতো। আল্লাহপাক ক্ষমতা হেগোরে দিছে। এডাই হলো দুঃখ।’
তিনি বলেন, ‘মেইলে যাও কতো পরতাছে..। দেশ বাঁচাতে হলে কতো টাকা রেট ফেলাইতে হবে ওইগুলি মনিটরিং করো। ..মনিটরিং করে মহাখালি বাজারে। ...দোয়া কি এমনি আয়ে...।’ ‘ ঠ্যাক খায়া (দাম বেড়ে) ৪-৫দিন ধরে দাম এক জায়গায় আছে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে সব চালে বস্তাতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়ছে বলে জানান তিনি।
সবজির দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে এই বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল সংবাদকে বলেন, ‘ গরমের সবজির দাম বেশি, শীতের সবজির দাম কম। শীতের সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর গরমের সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। বেশী দামের মধ্যে বরবটি কেজি ১০০ টাকা, ভেন্ডি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, উসতা (আকারে ছোট জাতের করলা) ১০০ টাকা মটরশুটি ১২০ টাকা। আর কম দামের মধ্যে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা সিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুল কপি ১ পিস ২৫ থেকে ৩০, পেপে কেজি ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা।’
এ বাজারে দেশি পুটি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এছাড়া কাচকি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২১, তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৪০ রুই ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এছাড়া বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রংয়ের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা আর হাঁসের ডিমের ডজন ২৪০ টাকায়। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা আর গরুর মাংস ৭৫০ টাকায়। এ বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মুসা জানান, ‘বেচা বিক্রি আগের থেকে অনেক কমছে।’
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
চালের চালবাজির আর শেষ নাই। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। একমাসে জাতভেদে বস্তায় বেড়েছে তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে কয়েক দফায় চাল আমদানির পরও কমেনি দাম। এতে বিপাকে পড়ে ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার-পাঁচদিন ধরে চালের বাজার উচ্চমূল্যে স্থির।
জীবন-জিবিকা নিয়ে ৩১ জানুয়ারি রাজধানির পুরানা পল্টনে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মী মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এ মাসে এখনও বেতন পাইনি, কবে পাবো জানি না। তাই বাসা ভাড়াও দিতে পারি নাই। এদিকে কার্ডে তেমন আর বিদ্যুৎ নাই, যে কোনো সময় লাইন কেটে যেতে পারে। বাসায় চাল নাই, বাজারও করতে পারছি না।’
সর্বশেষ চাল কিনেছেন কবে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দশদিন আগে। তার আগেই ২৫ কেজি ওজনের যে মিনিকেট চালের বস্তা কিনতাম ১৬০০ টাকায় সেই চালের বস্তা এখন ২১০০ টাকা। দাম বাড়ার তখন আর বস্তা কিনতে পারি নাই, তাই ১০ কেজি কিনেছিলাম।’
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে ও স্থানভেদে শুক্রবার খুচরায় মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এছাড়া বিআর আটশ জাতের চাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা আর স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়।
চালের দরদাম-বেচাবিক্রি নিয়ে শুক্রবার কথা হয় রাজধানী মহাখালি কাঁচাবাজারের ‘মেসার্স মানিক ট্রেডাসের স্বত্তাধিকারী মানিক’র সঙ্গে। আমদানির পরও চালের দাম কমছে না কেন, আপনি কী মনে করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ চালের দাম কমলে আমাদের ব্যবসা ভালো থাকে, বাড়লে থাকে না।’ দাম বাড়লে কী মানুষ কম খায়? জবাবে তিনি বলেন, ‘কম খায়, মানুষের অবস্থা এমনিই ভালো না। তার ওপর চালের দাম যে বাড়ছে! সিজনের সময় চালের দাম কমবো, না কমে উল্টা পার বস্তায় বাইরা গেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।’
এই বাজারেই মানিকের একটা দোকান পরেই চাল বিক্রি করছেন মো. ফিরোজ আলম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কিল খাই আমরা, গুতা খাই আমরা জরিমানা দেই আমরা আর মাল কামায় আড়তদারা ।’ ‘মোটা স্বর্ণা চাল খুচরায় কেজি ৫৮ টাকা আর বেশি নিলে ৫৬ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান ফিরোজ।
ফিরোজ আলমের সঙ্গে যখন এ প্রতিবেদকের কথা চলছিল তখন পাশের আরেক খুচরা চাল বিক্রেতা সোলায়মান ক্ষোভ ঝাড়েন। বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে ম্যাজিস্টেট আয়ে, পুলিশ আয়ে আনসার লয়ে আনে জরিমানা করে আমাদের। আরে ব্যাটা জরিমানা কর গিয়ে মিল-এ, জরিমানা কর গিয়ে আড়তদাররে, যাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। আমরা ..চাল বেঁচি না, দশহাজার টাকা জরিমানা অক্ষনে দেওয়ান লাগিবো, না দিলে দোকান..।’
পাশের আরেক দোকানিকে দেখিয়ে সোলায়মান বলেন, ‘এই মিয়া ময়মনসিংহ থেকে এক বস্তা লাল চাল নিয়া আইছে। এক বস্তা তো চালের স্লিপ থাকে না। একবস্তা চাল কিনে এখানে থুয়ে দিছে (দোকানে রাখছে)। এখন হ্যারা (ম্যাজিস্টেট) কয় কতো করে বেঁচো, দাম কতো, স্লিপ দেও। ..বললো এটার তো আর
স্লিপ নাই, এটা তো কোম্পানির মাল না। মানলোই না ৫টা হাজার টাকা জরিমান নিছে। এটা কি ঠিক, না জুলুম, কন? ৫ হাজার টাকা খারাত থেকে দেয়া লাগছে। কতা কইলে ১০ হাজার হইতো। আল্লাহপাক ক্ষমতা হেগোরে দিছে। এডাই হলো দুঃখ।’
তিনি বলেন, ‘মেইলে যাও কতো পরতাছে..। দেশ বাঁচাতে হলে কতো টাকা রেট ফেলাইতে হবে ওইগুলি মনিটরিং করো। ..মনিটরিং করে মহাখালি বাজারে। ...দোয়া কি এমনি আয়ে...।’ ‘ ঠ্যাক খায়া (দাম বেড়ে) ৪-৫দিন ধরে দাম এক জায়গায় আছে। ২০-২৫ দিনের মধ্যে সব চালে বস্তাতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়ছে বলে জানান তিনি।
সবজির দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে এই বাজারের সবজি বিক্রেতা এনামুল সংবাদকে বলেন, ‘ গরমের সবজির দাম বেশি, শীতের সবজির দাম কম। শীতের সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা আর গরমের সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। বেশী দামের মধ্যে বরবটি কেজি ১০০ টাকা, ভেন্ডি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, উসতা (আকারে ছোট জাতের করলা) ১০০ টাকা মটরশুটি ১২০ টাকা। আর কম দামের মধ্যে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা সিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুল কপি ১ পিস ২৫ থেকে ৩০, পেপে কেজি ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা।’
এ বাজারে দেশি পুটি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এছাড়া কাচকি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২১, তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৪০ রুই ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এছাড়া বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রংয়ের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা আর হাঁসের ডিমের ডজন ২৪০ টাকায়। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা আর গরুর মাংস ৭৫০ টাকায়। এ বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মুসা জানান, ‘বেচা বিক্রি আগের থেকে অনেক কমছে।’