alt

জাতীয়

‘হেফাজতে’ যুবদল নেতার মৃত্যু

তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার, বিএনপির ক্ষোভ, আইএসপিআরের তদন্ত কমিটি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, কুমিল্লা : শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার চেয়ে স্বজনদের মানববন্ধন

কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর এক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে তৌহিদুল ইসলাম নামের ওই যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দাও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ নির্দেশনার কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘কুমিল্লায় পুলিশ শুক্রবার রাতে এক যুবক, তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার ভোরে তার বাড়ি থেকে আটক করার পর তাকে নির্যাতন করে।’ জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে সরকারে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলেও জানানো হয়। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে কয়েকটি কমিশন গঠন করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশনগুলোর বেশিরভাগই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

‘পুলিশি জেরা, অপরাধ ব্যবস্থাপনা ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনো সম্ভাবনা দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করবে।’ অন্তর্বর্র্তীকালীন সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মৃত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তার পরিবারকে ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রথমে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

যুবদল নেতার লাশ নিয়ে কুমিল্লায় বিক্ষোভ

যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের পর মারা যাওয়া যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের লাশ নিয়ে দোষীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। শনিবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা ও আশপাশের গ্রামের মানুষ কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বেলা ১২টার দিকে যুবদল নেতা তৌহিদের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে জনতা সেখানে আসেন। এ সময় তারা তৌহিদুলের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

এ সময় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন, ‘আমার মেয়েগুলো এতিম হয়ে গেল। যারা আমার স্বামীকে মেরেছে তাদের কি মা নাই, বোন নাই? তারা কেন ওকে মারল- আমার এটাই প্রশ্ন। আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই।’ বিচার দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সদস্যসচিব রাশেদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত যারাই আছে, তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’

তৌহিদুলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন

তৌহিদুল ইসলামকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আটক করেছিল বলে পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তাদের ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে, আপনারা হসপিটালে আসেন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।

‘সেখান থেকে পুলিশ প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।’ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে যৌথবাহিনী আটক করেছিল। পরদিন দুপুরে হাসপাতালে তার লাশ পাওয়া গেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ শিবলু বলছেন, ‘অতিরিক্ত মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে-এটা বলাই যায়। যতদূর জানি তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পুলিশও কিছু বলছে না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তানভির আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

ওসি মাহিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যৌথবাহিনী আমাদের শুক্রবার বেলা ১১টায় জানায়, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন ‘গোমতী বিলাসে’ একজন আহত অবস্থায় আছে। পরে সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার, আইএসপিআরে তদন্ত কমিটি গঠন

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় আটক হওয়ার পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তৌহিদুল ইসলামকে (৪০) আটক করে যৌথবাহিনী। পরে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেনা কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয় জানিয়ে আইএসপিআর বলছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি ‘উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যুবদল নেতার মৃত্যু ‘সাদা পোশাকধারীদের’ নির্যাতনে
: ফখরুল যুবদল নেতাকে ‘সাদা পোশাকধারী লোকজন বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে’ নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করে।’

ফখরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সমর্থন পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক। ‘এমন হত্যার ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড জনমনে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।’ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসনে আওয়ামী দোসররা ঘাপটি মেরে থেকে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা, সেটি নিয়ে গভীর অনুসন্ধান জরুরি।’

ফখরুল মনে করেন, ‘কোনো সরকারি বাহিনীই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনা আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। ‘কিন্তু তাকে কখনোই বিচার বহির্ভূতভাবে নির্যাতন করে হত্যার অধিকার সরকারি বাহিনীর নেই। আমি তৌহিদুল ইসলামকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন
‘কুমিল্লার এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়। মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হলো- গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যা থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়া, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ভীতি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখা। ‘কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি হলে আবারও দেশে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসবে। মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করবে। বেআইনি হত্যায় কখনোই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না, এতে আইনের শাসনকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয় এবং দেশকে ঠেলে দেয়া হয় আদিম অন্ধকারের দিকে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও বিচারবহির্ভূত হত্যা কেন
প্রশ্ন রিজভীর বিগত ‘ফ্যাসিস্ট সরকারে’র মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন,‘শঙ্কা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লার যুবদলের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে মৃত ফেরত দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘যদি ওই ছেলেটি অপরাধী হয় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু গ্রেপ্তার করে ভয়াবহ ‘টর্চার’ করে মেরে বাবা-মার কাছে ফেরত দেয়া এই আমলে হবে কেন।’

শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন রিজভী। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সখ্যের কথা তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তাকে দেশের মানুষ পছন্দ করে, দেশের একজন গুণী মানুষ যিনি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন, তার সময়ে যদি শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দুষ্কর্ম এবং অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তো হোঁচট খাবে জনগণ।’ রিজভী বলেন, ‘বুঝলাম ছেলেটি খারাপ, বুঝলাম ছেলেটা অপরাধী। অপরাধের বিচার করার দায়িত্ব তো আদালতের। ‘আদালত যাতে ঠিক মত কাজ করতে পারে, নির্ভয়ে কাজ করতে পারে, ন্যায়বিচার করতে পারে, এটি নিশ্চিতের দায়িত্ব জনগণের সমর্থিত একটা সরকারের। এই সরকারকে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সমর্থন করেছে।’

জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে
: ছাত্রদল যৌথ বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কোনো হত্যাকারী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য হিসেবে থাকতে পারেন না বলেও মনে করছে ছাত্রসংগঠনটি। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন এ কথা বলেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, হত্যকারীদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৌহিদুল ইসলাম।

ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্তা ‘প্রত্যাখ্যান’, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ছাড়া রাস্তা ছাড়বেন না তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

প্রতি হাজারে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১ জন: গবেষণা

ছবি

তিতুমীর কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তৃতীয় দিন সড়ক অবরোধ

ছবি

‘সব শহীদ পরিবারকে একেবারে শহীদ করে দিক, তাহলে কেউ দাবি নিয়ে আসবে না’

ছবি

দেশে প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সার আক্রান্ত

ছবি

অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠল

ছবি

সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা, তিতুমীর বিশেষ বিবেচনায়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

বই সেন্সরের কোনো পরিকল্পনা নেই, ভুল বোঝাবুঝি দূর করার আহ্বান ফারুকীর

ছবি

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন সাত লেখক

ছবি

বিকেলে ইজতেমায় অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন বিয়ে

ছবি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল

ছবি

সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, জনজীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই : আনু মুহাম্মদ

ছবি

আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ১২ দাবি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ: কোন দেশ ও খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ছবি

বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান নগণ্য: প্রধান ‍উপদেষ্টার কার্যালয়

ছবি

আসন্ন রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

সেনাবাহিনী নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ‘বলিউডি রোমান্টিক কমেডি’

রাজনৈতিক দলের ভেতর সংস্কার জরুরি, নেতার বয়সসীমা ঠিক করারও প্রস্তাব

ছবি

রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি মাস শুরু

আজ শুরু হচ্ছে একুশের বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

কমছে না চালের বাজারে অস্থিরতা

ছবি

বিশ্ব ইজতেমায় মানুষের ঢল, প্রথম পর্ব শেষ হচ্ছে কাল

ছবি

বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য মেট্রোরেলে বিশেষ কোচের ব্যবস্থা

ছবি

তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের আবারও সড়ক অবরোধ

ছবি

সিলেটে রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল

মেলায় প্রকাশের আগে বইয়ের পাণ্ডুলিপি যাচাই চায় পুলিশ

ছবি

বইমেলায় কন্টেন্ট যাচাই নিয়ে পুলিশের নতুন উদ্যোগ: পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের প্রস্তাব

ছবি

ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ছবি

তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল, দেড়টায় বৃহত্তম জুমার নামাজ

ছবি

গাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার

ছবি

৭২ দেশের ২১৫০ জন বিদেশি মেহমান এসেছেন বিশ্ব ইজতেমায়

ছবি

টেকসই উন্নয়ন ও বৈষম্যহীন অর্থনীতি গঠনে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে

ছবি

সুইজারল্যান্ড সরকার বাংলাদেশ, আলবেনিয়া ও জাম্বিয়ায় উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করবে

ইজতেমার প্রথম পর্ব : লাখো মুসল্লির পদভারে মুখর তুরাগ তীর

ছবি

জাপান বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে: মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাতে রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি

সীমানা নির্ধারণ আইনের ‘জটিলতা’ দূর করতে সংশোধন প্রস্তাব পাঠাবে ইসি

tab

জাতীয়

‘হেফাজতে’ যুবদল নেতার মৃত্যু

তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার, বিএনপির ক্ষোভ, আইএসপিআরের তদন্ত কমিটি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, কুমিল্লা

যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার চেয়ে স্বজনদের মানববন্ধন

শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটকের পর এক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। অভিযোগ উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে তৌহিদুল ইসলাম নামের ওই যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দাও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার ১লা ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ নির্দেশনার কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘কুমিল্লায় পুলিশ শুক্রবার রাতে এক যুবক, তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার ভোরে তার বাড়ি থেকে আটক করার পর তাকে নির্যাতন করে।’ জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে সরকারে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলেও জানানো হয়। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে কয়েকটি কমিশন গঠন করার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশনগুলোর বেশিরভাগই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

‘পুলিশি জেরা, অপরাধ ব্যবস্থাপনা ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনো সম্ভাবনা দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করবে।’ অন্তর্বর্র্তীকালীন সরকার এই সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

মৃত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তার পরিবারকে ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রথমে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

যুবদল নেতার লাশ নিয়ে কুমিল্লায় বিক্ষোভ

যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটকের পর মারা যাওয়া যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের লাশ নিয়ে দোষীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। শনিবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা ও আশপাশের গ্রামের মানুষ কুমিল্লা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বেলা ১২টার দিকে যুবদল নেতা তৌহিদের লাশবাহী গাড়ি নিয়ে জনতা সেখানে আসেন। এ সময় তারা তৌহিদুলের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

এ সময় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার অভিযোগ করেন, ‘আমার মেয়েগুলো এতিম হয়ে গেল। যারা আমার স্বামীকে মেরেছে তাদের কি মা নাই, বোন নাই? তারা কেন ওকে মারল- আমার এটাই প্রশ্ন। আমি দেশবাসীর কাছে বিচার চাই।’ বিচার দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সদস্যসচিব রাশেদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত যারাই আছে, তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’

তৌহিদুলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন

তৌহিদুল ইসলামকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা আটক করেছিল বলে পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তাদের ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে, আপনারা হসপিটালে আসেন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।

‘সেখান থেকে পুলিশ প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।’ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে যৌথবাহিনী আটক করেছিল। পরদিন দুপুরে হাসপাতালে তার লাশ পাওয়া গেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ শিবলু বলছেন, ‘অতিরিক্ত মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে-এটা বলাই যায়। যতদূর জানি তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পুলিশও কিছু বলছে না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তানভির আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

ওসি মাহিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যৌথবাহিনী আমাদের শুক্রবার বেলা ১১টায় জানায়, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন ‘গোমতী বিলাসে’ একজন আহত অবস্থায় আছে। পরে সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’ ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার, আইএসপিআরে তদন্ত কমিটি গঠন

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় আটক হওয়ার পর যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তৌহিদুল ইসলামকে (৪০) আটক করে যৌথবাহিনী। পরে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেনা কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয় জানিয়ে আইএসপিআর বলছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি ‘উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যুবদল নেতার মৃত্যু ‘সাদা পোশাকধারীদের’ নির্যাতনে
: ফখরুল যুবদল নেতাকে ‘সাদা পোশাকধারী লোকজন বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে’ নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে হত্যা করে।’

ফখরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সমর্থন পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এমন বিচারবহির্ভূত হত্যা দুর্ভাগ্যজনক। ‘এমন হত্যার ঘটনায় দেশবাসী হতবাক হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড জনমনে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।’ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসনে আওয়ামী দোসররা ঘাপটি মেরে থেকে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা, সেটি নিয়ে গভীর অনুসন্ধান জরুরি।’

ফখরুল মনে করেন, ‘কোনো সরকারি বাহিনীই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনা আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত। ‘কিন্তু তাকে কখনোই বিচার বহির্ভূতভাবে নির্যাতন করে হত্যার অধিকার সরকারি বাহিনীর নেই। আমি তৌহিদুল ইসলামকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন
‘কুমিল্লার এই নির্মমতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলকেই মনে করিয়ে দেয়। মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হলো- গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যা থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়া, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ভয়ভীতি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখা। ‘কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি হলে আবারও দেশে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে আসবে। মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিনাতিপাত করবে। বেআইনি হত্যায় কখনোই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না, এতে আইনের শাসনকে চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয় এবং দেশকে ঠেলে দেয়া হয় আদিম অন্ধকারের দিকে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও বিচারবহির্ভূত হত্যা কেন
প্রশ্ন রিজভীর বিগত ‘ফ্যাসিস্ট সরকারে’র মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন,‘শঙ্কা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লার যুবদলের একটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে মৃত ফেরত দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ‘যদি ওই ছেলেটি অপরাধী হয় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু গ্রেপ্তার করে ভয়াবহ ‘টর্চার’ করে মেরে বাবা-মার কাছে ফেরত দেয়া এই আমলে হবে কেন।’

শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন রিজভী। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সখ্যের কথা তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তাকে দেশের মানুষ পছন্দ করে, দেশের একজন গুণী মানুষ যিনি আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন, তার সময়ে যদি শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দুষ্কর্ম এবং অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তো হোঁচট খাবে জনগণ।’ রিজভী বলেন, ‘বুঝলাম ছেলেটি খারাপ, বুঝলাম ছেলেটা অপরাধী। অপরাধের বিচার করার দায়িত্ব তো আদালতের। ‘আদালত যাতে ঠিক মত কাজ করতে পারে, নির্ভয়ে কাজ করতে পারে, ন্যায়বিচার করতে পারে, এটি নিশ্চিতের দায়িত্ব জনগণের সমর্থিত একটা সরকারের। এই সরকারকে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ সমর্থন করেছে।’

জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে
: ছাত্রদল যৌথ বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। কোনো হত্যাকারী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য হিসেবে থাকতে পারেন না বলেও মনে করছে ছাত্রসংগঠনটি। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন এ কথা বলেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, হত্যকারীদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৌহিদুল ইসলাম।

back to top