আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, এনসিটিবির সামনে আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও অধিকার কর্মীদের উপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পুনর্বহালসহ ১২টি দাবি তুলেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক গণসমাবেশে এসব দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি।
সমাবেশে বক্তারা বিভিন্ন মাজার, সুফি-বাউল, নারীদের ওপর হামলা, নারী তারকাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে বাধা, নারী ফুটবল আয়োজনে বাধার ঘটনাও তুলে ধরে ধরেন।
তারা বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্দোলনের ফসল। হামলাকারীদের দমন করার বদলে সরকার নিন্দা জানাচ্ছে।
১৫ জানুয়ারি পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সংগঠনে নেতাকর্মীরা পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ওপর হামলা চালায় ওই চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া অন্যপক্ষ।
হামলার প্রতিবাদে পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘ঘেরাও’ করতে গেলে শিক্ষা ভবনের সামনে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর জলকামান থেকে পানি ছুঁড়ে ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এ বিষয়টি তুলে ধরে গণসামবেশে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জনআকাঙ্খা দেয়ালে ফুটে উঠেছিল গ্রাফিতির মাধ্যমে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাথে বেইমানি করে দেয়ালের গ্রাফিতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, বদলে ফেলা হয়েছে। এনসিটিবির এমন আচরণকে ধিক্কার জানাই। পূর্ববর্তী রেজিমের মতো কর্তৃত্ব ও বাহাদুরি করছে তারা।”
আদিবাসী ফোরামের ১২ দাবি সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিনি “এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে দেখিয়েছে, এই অভ্যুত্থানে শুধু আবু সাঈদ বা মীর মুগ্ধদের রক্ত নয় এখানে লিটন চন্দ্র ও রিয়া গোপদের রক্তও ঝরেছে। এই অভ্যুত্থান আমাদেরকে ইনক্লুশন এর বার্তা দেয়, বহুত্ববাদী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও বাংলাদেশের বার্তা দেয় যা ওই গ্রাফিতিতে ছিল।”
এখনো যদি হামলা চলে তাহলে সেটি বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের ওপর ঐতিহাসিকভাবে যে জুলুম ও শোষণ বঞ্চনা চলে আসছে তারই ধারাবাহিক উত্তরাধিকার বলে মনে করেন পাভেল।
আদিবাসী কারা, বারবার এমন জিজ্ঞাসাবার মুখে পড়ার কথা তুলে ধরে পাভেল পার্থ বলেন, “আদিবাসী শিকার করে নিলে অনেক কিছু চলে যাবে- এগুলো বাজে তর্ক। এগুলো বাইনারি বিতর্ক। মণিপুরি পাড়া, মগবাজার, তেজতুরি বাজার কি বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে গেছে?”
সমকাল পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, “কিছুদিন আগের লড়াইয়ে বাঙালি-আদিবাসী একসাথে লড়াই করেছিল। তখন ইনক্লুসিভ সমাজের কথা হয়েছিল। সবাই মিলে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই স্পন্দন যেন অনেকটাই থেমে গেছে। ১৫ তারিখে যা হলো সেটা দুঃখজনক।”
পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আদিবাসীরা দুই বার হামলার শিকার হয়েছে। একবার সন্ত্রাসীদের দ্বারা, আরেকবার পুলিশের দ্বারা।”
হামলার শিকার সকলকে এক মিছিলে দাঁড়াতে হবে মন্তব্য করে সাঈদ খান বলেন, “হামলা এখন কেবল আদিবাসীদের উপরই না, বিভিন্ন মাজার, সুফি-বাউলের উপর হামলা হয়েছে। এমনকি নারীদের উপরও হামলা হয়েছে। নারী তারকারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না। জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীরা ফুটবল খেলতে পারছেন না।”
দেশে ‘মবতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশে মবতন্ত্র হতে দেওয়া যাবে না। সংবাদপত্রের জন্যও মবতন্ত্র হুমকি।
“ড. ইউনূসের সরকার আন্দোলনের ফসল। তাদের দমন করা উচিৎ। কিন্তু তারা নিন্দা জানাচ্ছে। নিন্দা জানানোর দায়িত্ব আমাদের, তারা দমন করবে। তারা নিন্দা জানালে আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়?”
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী সরকার ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি তার উলটো হচ্ছে। তাই আমাদের এ ক্ষোভ।”
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরাসরি হামলার ঘটনায় যাদেরকে দেখা যাচ্ছে তাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? বাধা কোথায়? আগে স্বৈরাচার সরকার আমাদেরকে আদিবাসী ডাকতে মানা করেছে, এ সরকারও কি তাই করবে?
“এনসিটিবি কেন একটা দলের দাবির মুখে পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি মুছে দিল? আমরা কি বুঝব? যে আদিবাসী-সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের কোন অধিকার নেই? আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “আমাদের আদিবাসীদের যদি আমরা এ দেশের নাগরিক মনে করি, তাহলে তো তাদের আর আমাদের সকলের অধিকার এক। আমাদের সংবিধানও তাই বলে। তাহলে কেন আমরা সংবিধান লংঘন করছি?”
আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, “আশির দশকে প্রশাসনের পাহারায় দলে দলে স্যাটেলাররা পাহাড়ে আসে। তারা এখন বলে চাকমা মারমারা নাকি বহিরাগত আর তারা নাকি আদিবাসী।
“একদল জনগোষ্ঠীকে রেশন দিয়ে কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫ বছর ধরে পালা হল? আদালতের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রকে সেই প্রশ্ন করব।”
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদি ফোরামের সহসভাপতি অজয় এ মৃ। বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স।
আদিবাসী ফোরামের ১২ দফা দাবি
>> বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
>> এনসিটিবির সম্মুখে আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও অধিকার কর্মীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।
>> পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পুনর্বহাল করতে হবে।
>> আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
>> সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
>> সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
>> আদিবাসীদের ভূমিতে তাদের সম্মতি না নিয়ে ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, ইকোট্যুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের ভূমি স্থানীয় মূল মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
>> আদিবাসীদের উপর সকল নিপীড়ন নির্যাতন বন্ধ করাসহ সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
>> জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহিত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও এর ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।
>> সংসদে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ করতে হবে, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত পদ বরাদ্দ রাখতে হবে।
>> চা বাগানে কর্মরত সকল আদিবাসীসহ সকল চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরিসহ তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
>> প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫% আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।
শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, এনসিটিবির সামনে আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও অধিকার কর্মীদের উপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার, পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পুনর্বহালসহ ১২টি দাবি তুলেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক গণসমাবেশে এসব দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি।
সমাবেশে বক্তারা বিভিন্ন মাজার, সুফি-বাউল, নারীদের ওপর হামলা, নারী তারকাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে বাধা, নারী ফুটবল আয়োজনে বাধার ঘটনাও তুলে ধরে ধরেন।
তারা বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্দোলনের ফসল। হামলাকারীদের দমন করার বদলে সরকার নিন্দা জানাচ্ছে।
১৫ জানুয়ারি পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সংগঠনে নেতাকর্মীরা পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ওপর হামলা চালায় ওই চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া অন্যপক্ষ।
হামলার প্রতিবাদে পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘ঘেরাও’ করতে গেলে শিক্ষা ভবনের সামনে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর জলকামান থেকে পানি ছুঁড়ে ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এ বিষয়টি তুলে ধরে গণসামবেশে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জনআকাঙ্খা দেয়ালে ফুটে উঠেছিল গ্রাফিতির মাধ্যমে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাথে বেইমানি করে দেয়ালের গ্রাফিতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, বদলে ফেলা হয়েছে। এনসিটিবির এমন আচরণকে ধিক্কার জানাই। পূর্ববর্তী রেজিমের মতো কর্তৃত্ব ও বাহাদুরি করছে তারা।”
আদিবাসী ফোরামের ১২ দাবি সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিনি “এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে দেখিয়েছে, এই অভ্যুত্থানে শুধু আবু সাঈদ বা মীর মুগ্ধদের রক্ত নয় এখানে লিটন চন্দ্র ও রিয়া গোপদের রক্তও ঝরেছে। এই অভ্যুত্থান আমাদেরকে ইনক্লুশন এর বার্তা দেয়, বহুত্ববাদী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও বাংলাদেশের বার্তা দেয় যা ওই গ্রাফিতিতে ছিল।”
এখনো যদি হামলা চলে তাহলে সেটি বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের ওপর ঐতিহাসিকভাবে যে জুলুম ও শোষণ বঞ্চনা চলে আসছে তারই ধারাবাহিক উত্তরাধিকার বলে মনে করেন পাভেল।
আদিবাসী কারা, বারবার এমন জিজ্ঞাসাবার মুখে পড়ার কথা তুলে ধরে পাভেল পার্থ বলেন, “আদিবাসী শিকার করে নিলে অনেক কিছু চলে যাবে- এগুলো বাজে তর্ক। এগুলো বাইনারি বিতর্ক। মণিপুরি পাড়া, মগবাজার, তেজতুরি বাজার কি বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে গেছে?”
সমকাল পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, “কিছুদিন আগের লড়াইয়ে বাঙালি-আদিবাসী একসাথে লড়াই করেছিল। তখন ইনক্লুসিভ সমাজের কথা হয়েছিল। সবাই মিলে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই স্পন্দন যেন অনেকটাই থেমে গেছে। ১৫ তারিখে যা হলো সেটা দুঃখজনক।”
পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আদিবাসীরা দুই বার হামলার শিকার হয়েছে। একবার সন্ত্রাসীদের দ্বারা, আরেকবার পুলিশের দ্বারা।”
হামলার শিকার সকলকে এক মিছিলে দাঁড়াতে হবে মন্তব্য করে সাঈদ খান বলেন, “হামলা এখন কেবল আদিবাসীদের উপরই না, বিভিন্ন মাজার, সুফি-বাউলের উপর হামলা হয়েছে। এমনকি নারীদের উপরও হামলা হয়েছে। নারী তারকারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না। জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীরা ফুটবল খেলতে পারছেন না।”
দেশে ‘মবতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশে মবতন্ত্র হতে দেওয়া যাবে না। সংবাদপত্রের জন্যও মবতন্ত্র হুমকি।
“ড. ইউনূসের সরকার আন্দোলনের ফসল। তাদের দমন করা উচিৎ। কিন্তু তারা নিন্দা জানাচ্ছে। নিন্দা জানানোর দায়িত্ব আমাদের, তারা দমন করবে। তারা নিন্দা জানালে আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়?”
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “বৈষম্যবিরোধী সরকার ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি তার উলটো হচ্ছে। তাই আমাদের এ ক্ষোভ।”
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরাসরি হামলার ঘটনায় যাদেরকে দেখা যাচ্ছে তাদেরকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? বাধা কোথায়? আগে স্বৈরাচার সরকার আমাদেরকে আদিবাসী ডাকতে মানা করেছে, এ সরকারও কি তাই করবে?
“এনসিটিবি কেন একটা দলের দাবির মুখে পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি মুছে দিল? আমরা কি বুঝব? যে আদিবাসী-সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের কোন অধিকার নেই? আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “আমাদের আদিবাসীদের যদি আমরা এ দেশের নাগরিক মনে করি, তাহলে তো তাদের আর আমাদের সকলের অধিকার এক। আমাদের সংবিধানও তাই বলে। তাহলে কেন আমরা সংবিধান লংঘন করছি?”
আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, “আশির দশকে প্রশাসনের পাহারায় দলে দলে স্যাটেলাররা পাহাড়ে আসে। তারা এখন বলে চাকমা মারমারা নাকি বহিরাগত আর তারা নাকি আদিবাসী।
“একদল জনগোষ্ঠীকে রেশন দিয়ে কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫ বছর ধরে পালা হল? আদালতের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রকে সেই প্রশ্ন করব।”
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদি ফোরামের সহসভাপতি অজয় এ মৃ। বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স।
আদিবাসী ফোরামের ১২ দফা দাবি
>> বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
>> এনসিটিবির সম্মুখে আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও অধিকার কর্মীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।
>> পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি পুনর্বহাল করতে হবে।
>> আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
>> সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
>> সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
>> আদিবাসীদের ভূমিতে তাদের সম্মতি না নিয়ে ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, ইকোট্যুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বন্ধ করতে হবে। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের ভূমি স্থানীয় মূল মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
>> আদিবাসীদের উপর সকল নিপীড়ন নির্যাতন বন্ধ করাসহ সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
>> জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহিত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও এর ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।
>> সংসদে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ করতে হবে, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত পদ বরাদ্দ রাখতে হবে।
>> চা বাগানে কর্মরত সকল আদিবাসীসহ সকল চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরিসহ তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
>> প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫% আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।